Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আলাপন-২

এখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আদ্রিয়ান্না ইউনিভার্সিটিতেই আছে। এই মাত্র যে ক্লাসটি শুরু হোল সেই সাবজেক্টের নাম অর্গানাইজেশনাল বিহ্যাভিওর।
যিনি ক্লাস নিচ্ছেন উনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের এসোসিয়েট প্রফেসর।

যেহেতু এটা একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি তাই অন্যান্য অনেক পাবলিক ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি এখানে এসে পার্ট-টাইম কিংবা কন্ট্র্যাক্টে ক্লাস নেন।
আজকের টপিকটা হচ্ছে Managing Stress and the Work-life Balance.
টিচার লেকচার দিচ্ছেন, কোন কোন কাজে বা কোন জবে সবচেয়ে বেশি স্ট্রেস থাকে সে বিষয়ে। উনি বললেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে সব চেয়ে বেশি স্ট্রেস হচ্ছে ইউ এস প্রেসিডেন্ট এর পদে এবং এই জবের স্ট্রেস স্কোর হোল 176.6
এবং এর পরে স্ট্রেস বেশি ফায়ার ফাইটারের জবে যার স্ট্রেস স্কোর 110.9
আর তৃতীয় স্থানে আছে সিনিয়র এক্সিকিউটিভের জব এবং এক্ষেত্রে স্ট্রেস স্কোর 108.6
সবচেয়ে কম স্ট্রেসের জব হচ্ছে বুক কিপারের যার স্ট্রেস স্কোর মাত্র 21.5

আদ্রিয়ান্না লেকচার শুনতে শুনতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল।
এম বি এ এর পাশাপাশি ও একটি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ পদে জয়েন করেছে। ও একদিন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হবে।

আদ্রিয়ান্না ভাবতে লাগল কি দরকার জীবনে এত স্ট্রেস নিয়ে?
৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং এক কোটি টাকা লিকুইড মানি করতে হবে এটা যেন এই সময়ের ছেলে মেয়েদের জন্য একটা ফ্যশান হয়ে উঠেছে।
অথচ আমার বাবার বয়স এখন ৬০ বছর, আমরা এখনও ভাড়া বাসায় থাকি, রিক্সায় চলাফেরা করি, বাবার এক কোটি টাকা লিকুইড মানি-তো দুরের কথা। বাবা সরকারি চাকুরী করতেন কারা-অধিদপ্তরে।
গত বছর রিটায়ার্ড করেছেন। হয়ত পেনসন স্কিমে অল্প কিছু টাকা পেয়েছেন।

তবে বাবার অনেক কলিগদের ছেলে-মেয়েদের দেখি দামী দামী গাড়িতে চড়ে, ঢাকায় ওদের অনেকের দুইটা তিনটা বাড়ি আছে। বাবার কলিগরা পারলে বাবা কেন পারল না?
আমারও কি এখন রিক্সায় না চড়ে ওদের মতো প্রাডো বা লেক্সাসে চড়ার কথা নয়? বাবার কলিগরা হয়তো চাকুরীর পাশাপাশি অন্য ব্যবসা করতেন অথবা কি করে এত টাকা উনারা সংগ্রহ করেছেন তা আমি বুঝি না।

কিন্তু এই যে এখনকার ছেলে-মেয়েরা দ্রুত ফ্ল্যাট-গাড়ির মালিক হচ্ছে এটা কি করে হচ্ছে?
বুঝলাম মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে অনেক টাকা স্যালারী কিন্তু এত দ্রুত এত কিছু করা সম্ভব কি করে?
চাকুরী করে শুধু স্যালারীর টাকা দিয়ে ঢাকায় থেকে বাসা ভাড়া দিয়ে, খেয়ে-পড়ে এত দ্রুত এতকিছু কি করে সম্ভব আমার মাথায় আসে না।
আমার এক ফ্রেন্ডকে দেখেছি ব্যাঙ্ক থেকে চল্লিশ লাখ টাকা লোণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে। অনেক ইন্টারেস্ট সহ বিশ বছরে টাকা শোধ করতে হবে।
পঞ্চান্ন হাজার টাকা করে তাকে প্রতি মাসে ইন্সটলমেন্ট দিতে হয়।
দু বছর ইন্সটলমেন্ট দেয়ার পর আর চালাতে পারল না। অবশেষে ফ্ল্যাট টি বিক্রি করে দিল।
আমিও এত চাকচিক্য জীবন চাই না। সিম্পল লাইফই আমার কাছে ভাল লাগে।

-Can you tell me what is the stress score of US President?

মুহূর্তেই সজাগ হয়ে উঠল আদ্রিয়ান্না, বুঝতে পারল টিচার প্রশ্ন করেছেন। সামলে নিয়ে সে টিচারের দিকে তাকাল।
তাকানোর পর টিচার বললেন,

-Yes, please tell me Audrianna.
-Sir, this is 176.6
-Thank you.

ক্লাস শেষ করে আদ্রিয়ান্না বাসায় ফিরল। হাত মুখ ধুয়ে খাওয়ার টেবিলে গেল।

কি রান্না করেছ মা? আদ্রিয়ান্না তার মাকে জিজ্ঞেস করল।
-বুটের ডালের খিচুড়ি, পটল ভাঁজি আর গরুর গোস।
- তাড়াতাড়ি দাও খুব খুধা পেয়েছে।
-একটু অপেক্ষা কর আমি দিচ্ছি।

খাবার শেষ করে আদ্রিয়ান্না ওর রুমে গেল। হাই আসছে। বিছানায় শুয়ে পড়ল। কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ চোখ পড়ল বইয়ের শেলফে। মনে পড়ল সেই বইটির কথা। বইটির নাম “আলাপন”।
বইটি হাতে নিলো। লেখক তার নিজের এমন এক ছদ্ম নাম ব্যাবহার করেছে্ন যে তাঁর নাম দেখে বুঝার উপায় নেই উনি কোন ধর্মের অনুসারী।
তবে সেদিন আলাপন-১ পড়ে ভালই লেগেছিল। আজ আদ্রিয়ান্না দেখছে আলাপন-২ তে কি লিখেছে।

আলাপন-২
একটি বালক ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ একটি শব্দ ভেসে এলো, কি ভাবছ হে বালক?
বালকটি হুড়মুড় করে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না। বালকটি বলল, কে কথা বলছে?
শব্দ: ভয় পেওনা। তুমি সবসময়য় যাকে নিয়ে ভাব সে আমাকে পাঠিয়েছে।
বালক: আমিতো স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবি। তুমি কে?
শব্দ: ধরো তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন।
বালক: কেন পাঠিয়েছেন?
শব্দ: তোমার মনের ভিতর যত আজগুবি প্রশ্ন আছে তার উত্তর দিতে।
বালক: তুমি কি পারবে?
শব্দ: চেষ্টা করে দেখি
বালক: আমি স্রষ্টাকে দেখতে চাই।
শব্দ: এটা তো খুব সহজ ব্যাপার।
বালক: কেমন করে বলত?
শব্দ: তার আগে বল তুমি তাঁকে কি রূপে তাঁকে দেখতে চাও
বালক: তার মানে?
শব্দ: তুমি কি তাঁকে মানুষ রূপে দেখতে চাও নাকি আলো কিংবা অন্য কোনও রূপে দেখতে চাও।
বালক: না, আমি তাকে তাঁর নিজস্ব রূপে দেখতে চাই
শব্দ: ও হে বালক, তিনি-তো সবার স্বরূপ দিতে দিতে সকল রূপ শেষ হয়ে গেছে। তাই নিজের রূপ রাখেন নাই।
বালক: তাঁর নিজস্ব রূপ নেই?
শব্দ: না। সকল সৃষ্টির রূপ দিতে গিয়ে তাঁর নিজের আর কোনও রূপ অবশিষ্ট ছিল না। তাই তার নিজের আঁকার নাই। তিনি নিরাকার। কেমন করে তাঁকে তুমি দেখবে?
বালক: তাকে কি আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি?
শব্দ: অনেকেই দেখেছে যারা মন প্রাণ দিয়ে দেখতে চেয়েছে তবে প্রত্যেকেই কোনও না কোনও মাধ্যমে দেখেছে কারণ তাঁর নিজস্ব কোনও স্বরূপ বা আকার নেই।
বালক: মাধ্যম গুলো কি কি?
শব্দ: এই ধরো আলো অথবা কোনও মানুষের আঁকার ধারণ করে তিনি দেখা দিয়েছেন
বালক: ও আচ্ছা
শব্দ: এখন বল তুমি কোন রূপে দেখতে চাও।
বালক: আমি কোনও আলো বা মানুষের রূপে দেখতে চাই না
শব্দ: তাহলে কোন রূপে দেখতে চাও?
বালক: আমার নিজের রূপে। আমি আরেক জন আমাকে দেখতে চাই।
শব্দ: ঠিক আছে। তুমি অতি স্বত্বর আরেক জন তোমাকে দেখতে পাবে।

আলাপন-১

আলাপন-২

আলাপন-৩

আলাপন-৪

০ Likes ৬ Comments ০ Share ৭১৪ Views

Comments (6)

  • - মাসুম বাদল

    শ্রদ্ধাঞ্জলি 

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    বেগম রোকেয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।

    - চারু মান্নান

    গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।

    Load more comments...