Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

ইসলামে নারীর যৌন অধিকার (পর্ব-১)

ইসলামের সমালোচকরা অনেকে বুঝাতে চান যে, ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোনো মূল্য নেই, বরং এই ব্যাপারে পুরুষকে একতরফা অধিকার দেওয়া হয়েছে, পুরুষ যখন ইচ্ছা তখন যৌন চাহিদা পূরণ করবে আর স্ত্রী সেই চাহিদা পূরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকবে। এ ধারণার পেছনে কুরআন ও হাদিসের অসম্পূর্ণ পাঠের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বস্তুত কুরআনের কিছু আয়াত বা কিছু হাদিস দেখে কোনো বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, বরং তা অনেক ক্ষেত্রেই পাঠককে বিভ্রান্ত করতে পারে। কোনো বিষয় সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষাকে সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে হলে সেই সংক্রান্ত কুরআনের সবগুলো আয়াত এবং সবগুলো হাদিসকে সামনে রাখতে হবে। যা হোক, এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু দেখানো- ইসলামে নারীদের যৌন চাহিদার কোনো স্বীকৃতি আছে কি-না। এবার আসুন মূল আলোচনায়।
কেন এই দাবি : সূরা বাকারার ২২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর।’
হঠাৎ করে এই আয়াতাংশ কারো সামনে পেশ করা হলে মনে হতে পারে যে, এখানে পুরুষকে যখন ইচ্ছা তখন তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌনাচার অবাধ অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি স্ত্রীর সুবিধা-অসুবিধার দিকেও তাকানোর কোনো প্রয়োজন যেন নেই।
যারা এ ধারণার প্রচারণা চালান তারা সাধারণত এই আয়াতটি উল্লেখ করার পর তাদের ধারণার সমর্থনে কিছু হাদিসও উপস্থাপন করেন।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।’ (মুসলিম)
উপরোক্ত আয়াতাংশ এবং এই ধরণের কিছু হাদিস পেশ করে অনেকই এটা প্রমাণ করতে চান যে, ইসলাম কেবল পুরুষের যৌন অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নারীকে যৌন মেশিন হিসেবে যখন তখন ব্যবহারের ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে। সোজা কথায় ইসলামে যৌন অধিকার যেন একতরফাভাবে পুরুষের। আসলেই কি তাই?
উপরোক্ত আয়াত সংক্রান্ত বিভ্রান্তির নিরসন : মদিনার ইহুদিদের মধ্যে একটা কুসংস্কার এই ছিল যে, কেউ যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে পেছন দিক থেকে যোনিপথে সঙ্গম করত তবে বিশ্বাস করা হতো যে, এর ফলে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে। মদিনার আনসাররা ইসলামপূর্ব যুগে ইহুদিদের দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত ছিল। ফলে আনসারাও এই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিলেন। মক্কাবাসীদের ভেতর এই কুসংস্কার ছিল না। মক্কার মুহাজিররা হিজরত করে মদিনায় আসার পর, জনৈক মুহাজির যখন তার আনসার স্ত্রীর সঙ্গে পেছন দিক থেকে সঙ্গম করতে গেলেন, তখন এক বিপত্তি দেখা দিল। আনসার স্ত্রী এই পদ্ধতিকে ভুল মনে করে জানিয়ে দিলেন রাসুল (সা.) এর অনুমতি ব্যতিত এই কাজ তিনি কিছুতেই করবেন না। ফলে ঘটনাটি রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁছে গেল।
এ প্রসঙ্গেই কুরআনের উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়, যেখানে বুঝানো হচ্ছে, সামনে বা পেছনে যেদিক দিয়েই যোনিপথে গমন করা হোক না কেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। শস্যক্ষেত্রে যেদিক দিয়ে বা যেভাবেই গমন করা হোক না কেন তাতে শস্য উৎদনে যেমন কোনো সমস্যা হয় না, তেমনি স্বামী তার স্ত্রীর যোনিপথে যেদিক দিয়েই গমন করুক না কেন তাতে সন্তান উৎপাদনে কোনো সমস্যা হয় না এবং এর সঙ্গে ট্যারা চোখবিশিষ্ট সন্তান হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, পায়ুপথে গমন (Anal Sex) করা হারাম।
কাজেই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ইহুদিদের প্রচারিত একটি কুসংস্কারের মূলোৎপাটন, স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য না রেখে যখন তখন অবাধ যৌনাচারের অনুমোদন নয়।
ফেরেশতাদের অভিশাপ সংক্রান্ত হাদিসটির বিশ্লেষণ : এবার ফেরেশতাদের অভিশাপ করা সংক্রান্ত ওপরের হাদিসটার কথায় আসি। এই হাদিসটা বুখারিতেও এসেছে আরেকটু পূর্ণরূপে এভাবে- যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে (যেমন- সঙ্গম করার জন্য), আর সে প্রত্যাখান করে ও তাকে রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য করে, ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ করতে থাকে।
একটু ভালো করে লক্ষ্য করুন, স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ায় স্বামী রাগান্বিত হয়ে কী করছে? স্ত্রীর ওপর জোর-জবরদস্তি করে নিজের যৌন অধিকার আদায় করে নিচ্ছে? নাকি ঘুমিয়ে পড়েছে?
এই হাদিসে নারী কর্তৃক স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়ার কারণে স্ত্রীর সমালোচনা করা হলেও পুরুষকে কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে নিজ অধিকার আদায়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। আবার স্ত্রী যদি অসুস্থতা বা অন্য কোনো সঙ্গত ওজরের কারণে যৌনাচার হতে বিরত থাকতে চান, তবে তিনি কিছুতেই এই সমালোচনার যোগ্য হবেন না, কেননা ইসলামের একটি সর্বস্বীকৃত নীতি হচ্ছে, ‘আল্লাহপাক কারো ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
ইসলাম কি শুধু নারীকেই সতর্ক করেছে? : এটা ঠিক যে, ইসলাম স্ত্রীদেরকে স্বামীর যৌন চাহিদার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে, কিন্তু স্বামীকে নিজ চাহিদা আদায়ের ব্যাপারে উগ্র হওয়ার কোনো অনুমতি যেমন দেয়নি তেমনি স্বামীকেও স্ত্রীর যৌন চাহিদার প্রতি যত্মবান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম স্ত্রীকে বলেছে, যদি রান্নরত অবস্থায়ও স্বামী যৌন প্রয়োজনে ডাকে তবে সে যেন সাড়া দেয়, অন্য দিকে পুরুষকে বলেছে, সে যেন তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো আচরণ করে, স্ত্রীর কাছে ভালো সাব্যস্ত না হলে সে কিছুতেই পূর্ণ ঈমানদার বা ভালো লোক হতে পারবে না।
এই কথা জানার পরও কোনো পুরুষ কি স্ত্রীর সুবিধার প্রতি কোনোরূপ লক্ষ্য না রেখেই যখন তখন তাকে যৌন প্রয়োজনে ডাকবে? ইসলাম পুরুষকে এব্যাপারেও সাবধান করে দিয়েছে যে, নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে স্ত্রীর যৌন চাহিদার কথাকে সে যেন ভুলে না যায়।
অনেকে হয়ত ভাবছেন, কী সব কথা বলছি, কোথায় আছে এসব? (বাকী অংশ আগামী কাল-ইনশা আল্লাহ)

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৭৫ Views

Comments (0)

  • - নুসরাত জাহান আজমী

    চিঠি লিখতে সবসময়ই ভালো লাগে। কোন কিছু চিন্তা না করেই লিখে ফেললাম, এই লেখাটা আমার নিজের পর্যবেক্ষণে খুব কম সময় ছিল। সচরাচর এমনটা করি না। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন লেখা ব্লগে দিতে খুব ইচ্ছা করছিল। তাই এটা পোস্ট করে দিলাম।

    - সৌরভ শাওন

    চমৎকার লিখেছেন।

    তুই চলে যাবার আগে আমাকে কথা দিয়েছিলি, স্বাধীন দেশে আমরা দুজন একসাথে নতুন পতাকা নিয়ে সারা গ্রাম দৌড়াব। কথা দিয়ে কথা না রাখার মানুষ তো তুই না ভাইয়া। কবে ফিরবি তুই? আমি খুব যত্ন করে মায়ের শাড়ী কেটে একটা পতাকা বানিয়েছি। তুই দেখবিনা?

    এই অংশটুকু খুব সুন্দর হয়েছে।

    ওদিকে অপারেশনে যাবার আগে ভাই কি ভাবছে তা নিয়ে নীলুর কাছে একটা চিঠি লিখে ফেলতে পারেন তো সময় করে।

    অনেক অনেক ভালো থাকবেন ব্লগার।

    • - নুসরাত জাহান আজমী

       হুম, ইচ্ছে করলে পারব। চিঠি লিখতে তো ভালোই লাগে।
      চিঠিটা পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    - মেজদা

    গল্পের ঘটনা অনেক ঘটেছে একাত্তরে। কত ছেলে মাকে না বলে চলে গেছে মুক্তিযুদ্ধে আর ফিরে আসে নি। খুব হৃদয় স্পর্শ করে গেল।  ভাইকে তুই বলা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আলোর মিছিল নামে একটা সিনেমা হয়েছিল সেখানে মামা(রাজ্জাক)-কে তুই করে বলছে ভাগ্নি ববিতা। এই মামা-ভাগ্নি সম্পর্ক আমাকে সেই ছোট বেলায় আপ্লুত করেছিল। শেষ দৃশ্যে মামা যাওয়ার সময় ভাগ্নি বলেছিল-ছোট মামা, যাস নে। এর পরে গুইতে মামা মারা যায়। অনেকদিন পরে সেই সিনেমার চিত্র নাট্যকারের সাথে আমার পরিচয় হয়, আমি তাকে বলেছিলাম-উদয়ন দা, এই সংলাপটা আপনার মাথায় কিভাবে এলো। যা আজও আমাকে ভাবায়। খুব সুন্দর লিখেছো। অনেকগুলো হাততালি তোমার জন্য। শেষে বলছি-তুই এত সুন্দর লিখিস কিভাবে?

    • - নুসরাত জাহান আজমী

      ঐ সিনেমাটা আমার খুব পছন্দের সিনেমার তালিকায় আছে।
      লাস্টের লাইনটার জন্য ধইন্না ধইন্না, মেজদা।

    • Load more relies...
    Load more comments...