Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইংরেজ কবি, দ্যা বার্ড অফ অ্যাভন উইলিয়াম শেকসপিয়রের ৩৯৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, কবি এবং নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের (William Shakespeare)। তাকে ইংরেজি ভাষার সর্বকালের সেরা লেখক এবং পৃথিবীর অন্যতম সেরা নাট্যকার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাকে অনেক সময়ই ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি এবং "দ্য বার্ড অফ অ্যাভন" (অথবা শুধু "দ্য বার্ড") বলা হয়। তার রচনাগুলো পৃথিবীর সকল প্রধান ভাষায়ই অনূদিত হয়েছে এবং তার নাটক এখনও সবচেয়ে বেশী মঞ্চস্থ হয়। এখন পর্যন্ত তার ৩৮টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, ২টি দীর্ঘ বর্ণনামূলক কবিতা এবং বেশ কিছূ অন্যান্য ধরণের কবিতা টিকে আছে। শেক্সপিয়রের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তেমন কোনো নথিভুক্ত তথ্য পাওয়া যায় না। যেমন তার চেহারা, ধর্মীয় বিশ্বাস, এমনকি তার নামে প্রচলিত নাটকগুলো তারই লেখা, নাকি অন্যের রচনা তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। ১৬১৬ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা নাট্যকার। বরেণ্য নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের ৩৯৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(স্ট্র্যাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে জন শেকসপিয়রের বাড়ি)
উইলিয়াম শেকসপিয়র ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল স্ট্যাটফোর্ড আপঅন অ্যাভনে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা মতভেদ আছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে একজন গবেষক ভুলবশত ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল তারিখটিকে শেকসপিয়রের জন্মদিন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। পরে তারিখটি জীবনীকারদের কাছে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। কারণ, শেকসপিয়র মারা গিয়েছিলেন ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল। সেই থেকে ২৩ এপ্রিল, সেন্ট জর্জস ডে'র দিনে শেক্সপিয়রের জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। তবে ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল তাঁর ব্যাপ্টিজম সম্পন্ন হয়। উইলিয়াম শেকসপিয়রের পিতা জন শেকসপিয়র এবং মাতা মেরি আরডেন। পিতা জন শেকসপিয়র ছিলেন স্ট্যাটফোর্ড অন অ্যাভন শহরের মেয়র। তিনি একেবারেই নিরক্ষর ছিলেন। তবুও সেই সময়কার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তিনি শহরের মেয়র হতে পেরেছিলেন। সে যুগে ব্যবসায়ীরাই নগরের প্রশাসন ব্যবস্থায় শরিক হতে পারত। তার মা মেরি আরডেন ছিলেন এক ধনী ভূম্যধিকারী কৃষক পরিবারের সন্তান। শেকসপিয়ার ছিলেন পিতামাতার আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। অধিকাংশ জীবনীকারদের মতে, উইলিয়াম শেকসপিয়র পড়াশোনা করেছিলেন তার বাড়ি থেকে পৌনে এক মাইল দূরে অবস্থিত স্ট্যাটফোর্ডের কিংস নিউ স্কুলে। যদিও এর কোনো নথিগত তথ্য নেই। এই স্কুলেই তার শৈশব কেটেছে। এখানে তিনি গ্রিক ও লাতিন ভাষা লিখতে-পড়তে শিখেছিলেন।

(শেকসপিয়রের স্ত্রী অ্যানি হ্যাথওয়ে)
শেকসপিয়র ১৮ বছর বয়সে একজন কৃষককন্যা অ্যানি হ্যাথওয়েকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন শেকসপিয়রের চেয়ে বয়সে আট বছরের বড়। খুবই তাড়াহুড়োর মধ্যে দিয়ে তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল। ওরসেস্টরের চ্যান্সেলর "ম্যারেজ ব্যানস" প্রচলিত প্রথায় তিন বার পাঠের বদলে মাত্র এক বার পাঠের অনুমতি দেন। বিয়ের সময় অ্যানি হ্যাথওয়ে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ১৫৮২ সালের ২৭ নভেম্বর এই বিয়েটি রেজিস্ট্রি হয়। অ্যানি হ্যাথওয়ে বিয়ের ছয় মাস পর একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। তার নাম ছিল সুজানা। পরে অ্যানির গর্ভে শেকসপিয়রের আরও দুটি সন্তানের জন্ম হয়েছিল। তারা হলেন যমজ সন্তান হ্যামলেট ও জুডিথ। যমজ সন্তানের জন্মের পর শেকসপিয়রের পরবর্তী ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৯২ সালে লন্ডনের একটি মঞ্চদৃশ্যের বর্ণনায়। ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত বছরগুলিকে বিশেষজ্ঞেরা তাই শেকসপিয়রের জীবনের "হারানো বছর" বলে উল্লেখ করে থাকেন। জীবনীকারেরা নানা অপ্রামাণিক গল্পের ভিত্তিতে এই পর্বের এক একটি বিবরণ প্রস্তুত করেছেন। শেকসপিয়রের প্রথম জীবনীকার তথা নাট্যকার নিকোলাস রো স্ট্র্যাটফোর্ডের একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করে বলেছেন, হরিণ রান্না করার অপরাধে বিচারের হাত থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন শেকসপিয়র।তবে এই সব গল্পের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

শেকসপিয়র তার কর্মজীবনের শুরু থেকেই ট্র্যাজেডি রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তবে তিনি ঠিক কবে থেকে লেখা শুরু করেছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে তিনি লন্ডনে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ১৫৮৫ এবং ১৫৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শেকস পিয়র লন্ডনে একটি সফল কর্মজীবন শুরু করেন অভিনেতা, লেখক এবং একটি নাট্য সংস্থার আংশিক মালিক হিসেবে। কিছু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা যায়, ১৫৯২ সালের দিকে তার লেখা বেশ কিছু নাটক লন্ডনে মঞ্চস্থ হয়েছিল। ষোলো শতকের শেষে তার লেখনীর মাধ্যমে তিনি খ্যাতির শিখরে উঠে যান। তার প্রারম্ভিক নাটকগুলো ছিল মূলত কমেডি এবং ইতিহাসবিষয়ক। তার মধ্যে ছিল হ্যামলেট, কিং লিয়ার, ওথেলো এবং ম্যাকবেথের মতো ইংরেজি ভাষার যুগশ্রেষ্ঠ অমর গাথা। তারপর প্রায় ১৬০৮ সাল পর্যন্ত তার রচনা ছিল প্রধানত ট্র্যাজেডি বিষয়ক। তার সর্বাধিক প্রশংসিত ট্র্যাজেডি নাটকগুলো রচিত হয়েছিল ১৬০১ থেকে ১৬০৮ সালের মধ্যে। তার রচিত ট্র্যাজেডি বা বিয়োগান্ত নাটকগুলো 'শেকসপিয়র ট্র্যাজেডি' নামে পরিচিত। শেকসপিয়রের প্রথম যুগের ট্র্যাজেডি রচনাগুলোর মধ্যে টাইটাস অ্যাড্রোনিকাস অন্যতম। এর কিছু কাল পর তিনি রচনা করেন ভালোবাসার অবিস্মরণীয় উপাখ্যান 'রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট'। শেষ জীবনে কিছু ট্র্যাজিক কমেডিও লিখেছিলেন তিনি। ১৬১২ সালে শেক্সপিয়র তার কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

শেকসপিয়র ২৫ বছর ধরে রঙ্গমঞ্চকে তার জীবনের অঙ্গীভূত করে নিয়েছিলেন। তার কাছে হয়তো মনে হয়েছিল, জীবনটাই এক রঙ্গমঞ্চ। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই, শেক্সপিয়রের জীবন সম্পর্কে এই উপলব্ধি গ্রিক ও রোমের মর্মকোষ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন দ্যা বার্ড অফ অ্যাভন উইলিয়াম শেকসপিয়র। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। পৃথিবীর অন্যতম সেরা নাট্যকার শেকসপিয়রের ৩৯৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বরেণ্য নাট্যকার উইলিয়াম শেকসপিয়রের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৪৩১ Views