এক ভদ্রলোক রাতে শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সে সাধারণত একা এক ঘরে ঘুমায় না। একা থাকলে রাতে ঘুম আসতে চায় না। অশরীরী কিছু একটা এসে কথা বলে।
আজ একা থাকতে হচ্ছে কারণ তার পরিবার বাপের বাড়ি গিয়েছে। ভুত-পেত্নী সে বিশ্বাস করে না কিন্তু জিন বিশ্বাস করে।
তার জিন হাসিলের খুব ইচ্ছা ছিল। অনেক হুজুরের কাছে গিয়েছে। একেক জন একেক রকম পরামর্শ দেয়। সে আমল করে কিন্তু জিন দ্যাখে না।
একবার দবির হুজুর বলল, এশার নামাজের পর মসজিদে বসে সুরা জিন চল্লিশ বার চল্লিশ দিন পড়লে একটা জিন এসে হাজির হবে। কিন্তু সব সময় পাকসাফ থাকতে হবে। আর জিন দেখে ভয় পাওয়া যাবে না।
সে চল্লিশ দিন চল্লিশ বার করে সুরা জিন এশার নামাজের পর পড়ল কিন্তু জিন আসল না।
কিন্তু তার মনে প্রশ্ন জাগে, এই যে রাতে একা থাকলে অশরীরী কিছু একটা এসে তার সাথে কথা বলে এটা কি জিনিস? এই জিনিসটা আসার আগে সে টের পায়।
সেদিন ঘুম আসবে না। এপাশ ওপাশ করতে করতে অনেক রাত হবে। তারপর খালি পায়ে হাটার শব্দ শোনা যাবে। শরীর নাই কিন্তু হাটার শব্দ করে। আশ্চর্য জিনিস।
খালি পায়ে হাটার শব্দটা যখন তার ঘরের দিকে আসে তখন সে বোঝে জিনিসটা এখন ঘরে ঢুকেছে। কিন্তু হাটার শব্দটা কোথায় এসে শেষ হয় এটা বোঝা যায় না।
ওটা কি মাথার দিকে থামে নাকি পায়ের দিকে নাকি বিছানায় উঠে বসে কে জানে।
লাইট জ্বালানো থাকলে এই জিনিসটা আসে না। তাই একা থাকার প্রয়োজন হলে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়। আজ লাইট অফ করা আছে। এখন উঠে আর জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না।
ভদ্রলোকের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে। অনেক রাত হয়ে গেল।
হটাত পায়ের শব্দ শোনা গেল। ভদ্রলোকের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ওটার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। অহেতুক প্যাঁচাল পারে।
একটা মোলায়েম কণ্ঠ ভেসে এলো।
কি ভাবছ হে মানুষ?
ভদ্র লোক কোনও কথা বলল না।
হটাত খাটটা নড়ে উঠল।
এ তো সমস্যা দেখছি! তার চেয়ে বরং কথা বলে একে বিদায় করাই ভাল।
আবার কণ্ঠটি ভেসে আসল।
কণ্ঠ: আমার কাছে একটি গাছ আছে
ভদ্রলোক: থাকলে থাক, আমার কি এসে যায়
কণ্ঠ: সে গাছটা অনেক বড়
ভদ্রলোক: হোক বড় তাতে আমার কি
কণ্ঠ: অনেক পাতা
ভদ্রলোক: গাছ নিয়ে আমার আগ্রহ নেই, চুপ করতে পারো?
কণ্ঠ: তোমার বয়স চল্লিশ না?
ভদ্রলোক: এই, তুমি কে? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
কণ্ঠ: দেখতে পাবে
ভদ্রলোক: তোমার কথা শুনি অথচ দেখি না, সমস্যা না এটা?
কণ্ঠ: আমি দেখা দেবো সঠিক সময়ে
ভদ্রলোক: আমার বয়স জানো কীভাবে?
কণ্ঠ: সেটা পরে বলবো। আমার সেই গাছের প্রতিটি পাতায় নাম লেখা আছে
ভদ্রলোক: কিসের নাম?
কণ্ঠ: সবার নাম। যে পাতাটা হলুদ হয় আমার নজর সেটার দিকে
ভদ্রলোক: তারপর?
কণ্ঠ: পাতাটা যখন শুকিয়ে ঝরে পড়ে যায়, আমি যাই তার কাছে
ভদ্রলোক: যেয়ে কি কর?
কণ্ঠ: তাকে নিয়ে আসি
ভদ্রলোক: কে তুমি?
কণ্ঠ: মুসলমানরা আমাকে আজরাইল নামে চেনে
ভদ্রলোক: তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার দরকার নেই, তুমি এখনি চলে যাও
কণ্ঠ: তোমার নাম যে পাতায় লেখা আছে সেটা হলুদ হয়ে এসেছে
ভদ্রলোক: হলুদ না হলে কি কোনও পাতা ঝরে পড়ে?
কণ্ঠ: না, তবে অনেক পাতা বড় হওয়ার আগেই হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ে
ভদ্রলোক: তোমার ঐ গাছের কোনও পাতায় কি তোমার নিজের নাম লেখা আছে?
কণ্ঠ: আছে
ভদ্রলোক: ঐ পাতাটার রঙ কি?
কণ্ঠ: সবুজ
ভদ্রলোক: ওটা কি কখনো হলুদ হবে?
কণ্ঠ: হবে
ভদ্রলোক: কখন?
কণ্ঠ: ওটা সবার শেষে হলুদ হবে
ভদ্রলোক: ওটা কি ঝরে পড়বে?
কণ্ঠ: পড়বে
ভদ্রলোক: তখন ঐ পাতাটা কে নিতে আসবে?
কণ্ঠ: সেটা কি তোমার জানা প্রয়োজন?
ভদ্রলোক: হ্যাঁ, আমি জানতে চাই
কণ্ঠ: ঐ পাতাটাও আমিই নিতে আসব
ভদ্রলোক: আচ্ছা বলতো, তুমি একসাথে কতগুলো পাতা নিতে পারো?
কণ্ঠ: ইসরাফিল শিঙায় ফুক দেওয়ার সময় যতগুলো পাতা থাকবে ততগুলো
ভদ্রলোক: কত হতে পারে?
কণ্ঠ: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা যত
ভদ্রলোক: পৃথিবীর ধারণ ক্ষমতা কত?
কণ্ঠ: উনিশ-শত কোটি
ভদ্রলোক: তুমি যাও তো এখন, বকবক করো না
কণ্ঠ: খোদা হা-ফেজ, ঠিক সময়ে দেখা হবে।
Comments (8)
মনে বড় দুঃখ পেলাম! এতক্ষন ধরে লিখার পর। এখন দেখি একটু খানি এসেছে। বাকী লেখা গেল কোথায়?
পরের টুকুর অপেক্ষায় রইলাম ...
সংমোশন বাটনে ক্লিক করে লেখার বাকী অংশটা দিয়ে দিন। পুরোটা আসলে নিশ্চয় ভার লাগবে। আশাকরি নিয়মিত ব্লগে আসবেন।
একই জিনিস দ্বিতীয়বার লিখাটা যে কী বিরক্তিকর, আজ বুঝলাম।
ধন্যবাদ পাশা ভাই।
কিছু লিখেই আগে কপি করে নিবেন,তাহলে সহজ হবে।
হ্যাঁ আপা এ ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। ধন্যবাদ আপনাকে।