Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমি কাতার থেকে বলছি :: কাতারের জাতীয় দিবস

ডিসেম্বরের আঠারো, কাতারের অধিবাসীদের আনন্দের উৎস। কাতারের জাতিয় দিবস, বলা যায় স্বাধীনতা দিবস।

 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৭৪ সালে শেখ জসিম বিন মোহাম্মদ বিন তানি-কে তার পিতা কাতার গোত্রের নেতা হিসেবে ঘোষনা করেন। এরপর শেখ জসিম অ্টোম্যান, বৃটিশ ও অন্যান্য আরব গোত্রের সাথে যুদ্ধ করে কাতারে স্বায়ত্ব শাষণ প্রতিষ্ঠা করেন ডিসেম্বরের আঠারো তারিখে।সেই থেকে দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল।

 

রকৃত পক্ষে ১৯৭১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর কাতার বৃটিশ শাষণ থেকে মুক্তি পায়।তখন থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৩রা সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতো। এরপর থেকেই কাতারে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শাষনকর্তাকে বলা হয় রাজ্যের আমীর।আমীরের শাষণ আমলে আবারো ডিসেম্বরের আঠারো তারিখকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজ অবধি এই দিনটিই স্বাধীনতা দিবস বা জাতিয় দিবস।

 

১৮ই ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন। এই বছর ১৮ই ডিসেম্বর ছিল বুধবার, পরদিন বৃহস্পতিবারেও ছুটি ঘোষণা করা হয়।তারপর শুক্র শনি সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এবারে চারদিন জাতিয় দিবসের ছুটি ছিল এখানে।

 

কাতারের অধিবাসিরা খুব জাকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করে জাতিয় দিবসটি। এবারের অনুঠানটি, আমার কাছে থেকে দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে। টেলিভিশনে ১৬ই ডিসেম্বর দেখলাম বাংলাদেশের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান।কাতারে চ্যানেল আই প্রচার করা হয়। অন্য চ্যনেল দেখতে চাইলে অন্য ডিস এন্টেনা লাগাতে হয়।

 

যা বলছিলাম, কাতারের জাতিয় দিবসের মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় কর্নিশ-এ। এটি বানিজ্যিক এলাকা, যার এক পাশে পারস্য উপসাগর।এখানে সাগর গোল হয়ে ঢুকে গেছে, তারই চারপাশের অংশই কর্নিশ এলাকা। ভোর ৭টা থেকেই এখানে শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। আমরা ভোর ছয়টায় বেরোলাম কর্নিশের উদ্দেশ্যে। পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল কাতার পুলিশ। হাঁটা শুরু করলাম সূক ওয়াকিফের পথ ধরে। শত শত দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু যেতে দেয়া হচ্ছে না,স্থান স্বল্পতার কারণে। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি, ফিরে যাব কী না। পরে যারা পরিবার সহ আছেন তাদের অনুমোতি দেয়া হলো। অবশেষে আমরা পৌছুলাম কর্নিশের সমুদ্র পাড়ে।আমাদের ডান পাশে সমুদ্র, বাম পাশে প্রথম চওড়া রাস্তা, আমাদের মানিক মিঞা এভিনিউ-এর মত।তারপর সড়ক দ্বীপের পরেই আবার আরেকটি চওড়া রাস্তা।দ্বিতীয় রাস্তাতে তোপধ্বনির পরে শুরু হলো মিলিটারী প্যারেড।বিভিন্ন রেজিমেন্টের প্যারেড হলো, প্রথমে ঘোড় সওয়ার বাহিনী, উট সওয়ার বাহিনী, পদাতিক বাহিনী বিভিন্ন পোশাকে সজ্জিত। পুলিশ বাহিনী, সাধারনের প্যারেডও হলো এখানে। আরও ছিল স্কাউট বাহিনী। এর পরেই নজর কাড়ল বিমান বাহিনীর এক্রোবেটিক। পতাকাবাহি হেলিকপ্টার প্রদক্ষিন করল পুরো এলাকা। বিমান বাহিনির এক ঝাঁক যুদ্ধ বিমান উড়ে গেল আকাশ দিয়ে।উড়ে এল আরো এক ঝাঁক বিমান রঙিন ধোঁয়া উড়িয়ে। প্যারাট্রুপ্রাররা এলেন জাতিয় পতাকা, আমীরদের ছবি সম্বলিত পতাকা, বিভিন্ন বাহিনীর পতাকা বহন করে রঙিন ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে।খুবই অবাক হলাম, যখন তাদের কয়েকজন নামলেন সমুদ্রে ভাসমান ছোট্ট নৌকায়, বাকিরা নামলেন প্যারেড গ্রাউন্ডে, যেখানে অতিথীদের সাথে আছেন কাতারের আমীর এবং আমীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আরো এলেন নৌবাহিনীর সদস্যরা ছোট ছোট স্পীডবোট নিয়ে সমুদ্রে বিভিন্ন রকমের কসরত দেখালেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যরা এলেন অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকায় চড়ে, হাত নেড়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানালেন।ছোট বড় অনেকেই পতাকার রঙের পোষাকে সজ্জিত। কারো কারো চুলের রঙ,ক্যাপ,স্কার্ফ পতাকার রঙে রাঙানো। এমন সব আকর্ষনীয় উপস্থাপনা দেখে সত্যিই আমরা অভীভূত। এগারোটার দিকে আমরা বাসায় ফিরলাম। ইভেন্ট শিডিউলে পেলাম রাত দশটায় ফায়ার ওয়ার্ক শো হবে। রাতে আবার আসব কর্নিশ-এ।

 

রাত দশটায় শুরু হবে ফায়ার ওয়ার্ক, সেই হিসেবে আমরা প্রায় সারাদিনই বাইরে কাটাবো বলে ঠিক করেছিলাম। দুপুরে প্রায় চল্লিশ জনের রান্না হলো, শুধু খাশির গোশ্‌তের বিরিয়ানী আর ডিম ভুনা। সাতটা গাড়ী আর একটা পিক-আপ ভ্যানে রান্না খাবার নিয়ে আমরা চলে গেলাম ওয়াকরা সমুদ্র সৈকতে। এখন কাতারে শীতকাল আর সৈকতে প্রচন্ড বাতাস সেই সাথে ঠান্ডা। সব কিছু উপেক্ষা করে সন্ধ্যে পর্যন্ত সৈকতে কাটিয়ে ফিরলাম আমরা শহরে। একজনের বাসায় চা চক্র শেষ করে রাত ন’টার দিকে আবারো রওয়ানা হলাম কর্নিশের পথে।

 

কর্নিশকে সাজানো হয়েছে আলোকসজ্জায়। কাতার মরু এলাকা, তাই খেজুর গাছের আধিক্য দেখা যায়। সেই সব খেজুর গাছকে উপরের অংশ সাজানো হয়েছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন দিয়ে। হারিকেনের ভিতরে বাল্ব লাগানো হয়েছে আর পু্রো গাছটিকে সাজানো হয়েছে ছোট ছোট বাল্ব দিয়ে। পুরো দোহা শহরের সড়ক দ্বীপগুলোকে সবুজ ঘাস আর রঙিন ফুল গাছ লাগিয়ে সাজানো হয়েছে।এই মরু দেশের বালি সরিয়ে ফেলে সেখানে মাটি আর সার দিয়ে লাগানো হয়েছে এই সুন্দর গাছগুলোকে।

 

রাত দশটায় শুরু হলো আমাদের আকাংক্ষিত ফায়ার ওয়ার্ক। চললো দশ মিনিট ধরে। এই দশ মিনিটে আমি মুগ্ধতায় কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিলাম!! ফিরে এলাম হাজারো মানুষের আনন্দ উল্লাসে। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে ঘরে ফিরলাম, শেষ হলো একটি আনন্দমুখর দিনের।

এখানেই শুরু হলো জাতিয় দিবসের কুচকাওয়াজ

 

 

 

 

বিভিন্ন রেজিমেন্টের কুচকাওয়াজ

 

 

 

সমরাস্ত্র প্রদর্শনী 

 

কুচকাওয়াজের অংশ -কাতারের আমীর 

 

 

 কুচকাওয়াজের অংশ - রাজ পরিবারের সদস্য

 

 

 

কাতারের বিমান বাহিনী -কুচকাওয়াজ

 

 

জাতিয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টার

 

 

প্যারাট্রুপার

 

অবতরনের প্রস্তুতি - বর্তমান আমীরের ছবি সম্বলিত পতাকাবাহী প্যারাট্রুপার

 

অবতরন করছে নৌজানে

 

পিতা ও পুত্র - অতীত আমীর এবং বর্তমান আমীর

 

 

ঐতিহ্যবাহী পালতোলা জাহাজের বহরে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কাতারের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্যরা

 

আলোকসজ্জা - দিনের খেজুর গাছ

 

আলোকসজ্জা - রাতের খেজুরগাছগুলো

 

দিনের কর্নিশ

 

রাতের কর্নিশ - জাতিয় দিবসে আলোয় আলোয় সজ্জিত

 

 

ফুলে-পতাকায় সজ্জিত মরুদেশ কাতার

 

 

 

ফায়ারওয়ার্ক - রাতের আতোশবাজী

 

সড়ক পরিভ্রমণ - কাতারের তরুন প্রজন্ম

 

************************

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

০ Likes ৩২ Comments ০ Share ২১৯৫ Views

Comments (32)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সুন্দর অনুভূতির কবিতা

    বেশ লাগল

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ লিটন ভাই

    - রোদেলা

    চোখের সামনে কখনো সমুদ্র আবার
    কখনো সীমাহীন আকাশের হাতছানি..
    আমরা ভেসে বেড়াই ইলোশন জগতে।

    সুন্দর।

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      অনেক ধন্যবাদ আপি

    - ইকবাল মাহমুদ ইকু

    ভালো লাগলো 

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ

    Load more comments...