Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ আদান প্রদানের ভয়ানক পরিণতি

`আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
বর্তমানে সুদ আমাদের দেশ ও জাতিকে অক্টোপাসের মত বেঁধে ফেলেছে। সুদ ছাড়া আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন বন্ধ। যে কারণে পত্রিকা ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মানুষকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে নির্দিষ্ট অংকের লাভের বিনিময়ে অর্থ ডিপোজিট করতে আহবান করা হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক।
সুদ আদান-প্রদান আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রকাশ্য নাফরমানি।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, ‘যারা তার নির্দেশের বিরোধিতা করে তারা যেন সতর্ক হয়ে যায় যে, তারা ফেতনায় পতিত হবে অথবা তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সম্মুখিন হবে। (সূরা নূর, আয়াত : ৩৬)
ইসলাম ধর্মে একথা সর্বজন বিদিত যে, কুরআন সুন্নাহ্র দলীল অনুযায়ী সুদী ব্যাংকে অর্থ রেখে সেখান থেকে নির্দিষ্ট হারে ফায়েদা বা ইন্টারেস্ট গ্রহণ করা নিঃসন্দেহে সুদ।
আল্লাহ এবং তার রাসূল সুদকে হারাম করেছেন। সুদ কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। সুদ অর্থ-সম্পদের বরকতকে মিটিয়ে দেয়, আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়। সুদের কারণে আমল কবুল হয় না।
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ্ তাআলা রাসূলদের (আ.) প্রতি যা নির্দেশ পাঠিয়েছেন, মুমিনদের প্রতিও তাই পাঠিয়েছেন।’
মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার্য গ্রহণ কর এবং সৎ কর্ম কর। (সুরা মুমেনূন, আয়াত : ৫১)
তিনি মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে নির্দেশ দেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী থেকে আহার্য গ্রহণ কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযি হিসেবে দান করেছি।’
রাসূলুল্লাহ্ এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে দীর্ঘ সফর করে এলায়িত কেশ ও ধুলায়মান পোশাক নিয়ে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ডাকতে থাকে, হে আমার প্রতিপালক! হে রব! অথচ সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় কি করে তার দুআ কবুল হতে পারে?’ (সহীহ্ মুসলিম)
অতএব হারাম খেলে দুআ কবূল হবে না, ইবাদত কবূল হবে না। কামাই-রোজগারে বরকত হবে না। হারাম অর্থে পরিবার-সন্তানদের লালন পালন করলে তারাও সৎভাবে গড়ে উঠবে না। উপরোন্ত ক্বিয়ামতের কঠিন মাঠে জবাবদিহি তো করতে হবেই।
প্রত্যেক মুসলমানের জানা উচিত যে, ক্বিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তাআলা তাকে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। কিভাবে সম্পদ উপার্জন করেছে? আর কোথায় তা খরচ করেছে?
নবী (সা.) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কোনো মানুষের পা টলবে না যতক্ষণ সে চারটি প্রশ্নের উত্তর না দিবে। প্রশ্ন করা হবে, তার যৌবনকাল সম্পর্কে কোনো কাজের মাঝে এ বয়স অতিবাহিত করেছে? তার জীবন সম্পর্কে কিভাবে তার অয়ু শেষ করেছে? তার সম্পদ সম্পর্কে কিভাবে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে? এবং তার জ্ঞান সম্পর্কে কি আমল করেছে সেই জ্ঞান দ্বারা?’ (তিরমিযী)
সুদ একটি অন্যতম কাবীরা গুনাহ। কুরআন ও হাদীছে কঠিনভাবে সুদকে হারাম করা হয়েছে। সুদের যাবতীয় প্রকার-প্রকৃতি ও যে নামেই ব্যবহার করা হোক তা নিষিদ্ধ।
আল্লাহ্ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার। এবং তোমরা সেই আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৩০-১৩২)
আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা সুদ খায়, ক্বিয়ামতে দণ্ডায়মান হবে এমন লোকের মত, যার উপর শয়তান আছর করে তাকে মোহাবিষ্ট করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেওয়ার মতই। অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ২৭৫-২৭৬)
আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর তোমরা যদি সুদ না ছাড়, তবে আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে নিজেদের মূলধন ফেরত পেয়ে যাবে। তোমরা কারো উপর অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াতা : ২৭৮-২৭৯)
আল্লাহ এবং তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার চাইতে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে?
নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা ধ্বংসকারী সাতটি কাজ থেকে দূরে থাক। সাহাবারা বললেন, উহা কী কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক, যাদু, কোনো অধিকার ছাড়া কাউকে খুন করা, সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, বিদুষী সতী-সাধী মুমিন নারীদেরকে অপবাদ প্রদান করা।’ (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ (সা.) অভিশাপ করেছেন সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লিখককে এবং তার দুই সাক্ষিকে। তিনি বলেন, পাপের ক্ষেত্রে সকলেই এক সমান।’
নবী (সা.) আরও বলেন, ‘সুদের মধ্যে সত্তরটির মত পাপ রয়েছে। তম্মধ্যে সবচেয়ে সহজ পাপটি হচ্ছে- নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করা।’ (ইবনু মাজাহ্, হাদিস নং-২২৭৪)
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আরও বলেন, ‘জেনে-শুনে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ৩৬ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারের চাইতে অধিক গুনাহের কাজ।’ (আহমাদ)
জাহান্নামের মধ্যে সুদখোরের শাস্তি সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদীছে বলা হয়েছে। নবী (সা.) স্বপ্নে দু’জন ফেরেশতার সঙ্গে জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছেন, জাহান্নামে বিভিন্ন অপরাধীদের শাস্তির ধরণ অবলোকন করেছেন। তিনি দেখেছেন, জনৈক ব্যক্তি একটি রক্তের নদীতে সাঁতার কাটছে। নদীর তীরে পাথর হাতে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন ব্যক্তি। লোকটি সাঁতার কাটতে কাটতে যখনই কিনারে আসছে তখন তীরে দণ্ডায়মান লোকটি তার হাতে থাকা পাথরটি ওই ব্যক্তির মুখে নিক্ষেপ করছে, তখন সে পূর্বের স্থানে নদীর মধ্যে চলে যাচ্ছে। এভাবে যখনই সে নদী থেকে বের হতে চাচ্ছে, তাকে পাথর মেরে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে তার শাস্তি চলছেই। নদীর মধ্যের লোকটি হচ্ছে সুদখোর। (বুখারী ও মুসলিম)
এ হচ্ছে কুরআন সুন্নাহর কিছু দলীল, যা দ্বারা বুঝা যায় সুদ কত ভয়ানক অপরাধের কাজ। ব্যক্তি ও জাতির জন্য কত মারাত্মক ও ভয়ানক বিষয়। সুদের সঙ্গে লিপ্ত ব্যক্তি বড় ধরণের কাবীরা গুনাহে লিপ্ত এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহ এবং তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
প্রকৃত পক্ষে যে মুসলমান নিজের কল্যাণ চায়, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও করুণা লাভে নিজেকে ধন্য করতে চায় সে অবশ্যই সুদী ব্যাংক থেকে বিরত থাকবে। সুদী ব্যাংকে সুদ নেওয়ার ভিত্তিতে অর্থ জমা রাখবে না।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৯০০ Views