Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সালাহ্‌ আদ-দীন

১০ বছর আগে

আহসান হাবীব ইমরোজের "মোরা বড় হতে চাই"

সুতরাং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো এই-

 ১. হয়,বিশ্ব প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও হতাশা, মারামারি, হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে যাবে।

 ২. অথবা, আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে – যাদের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আদর্শ ইসলাম আছে। যাতে করে আমরা এর সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় এবং তা প্রয়োগ করতে পারি।

সুতরাং আমাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো ইসলামের শক্তিকে আরো সতেজ করার পাশাপাশি, বিশ্বমানের যোগ্যতা, দক্ষতা আর প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন। যাতে করে আর ধ্বংসোন্মুখ পাশ্চাত্যের মুখাপেক্ষী নয় – বরং আমরাই দিতে পারি বিশ্বে আবার নেতৃত্ব। শুধু নেতৃত্ব লাভের জন্যই কি এটা দরকার? না, বরং বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও অনাবিল শান্তির জন্যই এটা দরকার। কি, প্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা কি পারবে আজকের বিশ্বেও শাসক পাশ্চাত্যের মোকাবেলায় যোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে? হ্যাঁ তোমাদের পারতেই হবে এবং তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। কারন বিশ্ব আজ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্যারাডাইজ লস্টের কবি, মহাকবি মিল্টন বলেছেন : The childhood shows the man as morning as morning shows the day.

এসো আবার তাকাই এই ক্ষুদে সুমো কুস্তিগীর দিকে, সে যেমন সাহস নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোনিশিকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে; চ্যালেঞ্জ করেছে; আমরাও ঠিক তেমনি যোগ্যতা অর্জনের যুদ্ধে শক্তিশালী পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করবো না, বরং তাকে হারিয়ে দেব, তাকে চ্যালেঞ্জ করবো। সবাই বলো, ইনশাআল্লাহ।

অধিকাংশ সময় একটা সত্য-কৌতুক দিয়ে শুরু করা আমার বদ অভ্যাস। আজকেও তার ব্যতিক্রম করার ইচ্ছে নেই। তবু; একটু ব্যতিক্রম, কৌতুকটা হবে সবার শেষে। আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জাপানের দক্ষিণের দ্বীপ ওকিনাওয়ার নাগো শহরে মিলিত হন। এই আটটি দেশকে বলা হয় জি এইট (জি-৮)। তোমাদের মনে রাখার সুবিধার্থে দেশগুলির নাম বলছি আমেরিকা, জাপান, কানাডা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইটালী, জার্মানী ও রাশিয়া। যদিও গত পাঁচ বছর জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তবুও সামিটের আয়োজনে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়। বৃটেনের টেলিগ্রাফ লিখেছে, এর আগে জি এইট সামিটে অন্যান্য দেশে যত টাকা ব্যয় করা হয়েছিল জাপান এবার তার পঞ্চাশ গুন বেশি খরচ করেছে। এ ব্যয়ের পরমাণ হলো ৮০ বিলিয়ন ইয়েন অর্থাৎ ৫০০মিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড। তোমরা জানতে চাও বাংলাদেশী টাকায় কত হতে পারে? প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির প্রায় সোয়া কোটি শিশুর শিক্ষার খরচ চালানো যেত। এটাও এক ধরনের কৌতুক বটে! যে একেকজন রাষ্ট্রপ্রধানের পিছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ দরিদ্রশিশুর সার্বিক শিক্ষার ব্যয়। এবার চলো ধনাঢ্যতায় হিমালয় সমান সেই জাপানের আরেকটা চিত্র দেখি। সামিটের মাস খানেক আগে জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মি. মোরি গিয়েছিলেন জি এইটের লিডারদের ফর্মাল দাওয়াত দিতে এবং যে সব বিষয়ে আলোচনা হবে তার আইডিয়া দিতে। তখন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই ছিল তার ক্লিন্টনের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। সাক্ষাৎকারের আগে মোরিকে তার সহযোগীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রথম সাক্ষাতে মোরি যেন দু ’একটি কথা ইংরেজিতে বলেন। উল্লেখ্য, জাপানের প্রধানমন্ত্রী অন্য কোন দেশের নেতাদের সাথে কথা বলার সময় সর্বদা দোভাষীর সাহায্য নেন। যাই হোক, মোরিকে কয়েকটি ইংরেজি বাক্য শেখানো হয়। আমেরিকায় গিয়ে ক্লিনটনের সাথে দেখা করার সময় মোরি প্রথম ইংরেজি বাক্যটিই শুদ্ধ করে বলতে পারেন। তাকে শেখানো হয়েছিল হ্যান্ডশেক করার সময় How are you বলতে। উত্তরে ক্লিনটন বলবেন, I am fine and you? মোরি সংক্ষেপে বলবেন Me too, এ পর্যন্তই। তারপর দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলবেন। তিনি যখন ক্লিনটনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছিলেন তখন মোরি বলেন, Who are you? (তিনি How ভুলে গিয়ে who বলে ফেলেন) বিচক্ষণ ক্লিনটন হেসে উত্তর দেন, I am husband of Hillary (আমি হিলারীর হাসব্যান্ড). মোরিও না বুঝে তোতাপাখির মতো তার শিখানো Me too! বলেন‌। (আমিও হিলারীর হাসব্যান্ড) বলাই বাহুল্য, উল্লেখিত দুই নেতার এ আলোচনার কথা হাসতে হাসতে জাপান রেডিও -র একটি ন্যারেটর কৌতুক করে ২২ জুলাই ২০০০ তারিখ সকালে প্রচার করে। মোরির অবস্থা দেখে আমরাও মরি! মরি! তবে তার একটি গুণ স্বীকার করতেই হবে, সেই বেরসিক ন্যারেটরের চাকুরী খেয়ে তাকে তিনি জেলে পুরেননি। আমাদের দেশে হলে বেচারার কি যে হতো আল্লাহ মালুম। ভুল সবারই হতে পারে কিন্তু এখানেই হলো উন্নত দেশের সাথে আমাদের পার্থক্য।

যে কোন ভাষা ভালভাবে আয়ত্ত করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ভোকাবুলারী বা শব্দ ভান্ডার। তারপর শব্দ সাজিয়ে বাক্য তৈরি সে তো তোমাদের জন্যে নস্যি! তাই না? তোমরা তো জান কোন কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে তাতে বরকত হয়। আর সেই বিসমিল্লাহর প্রতীক হচেছ ১৯। এবার এসো, আমরাও ইংরেজিতে ভাল কথাবার্তা বলা বাড়ানোর জন্য ১৯টি ম্যাজিক ফর্মূলাই আলোচনা করি :

১. ভোকাবুলারী বাড়ানোর জন্য “ জুনিয়র ওয়ার্ড মাস্টার গেম” খেলা যা ঢাকার নীলক্ষেতে পাওয়া যায়।

২. ইংরেজি পত্রিকা পড়ে তার অপরিচিত শব্দগুলি দাগিয়ে রাখা এবং ডিকশনারীতে থেকে শেখা।

 ৩. একই সাথে একটি শব্দের নাউন, ভার্ব ও এডজেক্টটিভ শেখা; খাতার ভিতর সারি সারি করে লিখে শিখলে আরো ভাল হয়।

 ৪. বিভিন্ন লেখালেখিতে প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ লেখা এতে করে বানান শুদ্ধ হবে।

 ৫. কমপক্ষে প্রতিদিন ৫টি করে নতুন শব্দ শেখা, যা টুকরো কার্ডে লিখে সর্বদা শার্টের পকেটে রাখা যেতে পারে।

 ৬. নিয়মিত নিউজ এট টেন এবং বি.বি.সি এর ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইংরেজি খবর শোনা।

 ৭. বিদেশীদের সাথে কথা বলার সকল সুযোগ কাজে লাগানো।

 ৮. ব্যক্তিগত সকল কর্মসূচি বা বাজারের তালিকা ইংরেজিতে করা।

 ৯. কোন ভাল কার্টুন বা প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের ভিডিও বারবার দেখা।

 ১০. কিছু ইংরেজি কবিতা, গান বা উদ্ধৃতি মুখস্থ করা এবং কথাবার্তায় কাজে লাগানো।

 ১১. একটি ভোকাবুলারী নোট খাতা বানানো এবং অবসরে পড়া, যেমন বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বা যানজটে পড়ে।

 ১২. একজন বিদেশী ফ্রেন্ড তৈরি এবং তার সাথে নিয়মিত চিঠি যোগাযোগ করা।

 ১৩. একটি কমিক বুক বা পিকচার বুক সংগ্রহ করে ইংরেজিতে তার বিবরন দেয়ার চেষ্টা করা।

 ১৪. সর্বদাই একটি পকেট ডিকশনারী কাছে রাখার চেষ্টা করা এবং তা কাজে লাগানো।

 ১৫. প্রায়ই ইংরেজি ভদ্রতাসূচক বাক্যগুলি ব্যবহার করা; যেমন স্যরি,থ্যাংক ইউ, ওয়েলকাম, হাউ আর ইউ।

 ১৬. একটি ইংরেজি রেডিও প্রোগ্রাম রেকর্ড করা; তার সংক্ষিপ্ত অংশ শুনে তা বন্ধ করে, নিজে বলার চেষ্টা করা।

 ১৭. সহজ ইংরেজি গল্পের বইগুলি পড়া।

 ১৮. নিজের পরিবারের ভিতরে এবং বন্ধুদের নিয়ে একটি গ্রুপ করে স্পোকেনের নিয়মিত র্চচা করা।

 ১৯. এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মাসিক পরিকল্পনা নেয়া এবং প্রতিদিন শোয়ার সময় ও সপ্তাহে কমপক্ষে একবার সময় নিয়ে তার পর্যালোচনা করা।

  আল্লাহ আমাদের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা ভালভাবে আয়ত্ত করার তৌফিক দিন।

এবার তোমাদেরও তিনটি সহজ কুইজ ধরবো। আশা করি পারবে। কুইজ গুলি নিম্নরূপ;

১. ইংরেজিতে সবচেয়ে বড় অর্থবোধক শব্দটি কি?

২. সবগুলি ইংরেজি বর্ণমালা একে একে ব্যবহার করে একটি অর্থবোধক বাক্য তৈরি করা।

৩. বৃটেনের কোন রানী ভাল ইংরেজি বলতে পারতেন না? এবং কেন?

যে যত ভাষারই পন্ডিত হোকনা কেন ছোট্টবেলায় মায়ের মুখ থেকে শেখা ভাষায়ই তার সবচেয়ে আপন ভাষা, সবচেয়ে শুদ্ধ ভাষা, যে ভাষায় সে কাঁদে যে ভাষায় হাসে। তোমরা তো জান সেই ১৭৫৭ সালে বৃটিশরা বাংলা দখল করেছিল। কেড়ে নিয়েছিল আমাদের মাতৃভাষা আর ইংরেজিকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আর আজ আড়াইশ বছরের ব্যবধানে বাংলা হানা দিয়েছে খোদ ইংরেজদের জন্মভূমিতে। শোন ছোট্ট দু’টি সত্য ঘটনা:

(এক) রংপুরের সাড়ে ৩ বছরের প্রতিভাবান ছোট্ট মেয়ে মাহজেবিন ইসলাম মৌ; ১ মি: ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ১০৯টি মৌলিক পদার্থের নাম বলতে পারে এর ভিতর হাইড্রোজেন থেকে সর্বশেষ আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থ মিটানেরিয়াম পর্যন্ত আছে।

(দুই) আমার এক ছোট্ট ভাগ্নি তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী মুমতাহিনা নূর ছন্দ, কিশোর কন্ঠের এক পাগলী পাঠক। হাতে পাওয়া মাত্রই হাপুস হুপুস সব গল্পগুলি সাবাড় করে ফেলে? তার পেটে প্রায় একশটির ওপর গল্প আছে। সেদিন আমাকে কাছে পেয়েই সে বন্দি করে ফেললো। অতঃপর সারা দিনে শুনিয়ে দিল প্রায় ১৭টির ওপর গল্প। শুধু কি তাই? সে একজন ক্ষুদে কবিও বটে; ফারজানার উপহার দেওয়া প্যাডের ভিতর সে টুকটুক করে লিখে দিল একটি মজার ছড়া

ছোট্ট পাখি ছোট্ট পাখি

আমার কাছে আয়না

তোকে আমি দেব

হাজার টাকার গয়না।

আমার বিশ্বাস তোমরা সবাই চেষ্টা করলে এর চাইতেও ভালো প্রতিভার পরিচয় দিতে পারবে। এবার চলো আমরা কাজের কথায় চলে আসি। আল্লাহর রাসুল(সা) এক হাদিসে বলেছেন, “ তোমরা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে চীন দেশে যাও “ । তোমরা কি জান চীন দেশ কোন দিকে? ঠিক আমাদের উত্তরে সুবিশাল হিমালয় আর তিব্বত মালভূমিরও উপরে। আচ্ছা এখনই তোমাদের একটি কুইজ ধরি, কি ভয় পেয়ে গেলে? নাহ্ তোমরা তো সাহসী সেনা ভয় পেলে তো চলবে না। আচ্ছা বলো তো চাঁদ থেকে পৃথিবীর কোন স্থাপত্য কর্মটি দেখা যায়। এক…. দুই . . . তিন মিনিট -কি পারলেনা! তবে শোন সেটি হচ্ছে চীনের মহাপ্রাচীর। সেই চীন দেশের এক যুবক নাম তার লী ইয়াং। তিনি যখন লেনযুয়া একাডেমীতে পড়তেন, তখন পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করেন। তোমরা হয়তো বলবে এটা আবার একটা ঘটনা হলো? নাহ্ এর পরেই আছে মজার ঘটনা। ফেল করে সে গেল মহাক্ষেপে। এরপর ইংরেজিকে মজা দেখানোর জন্য যার সাথেই দেখা হয় শুধু ইংরেজিতে কথা বলে এমনকি গাছ, লাইটপোস্ট পর্যন্ত তার বিশৃংখল ইংরেজি শোনা থেকে রেহাই পায়না। অনেক অনেকদিন পর আজ তার কি অবস্থা জানো? চীনে সে আজ প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সরাসরি ইংরেজি শিক্ষক। আর পরোক্ষভাবে তার কাছে শিক্ষা নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লক্ষ চীনা নাগরিক।

সুতরাং আমরাও সিরিয়াসলি চেষ্টা করলে এমনটি হতে কেন পারবো না! এসো আমাদের এই অভিযানকে আরো বেগবান করি, শুরু হোক আমাদের বিশ্বজয়ী সাধনা।

Your boss has a bigger vocabulary then you have

That’s one good reason why he’s your boss.

 

মনোযোগ-সংযোগ

“আমেরিকার একটি শহরে উচ্চতর বিজ্ঞান কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনকে একটি চমৎকার বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। একদিন নিকটবর্তী প্রিন্সটন কলেজে ফোন করে এক ভদ্রলোক একজন ডীনকে চাইলেন। ডীন ঘরে নেই শুনে তিনি তার সেক্রেটারির কাছে আইনস্টাইনের বাসার ঠিকানাটি জানতে চাইলেন। সেক্রেটারি সবিনয়ে জানালেন, দয়াকরে আমাকে মাফ করবেন, ড: আইনস্টাইন একটু নিরিবিলি থাকতে চান বলে ঠিকানা কাউকে দেয়া বারণ আছে। টেলিফোনের অপরপ্রান্তের ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিসফিসিয়ে বললেন, মাফ করবেন! আমি স্বয়ং আইনস্টাইন বলছি, বাসা থেকে একটু বেড়াতে বের হয়েছিলাম। এখন আমার বাসার ঠিকানাটি একদম ভুলে গেছি।

চলো আরেকটি গল্প পড়ি-

আজ থেকে প্রায় একশত পাঁচ বৎসর আগে ১৮৯৫ সালে সৈয়দ আব্দুস সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। সামাদের আরেকটি ঘটনা রূপকথাকেও যেন হার মানায়। খোদ ফুটবলের জন্মস্থান বৃটেনের লন্ডন স্টেডিয়ামে তিনি খেলছেন। বৃটিশদের বিরুদ্ধে। বেশ দূর থেকে সামাদের একটি শট করা বল বৃটিশ পক্ষের গোলবারে লেগে ফিরে আসলো। কিন্তু সামাদ রেফারীর কাছে চ্যালেঞ্জ করে বসলো যে তোমাদের গোলপোস্ট অবশ্যই কিছুটা নিচু আছে, তাই আমি গোল দাবি করছি। প্রথমে রেফারী তার কথা হেসেই উড়িয়ে দিল, কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। অবশেষে অনেক তর্কবিতর্কের পর রেফারী তাচ্ছিল্যের সাথে মেপে দেখলো। কিন্তু একি অবাক কান্ড! দেখা যাচ্ছে সামাদের কথাই ঠিক। গোলবারটি প্রায় দেড় ইঞ্চি নিচু। এমতাবস্থায় বাতিল হওয়া গোলটি হিসাবে ধরা হলো। কিন্তু এই ঘটনা তৎকালীন ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলো। এত সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব কিভাবে সম্ভব? বিশ্ব ফুটবলারের ইতিহাসে এমন নির্ভুল শট এবং চ্যালেঞ্জ করার মতো ফুটবলার আজও জন্মায়নি। পাক্কা ছয় ফুট লম্বা এই ফুটবলের যাদুকর সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে। সেই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি নাকি একটি টেনিস বল নিয়ে ড্রিবলিং করতে করতে সর্বত্র, মাঠে-ঘাটে যেতেন। এমনকি এমতাবস্থায় বাজার থেকেও ঘুরে আসতেন। এভাবেই বলের উপর তার চুম্বকের মতো প্রভাব তৈরি হয়েছিল। বল যেন তার পায়ে আঠার মতোই লেগে থাকতো। তিনি যেন সেই ইংরেজি প্রবাদটিই নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছিলেন Practice makes a man perfect .আইনস্টাইনের কৌতুক থেকে আমরা শিক্ষা পাই একজন মেধাবী লোকও যদি একটি সাধারণ বিষয়কে গুরুত্ব না দেয় তবে সেটি তার মনে নাও থাকতে পারে অপরদিকে ফুটবলের যাদুকর সামাদের জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই একটি জটিল বিষয়কেও যদি খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়, বারবার চর্চা করা হয় তবে তা জলবৎ তরলং হয়ে যায়। এ দুটি বিষয়কে সামনে রাখলে আমরা মূলত: একটি বিষয়ের গুরুত্বকেই খুঁজে পাই সেটি হচ্ছে “ মনোযোগ” ।

তোমরা জান কি স্মরণশক্তি বা মেধা নামক গুপ্তধনের গোপন চাবিটি কি? একটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করেই বলোনা,কী পারছো না, চিচিং…..ফাক? আরে সেতো আলী বাবা আর চল্লিশ চোরের ঘটনা। আসলে বিষয়টি কিন্তু আমরা একটু আগেই বলে দিয়েছি, কি এখন ধরতে পেরেছো? হ্যাঁ সেটি হচ্ছে -মনোযোগ। ‘ইউজ ইউর মেমোরী ‘নামক গ্রন্থে লেখক বলেছেন “ মানব মস্তিস্ক তথ্যে ভারাক্রান্ত হওয়া অসম্ভব, মানব মস্তিস্ক প্রতি সেকেন্ডে দশটির উপর ভিন্ন ভিন্ন আইটেম ধারণে সক্ষম।” তা সত্ত্বেও আমাদের স্মৃতি বিভ্রাটের কারণ কি, কেন মনে থাকেনা? এর কারণ হচ্ছে হয়তো গুরুত্বহীনভাবে আমরা তথ্যগুলি গ্রহণ করেছি। হয়তো সে সময় আমরা অন্যমনস্ক ছিলাম বা অন্যকোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম অথবা তড়িৎ গতিতে কাজটি করা হয়েছে। সে জন্য তথ্যগুলি মস্তিস্কের তথ্যব্যাংকে ঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি। উপরোক্ত গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে “ ব্যতিক্রমী দু ’একজন ছাড়া বাকী সবার স্মৃতিশক্তি প্রায় একই।” একটি মজার কথা বলছি। তোমরা এক্কেবারে থ বনে যাবে না তো? তাহলে বলছি শোন, তোমাদের স্মৃতিশক্তি আইনস্টাইন,নিউটন,আর সক্রেটিসের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়। তোমরা ভাবছো বেচারার মাথাটাই শেষতক তালগোল পাকিয়ে গেল কিনা? সত্যি বলছি, আমার মাথাটি একদম ঠিক আছে, আর কথাটি ঐ বিখ্যাত বই “ ইউজ ইউর মেমোরী ‘এর বক্তব্য।। আসল ঘটনা হচ্ছে সবই মনোযোগের খেলা। আইনস্টাইন নিজের বাসার নাম্বারটিও মনে রাখতে পারেননি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব ও মনোযোগ দেননি বলে। তেমনি আমরা যা পারি না তা এই মনোযোগের অভাবের কারণেই। এই মনোযোগ কাকে বলে? সাধারন অর্থে ‘কোন বিশেষ বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ করাই মনোযোগ ’। যেমন আমাদের প্রিয় খেলা ক্রিকেটের কথাই ধরা যাক। যখন ওয়াসিম আকরাম বল করছে তখন আমাদের নজর থাকে শুধুমাত্র তার দিকেই, এরপর হয়তো প্রতিপক্ষের টেন্ডুলকারের ব্যাটের দিকে ‘অতঃপর বলটি যেদিকে ছুটে যায় সেদিকে। তখন কিন্তু অন্যান্য খেলোয়াড়দের প্রতি আমাদের তেমন নজর থাকে না যার ফলে ঠিক তখন তারা কে কি করছে আমরা বলতে পারবো না। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী গিলফোর্ড বলেন, “ মানুষ যা প্রত্যক্ষ করতে চলেছে তা নির্বাচন করার প্রক্রিয়াকেই মনোযোগ বলা হয়। তোমাদের কী সেইসব গোপন ফর্মূলা বলে দেব যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সেই কাংখিত স্মরনশক্তির গুপ্তধনকে উদ্ধার করতে পারবে? কি বলবো? হ্যাঁ বলতে পারি তবে তার আগে কথা দিতে হবে এ ফর্মূলায় লেখাপড়া করে যদি তোমাদের রেজাল্ট ভাল হয় তবে কিন্তুšু— আমাকে ফুলপেট মিষ্টি খাওয়াতে হবে। কি ঠিক তো? তাহলে এক এক করে বলছি শোন।

   ১. উজ্জ্বলতা : সাধারণের ভিতর একটি উজ্জ্বল জিনিস আমাদের মনোযোগ কাড়ে। সুতরাং আমাদের উচিত বই বা নোটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ রঙিন মার্কার দিয়ে দাগিয়ে পড়া।

   ২. বিচ্ছিন্নতা : অনেক মানুষের ভীড়ে আলাদা একজনের প্রতি নজর পড়ে। ঠিক তদ্রƒপ কোন নোটের মৌলিক পয়েন্টগুলি আলাদা করে ডান পাশে লিখলে সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করে।

   ৩. ব্যবহার : একটি বিষয় ব্যবহার করলে তা সহজেই মনে থাকে। যেমন একটি মটর গাড়ির ইঞ্জিনিয়ারের চাইতে একজন সার্টিফিকেট ছাড়া মেকার মটরগাড়ির মেরামতের কাজ ভাল বুঝে। সুতরাং পড়া একটি বিষয়কে বারবার চর্চা এবং লেখার মাধ্যমে প্রয়োগ করলে তা সহজেই মনে থাকে।

 

ভাল রেজাল্ট করতে হলে

বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি নাট্যকার এবং হাস্যরসিক মঁলিয়ার (১৬২২-১৬৭৩) একবার সেরবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে গল্প শোনাচ্ছিলেন। গল্পটা এরকম “ এক গন্ডমুর্খ ধনী জমিদার প্যারিস থেকে অল্পদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। নিজের প্রিয় ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে তিনি গ্রামে বেড়াতে বের হয়েছেন। রাস্তার ধারে এক নতুন বাড়ি দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ের ভীড় দেখে তার কৌতূহল হলো। একজন ছেলেকে ডেকে তিনি রাজকীয় গাম্ভীর্যে জিজ্ঞেস করলেন ‘এখানে কী হচ্ছে?

ছেলেটি বললো এটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হাজার ফ্রা (ফরাসী মুদ্রা) জমা দিলে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি পাওয়া যায়। যারা হাতে বা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে টিপছাপ দিতে পারে তারা এক হাজার ফ্রা জমা দিলেই ডিগ্রী পেয়ে যায়। জমিদার তো বেজায় খুশি হয়ে ভেতরে গেলেন। কড়কড়ে একহাজার ফ্রা জমা দিয়ে ভিসির কাছ থেকে টিপছাপ দিয়ে ডিগ্রী নিয়ে এলেন। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ তার মনে হলো হায়! আমি কি বোকা,আমার ঘোড়ার জন্যও তো একটি ডিগ্রী আনতে পারতাম। যেই ভাবা সেই কাজ, ফিরে গিয়ে ভিসিকে বললেন, এই নিন আরো এক হাজার ফ্রা আমার ঘোড়া আশা করি অন্তত পায়ে টিপছাপ দিতে পারবে, সুতরাং তাকেও একটি ডিগ্রী দিন। কিছুক্ষণ জমিদারের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে ভিসি বললেন, স্যরি আমরা শুধু গাধাদেরই ডক্টরেট দিয়ে থাকি, ঘোড়াদের দিই না।

তোমাদের এক ভুবনবিজয়ী হাসিমাখা অথচ প্রতিভাদীপ্ত ক্ষুদে মুজাহিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি; হস্ত লেখা প্রতিযোগিতায় সে পরপর কয়েক বছর তার গ্রুপে জেলা চ্যাম্পিয়ান। সাইক্লিং, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট প্রভৃতিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সমবয়সীরা তো বটেই বড়োরাও পর্যন্ত ভয় পায়। বইয়ের সাথে তার সম্পর্কটা চুম্বকের মতোই শক্তিশালী, তার বই পড়ার স্টাইল দেখলেই কেবল তোমরা বুঝতে। নাম তার যোবায়ের, হ্যাঁ, রাসূল (সা) এর ফুফাতো ভাই সাহাবা যোবায়ের (রা)-এর সে মিতা। আর তাই তো নামাজ কাজা হওয়া তো দূরের কথা বরং প্রতিমাসে তার কম ওয়াক্ত নামাজই জামায়াত ছাড়া পড়া হয়। এই বয়সেই তার আঠারোটি সূরা মুখস্থ আর তেলাওয়াতটা এতই সহীহ যে বড়রাও তার সামনে ইমামতি করতে ভয় পায়, পাছে কখন ইচড়েপাকার মতো লোকমা দিয়ে বসে। তোমরা হয়তো টিপ্পনী কেটে বলছো; হবে না তার তো লেখাপড়া নিয়ে আমাদের মতো এত টেনশন নেই। তবে শুনই না, তার সে অধ্যায়ের কাহিনী। সে তৃতীয় শ্রেণীর ফাস্টবয়, যদিও তার ক্লাসের সেকেন্ড বয়ের নামও যোবায়ের। কিন্তু উভয়ের প্রতি বছরের মার্কের পার্থক্য বেশ বড় রকমের, অর্থাৎ স্কুলজীবনের শুরু থেকেই বলা যায় সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওহ, ভাল কথা-সে একজন ক্ষুদে কবিও বটে, তার তিন মাসের আদরের ছোট বোনকে নিয়ে সে একটি ছড়া লিখেছে, মজার সেই ছড়াটি তোমাদের বলতে, লোভ সামলাতে পারছি না:

ছোট্ট বাবু তুলিমণি

সবাই ডাকে টুলিমণি;

সবসময় ভাল থাকে

রেগে গেলেই, জোরসে কাঁদে।

মাঝে মাঝে ভালো হয়ে যায়

তখনই সে আদর পায়

ঘুমের মধ্যেও থাকে হাসি

মাঝে মাঝে দেয় হাঁচি।

সুপ্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা কি বুঝতে পেরেছো কৌতুক এবং যোবায়ের কাহিনীটি তোমাদের বলার মতলবটা কি? মতলব হচ্ছে তোমাদের সামনে এই সুত্রটা তুলে ধরা যে, আমাদের সমাজের কিছু লোক আছে যারা যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই সেই মূর্খ জমিদারের মতো শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করতে চায়, আমরাও তাদের মতো হলে চলবে না এবং এর পাশাপাশি আমাদের ছোট বেলা থেকেই ক্ষুদে যোবায়ের এর মতো বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের দিকে নজর রাখতে হবে। প্রচন্ড জিনিয়াস বা স্মরণশক্তিসম্পন্নদের নিয়ে টানা দশ বৎসর সিরিয়াস গবেষণা করেছেন আমেরিকার এক্সেটার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল হাও। এ বিষয়ের ওপর তিনি তার অবদানের জন্য পি.এইচ.ডি ডিগ্রীও পেয়েছেন। তিনি কিছু মারাত্মক কথা বলে সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছেন সেগুলি হলো “ সাধারণ মানুষ ও জিনিয়াসদের ভিতর কোন পার্থক্য নেই।” তার মতে জিনিয়াসরা প্রত্যেকেই তৈরি হয়, পরিস্কার কথায় তারা ধীরে ধীরে নিজেরাই নিজেদের তৈরি করে নেন। তবে এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ের ওপর তিনি খুবই গুরুত্ব দেন, সেটি হলো পারিবারিক শান্তি। যে পরিবারে যত বেশি শান্তি আছে এবং যেখানে ছোট ছেলেমেয়েরা যতবেশি হাসিখুশি পরিবেশের মধ্যে বড় হতে পারে সে পরিবার থেকে ততবেশি জিনিয়াস জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে জীবন সঙ্গীর অনুপ্রেরণাও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেছেন পৃথিবীতে যারাই বড় কাজ করেন তার সব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। কেউ অলৌকিক শক্তির বলে কিছু করেন না। সব কিছুরই বাস্তব কারণ আছে। প্রফেসর হাও ব্রিলিয়ান্ট সাইন্টিফিক মাইন্ড নিয়েও কাজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখেই নিউটন তার থিউরী পেয়ে যাননি বরং এর আগে নিউটন ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামিতির বিভিন্ন জটিল বিষয় গবেষনা করেছন। যখন তিনি আপেলটি পড়তে দেখেন তার কাছে একটি সমস্যা পরিস্কার হয়ে যায়। “ আইনস্টাইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, তার পরিবারে পরিবেশ ভাল ছিল এবং সেখান থেকে তিনি প্রচুর উৎসাহ পান যা তাকে জগৎবিখ্যাত হতে সহায়তা করে। প্রফেসর হাও এর মতে একজন মানুষের সাফল্যের মূল বিষয় হচ্ছে “ ব্যক্তিগত পরিশ্রম, কাজ করার সুযোগ, পারিবারিক উৎসাহ এবং শান্তি।” তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন পরিবারে টাকার চেয়ে শান্তির বেশি প্রয়োজন। এ কারণে সবারই উচিত পরিবারের দিকে লক্ষ্য রাখা। হয়তো এ কারণেই আমাদের দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘যে সংসার চালাতে জানে সে দেশও চালাতে জানে। ‘প্রফেসর হাও তার নিজের লেখা বই ‘হাউ টু বি এ ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস ইন টেন ইজি স্টেজেস; ‘গিভ ইউর চাইল্ড এ বেটার স্টার্ট ‘জিনিয়াস এক্সপ্লেইন্ড এগুলিতে তিনি আরো বিস্তারিতভাবে উপরোক্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন। যা আমাদের তো বটেই, আমাদের পিতামাতা ও শিক্ষকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের অনেকেরই তো বেশ আগেই এস.এস.সি এবং দাখিল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা শুনতে পারি কী এখন তোমাদের সময় কিভাবে কাটছে? এই শোন, তোমাদের এখনকার সময়টা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই মুহ্রূর্তে তোমাদের দরকার নটরডেম, ঢাকা, হলিক্রস এবং লালমাটিয়া কলেজের মতো একটি ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া। আর জেলা পর্যায়ে সবচাইতে ভাল কলেজকেই টার্গেট করা। আর ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে ইংরেজির প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার। আর সামনে যাদের এইচ,এস,সি ও আলীম, ফাজিল, কামিল পরীক্ষা তাদের অবস্থা তো আল্লাহই ভাল জানেন। এ সংখ্যাটি যখন তাদের কাছে পৌঁছবে তখন তো তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা, কারণ তখন টর্ণেডোর মতো পরীক্ষা চলছে, এটি ছুয়ে দেখার সময়টা পর্যন্ত তাদের নেই। তবুও তোমরা সেইসব ভাইবোনদের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে পারো যে এই লেখাটি পড়লে তাদেরও চলমান পরীক্ষাতেও বেশ লাভ হবে। তাই মূলত টিপস আকারে তাদের পরীক্ষার দিনগুলির জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। পরীক্ষার দিনের জন্যে তোমাদের কিছূ মৌলিক টিপস দিচ্ছিঃ

১. পূর্ণ বিশ্রাম,ভাল খাবার, গোসল করে সুন্দর কাপড় পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া যাতে মানসিক আনন্দ থাকে। কারণ মন অস্থির হলে অনেক জানা বিষয় লেখা যায় না।

২. Admit Card, কমপক্ষে তিনটি ভাল কলম, ২টি দুই কালারের মার্কার পেন। যেমন প্রয়োজন তেমনি জ্যামিতি বক্স গুছিয়ে নেয়া দরকার।

৩. হলে যাওয়ার পূর্বের তিন চার ঘন্টায় মুখস্ত উত্তরগুলোর শুধু Sub point গুলোতে চোখ বুলানো।

৪. আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে হলে যাওয়া।

৫. প্রশ্ন পাওয়ার পূর্বে খাতাটা ভাঁজ করে সুন্দর করে সাজানো।

৬. প্রশ্ন পাওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে কমপক্ষে ২ বার প্রশ্নটা আগাগোড়া ভাল করে পড়ে বুঝে নেয়া, হাতে পেয়েই লেখা শুরু না করা। এবং সম্ভাব্য উত্তর দেয়ার জন্য বাছাই করা।

৭. প্রতিটি উত্তরের জন্যে প্রশ্নের পাশাপাশি সময় ভাগ করে লিখে ফেলা এবং যেগুলোর উত্তর দেয়ার ইচ্ছা তা সহজ থেকে কঠিন এভাবে সিরিয়াল করে সেভাবে উত্তর লেখা। যেমন প্রশ্ন পড়ার জন্য ১০.০০-১০.১০মিঃ

১নং প্রশ্নের উত্তর -১০.১০-১০.৪০ মিঃ

২নং প্রশ্নের উত্তর -১০.৪০-১১.১০ মিঃ ইত্যাদি।

৮. রিভিশনের জন্যে কমপক্ষে ২০মিঃ সময় হাতে রাখা, রিভিশন দেয়া, প্রয়োজনীয় সংশোধনী করা এবং দুই কালারের কলম দিয়ে প্রয়োজনীয় আন্ডারলাইন করা।

৯. এরপর আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া আর দোয়া, কারন আল্লাহ সবই করতে পারেন। আর তার প্রিয় বান্দাদের সাহায্য ও বিজয়ের ওয়াদা তো তিনিই করেছেন।

 

বন্ধুরা, আত্মউন্নয়নের প্রচন্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে আমরা সবাই গেয়ে উঠি আমাদের জাতীয় কবির কিছু বলিষ্ঠ উচ্চারণ;

রইব নাকো বদ্ধ খাঁচায় দেখব এবার ভুবন ঘুরে-

আকাশ -বাতাস চন্দ্র -তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চূড়ে।

আমার সীমার বাধন টুটে-

দশ দিকেতে পড়বো লুটে;

পাতাল ছেড়ে নামব নিচে,উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে;

বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।

আমাদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস

বক্তা হিসাবে মার্কটোয়েন তখনও বিখ্যাত হননি। স্টেজে দাড়িয়ে লোকদের মনোমুগ্ধ করার মতো যাদু কলাকৌশল তখনও তিনি রপ্ত করতে পারেননি। সেই সময় দূরে এক শহর হতে তিনি বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। ঐ শহরের শ্রোতাদের একটি বদনাম ছিল কেউ ভাল বক্তৃতা দিতে না পারলে তারা পঁচা ডিম ছুড়তো। মার্কটোয়েন তাই লোকদের হালচাল বুঝতে ভয়ে ভয়ে বাজারে গেলেন। সেখানে এক দোকান থেকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘মশাই, শহরে নাকি আজ এক নামজাদা বক্তা বক্তৃতা রাখবেন?

দোকানী তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো -শুনেছি বটে,তবে বক্তাকে আমি চিনিনা বা তার নাম কি তাও আমি জানি না। মার্ক আশ্চর্য হয়ে বললো- সেকি! আপনার খদ্দেররাও কি তার নাম জানে না। দোকানী এবার যেন একটু মনোযোগী হয়ে বললো – হ্যাঁ, বোধহয় তারা জানে, আর তাই তো যারা আজ টাউন হলে বক্তৃতা শুনতে যাবে তারা আমার দোকানের সব পঁচা ডিমগুলি কিনে নিয়ে গেছে। মার্ক রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে বললো -কেন? কেন? দোকানী মুচকি হেসে বললো -কেন আবার! ভালো বক্তৃতা দিতে না পারলে বক্তার চেহারা রাঙিয়ে দেয়ার জন্য।

সেদিন মার্ক তার ভাগে ঠিক কতটি পঁচা ডিম পেয়েছিল জানা যায়নি (এটা কেউ বলে নাকি?) তবে সেদিনের শিক্ষা নিয়ে সে উত্তরকালে একজন জগৎবিখ্যাত বক্তা হতে পেরেছিলেন।

এসো তোমাদের সাথে এখন পরিচয় করিয়ে দেই এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে। কি ভড়কে গেলে নাকি? ভাবছো, এটা কি সত্যিই সুন্দরবনের বিশ্ববিখ্যাত ভয়াল দর্শনের সেই বাঘ! ওরে বাপরে! কখন না জানি হালুম করে বসে। ওহ!

স্যরি, আমি যাদের নিয়ে লিখছি তারা তো ভড়কে যাওয়ার মতো কেউ নয়। আর গিয়ে, এই রয়েল বেঙ্গল ভয়ালদর্শনীয় কোন জন্তুও নয় বরং অনিন্দ্য সুন্দর এক মানুষ। তার নামটি জানার আগে চলো তার কৈশোরের এক মজার কাহিনী শুনি। “ গ্রামের স্কুলের সে প্রথম শ্রেনীর ছাত্র, বয়স কতইবা, পাঁচ বৎসরের এক অবুঝ শিশু। পাঠশালায় যেই ওস্তাদ কোন পড়া দিতেন অমনি সে তা চট করে মুখস্ত করে ফেলতো। আর ওস্তাদকে নিয়ে বলতো, স্যার পড়া শেষ হয়ে গেছে আরো বেশি পড়া দেন। ওস্তাদ তাজ্জব হয়ে বলতেন একি! তুমি এতো তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেলেছো, কিন্তু তোমার সঙ্গীরা তো এখনও পারেনি। বালকটি চট করে উত্তর দিত “ ওরা না পারলে আমি কী করব? ওদের জন্য কি আমিও বসে থাকবো।আমি একাই বইটি পড়ে শেষ করে ফেলবো। ওস্তাদ অবাক হলে বলতেন কিন্তু বই শেষ করার জন্য তোমার এত আগ্রহ কেন বাপু? বালকটি বলতো বাঃ রে! এই বইটি শেষ না হলে আব্বু নতুন বই কিনে দেবে না যে! আমার যে আরো নতুন বই চাই। নতুন নতুন বই পড়া চাই। ক্লাসে বরাবরই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বলোতো এবার তার নামটা কি? মনে হয় চিনতে পারোনি। আচ্ছা ঠিক আছে, এবার তার তরুন বয়সের একটি কাহিনী বলবো। এলাকায় থাকতো মস্তবড় কাবলী জোয়ান। গায়ে অসুরের শক্তি। পাঞ্জায় গ্রামের কোন যুবকই তার সাথে পেরে উঠতো না। মান ইজ্জতের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে গ্রামের সকল ছেলে সেই তরুন নওজোয়ানকে ধরলো। এমন পরাজয়ের কাহিনী শুনে সে তরুণের গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠলো। গর্জে উঠলো সে কী! এত বড় অপমান, চল দেখি কে ব্যাটা পাহলোয়ান। কোথাকার কোন কাবলিওয়ালা। ওকে দেখাবো মজা। শুরু হলো এবার পাঞ্জা লড়াই। মিনিট না যেতই কাবলী জোয়ান চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলো। সেই তরুনটি এমন শক্তভাবে ওর আঙ্গুল চেপে ধরলো যে এবার কাবলীর আঙ্গুল ফেটে রক্ত বেরুতে থাকলো।অসহ্য যন্ত্রণায় বেচারা মরণ চিৎকার দিয়ে বসলো। ওর অসহায় অবস্থা দেখে হাত ছেড়ে দিল বাঙ্গালী তরুন। কাবলী পালাতে পালাতে চিৎকার করে বললো, “বাঙ্গাল মে ভী কাবলী জোয়ান হ্যায়” । কি এখনও চিনতে পরোনি? মনে হয় অনেকে চিনে ফেলেছো। আচ্ছা এবার তার যুবক বয়সের একটি ঘটনা বলছি, ১৮৯৫ সালের কথা যুবক ইংরেজিতে এম.এ পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাত্র ছ’মাস পরেই পরীক্ষা। আর ঘুরাঘুরি নয়, দাবাখেলা নয়, শুরু করেছেন পড়াশুনার লড়াই। হঠাৎ এক হিন্দু বন্ধু এসে হাজির। আর এসেই খোঁচা দিয়ে বন্ধুটি যুবককে বললো -কী, অংকের ভয়ে বুঝি ইংরেজি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছ? তার মানে? বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে চাইলো যুবক, চোখে মুখে তার বিস্ময়, কী বলতে চাইছো তুমি?

আগত বন্ধুটি বললো -না,বলছিলাম কি,মুসলিম ছাত্রদের তো একটি দুর্নাম আছে।

কি দুর্নাম? তারা কোন মগজের কাজে নেই। তারা অনেক ভয় পায়। অংক নাকি তাদের মাথায় ঢোকে না।

-কী বললে তুমি? মুসলিম ছাত্ররা অঙ্ক দেখে ভয় পায়? সহসা যেন বাঘের মতোই গর্জেই উঠলো যুবকটি।

-নয়তো কী! আগত বন্ধুটি বললো, অঙ্ক দেখে ভয় পাও বলেই তো শুধু মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে ইংরেজি পরীক্ষা দিচ্ছ। যদি অঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারতে তবে না হয় বুঝতাম তোমার মাথার জোর।

 

-ঠিক আছে, তা-ই হবে। যুবকটি সজোরে টেবিলে মুষ্ঠাঘাত করে বলে উঠলো, আমি আগে অঙ্ক পরীক্ষা দিব। মুসলিম ছেলেরা যে ভয় পায় না তা দেখিয়ে দেব। যেই কথা সেই কাজ। ‘মরদ কা বাত হাতি কা দাঁত। ‘তেজস্বী যুবকটি জেদ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল পারমিশন নিয়ে মাত্র ছ’মাসের প্রস্তুতিতেই অঙ্কে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে এম এ পাস করলো। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো। ইতিমধ্যেই হয়তো সবাই বুঝে গেছ আমরা কাকে নিয়ে আলোচনা করছি। ১৯৬২ সালে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন সাড়ে ৮৮ বছর বয়সে। এবার নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে জলবৎ তরলঙ পরিস্কার হয়ে গেছে আমরা কার কথা বললাম। হ্যাঁ, তিনি আমাদের সবার পরিচিত সবার গর্বের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তোমাদের কাছে উপরের কৌতুকটি এবং শেরে বাংলার এ কাহিনীটি বলার উদ্দেশ্য কি জানো? কৌতুক থেকে আমরা শিক্ষা নেব, কোন ক্ষেত্রে একজন দুর্বল মানুষও যদিও সে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি চেষ্টা করে তবে সে ঐ বিষয়ে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করতে পারে। আর শেরে বাংলার ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রচন্ড সাহস আর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মতো মানসিকতা থাকলে মানুষ বড় ধরনের বাধাও টপকাতে পারে। তবে এখানে আরেকটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে তৈরি হয়, শেরে বাংলাকে করা হিন্দু বন্ধুটির প্রশ্ন থেকে। সত্যিই কি মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে আর বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে অপরাপর জাতির তুলনায় পশ্চাতপদ ছিল? বিশেষ করে অন্যান্য জাতি যখন শুধু মঙ্গল নয় বরং মহা মহা অভিযান করে মহাবিশ্ব থৈ থৈ করে ফেলছে তখন জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলিমদের করুণ অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই নব প্রজন্মের হৃদয়ে প্রশ্নটি তীরের ফলার মতোই বিঁধছে। আর আমিও আমার লেখাতে বেশি বেশি আধুনিক সময়ের মানুষের (যারা বেশিরভাগই অমুসলিম উদাহরণ দেয়ায় ছোট্টমণি পাঠকদের কাছে স্বভাবত:ই ধারণা হয়েছে হয়তো সত্যিই মুসলিমদের ভিতর প্রেরণাদানকারী মনীষীর সংখ্যা খুবই কম। তাই বিবেকের তাগিদেই এমন কিছু উজ্জ্বল মুসলিম জ্যোতিস্কের উদাহরণ তোমাদের সামনে পেশ করতে চাই। তবে জেনে রাখ তাদের অবদান শত শত বই লিখেও শেষ করা যাবেনা। আর আমরা শুধুমাত্র তাদের জ্ঞানার্জনের সাধনা নিয়েই সামান্য কিছু লিখছি। পরবর্তীতে তাদের অবদান নিয়ে ফাঁকে ফাঁকে লেখার ইচ্ছা থাকলো ইনশাআল্লাহ।

ইমাম আবু হানিফার দাদা ছিলেন একজন ইরানী ক্রীতদাস। তার পিতা একজন সামান্য কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে একজন সওদাগরে রুপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি তার পুত্রের মেধাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তাকে ব্যবসায়ে না লাগিয়ে উচ্চশিক্ষা দানে মনোযোগী হন। আবু হানিফা অল্প বয়সেই কুরআনে হাফেজ হন। আরবি ভাষা সাহিত্যে তার ছিল অসামান্য দখল। তিনি জ্ঞানের তুলনায় ধনসম্পদ বা পদবীকে কোনই গুরুত্ব দিতেন না। তাই তার সুনাম শুনে কুফা নগরীর স্বেচ্ছাচারী গভর্নর ইবনে হুরায়রা তাকে কুফার কাজীর মতো গুরুত্বপূর্ন পদ গ্রহনের অনুরোধ করেন। কিন্তু জ্ঞানের পাগল আবু হানিফা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। কোনভাবেই রাজি করাতে না পেরে অবশেষে সেই বর্বর গভর্নর তাকে বেঁধে বেত মারার আদেশ দেন। কথিত আছে এগার দিন ধরে প্রত্যহ দশ ঘা করে দোররা মেরেও তাকে রাজি করানো যায়নি। তবে দাম্ভিক খলিফা আল মনসুর তাকে ক্ষমা করেনি। আবু হানিফার অপরাধ ছিল তার নির্ভীক স্পষ্টবাদিতা। তিনি মানুষের ওপর খলিফার জুলুম এবং তার অনৈসলামিক কাজের সমালোচনা করতেন। এই অপরাধে আল মনসুর তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। জনসাধারণ তাকে এতই সম্মানের চোখে দেখতো যে, তার মৃত্যুর প্রায় দশ দিন ধরে তার জানাজার নামাজ হয়েছিল এবং প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক এই নামাজে শামিল হতো। ইমাম আবু হানিফা মুসলিম জুরিসপ্রডেন্স বা ব্যবহার শাস্ত্রের জন্মদাতা। তার শিষ্যদের ভিতর মুহাম্মদ, আবু ইউসুফ ও জাফরের নাম আজ ইতিহাস প্রসিদ্ধ। এই মশহুর শিষ্যত্রয়সহ চল্লিশজন শিষ্য নিয়ে আবু হানিফা একটি কমিটি গঠণ করেন, মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি প্রায় দীর্ঘ ত্রিশ বৎসর সাধনা করে মুসলিম আইন মহাকোষ গঠন করেন। ‘এই সাধনায় বিমুগ্ধ হয়ে মশহুর জার্মান পন্ডিত ভনক্রেমার বলেছেন, এটি ইসলামের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধির ধারণাতীত ফল ’।

অপরদিকে ফিহরিস্ত নামক বিখ্যাত গ্রন্থসূচি প্রণেতা মোহাম্মদ ইবনে নাদিমের মতে, জাবির ইবনে হাইয়ান দুই হাজারের ও অধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। শুধু চিকিৎসা -বিষয়কই তার পাচঁশ গ্রন্থ ছিল। আর বিজ্ঞানের ওপরও তার সমসংখ্যক বই ছিল যার ভিতর একখানি ছিল দুই হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত। চৌদ্দশত আঠারো শতক পর্যন্ত তার লিখিত গ্রন্থগুলি ইউরোপ ও এশিয়ার বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিমিয়া বা রসায়নের ওপরই তার একশত গ্রন্থের সন্ধান মেলে। আর তাই তাকে রসায়ন শাস্ত্রের জন্মদাতা বলা হয়। তিনি জ্ঞানের জন্য এতটাই পাগলপারা ছিলেন যে বলিষ্ঠভাবে বলেছেন, “ আমার ধনদৌলত, টাকাকড়ি আমার ছেলেরা, ভাইয়েরা ভাগ করে ভোগ করবে। কিন্তু জ্ঞানের দরজায় বারবার আঘাত করে আমি যে শিক্ষা দিয়ে গেলাম, তাই আমার তাজ হিসাবে চিরকাল শোভা পাবে।”

আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের শাসনকালকে মুসলিম জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। তিনি জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলনের জন্য দেশ বিদেশের মশহুর চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক, জ্যোতির্বিদ ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, কবি, আইনজীবী, মুহাদ্দেস, তাফসিরকারকদের নিজের দরবারে জড়ো করেন। অতঃপর তাদের নিয়ে দারুল হিকমা তথা বিজ্ঞান নগরী প্রতিষ্ঠিত করে তাদের গবেষণার সর্বাধিক সুযোগ ও পরিবেশ দান করেন। আল মামুন তাদের সমবেত প্রচেষ্টায় হিব্রু ও গ্রীক জ্ঞানভান্ডারকে উজাড় করে আরবিতে অনুবাদ ও রুপায়ণ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে ৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে মুসা আল খারিজমী জন্মগ্রহণ করেন। যার সিদ্ধান্তগুলি মধ্যযুগের গণিতশাস্ত্রকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তার পিতা প্রথম জীবনে একজন ডাকাত ছিলেন, তিনি খোরসানের সড়কে রাহাজানি করে বেড়াতন। অতঃপর তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় এবং বাগদাদে একমনে জ্ঞান চর্চা করেন। তারই তিনপুত্র মুহাম্মদ,আহম্মদ,আর হাসান আরব বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সেই সময়েই তাদের বাড়িতে একটি নিজস্ব গবেষণাগার ছিল এবং তারা সেখানে দিনরাত জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাতেন। এদের ভিতর মুহাম্মদ তথা মুসা আল খারিজমী সর্বাধিক মেধাবী ছিলেন। তিনি বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি শুধু আরবী নয় বরং হিব্রু, গ্রীক ও সংস্কৃত ভাষারও সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি একাধারে ভৌগলিক, জ্যেতির্বিদ, গণিতবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। আল মামুনের প্রচেষ্টায় তিনিসহ সত্তরজন ভূতত্ত্ববিদ মিলে ‘সুরত আল আরদ ‘বা পৃথিবীর প্রথম গ্লোব তৈরি করেন। এটাই পরবর্তীতে পৃথিবীর মানচিত্র অংকনে মডেল হিসাবে গৃহীত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে খারিজমীই আজকের বীজগনিতের জনক।

 

০ Likes ২ Comments ০ Share ৪৬৭ Views

Comments (2)

  • - সালাহ্‌ আদ-দীন

    আমার বাড়ীর পাশে অতচ আমার যাওয়া হয় নাই!! দেশে আসলে মিস করব না!!!     

    • - কামাল উদ্দিন

      আপনি যে মিস করার লোক না সেটা আমি জানি, ধন্যবাদ 

    - চাতক পাখী

    আমার যাওয়া হয় নি তবে যাব একদিন , , ছবি সম্পর্কে কিছু বলতে চাইনা আমি কারন আপনি জানেন আমি বললে কি বলবো   আমিও আজ একটা ফটো পোস্ট দিলাম , , , আপনার সাথে আমার মিলা গেল ক্যামতে 

    • - কামাল উদ্দিন

    - কামরুন নাহার ইসলাম

    অসাধারণ আপনার ভ্রমণ পোষ্ট। ছবিগুলো থেকে যেন চোখ সরানো জায় না !!!

    Load more comments...