Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজত কর, তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন

হরযত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি একদা রাসুল (সা.)-এর পশ্চাতে বসা ছিলাম। তিনি বললেন, হে বালক ! আমি তোমাকে কিছু কথা শিখাচ্ছি—শোন! তুমি আল্লাহর দ্বীনকে (আল্লাহর বিধি-বিধান) হেফাজত কর, তাহলে তিনি তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর বিধি-বিধানের সুরক্ষায় সচেষ্ট হও, তাহলে তুমি তাকে তোমার কাছে পাবে। যদি তুমি কিছু প্রার্থনা কর, তাহলে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা কর। আর তুমি সাহায্য প্রার্থনা করলে আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা কর এবং জেনে রেখো, কোনো বিষয়ে তোমার উপকারার্থে যদি সমগ্র মানব জাতি একত্রিত হয়, তবে তারা তোমার কোনোরূপ উপকার করতে সক্ষম হবে না। কেবল তাই হবে, যা আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এবং যদি তারা সবাই কোনো বিষয়ে তোমার অপকারকল্পে সমবেত হয়, তাহলেও তারা তোমার অপকার করতে পারবে না। তবে তা অবশ্যই ঘটবে, যা আল্লাহ তোমার বিপক্ষে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, শুকিয়ে গেছে লিপিকা (সুতরাং, কিছুই পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই)।’
এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন মহান সাহাবি উম্মাহর জ্ঞান তাপস ও তাফসির শাস্ত্রের অন্যতম পুরোধা রাসুল (সা.)-এর চাচা আব্বাস বিন আ. মুত্তালিবের ছেলে আব্দুল্লাহ, তিনি ছিলেন কোরাইশী গোত্রের হাশেমী শাখার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। হিজরতের তিন বছর পূর্বে জন্মলাভ করেন। হিজরতের বছর বাবা-মার সঙ্গে হিজরতের পুণ্যভূমি মদিনায় গমন করেন। দ্বীনের জ্ঞানের প্রশস্ততা ও গভীরতার জন্য রাসুল তাকে দোয়া করেন।
ইমাম বোখারি (রহ.) তার থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) একবার ইস্তেঞ্জায় (শৌচাগার) প্রবেশ করেন। আমি তার জন্য ওজুর পানি রেখে দিলাম। তিনি তা দেখে বললেন, কে রেখে দিল এটা ? তাকে অবহিত করা হলে তিনি এ বলে দোয়া করেন, হে আল্লাহ, তাকে দ্বীনের জ্ঞান-প্রজ্ঞা দান করুন।’
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘হে আল্লাহ! তাকে কোরআন কারীমের জ্ঞান দান করুন।’
আরেক রেওয়ায়েতে আছে, ‘হে আল্লাহ! তাকে ইসলাম ধর্মের জ্ঞান-প্রজ্ঞা এবং কোরআন ব্যাখ্যা করার মতো ব্যুৎপত্তি দান করুন।’
হযরত মাসরুক (রা.) বলেন ‘ইবনে আব্বাসকে দেখামাত্র আমার মনে যে ভাবনার উদয় হত, তা এই যে, মানুষের মাঝে তিনি অবয়বে-গঠনে সুন্দরতম ব্যক্তি। আর যখন তিনি কথোপকথন ও খুতবায় ব্যাপৃত হতেন, মনে হত, তিনি মানুষের মাঝে বিশুদ্ধতম বচন ও বর্ণনা-ভঙ্গির অধিকারী, অসাধারণ বাগ্মী। যখন দ্বীনের আলোচনায় মগ্ন হতেন, আমার মনে হত, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তিনিই শীর্ষস্থানীয়।’
হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে হরযত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ছিলেন শীর্ষস্থানীয় সাহাবিদের অন্যতম। তাফসীর শাস্ত্র ও দ্বীনের অন্যান্য শাখায় সূক্ষ্ম জ্ঞানের অবতারণায় তার ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি ইন্তেকাল করেন ৬৮ হিজরিতে ৯১ বছর বয়সে।
শাব্দিক আলোচনা : ‘গোলাম’ শব্দের অর্থ নিতান্ত বালক, ছোট ছেলে, ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে যৌবন অবধি যে কোনো বয়সী ব্যক্তির জন্য তা সমানভাবে ব্যবহৃত।
আল্লাহর দ্বীণকে রক্ষা কর, অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক সুনির্ধারিত শরয়ী সীমাসমূহ লঙ্ঘন না করা, এবং তার প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার যথাযথভাবে আদায়ে অব্যাহতভাবে প্রয়াসী ও সক্রিয় হওয়া। যাবতীয় আদেশ-নিষেধের কোনো ব্যত্যয় বা অন্যথা যাতে না ঘটে, বরং যথাযথভাবে তা পালিত হয়—সে ব্যাপারে সদা সতর্ক ও সচেষ্ট থাকা।
আল্লাহ তাআলা তার হেফাজতকারী, অর্থাৎ বান্দাদের শারীরিক, পারিবারিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা শুধু নয়, বরং তার সকল স্বার্থ পূরণের সু-ব্যবস্থা করেন এবং তাদের দ্বীন-ধর্ম ও ঈমান-আকিদা এমনরূপে সংরক্ষণ করেন, যে সমস্ত বিষয়ে সত্য-মিথ্যা ও হালাল-হারামের মিশ্রণ রয়েছে এরূপ বিভ্রান্তিকর সকল কিছু থেকে তাদের বিরত রাখেন। এমনিভাবে প্রবৃত্তির যে সমস্ত অবৈধ ও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ আশা-আকাক্ষা ও কামনা-বাসনা রয়েছে তা থেকে তাদেরকে অনুগ্রহপূর্বক নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রাখেন।
উপরন্তু, তারা আল্লাহ তাআলার অপার কৃপায় মৃত্যু-ক্ষণের মতো ভয়ঙ্কর সময়ে সত্য-বিচ্যুতি ও বিপথগামিতা থেকে সুরক্ষা পায় এবং পর-জীবনে ভয়াবহতম জাহান্নামের শাস্তি থেকে অনায়াসে বেঁচে যায়।
তাকে তোমার কাছে পাবে, এর গূঢ় অর্থ : সর্বাবস্থায় তুমি তাকে সহায় এবং যাবতীয় বিষয়ের তওফিকদাতা হিসেবে তোমার সামনে পাবে।
যদি কিছু প্রার্থনা কর, আল্লাহর কাছে কর। সাহায্য প্রার্থনা করলে তারই কাছে প্রার্থনা কর। আমরা প্রতিদিন সালাতে নিত্য যে প্রার্থনা করি, এ দোয়াটি অবিকল তারই মত—দোয়াটি এই ‘আমরা একমাত্র তোমারই এবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত : ৪)
বিধি-মালা ও উপকারিতা :
১. উপরোক্ত হাদিসটি, নিঃসন্দেহে বলা যায় একটি আকর হাদিস; উম্মাহর জন্য তাতে একই সঙ্গে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও দ্বীনের ক্ষেত্রে খুবই প্রণিধানযোগ্য মৌলিক সার্বিক নীতিমালা।
হাদিসটি প্রসঙ্গে জনৈক আলেম বলেন, ‘আমি যখনই হাদিসটি নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছি, আমাকে তা বাকশূন্য করে দিয়েছে, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আমি ভেবেছি, হাদিসটির ব্যাপারে অজ্ঞতা ও তার মর্ম উপলব্ধি করতে না পারা আমাদের জন্য খুবই আফসোসের কারণ হবে।’
২. হাদিসটি প্রমাণ করে, নবী (সা.) উম্মাহর প্রতি ছিলেন সদা নিবেদিত। তার চিন্তার সবটুকু জুড়ে ছিল উম্মার সাফল্য-পরিণতি, তিনি সচেষ্ট ছিলেন তাদের মাঝে বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সঞ্চারে, চারত্রিক গুণাবলির বিস্তার ও সত্য-সঠিক পথের অনুসরণের উদ্যম গড়ে তোলায়। তাই, নিতান্ত বালক ইবনে আব্বাস যখন একই উটের পিঠে তার পশ্চাতে আরোহণ করলেন, আমরা দেখতে পাই, তিনি তাকে শিক্ষা দিচ্ছেন সংক্ষিপ্ত শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থময় কিছু বচন, যা তার ঐহিক ও পারত্রিক জীবনে খুবই প্রভাব বিস্তার করবে।
৩. বাবা, দায়ী (ধর্ম প্রচারক), শিক্ষক, যে-ই মুরব্বি-অভিভাবক হন, সে তার গুরু-দায়িত্ব আদায়ে উপযুক্ত সময়-সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। অধিকন্তু, দিক-নির্দেশনামূলক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শ্রোতৃমণ্ডলীর দৃষ্টি তথা মনোযোগ আকর্ষণের যে বিবিধ প্রারম্ভিক পদ্ধতি রয়েছে, তা অবশ্যই প্রয়োগ করবে। হাদিসটি এ ব্যাপারে আমাদের জন্য উত্তম দিক-নির্দেশক।
৪. প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির উপর বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, যা তাকে অবশ্যই পালন করতে হবে এই ঐহিক জীবনে। তা এই, সে আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করবে, বর্জন করবে নিষিদ্ধ সমস্ত বিষয়। তার নির্ধারিত শরয়ি সীমাসমূহ রক্ষা করবে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা.) নির্দেশিত পন্থাকে আমৃত্যু অনুসরণ করে চলবে।
৫. ইসলামি শরীয়ায় কিছু সুনির্দিষ্ট কর্ম রয়েছে, যেগুলোর প্রতি যত্নবান হতে আল্লাহ কখনো নির্দেশ প্রদান করেছেন, কখনো দিয়েছেন উৎসাহ, সঞ্চার করেছেন উদ্দীপনা। যথা :—
ক. নামাজ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সমস্ত নামাজের প্রতি যত্নবান হও বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের (আসর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকার, আয়াত : ২৩৮)
খ. পাক-পবিত্রতা ও ওজু।
এ বিষয়ে হযরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের উপর অবিচল থাক, এবং তা গণনা কর না। (আমল যতই অব্যাহত থাকুক, এবং সংখ্যায় বিপুল হোক, তা গণনার আশ্রয় নিও না) আর জেনে রেখো! তোমাদের আমল সমূহের মাঝে সর্বোত্তম আমল হলো সালাত। মোমিন মাত্রই ওজুর প্রতি যত্নবান।’
গ. শপথ : যথা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর’ অর্থাৎ, শপথ ভঙ্গ করো না।
ঘ. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাজত। যথা : জিহ্বা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল ((সা.) বলেছেন. ‘যে ব্যক্তি জিহ্বা ও গুপ্তাঙ্গের হেফাজত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হয়ে যাব।’
৬. হাদিসটি প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের প্রতি যত্নশীল হবে, পালন করবে তার বিধি-বিধান জীবনের যাবতীয় অনুসঙ্গে, আল্লাহ তাআলা তার পার্থিব যাবতীয় বিষয়ের রক্ষা করবেন—দৈহিক, পারিবারিক ও বিষয়-সম্পত্তি—সর্বক্ষেত্রে তার রক্ষাণাবেক্ষণ বিস্তৃত থাকবে। এমননিভাবে, যে তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের দুর্দান্ত সময়গুলোতে আল্লাহর দ্বীন ও হুকুম-আহকামের প্রতি যত্ন নিবে, বার্ধক্যের বিষণ্ন-ভঙ্গুর দিনগুলোতে আল্লাহ তার পাশে থাকবেন, সতেজ রাখবেন তাকে শারীরিক ও মানসিক শক্তিতে। এমনিভাবে, তাকে রক্ষা করবেন দ্বীনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর সংশয় থেকে—যা বান্দাকে সঠিক-শুদ্ধ পথ থেকে হটিয়ে নিপতিত করে বিভ্রান্ত পথের ঘোর অমানিশায়। শয়তান নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির যে সৌন্দর্য বিস্তার ঘটায়, প্রতি মুহূর্তে তৎপর থাকে বান্দাকে তাতে আপতিত করতে, সে ব্যাপারেও আল্লাহ হবেন তার উত্তম রক্ষাকারী।
৭. দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক বান্দার হেফাজতের অন্যতম ফলশ্রুতি এই, মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে মৃত্যুকালে সত্য-ভ্রষ্টতার ধ্বংসাত্মক থাবা থেকে সুরক্ষা করেন। ফলে তার মৃত্যু-ক্ষণে এই শাশ্বত মহা-সত্যের সাক্ষ্য দানের পরম ও চরম সৌভাগ্য নসিব হয়। মৃত্যুক্ষণে তার মুখে উচ্চারিত হয়, ‘আল্লাহ ছাড়া এবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই, মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।’
এ মহান সৌভাগ্য যে অর্জন করে, তার সর্বশেষ আবাস ও পরিণতি জান্নাত।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কোনো বান্দা এই কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ভিন্ন অন্য কোনো মাবুদ নেই, অতঃপর এই প্রদত্ত সাক্ষ্যের উপর মৃত্যুবরণ করবে, নিঃসন্দেহে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
অনুরূপভাবে, দ্বীনের হেফাজতকারী বান্দা কবর, হাশরসহ পর জীবনের সর্বত্র ভয়ানক মুহূর্তে মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করবে।
অতএব, আল্লাহর দ্বীনকে হেফাজতকারী হও, তবে তিনি তোমার হেফাজত করবেন। তুমি তার দ্বীন ও বিধানের যথাযোগ্য সংরক্ষণ কর, তাহলে তাকে কঠিন মুহূর্তে সামনে পাবে সহায় হিসেবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে আল্লাহভীরুদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক অনুরাগী ও স্মরণকারীকে এরই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’ (সুরা ক্বাফ, আয়াত : ৩১-৩২)
৮. আল্লাহর হেফাজতের আরেক সুফল হলো, দুনিয়া-আখেরাতের সব ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা লাভ।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান-বিশ্বাসকে শিরকের সঙ্গে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তাঁরাই সুপথগামী।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৮২)
আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা ও হযরত হারুনকে (আ.) লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি দেখি ও শুনি।’ (সুরা তোহা, আয়াত : ৪৬)
এমনিভাবে নবী করিম (সা.) আবু বকরকে (রা.) বললেন, যখন উভয়ে মদিনা অভিমুখে হিজরতকালে সাওর গুহায় অবস্থান করছিলেন, ‘দু’ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কি যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ ? তুমি ভয় করো না আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।
৯. পার্থিব জীবনে মানুষ সর্বদা একই অবস্থায় যাপন করে না; নানা পরিস্থিতি ও অবস্থায় তার আবর্তন ঘটে প্রতি মুহূর্তে, প্রতিক্ষণে। কখনো সে সুখী, কখনো দুঃখি; কখনো আর্থিক প্রাচুর্য ঘিরে থাকে তাকে, সীমাহীন ভোগ-বিলাসের সামর্থ্য যেন লুটিয়ে পড়ে তার পদতলে। কখনো সে আক্রান্ত হয় দারিদ্র্যের বিপুল যন্ত্রণায়, বিদ্ধ হয় নানাবিধ সংকটের তীরে। কখনো সতেজ সু-স্বাস্থ্যবান, কখনো দুর্বল-রুগ্ন। দীর্ঘ একটা সময় যৌবনের দৃপ্ততায় কাটানোর পর সে ম্রিয়মান হয় বার্ধক্যের কষাঘাতে। তুমি তোমার প্রাচুর্যে, সুস্বাস্থ্যে, যৌবনের দুর্দান্ত শক্তিময়তায় আল্লাহর সঙ্গে থাক,—দারিদ্র্য, অসুস্থতা ও বার্ধক্যের দৌর্বল্যে তিনি তোমার পাশে থাকবেন।
১০. আল্লাহ তাআলার দ্বীনের হেফাজত লাভের কতিপয় উপকরণ :—
ক. বাধ্যতামূলক বিধি-নিষেধগুলোকে পরিপূর্ণ রূপে মেনে চলা। যথা:- মসজিদে এসে জামাতসহ সঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা।
খ. নফল বা ঐচ্ছিক এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভে এগিয়ে আসা। যথা : সুন্নতে মুয়াক্কাদা, বিতর, এবং শরিয়ত-সিদ্ধ মাসিক ও বার্ষিক রোজা পালনে যত্নবান হওয়া।
গ. দ্বীন ও দুনিয়া সংশ্লিষ্ট সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দিন-রাত দোয়া ও প্রার্থনা করা।
ঘ. এরূপ নেককারগণের সংস্পর্শ বা সংশ্রব লাভ করা যারা তোমাকে তোমার মাওলা আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। তোমাকে বন্দেগীময় জীবন যাপনে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এবং তোমার দ্বীন- ইসলামের হেফাজতের গুরু দায়িত্ব-ভার গ্রহণ করবে।
ঙ. এমন উপকারী জ্ঞান অন্বেষণে আত্মনিমগ্ন হওয়া যা তোমাকে প্রভু, স্রষ্টা, সম্বন্ধে জ্ঞান দানের পাশাপাশি তার আদেশ-নিষেধাবলীর পরিচয় তুলে ধরবে।
১১. উপরোক্ত হাদিসের অন্যতম শিক্ষা হলো, দোয়া একটি প্রণিধানযোগ্য মৌলিক এবাদত।
আল্লাহ তাআলা নিন্মোক্ত আয়াতে দ্ব্যর্থহীন ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন, ‘এবং তোমার প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।’
তিনি আরও বলেন.
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুত, আমি রয়েছি সন্নিকটে। আমি প্রার্থীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে।’
আল্লাহর নিকট প্রার্থনার কতিপয় শুভ ফলাফল :
ক. স্বীয় লাঞ্ছনা, অবমাননা, ও চরম মুখাপেক্ষিতার বহিঃপ্রকাশ।
খ. উপকার সাধন ও অপকার অপসারণের মতো পরম চাওয়া-পাওয়া।
গ. এতে রয়েছে বিপুল প্রতিদান ও পুরস্কার। এর মাধ্যমে মার্জিত হয় পাপাচার ও অনাচার।
ঘ. নিরাপত্তা ও অনুকম্পাসহ আল্লাহ তার সঙ্গেই আছেন—এরূপ একটি সঙ্গবোধ অন্তরের গভীরে জাগ্রত হয় এর মাধ্যমে।
ঙ. আল্লাহ তাআলার নিম্নে উদ্ধৃত আয়াতকে বাস্তবে রূপ দান করা হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘শুধু তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই নিকট প্রার্থনা জানাই।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত : ৪)
চ. আল্লাহ তাআলার ক্রোধ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার এটিও অন্যতম উত্তম পথ ও পন্থা।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দোয়া করে না তার উপর তার ক্রোধ নিপতিত হয়।
১২. এ মহান হাদিস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টিও পরিস্ফুটিত হয়, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে এমন বিষয়ে—যা তিনি ব্যতীত আর কেউ পারে না—সাহায্য, আশ্রয়সহ কিছুই চাওয়া যাবে না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য যেই হোক না কেন কারোরই জন্যে কোনো প্রকার এবাদত করা যাবে না। এই ঐকান্তিক ও নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদতের পথ ব্যতীত এবাদতের গ্রহণযোগ্যতা ও দ্বীন-দুনিয়ার সফলতা বা মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন আদৌ সম্ভব নয়।
১৩. অত্র অধ্যায়ে আলোচ্য হাদিস থেকে এ বিষয়টিও সাব্যস্ত হয়, বান্দা এই জড় জগতে ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান যাই প্রাপ্ত হোক না কেন তা সবই তার পূর্ব লিখিত ও নিরূপিত ভাগ্য অনুযায়ীই হয়ে থাকে। সৃষ্টিকুলের সমগ্র সৃষ্টিই যদি একযোগে কোনো বিষয়ে প্রভূত চেষ্টা তদবির চালিয়ে যায়, তবে পরিণাম তাই হয় যা পূর্বে লিখিত ও নির্ধারিত। বিন্দু বা অনু পরিমাণও তার বিপরীত ঘটে না এবং ঘটতে পারে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি বলুন আমাদের কিছুই পৌঁছোবে না কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৫১)
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোনো বিপদ আসে না কিন্তু (যা আসে) তা জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।’ (সুরা হাদীদ, আয়াত : ২২)

০ Likes ২ Comments ০ Share ৪৫১ Views

Comments (2)

  • - মাসুম বাদল

    ভালো লেগেছে।

     

    অনেক অনেক শুভকামনা...

    - জাওয়াদ আহমেদ অর্ক

    ধন্যবাদ, বাদল ভাই । 

    - জাকিয়া জেসমিন যূথী

    হাহা, ব্যাপক মজা পেলাম কবিতায়। 

    Load more comments...