Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

ইসলামি সমাজে অমুসলিমদের মর্যাদা

বিশ্বনবী (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদিনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল একটি মৌলিক নাগরিক অধিকারপূর্ণ সাম্যের সমাজ। মহানবীর (সা.) প্রদর্শিত জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘প্রতীচ্য যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রাচ্যের আকাশে তখন উদিত হলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং আর্ত পৃথিবীকে তা দিল আলো ও স্বস্তি। ইসলাম একটি মিথ্যা ধর্ম নয়। শ্রদ্ধার সঙ্গে হিন্দুরা তা অধ্যয়ন করুক, তাহলে আমার মতোই তারা একে ভালোবাসবে।’
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো অমুসলিম নাগরিককে যে অত্যাচার করল বা তার অধিকার ক্ষুণ্ন করল বা তাকে সাধ্যাতীত পরিশ্রম করালো বা তার অমতে তার থেকে কিছু নিল কেয়ামতের দিন আমি হবো তার বিপক্ষে মামলাকারী।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দিলো আমি তার পক্ষে বাদী হব। আর আমি যার বিরুদ্ধে বাদী হব কিয়ামতের দিনে আমি হব বিজয়ী।’
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে অমুসলিমকে উত্ত্যক্ত করল সে আমাকে উত্ত্যক্ত করল, আর যে আমাকে উত্ত্যক্ত করল আল্লাহকেই সে উত্ত্যক্ত করল।’
অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করা সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে সে বেহেশতের ঘ্রাণও ভোগ করতে পারবে না। অথচ বেহেশতের সুঘ্রাণ ৪০ বছরের দূরত্ব হতেও অনুভব করা যাবে।’
(অমুসলিমের প্রতি ইসলামের উদারতা- ডা. ইউসুফ আল কারজাভি- অনুবাদক, মাহমুদুল হাসান- পৃষ্ঠা : ২১-২২)।
বিশ্বমানবতার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিমদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতো এবং তাদের ধনসম্পদ আমাদের ধনসম্পদের মতো।’
অমুসলিমদের জানমাল মুসলমানদের নিজের জানমালের মতো পবিত্র ও নিরাপত্তাযোগ্য।
মহানবী সা. একদিন মসজিদে নববীতে কিছু সঙ্গেীকে নিয়ে আলোচনায় মশগুল ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুইন এসে মসজিদের ভেতরে এক কোণে প্রস্রাব করেছিল। রাসুল সা.-এর সঙ্গীরা ওকে প্রহার করতে উদ্যত হলে মহানবী (সা.) তাদের নিবৃত্ত করলেন। প্রস্রাব করা শেষ হলে শান্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) তাকে বুঝিয়ে বললেন, ‘ওটা মুসলমানদের ইবাদতখানা, প্রস্রাবের স্থান নয়।’ এ বলে তিনি তাকে বিদায় দিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে মসজিদের প্রস্রাব ধুয়ে দিলেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং কুরআনে বলেছেন, ‘তোমার ধর্মের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেনি, তোমার বসতি থেকে তোমাকে উচ্ছেদ করেনি, তাদের প্রতি তোমার দয়ালু হওয়া উচিত এবং তাদের সঙ্গে ন্যায়ানুগ আচরণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায় ভালোবাসেন।’ (সুরাসূরা আল মুমতাহিনা, আয়াত :৮)
অন্যের উপাসনাস্থল ভেঙে ফেলার অনুমতি ইসলাম দেয়নি।
হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসনামলের আগে খ্রিষ্টানদের একটি গির্জা ভেঙে মুসলমানরা মসজিদ বানিয়েছিলেন। ওমর (রহ.) খলিফা হলে চারদিকে তার ন্যায়পরায়ণতার কথা ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিষ্টানরা সুযোগ বুঝে তাদের গির্জা ভেঙে মসজিদ করার অভিযোগ দায়ের করল। খলিফা ওই প্রদেশের গভর্নরকে তৎক্ষণাৎ এক ফরমান পাঠিয়ে খ্রিষ্টানদের গির্জা যেমনটি ছিল ঠিক তেমনিভাবে তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। মুসলিম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বহু অনুনয় বিনয় সত্ত্বেও খলিফা তার নির্দেশের বিষয়ে অটল থাকলেন। এটাই হলো ইসলামের আদর্শ।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে যখন মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) দায়িত্ব পালন করছিলেন, সে সময় একদিন আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেল। কেউ একজন যিশু খ্রিষ্টের প্রস্তর নির্মিত মূর্তির নাক ভেঙে ফেলেছে। খ্রিষ্টানরা ধরে নিল যে এটা মুসলমানদের কাজ। তারা উত্তেজিত হয়ে উঠল। খ্রিষ্টান বিশপ অভিযোগ নিয়ে এলেন আমর ইবনুল আস (রা.) এর কাছে। আমর ইবনুল আস কথা শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন। তিনি ক্ষতিপূরণস্বরূপ মূর্তিটি নতুনভাবে তৈরি করে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রিষ্টান নেতাদের প্রতিশোধ স্পৃহা ছিল অন্যরকম। তারা চাইল মুহাম্মদ (সা.)-এর মূর্তি তৈরি করে অনুরূপভাবে নাক ভেঙে দিতে। হযরত আমর কিছুক্ষণ নীরব থেকে খ্রিষ্টান বিশপকে বললেন, ‘আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আমাদের যেকোনো একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।’ খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো। পরদিন খ্রিষ্টান ও মুসলমান বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রা.) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, ‘এ দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাসিকা ছেদন করুন।’এ কথা বলেই বিশপকে একখানি তীক্ষ্ণ ধারালো তরবারি হাতে দিলেন, জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিষ্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সে নীরবতায় নিঃশ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয়। সহসা সেই নীরবতা ভঙ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলো। চিৎকার করে বলল, ‘আমিই দোষী, সিপাহসালার কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এইত আমার হাতেই আছে। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নিচে নাসিকা পেতে দিল। স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সবাই। বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। তরবারি ছুড়ে বিশপ বললেন, ‘ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মদ (সা.), যার মহান আদর্শে আপনাদের মতো মহৎ উদার নির্ভিক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে। যিশু খ্রিষ্টের প্রতি মূর্তিই অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও অন্যায় হবে যদি অঙ্গহানী করি। সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।’
পরধর্ম সহিষ্ণুতার এ জ্বলন্ত উদাহরণ আজো বিশ্ববাসীকে অবাক করে।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.) এর সময়ে বকর বিন ওযাইল গোত্রের একজন লোক হিরার একজন অমুসলিমকে হত্যা করেছিল। নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের হাতে হত্যাকারীকে দিয়ে দেওয়ার জন্য খলিফা ওমর (রা.) নির্দেশ দিলেন এবং তা করা হলো। নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা হত্যাকারীকে হত্যা করে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।
তৃতীয় খলিফা ওসমান (রা.) এর শাসনামলে হযরত ওমরের এক ছেলে হরমুজান নামক জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করে। খলিফা ওসমানের নির্দেশে তাকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) এর শাসনামলে একজন অমুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার জন্য একজন মুসলমান অভিযুক্ত হয়। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তার প্রাণদণ্ডের নির্দেশ হয়। ইত্যবসরে নিহত ব্যক্তির ভাই এসে জানাল, সে হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিয়েছে। হযরত আলী প্রশ্ন করলেন, ‘তারা কি তোমাকে চোখ রাঙ্গিয়েছে? হুমকি দিয়েছে? এ জন্যই তুমি বাধ্য হয়ে ক্ষমা করে দিচ্ছ?’
উত্তরে লোকটি বলল, না, ‘হত্যাটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং তারা এর রক্তপণ দিয়ে দিয়েছে। এতেই আমি রাজি।’
তখনই শুধু হযরত আলী অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যারা আমাদের নিরাপত্তায় থাকবে, তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতোই পবিত্র এবং তাদের অর্থসম্পত্তি আমাদের অর্থসম্পদের মতোই নিরাপদ।’
ইসলামে সুবিচার ও আইনের শাসনের এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরও রয়েছে।
পরে যখন ইসলামি সমাজের অধঃপতন ঘটেছিল, তখনো ইসলামি সুবিচারের অতুলনীয় দৃষ্টান্তের অভাব দৃষ্ট হয় না। একজন হিন্দু প্রজা সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে কাজীর আদালতে মামলা করেন। রাজ্যের একচ্ছত্র সুলতান মাহমুদ একজন প্রজার অভিযোগের জবাব দানের জন্য কাজীর সামনে আদালতে হাজির হন।
শেরাশাহ সুরী একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে অসদাচরণ করার জন্য তার ছেলেকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন।
সম্রাট আওরঙ্গজেব একজন অমুসলিম নারীর অবমাননার অপরাধে তার প্রধানমন্ত্রী আসাদ খানের ছেলে মির্জা তাফাখুরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন।
ইসলামি সমাজে অমুসলিমদের জীবনযাত্রা, ধন, প্রাণের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা মুসলিম নাগরিকদের সমতুল্য। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নায়ক মহানবী সা. এর মহানুভব অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শের অনুসারীদের আরো কিছু ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।
হযরত আলী (রা.)-এর খেলাফতকালে জনৈক মুসলিম কর্তৃক একজন ‘জিম্মি’নিহত হয়। হযরত আততায়ী মুসলমানের প্রাণদণ্ডের আদেশ দেন।
হযরত আলী (রা.) সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, ‘আমরা যাদের জিম্মা বা দায়িত্ব নিয়েছি, তাদের রক্ত আমাদের রক্ততুল্য।’
উমাইয়া বংশের প্রবল প্রতাপান্বিত খলিফা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের বিরুদ্ধে জনৈক খ্রিষ্টান নাগরিক হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করে। অভিযোগ সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য নির্দিষ্ট আদালতে হাজির হওয়ার জন্য খলিফাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একজন সাধারণ লোকের অভিযোগের উত্তরে সাধারণেরই মতো আদালতে হাজির হতে আরও পাঁচজনের মতো আসামির নির্দিষ্ট আসনে দাঁড়াতে ও জবাবদিহি করতে খলিফা সঙ্কোচ করেন। তাই তিনি উকিল নিযুক্ত করতে চান। কিন্তু ওমর তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তোমার নিজেকে হাজির হতে হবে, নিজেকেই বলতে হবে নিজের কথা।’অগত্যা তাকে আদালতে হাজির হতে হয়। বিচারে খলিফা হিশামের বিরুদ্ধে ডিক্রি প্রদান করা হয়।
মুসলিম সেনাবাহিনী সিরিয়ায় জনৈক অমুসলিম চাষির ফসল নষ্ট করেছে বলে সে খলিফা উমরকে (রা.) জানায়। ক্ষতিপূরণ স্বরূপ খলিফা তাকে ১০ সহস্র মুদ্রা প্রদান করেন।
ইসলাম কোনো ধর্মীয় উন্মাদনা, বিদ্বেষ কিংবা পরমৎ অসহিষ্ণুতার নাম নয়। ইসলাম মানবতা, মনুষ্যত্ব, সাম্য ও শুভেচ্ছার নাম। ইসলামের আবেদন দেশ-কাল-বর্ণভাষা কিংবা গোত্রের সীমানায় আবদ্ধ নয়। এর প্রীতি সার্বজনীন ও শাশ্বত।
মানবতা যেখানে বিধ্বস্ত, ইসলাম সেখানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা নিয়ে হাজির হয়েছে। কুরআনের ভাষায়, ‘মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বা জীব।’
এ জন্যই বেলাল রা.-এর মতো নির্যাতিত কালো মানুষরাও দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সমবেত হয়েছিলেন।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৩৮৬ Views

Comments (2)

  • - মাসুম বাদল

     মৃত্যুদিবসে হাংরি আন্দোলন জনক, কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর অন্যতম সেরা কবির উদ্দেশ্যে রইল আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।