Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মামুন ম. আজিজ

১০ বছর আগে

আলোকচিত্রী (ছোট গল্প)

ছবি কথা বলে, কিছু ছবি খুব প্রাণবন্ত। এমন কিছু ছবি থাকে যা নাড়া দেয় নিঃশ্বাসের পথ ধরে খুব গভীরে। গুমোট কষ্ট নিয়ে মনটাকে অদৃশ্য অনুর টানে সংকুচিত করে, নিষ্পেষিত করে, মনে হয় হঠাৎ প্রচন্ড শীত জেগে ওঠে তারপর ছবিদৃশ্য মনকে চাদর, কাঁথা, লেপ প্যাঁচিয়ে জরসর হয়ে টানছে ভেতরে কোথাও এক নিবিড় শূন্যতায়। যে শূন্যতায় যে কেউ হারাতে পারে। ছবি এক নিগুঢ় ইতিহাস।
       ছবি পাগল ছেলে নিমিখ, ছবির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। ছবি নিয়েই তার জীবন, ছবিতেই খুঁজে ফেরে সুখ আর বেদনার উপাত্ত। জীবনে অনেক ছবি তুলেছে, এখনও তুলছে, তবুও মন ভরে নি, অনেক ইতিহাস তার হাতেই চিত্র বন্দী হয়েছে, তবুও তার বুক ভরা দীর্ঘঃশ্বাস। স্বাধীনতার সময় জন্ম হয় নি বলে এক তীব্র দুঃখ এবং ক্ষোভও তার মনে।
       ফ্রি ল্যান্স আলোকচিত্রী সে , কারও চুক্তি বদ্ধ ফরমায়েশে ছবি তোলে না। তাই বলে ঘরে বসে থাকে না, যে কোন পেশাদার আলোকচিত্রীর মত সেও নেম পড়ে যে কোন আনন্দ আর সংকটে , রাজপথে কিংবা দূরন্ত খেলার মাঠে। তার কদর আছে। বড় বড় পত্রিকার বড় বড় সম্পাদকগণও তার নম্বরটি মোবাইলে সেভ করে রাখে। তার ছবি অনেক ইতিহাসের কথা বলেছে, কেউ মনে রেখেছে। কেউ নরম সোফার পেছনের দেয়ালে তার ক্যামেরা বন্দী দৃশ্যকাব্যকে সজ্জার উপকরণ বানিয়েছে। নিজের ঘরে নিমিখ নিজের তোলা কোন ছবি টানায় না, মন ভরে  না কোন ছবিতেই তার।
      টেবিলে একটা ছবি কাত হয়ে এক কোণে বইয়ের উপর ভর দিয়ে থাকে, একটা খুবই করুন দৃশ্য, একটা ভয়ংকর বাস্তবতার প্রকাশ সে ছবি, সে ছবি এক মহান ইতিহাসের চরম নিষ্ঠুরতার স্বাক্ষর। বারবার দেখে, মনটা সেই গভীরে শূন্যতায় চলে যায়। কয়েকটা কাক, একটা কুকুর, একটা শিশুর শবদেহ-ছিন্ন ভিন্ন, কাক কুকুরের খাবার হয়ে উঠেছে...কি জীবন্ত ইতিহাস, কালের স্বাক্ষী একটি ছবি। কতটা জুলুম সয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ! চরম ঘৃণা তার মনে জাগে সেই সব হানাদার আর তার দোষরদের প্রতি, এই একটি ছবির প্রতি নিবিষ্ট মনোযোগই যেন তাকে কঠোর পরিশ্রমী আলোকচিত্রী করে তোলে। এক নীরব গর্ব বুকের গভীরে কোন খরস্রোতা নদীর স্রোতে তার বয়ে চলে সেই সব আলোকচিত্রীর জন্য যারা মহান স্বাধীনতার করুণ ইতিহাস সব চিত্র বন্দী করার দায়িত্ব পালন করেছিল। কিঞ্চিৎ হিংসাও হয়, স্রোতে তখন আরও দূরন্ত আলোক ঝিলিক পড়ে।
       তারপর...এতটা বছর পরেও বাঙালীর হাতে হাতে অস্ত্র ঝংকার, নিমিখের হাতেও ক্যামেরা, এখনও কেনো সংঘর্ষ সে বোঝে না। তবে বোঝে নতুন এই সংঘর্ষেও ইতিহাস ক্যামেরার ফোকাসে ধরে রাখাই তার ধর্ম। সে ছুটে চলে।


...ছেলেটা নিশ্চুপ, নিথঢ় বসেছিল পোড়া মাটির উপর। পেছনে জ্বলন্ত বাসটির আগুন তখনও নেভেনি। আশে পাশ কেউ দৌড়াচ্ছে, একের পর এক ক্যামেরার শার্টার পড়ছে, শব্দ হচ্ছে। যেন কোন ভাষ্কর্যের প্রদর্শনী চলছে। ছেলেটার সারা মুখ পোড়া রঙে লেপ্টে আছে, হাত পা আর বুকের চামড়া খসে খসে পড়ছে, কাছেই ক্রন্দনের শব্দ শোনা যায়, সে শব্দ কিন্তু স্টীল ক্যামেরায় বন্দী হয় না, সে শব্দ বন্দী হয় আলোকচিত্রীর হৃদয়ে। তবুও বিমূর্ত দৃশ্যটাকে ইতিহাস করার নেশা শার্টার রিলিজ বাটনে চাপ ফেলতে বাধ্য করে। ছেলেটা কিঞ্চিৎ নড়ে। পাশে এক অসহায় বাবার আহাজারি শুরু হয় প্রবল বেগে, সে আহাজারি সপ্ত আকাশে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। নিমিখ আর চুপ থাকতে পারে না, সেও এগিয়ে যায়, এম্বুল্যান্সটা এগিয়ে আসতে থাকে।
       ক’দিন পরে ছেলেটা  হাসপাতালে মারা গেলে নিমিখ খুব কেঁদেছিল।
      নিমিখ তার টেবিলে মুক্তিযুদ্ধের সেই করুণ চিত্রটির পাশে নিজের তোলা বিমূর্ত করুণ পোড়া ছেলেটির ছবিটিও লেমেনিটিং করে রেখেছে।  হেলান দিয়ে রাখা বইটি একটু সরে যাওয়ায় ছবিটি একটু হেলে গেছে। আরেকটু হেললে ছবিটা হয়তো পড়েই যাবে।

১ Likes ১৪ Comments ০ Share ৫২৯ Views

Comments (14)

  • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

    প্রামানিক ভাই, আগের লিংক গুলো পড়ার পর পুরো গল্পের ওপর মন্তব্য করবো। আশা করি কিছু মনে করবেন না।

    • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

      আবুহেনা ভাই, আপনি যে কষ্ট করে আমার অখাদ্য লেখা পড়ছেন এতেই আমি খুব খুশি। ধন্যবাদ আপনাকে।

    - রুদ্র আমিন

    আরে মিয়া বউয়ের সাথে সবসময় ইয়ার্কি ঠাট্টা বেশি বেশি করবেন। তাতে সংসার সুখের হইবো 

    ভাল লাগল ভাই।

    • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

      ধন্যবাদ আমিনুল ইসলাম। শুভেচ্ছা রইল।

    - মেজদা

    আমার দাঁতে ব্যথা তাই পড়বো পরে। হেনা ভাইয়ের কি হয়েছে?

     

    • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

      তাও ভালো পায়ে ব্যাথা কন নাই। দাতে ব্যাথা হলে চোখ টনটন করতেই পারে সেই জন্য ক্ষমা কইরা দিলাম। হেনা ভাই আগের লিংক পড়ার পর মন্তব্য করবো। হের লাইগা চিন্তা নাই। হেনা ভাই একজন ভালো পাঠক। তবে পাঠক হিসাবে আমার মধ্যে গলদ আছে। শুভেচ্ছা রইল।

    Load more comments...