Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

ইসলাম ও গণতন্ত্র

ইসলাম নিঃসন্দেহে একটি সর্বোৎকৃষ্ট এবং মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে আর্ন্তজাতিক জীবন পর্যন্ত যার মতবাদগুলোর অবস্থান অন্য সকল মতবাদের ঊর্ধ্বে। বলা হয় ‘ইসলাম ইজ দি বেস্ট পলিসি’।
বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে কয়টি রাজনৈতিক মতবাদ প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে গণতন্ত্র হচ্ছে অন্যতম। গণতন্ত্র ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে আদর্শিক ও শাসন ব্যবস্থার নীতি নির্ধারন বিষয়ক সুস্পষ্ট ব্যবধান রয়েছে।
রাষ্ট্র
এ্যারিস্টটল তার ‘রাজনীতি’গ্রন্থে রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় লিখেছেন, ‘পরিপূর্ণ ও স্বনির্ভর জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র।’
প্রেসিডেন্ট উড্রোর মতে, ‘রাষ্ট্র হল কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত একটি জনসমষ্টি।’
অধ্যাপক গার্নারের মতে, ‘রাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি জনসমাজ, যা সংখ্যায় অল্পাধিক-বিপুল; যা কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বাস করে, যা কোনো বাইরের শক্তির স্বাধীন বা প্রায় স্বাধীন এবং যার এমন একটি সুগঠিত শাসনতন্ত্র আছে যার প্রতি প্রায় সকলেই আনুগত্য স্বীকার করে।’
উপরক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে রাষ্ট্রের চারটি উপাদান বের হয়ে আসে।
১. জনসমষ্টি
২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
৩. সরকার
৪. সার্বভৌমত্ব।
ইসলামী রাষ্ট্র
ইসলামী রাষ্ট্র একটি আদর্শ ভিত্তিক দ্বীনি রাষ্ট্র। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মাধ্যমে জনজীবনে ইসলামী জীবন দর্শন উপস্থাপন করা এই রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য। এটি শুধু জাগতিক কোনো সংগঠন নয় বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ধর্মের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হল- এ বিশ্ব আল্লাহর এবং সৃষ্টিও তারই। কাজেই শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রবর্তনের অধিকারও তারই। তার শাসন ব্যবস্থা মেনে তারই অনুগত হয়ে জীবন-যাপন করার মধ্যেই যথার্থ কল্যাণ নিহিত। সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং বিধানদাতাও তিনিই। ইসলামী রাষ্ট্রে এমন কোনো আইন ও বিধান প্রণয়ন করা যাবে না, যা কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলামের পরিপন্থি।
আল্লাহ বলছেন, ‘আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব (সার্বভৌমত্ব) তারই।’ (৫৭ : ২)
হুকুমাতের মূল মালিক আল্লাহ মানুষের প্রতি রাষ্ট্র পরিচালনার যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা একটি প্রতিনিধিত্ব মূলক দায়িত্ব। এটি একটি পবিত্র আমানত।
ইসলামী রাষ্ট্রের আরেকটি মূলনীতি হল- তা শূরা বা পরামর্শ ভিত্তিক পরিচালিত হবে অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও দ্বীনের বিষয়ে প্রজ্ঞাবান ফকীহ্গণের সঙ্গে এবং ইবাদতগুযার ব্যক্তিগনের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে আঞ্জাম দিতে হবে।
আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং কাজ-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর।’ (৩ : ১৫৯)
ইসলামী আইন সকলের জন্য সমান হবে এবং ইসলামী রাষ্ট্র সকল মানুষের প্রতি সুবিচার স্থাপন করবে। এতে কার প্রতি কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। রাষ্ট্রের সাধারণ ব্যক্তি থেকে আরাম্ভ করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত সকলের উপর ইসলামী আইন সমভাবে প্রয়োগ করা অপরিহার্য।
কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে।’ (৪২ : ১৫)
দ্বীনই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। ইসলামী রাষ্ট্র, মানব কল্যানের উদ্দেশ্যে দ্বীন ইসলামকে গ্রহণের আহবান জানায় বিশ্ববাসীকে। তবে, ইসলাম অন্য ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করে।
ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- এমন একটি সমাজ গঠন করা যেখানে সকল মানুষ জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তাআলার বিধানের একনিষ্ঠ অনুগামী হবে, নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজের নিষেধ করবে।
আল্লাহ বলছেন, ‘তারা এমন লোক যে, আমি তাদেরকে পৃথিবীতে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজের নিষেধ করবে।’ (২২ : ৪১)
এই আয়াত থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ইসলামী রাষ্ট্রের বুনিয়াদী লক্ষ্যসমুহ হচ্ছে নিম্নরুপ-
১. নামায কায়েম করা
২. যাকাত আদায় করা
৩. সৎকাজ তথা ন্যায় ও কল্যানকর কাজের আদেশ করা ও তা প্রতিষ্টা করা
৪. অসৎকাজ তথা সকল অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখা।
এখানে নামায কায়েম করার কথা বলে শারীরিক যত ইবাদত আছে এসবের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং যাকাতের আদায়ের কথা বলে সমস্ত আর্থিক ইবাদতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রের কাজ হল, এসব ইবাদতের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা, যাতে প্রত্যেক নাগরিক নির্বিঘ্নে তা আদায় করতে পারে। কেউ যদি তা পালন না করে বা বাধার সৃষ্টি করে, তার জন্য প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করা। এগুলো হল ইসলামী রাষ্ট্রের মহান দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই একটি সুন্দর ও আদর্শ সমাজ এবং কাঙ্খিত রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব।
ইসলামী রাষ্ট্র খিলাফত ও শূরার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। জনসাধারণের অধিকার ও ক্ষমতা আল্লাহর বিশেষ দান যা ওই জনপদের অধিকাংশ জনমতের গ্রহণযোগ্যতায় কুরআন ও হাদিসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং সকল বিধি বিধানের মূল উৎস হবে কুরআন ও হাদিস। এতদুভয়ের পরিপন্থী কোনো মত ইসলামী রাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্য হবে না। ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কুরআন, হাদিস ও ফিকহ গ্রন্থে যে সব জিনিস বৈধ এবং যে সব জিনিস অবৈধ ঘোষিত হয়েছে তা-ই বৈধ বা অবৈধ হিসাবে গণন্য হবে।
ইসলামী রাষ্ট্রে ইমাম বা খলিফা (রাষ্ট্রপ্রধান) শূরার ভিত্তিতে কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। ইসলামী রাষ্ট্রের যিনি প্রধান হবেন, তিনি হবেন সবচেয়ে আইনবেত্তা ও প্রজ্ঞাবান আলিম। আল্লাহর হুকুমের অনুগত থেকে গণরায়কে সঙ্গে নিয়ে তিনি আজীবন এ পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন। এটি আল্লাহ নির্ধারিত শরীয়াহ্ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা।
গণতন্ত্র
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যাক্তিগতভাবে এতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে মানুষ হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই নীতিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রসুলের কোনো কর্তৃত্ব স্বীকৃত হয় না।
গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে মানুষই সমস্ত ক্ষমতার উৎস। আইন রচনাকারী তারাই। মানুষের ঊর্ধ্বে এমন কোনো উচ্চতর সত্তা এখানে স্বীকৃত নয় যার বিধান পালন করতে মানুষ বাধ্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের সমষ্টিগত ইচ্ছা ও বাসনাই হয় আসল লক্ষ্য এবং তা পূর্ণ করার জন্যই রাষ্ট্র একান্তভাবে নিয়োজিত থাকে।
গণতন্ত্রের মূল থিউরি হল, ‘গভর্নমেন্ট অব দি পিপল, বাই দি পিপল, ফর দি পিপল’ - ‘মানুষের উপর মানুষের দ্বারা পরিচালিত মানুষের শাসন।’
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণ যেহেত সমস্ত ক্ষমতার উৎস, তাই ভাল-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, এমনকি বৈধ ও অবৈধ ইত্যাদি বিষয়াদি সাব্যস্ত করার অধিকার মানুষের। এখানে ভোটাধিকারের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে যে কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন এবং তা একটি নির্ধারিত মেয়াদে। এটি মানুষের মনগড়া মতবাদে পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা।
ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্যটা যেখানে
আগেই বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান চারটি।
১. জনসমষ্টি
২. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড
৩. সরকার
৪. সার্বভৌমত্ব
ইসলাম, রাষ্ট্রের মৌলিক চারটি উপাদানের প্রথম তিনটিকে স্বীকার করে। কিন্তু এই সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য নির্দিষ্ট করে। আল্লাহ্ তাআলার প্রভুত্ব, একচ্ছত্র মালিকানা এবং নিরংকুশ শাসন-ক্ষমতা সকল দিক থেকেই অখণ্ড, অবিভাজ্য এবং অংশীদারহীন।
আল কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘তার সার্বভৌমত্বে কারো কোনো অংশীদার নেই।’ (১৭ : ১১১)
মূলকথা হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারি আর এটাই তাওহীদের মূলমন্ত্র। এ আকীদা পোষণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।
কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘আর আল্লাহ্, তিনি ব্যতিত কার সার্বভৌমত্ব নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।’ (৩ : ২)
মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন। তাদের এ স্বাধীনতা কোনোভাবেই খর্ব করা যাবে না। মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের বুনিয়াদি নীতিমালা সমুহের অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে কোনোরুপ শিথিলতা গ্রহণযোগ্য নয়। ভৌগলিক স্বাধীনতা এক প্রকার স্বাধীনতা, তবে তা প্রকৃত স্বাধীনতা নয়। মানুষ যদি মানুষের রচিত আইন শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়, তবে ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন করা সত্ত্বেয় তারা পরিপূর্ণ স্বাধীন নয়, কারণ তাকে আদর্শিক স্বাধীনতা হাসিল করতে হবে। একজন মসলমান কখনো মানবীয় আদর্শের অনুসারি হতে পারে না।
মহাশক্তিধর, সার্বভৌম ক্ষমতার অধীকারী আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ইমান এনে যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে, তারা যদি আদর্শিকভাবে ইসলামকে, এর হুকুমাতকে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে চর্চা না করে, এ আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশগ্রহণ না করে, তবে তারা অবশ্যই ইমানের দাবিতে মিথ্যাবাদী এবং তাদের শেষ পরিনাম অশুভ। আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি বিশ্বাস এবং কুরআনের মত সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও যারা এসব বিষয়কে অমান্য করে চলে, আল্লাহ তাদের হিদায়তের পথকে রুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন, ফলে তারা দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন অরাজকতা করে বেড়ায়। তাদের ভাগ্য কতইনা মন্দ।
‘আর যে ব্যক্তি ইসলামী আদর্শ ব্যতিত অন্য কোনো আদর্শকে নিজেদের জীবন ব্যবস্থা হিসাবে অনুসরণ করবে বা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবে, সেটা তার কাছ থেকে কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না, পরকালে এরাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’
কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে, ‘আল্লাহ সে জাতিকে কিভাবে হিদায়ত দান করবেন যারা ইমান আনার পর, তাদের নিকট একজন সত্যনিষ্ট রসুল এবং সুস্পষ্ট পথনিদের্শনা আল-কুরআন আসার পরও এসব বিষয়কে অস্বীকার করে? বস্তুত আল্লাহ এরকম কোনো জালিম জাতিকে হিদায়ত দান করেন না।’ (৩ : ৮৫)

১ Likes ০ Comments ০ Share ৪১৭ Views