Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইসলামের নামে ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টি স্রেফ ভণ্ডামি






ইসলামের নামে ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টি স্রেফ ভণ্ডামি
সাইয়িদ রফিকুল হক

 
দেশে ধার্মিকের চেয়ে ভণ্ডের সংখ্যা অনেকগুন বেশি। আর এই দেশে এখন প্রতিনিয়ত ভণ্ডের চাষ হচ্ছে। আজ ধর্মের নামে বুকফুলিয়ে শয়তানী-আবাদ করা হচ্ছে। তাইতে আমাদের এই ছোট্ট দেশটাতে আজ এতো-এতো শয়তান! এখানে, শয়তানের কোনো অভাব নাই। তাই, এখানে  জাতশয়তান, কালশয়তান, পাতিশয়তান, ভণ্ডশয়তান, আর ধর্মের নামে সর্বপ্রকার শয়তান নানারূপে, নানাবর্ণে, নানাউদ্দেশ্যে আজকাল আসন গেড়ে বসেছে। আর সব শয়তানের উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই—ধর্মের নামে যেকোনোভাবে নিজেদের স্বার্থউদ্ধার করা।
 
আমাদের দেশে আশির দশক থেকে ইফতারমাহফিলের প্রচলন হতে শুরু করে। আর এই সময়টা ছিল সামরিকজান্তা ও স্বৈরাচার এরশাদ-সরকারের আমল। এইসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের দালালগোষ্ঠী—জামায়াত-শিবির তাদের প্রাণপ্রিয় খলিফা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারতো না। কিন্তু এরা অত্যন্ত কুকৌশলে আর কু-মতলবে প্রতিবছর ‘ইফতারমাহফিলে’র নামে নিজেদের ধর্মভিত্তিক স্বার্থের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতো—আর এভাবে তারা ইফতারমাহফিলের নামে সংগঠিত হতো। আর এখানে প্রধান অতিথি, প্রধান আলোচক হয়ে আসতো একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীগং—গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, আবুল কালাম আযাদ ইত্যাদি। মূলত এদের হাতেই স্বাধীনবাংলাদেশে এদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই ইসলামবিরোধী ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টি’র সূচনা। এরপর নব্বইয়ের দশক থেকে ইফতারমাহফিল আর ইফতারপার্টি দেশের একটি ভণ্ডশ্রেণীর কাছে ধর্মের একটা অপরিহার্য দিক হিসাবে বিবেচিত হয়। এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে ইফতারপার্টির আয়োজন করা হচ্ছে। মূলত এই ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টির আয়োজনের মূলে রয়েছে অসৎ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহাসিল করা। এগুলো এখন নিজেদের স্বার্থ আর ধান্দাবাজির অংশ হিসাবে আমাদের সমাজে টিকে আছে আর দিন-দিন এগুলো আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর বর্তমানে পাকিস্তানীদের দালাল—জামায়াত-শিবির এখন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি করলেও ‘ইফতারমাহফিল’ এখনও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের একটি প্রধান অংশ।
 
ইসলামধর্মের কোথাও এভাবে ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টির আয়োজনের কথা বলা হয়নি। এটি ইসলামীশরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এগুলো বিদআতে সাইয়্যেয়াহ। কুরআন-হাদিসের কোথাও এর সপক্ষে একটি কথাও নাই। ইসলামের নবী সা. রোজাদারদের ইফতার করানোর কথা বলেছেন—কিন্তু সেটি ঘরোয়াভাবে ও পবিত্রতার সঙ্গে। এখনকার এইসব ইফতারপার্টি নামক ভণ্ডের সমাবেশে নয়।
বর্তমানে প্রচলিত ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টির বৈশিষ্ট্য হলো:
 
১. এগুলো সম্পূর্ণ অসৎ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ও পরিচালিত।
২. ইফতারপার্টির জন্য রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় চলে সীমাহীন চাঁদাবাজি। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর একশ্রেণীর ভণ্ড নেতা-কর্মী সরাসরি জড়িত। আর এরা ইফতারমাহফিলের নামে সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে তাদের নিকট থেকে ব্যাপক চাঁদা আদায় করে থাকে। এরা এই চাঁদাবাজি থেকে কিছু খরচ করে আর বাকী অংশ নিজেরা ভাগ করে নেয়। আর সর্বপ্রকার চাঁদাবাজি ইসলামে নিষিদ্ধ।
৩. সরকারিভাবে যে-সব ইফতারপার্টির আয়োজন করা হয় তাও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের শামিল। আর এখানেও একটি শ্রেণী ইফতারপার্টির আয়োজন করে লক্ষ-লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এই ইফতার পার্টি যদি বড়সড়-নামকরা কোনো কনভেনশন-হলে বা পার্টি-সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে এতে লুটপাটের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। আর সেক্ষেত্রে এই লুটপাটের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় কোটি-কোটি টাকা।
৪. ইফতারপার্টিতে রোজাদারদের চেয়ে বেরোজাদারদের সংখ্যাই বেশি। এটি আসলে নিজেদের স্বার্থআদায় আর ধর্মের নামে ভোগ-বিলাসিতা মাত্র।
৫. ইফতারমাহফিলের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ বরাদ্দ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। জনগণের অর্থে এটি একপ্রকার ফুর্তি। আর ইসলামধর্মের নামে এইজাতীয় ফুর্তির কোনো সুযোগ নাই।
৬. মানুষ এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার করতে পারে না। এখানে, নিজের লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। প্রতিটি ইফতারপার্টিতে চলে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি। আর এখানে সবাই দাওয়াত পায় না।
৭. ইফতারপার্টির নামে এখানে দুনিয়াবি-শয়তানী কথাবার্তার অবতারণা করা হয়। আর সবখানে নিজেদের লাভের হিসাব কষা হয়। তাই, এগুলো স্রেফ আড্ডাবাজি আর শয়তানী।
৮. ইফতারপার্টির আয়োজন করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে জায়গায়-জায়গায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টিও করা হয়। ইসলামে এগুলো নাজায়েজ।
৯. এইসব ইফতারপার্টির দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো উপকার হয় না। বরং এখানে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়। আর এভাবে সাধারণ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীও যে-সব ইফতারমাহফিলের আয়োজন করে থাকে তাও জাতির জন্য ক্ষতিকর।
১০. কুরআনে বলা হয়েছে: ‘অপচয়কারী শয়তানের ভাই’। ইফতারমাহফিলগুলো আসলে এখন শয়তানের দরবার। আর এগুলো ইসলামের নামে স্রেফ ভণ্ডামি ও শয়তানী।
১১. রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ ব্যতীত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও তাদের নেতা-কর্মীদের সমুদয় অর্থই হারাম বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত। আর এদের টাকায় পরিচালিত ইফতারপার্টিও অবৈধ। তাই, কোনো রোজাদার-ব্যক্তি বা সাধারণ মানুষ জেনেশুনে এদের হারাম-টাকায় ইফতার করলে তার রোজা ভঙ্গ হবে, এবং সে গোনাহগার হবে।
 
রোজার সঙ্গে ইফতারের একটি সম্পর্কও রয়েছে। আর তা হলো—একজন রোজাদার সারাদিন রোজা রেখে সূর্যাস্তের পরে ইফতার করবে। এখানে, রোজার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময়ও বেঁধে দেওয়া আছে—সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখতে হবে। আর সে এইসময় যেকোনোপ্রকারের  হালাল-সামগ্রীর মাধ্যমে রোজা-ভঙ্গ করবে—মানে, ইফতার করবে। কিন্তু ইফতার-সামগ্রীর কোনো নির্দিষ্ট তালিকা বা বিষয় বা খাবার নাই। আর ইফতারিবিষয়ক কোনো বর্ণনা সুনির্দিষ্টভাবে কুরআন-হাদিসের কোথাও নাই। তবে হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, আমাদের নবীজী সা. খেজুর, খুরমা ও পানি দ্বারা ইফতার করতেন। আসলে, আরবদেশে খেজুর-খুরমা বেশি জন্মে। তাই, এই ব্যবস্থা। এজন্য অনেকে খেজুর-খুরমা দ্বারা ইফতার করাটাকে ‘সুন্নত’ বলে মনে করে থাকে। পূর্বেই বলা হয়েছে, ইফতারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সামগ্রী নাই। একজন মুসলমান যেকোনো হালাল খাবার দ্বারা রোজা-ভঙ্গ বা ইফতার করতে পারবে। আর এই হিসাবে বাঙালি ভাত, মাছ, রুটি, শাকসবজি চিড়া, মুড়ি, পায়েস, হালুয়া ইত্যাদি সামগ্রী দিয়ে ইফতার করতে পারবে। কিন্তু ইফতারপার্টি কীসের ভিত্তিতে? এটি কোথায় পেয়েছে আজকালকার এই ভণ্ডরা? এই লোকদেখানো ইফতারমাহফিল কীসের ভিত্তিতে? আর রাজনৈতিক দলগুলোর গরিবের টাকা মেরে এই হারাম-টাকার ইফতারপার্টির অনুমতি কে দিয়েছে? কে দিয়েছে? আর কে দিয়েছে? এর জবাব চাই।

ইদানীং কয়েক বছর যাবৎ ইফতারপার্টির অপসংস্কৃতির আদলে দেশে শুরু হয়েছে ‘সাহরিপার্টি’। এর মূলে রয়েছে—উচ্চবিত্তপরিবারের ধর্মবিলাসিতা। এরা ধার্মিক নয় ভণ্ড। এরা এখন পারিবারিকভাবে, গোত্রগতভাবে, বন্ধুবান্ধব মিলে দলগতভাবে, দলবেঁধে যেকোনো নামি-দামি রেস্টুরেন্টে কিংবা চাইনিজে রাতের আঁধারে ‘সাহরি’ খেতে যাচ্ছে! এদের এই ‘সাহরিপার্টি’ এখন এদের কাছে রাতের জমজমাট আড্ডা ও পিকনিক। এগুলো একসময় ভাইরাসের মতো মধ্যবিত্তের অন্দরমহলেও ঢুকে পড়বে। আর তখন শুরু হবে দেশজুড়ে ধর্মের নামে বিরাট অপসংস্কৃতি।
 
 
আমাদের নবীজী সা. খুব সামান্য খাবার দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাঁর ইফতার-সামগ্রীতে কোনোপ্রকার আয়োজন ছিল না। তিনি কখনও খাদ্য-অপচয় করতেন না। আর তিনি ধর্মকে কখনও ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অসৎ-উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেননি। আর এখনকার এইসব ইফতারমাহফিলপ্রেমিকরা নিজেদের স্বার্থে রোজার মাসে ধান্দাবাজির জন্য ইফতারপার্টির আয়োজন করছে। এটি কখনও ইসলামে ছিল না। আর কখনও থাকতে পারে না। কারণ, ইসলাম এটি সমর্থন করে না। তাই, ইসলামের নামে ইফতারমাহফিল বা ইফতারপার্টি স্রেফ ভণ্ডামি।
 
 
 




 
সাইয়িদ রফিকুল হক
পূর্বরাজাবাজার, ঢাকা,
বাংলাদেশ।
১৬/০৬/২০১৭
১ Likes ০ Comments ০ Share ২৩৩ Views

Comments (0)

  • - টি.আই.সরকার (তৌহিদ)

    ভোট দিলাম এখানেও ! emoticons

    • - সেলিনা ইসলাম

      ধন্যবাদ অনেক শুভকামনা রইল।

    - নাজনীন পলি

    চমৎকার লেখা । আপু , আপনার লেখা পড়ে খুব আপনার মনে হচ্ছে । মাঝে মাঝে আমিও এগুলো খুব অনুভব করি । নিজেকে খুব একা লাগে , মনে হয় কোথাও কেউ নাই । 

     

    শুভেচ্ছা ও শুভকামনা emoticons

    • - সেলিনা ইসলাম

      সময় দিয়ে পড়ে অনুভূতির সাথে একাত্ম হবার জন্য ধন্যবাদ আপু।।  আমরা অনেক কিছু ভুলে গেছি । আসল সুখ আসলে কোথায়!? কামিনী রায়-এর লেখা শেয়ার করলাম আপু।
      "পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
      এ জীবন মন সকলি দাও,
      তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
      আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
      পরের কারণে মরণেও সুখ,
      ‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;
      যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
      ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
      আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
      আসে নাই কেহ অবনী পরে
      সকলের তরে সকলে আমরা
      প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।"

      emoticons   শুভকামনা রইল emoticons

       

    - এস আহমেদ লিটন

    ভোট দিয়ে গেলাম পরে পড়ে নিব। বেশ ব্যাস্ত সময় যাচ্ছে। 

    • - সেলিনা ইসলাম

      অনেক অনেক ধন্যবাদ ভালো থাকুন সব সময়।

    Load more comments...