Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

ইসলামে বন্ধু ও বন্ধুত্ব

মানবকুল সামাজিক, তাই তারা সমাজের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করে, উঠা-বসা করে, লেন-দেন করে এবং বন্ধুত্ব করে। এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বভাবগতভাবেই সংঘটিত হয়। তবে বন্ধু নির্বাচন ও বন্ধুত্ব করণের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই পয়েন্ট থেকে অনেকের জীবন ভাল কিংবা মন্দের দিকে মোড় নেয়। কেউ সত্যিই বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গ তোমাকে সৎ বানায় আর অসৎ সঙ্গ তোমাকে অসৎ করে তোলে।’
পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার ইসলামে এ বিষয়ও রয়েছে কিছু উপদেশ কিছু গাইড লাইন। আমরা এই স্থানে তারই কিছুটা বর্ণনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।
বন্ধু নির্বাচন : বন্ধুত্বর প্রথম ধাপ হচ্ছে বন্ধু চয়ন। কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের তার সম্পর্কে জানা উচিৎ, যে আমরা কার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চলেছি। যদি কেউ এই স্টেপেই ভুল করে বসে, তাহলে তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে।
কারণ আমরা লক্ষ্য করি, সাধারণত, জুয়াড়ির বন্ধু জুয়াড়ি হয়, চোরের বন্ধু চোর হয়, আর নামাযীর বন্ধু হয় নামাযী।
বন্ধু নির্বচনের ব্যাপারে নবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিৎ যে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ ( তিরমিযী, যুহুদ অধ্যায়, হাদিস নং : ২৪৮৪)
একদা এক বেদুইন নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, কিয়ামত কবে হবে? নবী (সা.) উত্তরে বলেন, তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছো? লোকটি বলে, (নফল) নামায, রোযা, সাদাকা হিসেবে বেশি কিছু আমার নেই কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালবাসি। নবী (সা.) বলেন, তাহলে তুমি তার সঙ্গে হবে যাকে তুমি ভালবাসো।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২৬৩৯)
হযরত আলকামাহ (রহ.) বলেন, ‘বন্ধুত্ব কর তার সঙ্গে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাবগ্রস্থ হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোনো মঙ্গল দেখে, তো গুণে গুণে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, যদি তার কাছে চাও তো সে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে সান্তনা দেয়, আর তাদের নিম্ন স্তরের সে, যে তোমার কোন অন্যায় করে না।’
হযরত আউযায়ী (রহ.) বলেন, ‘বন্ধু বন্ধুর জন্য তালির (কাপড়ের টুকরার) ন্যায়, যদি আসল কাপড়ের মত না হয়, তো অশোভনীয় করে দেয়।’
জনৈক আরবী সাহিত্যিক বলেন, ‘শুধু তার সঙ্গেই বন্ধুত্ব করো, যে তোমার দোষ গোপন রাখে, দুঃখের সময় সঙ্গে থাকে, প্রয়োজনীয় বিষয়ে তোমাকে অগ্রাধিকার দেয়, তোমার ভাল কাজের প্রচার করে এবং মন্দ কাজ গোপনে রাখে। আর যদি এইরকম গুণাগুণের কাউকে না পাও, তবে নিজেকেই নিজের সাথী মনে কর।’
জনৈক আলেম বলেন, ‘বন্ধুত্ব কর কেবল নিম্নোক্ত দু’শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে। (১) তার সঙ্গে যে তোমাকে দ্বীনের শিক্ষা দেয়, যার দ্বারা তুমি উপকৃত হও। (২) তার সঙ্গে যাকে তুমি দ্বীনের শিক্ষা দাও আর সে তা গ্রহণ করে। উক্ত দু’প্রকার ছাড়া তৃতীয় প্রকার হতে দূরে থাক।’
সৎ সঙ্গ এবং অসৎ সঙ্গের উপমা : বন্ধু ও বন্ধুত্বের বিষয়ে আমরা একটি সুন্দর উপমা জানবো , যেটি প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) পেশ করেছেন, যেন আমরা জানতে পারি যে আমাদের কী ধরণের বন্ধু চয়ন করা প্রয়োজন। নবী (সা.) বলেন, ‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে- আতর বিক্রয়কারী এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতরওয়ালা তোমাকে নীরাশ করবে না, হয় তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে কিংবা তার নিকট সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে আর নাহলে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, অধ্যায়, ক্রয়-বিক্রয়, হাদিস নং : ২১০১)
এমন বন্ধুত্ব, যার বিনিময় জান্নাত : বন্ধুত্ব অনেক কারণে অনেক উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, কিন্তু কেবল এক প্রকার বন্ধুত্ব রয়েছে যা মানুষের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর। সেটা এতই মহৎ বন্ধুত্ব যার বিনিময় জান্নাত। সেই বন্ধুত্ব হচ্ছে, আল্লাহর কারণে বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব। অর্থাৎ কোন মুসলিম অন্য মুসলিম ভাইর সঙ্গে এই কারণে বন্ধুত্ব স্থাপন করে যে, সে আল্লাহকে ভালবাসে, আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। তার মাল-সম্পদ, মান-সম্মান, সৌন্দর্যতা ইত্যাদির কারণে নয়।
এই প্রকার বন্ধুত্বের অফুরন্ত ফযীলত ও সুফল সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস নিম্মে দেখা যেতে পারে-
(১) কিয়ামত দিবসে আরশের ছায়া তলে স্থান : হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার মর্যদার (আনুগত্বের) কারণে পরস্পরে বন্ধুত্বকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার ছায়াতলে ছায়া দিব, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, অধ্যায়, বির ওয়াস্ সিলা, হাদিন নং : ২৫৬৬)
(২) আল্লাহর ভালবাসা অর্জন : হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি নিজ গ্রামের বাইরে অন্য গ্রামে তার ভাইর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, ফলে তার রাস্তায় আল্লাহ তায়ালা এক ফেরেশতাকে পাহারাদার হিসাবে নির্ধারণ করেন, অতঃপর যখন সে তার নিকটে পৌঁছে, তখন ফেরেশতাগণ বলে, কোথায় যাচ্ছ? সে উত্তরে বলে, এই গ্রামে এক ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি। ফেরেশতা বলে, ওর প্রতি তোমার কোনো অনুগ্রহ আছে কি, যা তুমি সম্পাদন করতে যাচ্ছ? সে বলে, না, কিন্তু আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি। ফেরেশতা বলে, আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত, আল্লাহ তোমাকে ভাল বেসেছেন, যেমন তুমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভাল বেসেছো।’ (মুসলিম, অধ্যায়, বির ওয়াস্ সিলাহ্, হাদিস নং : ২৫৬৭)
(৩) ফেরেশতাগণের এবং দুনিয়াবাসীর ভালবাসা লাভ : নবী (সা.) বলেন, ‘ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালবাসে, তখন জিব্রীল (আ.) কে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ভালবাসি তাই তুমিও তাকে ভালবাসো। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন তাকে জিব্রীল (আ.) ভালবাসেন অতঃপর আকাশে ডাক দিয়ে বলেন, আল্লাহ তাআলা অমুককে ভালবাসেন তাই তোমরাও তাকে ভালবাসো। অতঃপর আকাশবাসী তাকে ভালবাসে। বর্ণনাকারী আরও বলেন, তারপর পৃথিবীতে তার গ্রহণযোগ্যতা দিয়ে দেয়া হয়। (ফলে লোকেরা তাকে ভালবাসে, পছন্দ করে)। আর আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন, তখন জিব্রীলকে ডাক দিয়ে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি, তাই তুমি তাকে ঘৃণা করো, তখন জিব্রীল (আঃ) তাকে ঘৃণা করে এবং আকাশবাসীকে সংবাদ দিয়ে বলে, আল্লাহ তায়ালা অমুককে অপছন্দ করে, তাই তোমরাও তাকে অপছন্দ করো। বর্ণনাকারী বলেন, তাই তারা সকলে তাকে অপছন্দ করে এবং যমীনেও সে অপছন্দনীয় হয়।’ (মুসলিম, অধ্যায়, বির ওয়াস্ সিলাহ, হাদিস নং : ২৬৩৭)
(৪) পূর্ণ ঈমানের পরিচয় : নবী (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।’ ( আবূ দাউদ)
কেউ কাউকে ভালবাসলে তাকে তা জানিয়ে দেওয়া প্রয়োজন: নবী (সা.) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোনো ভাইকে ভালবাসে, তাহলে সে যেন তাকে জানিয়ে দেয়।’ (তিরমিযী, অধ্যায়, যুহুদ, হাদিস নং : ২৫০২)
তিরমিযীর ভাষ্যকার মুবারকপূরী বলেন, ‘এটা এ কারণে যে, যখন সে তাকে এ বিষয়ে জানাবে, তখন তার অন্তর নরম হবে এবং তার ভালবাসা অর্জন হবে, ফলস্বরূপ সে তাকে ভালবাসবে এবং মুমিনদের মাঝে মৈত্রী বন্ধন স্থাপিত হবে ও মতভেদ দূর হবে।’ (তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৭/৬০)
পরিশেষে, মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি তিনি যেন আমাদের সৎ হওয়ার এবং সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকার এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই বন্ধুত্ব করার তাউফীক দেন।

০ Likes ৩ Comments ০ Share ৬৫৫ Views

Comments (3)

  • - মোঃসরোয়ার জাহান

    বেশ লাগলো ............ভিন্ন স্বাদ পেলাম কবি।শুভ কামনা রইল।

    • - প্রলয় সাহা

      ধন্যবাদ দিদি

    • Load more relies...
    - কেতন শেখ

    চমত্কার কবিতা! কবিকে অভিনন্দন।

    • - প্রলয় সাহা

      প্রণিপাত দাদা

    - বাঙলা বেলায়েত

    ভাল লেগেছে কবি। অভিনন্দন।

    • - প্রলয় সাহা

      ধন্যবাদ দাদা