Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বর্ণ হীন

১০ বছর আগে

আমাদের মনের আশপাশে হুমায়ূন আহমেদ

আজ কিংবদন্তী কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের জন্মবার্ষিকী, এই বিশেষ দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রকাশিত হয়েছে একটি সাক্ষাতকার। নক্ষত্র ব্লগের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলাম লেখাটি।

 

কথাসাহিত্যিক, নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই। নন্দিত এই মানুষটি সম্পর্কে জানতে কথা হয় তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে। ধানমণ্ডির দখিন হাওয়ায় তাদের ফ্ল্যাটের বসার ঘরে অভিনেত্রী ও নির্মাতা শাওন গ্লিটজের পাঠকদের জন্য এই সাক্ষাৎকার দেন। প্রয়াত স্বামীর স্মৃতিচারণের পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদের অসমাপ্ত কাজগুলো তিনি কীভাবে এগিয়ে নিতে চান সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। কথার জাদুকর-খ্যাত হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে এই রচনা।

গ্লিটজ: হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আগে কীভাবে পালিত হত?

শাওন: আমি যতদিন হল তাকে চিনি, তিনি কখনও একা জন্মদিন পালন করতে পারেননি। তার জন্মদিনে ছিল প্রকাশকদের ব্যাপক আয়োজন। রাত বারোটার পর ফুল আসা শুরু করত। জন্মদিনে ফুলে ফুলে ভরে যেত দখিন হাওয়া। আমার শাশুড়ি মুগ্ধ হতেন ফুলগুলো দেখে। জন্মদিনের দিন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল এই বাড়ির দরজা। অসংখ্য মানুষ আসত। শুভেচ্ছা বিনিময় করত। ওইদিনে আগত সকলের সঙ্গেই তিনি কথা বলতেন। এই বসার ঘরে মিষ্টি, কেক সাজানো থাকত। কেউ সেদিন এই বাড়ি থেকে না খেয়ে যেত না। অবশ্য নাটকের শুটিং থাকায় কয়েকবার আমরা নুহাশ পল্লীতে তার জন্মদিন পালন করেছি। প্রডাকশনের সবাইকে নিয়ে সাদামাটাভাবে সেসব জন্মদিন পালিত হয়েছে।

গ্লিটজ: আপনি কীভাবে তার জন্মদিন উদযাপন করতেন?

শাওন: আমি তার জন্মদিনে উপহার দিতাম। প্রথমদিকে কলম ও পাঞ্জাবি গিফট দিতাম। তিনি সবার সামনে বসে গিফটের প্যাকেট খুলতেন। তিনি অন্যকে চমকে দিতে যেমন পছন্দ করতেন, নিজেও চমকিত হতে চাইতেন। আমি তাকে যেদিন ‘প্লাস্টার অব প্যারিস’-এর ভাস্কর্য উপহার দিয়েছিলাম, সেদিন তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। আরেকবার আমি এবং এস আই টুটুল মিলে বেশকিছু গান রেকর্ড করে তাকে উপহার দিই জন্মদিনে। আমরা বারোটা গান একত্র করে তাকে একটি সিডি উপহার দিলাম। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। পরে গানগুলো নিয়ে ‘যে থাকে আঁখি পল্লবে’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এর আগে কিন্তু এগুলোর কোনো রেকর্ড ছিল না।

২০০৭ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আট মাস বয়সী নিষাদকে হিমু, শুভ্র, দেবদাসের মতো গেটআপ দিলাম। এ দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হলেন। এছাড়া তার বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলে একটি অ্যালবাম বানালাম। সে অ্যালবামের নাম দিয়েছিলাম ‘হুমায়ূন ক্যালেন্ডার’। এ অ্যালবামের ছবি তোলা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ১৩ নভেম্বর। পরের বছর এ অ্যালবাম পেয়ে হুমায়ূন এতই আনন্দিত হয়েছিলেন যে সবাইকে ডেকে তা দেখিয়েছিলেন।

গ্লিটজ: তিনি জীবিত অবস্থায় সবসময়ই তার চারপাশে মানুষ গমগম করত। এখন পরিস্থিতি কেমন?

শাওন: হুমায়ূন আহমেদ যাদের সঙ্গ খুব পছন্দ করতেন, তাদের সবসময় পাশে চাইতেন। সে প্রিয় মানুষগুলো এখনও আসেন। মানসিকভাবে আমার পাশে আছেন তারা। আমি এর প্রমাণ পেয়েছি। তিনি থাকতে প্রতিদিন আমার বাসায় গমগমে আসর বসত। এটা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। নীরব হয়ে গেছে সব। তবে সবার সঙ্গেই আমার যোগাযোগ আছে।

গ্লিটজ: হুমায়ূন আহমেদের অসমাপ্ত কাজগুলোকে কীভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন?

শাওন: হুমায়ূন আহমেদের অসমাপ্ত কাজগুলো এখন করছি আমি। তার আগে বলতে চাই, ২০১২ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর আমি কাজে ফিরেছি, নিজেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। এ জন্য এই সময়ের মধ্যে আমার কাজের সংখ্যাও কম। সব মিলিয়ে পাঁচটা নাটক পরিচালনা করেছি। আর হুমায়ূন আহমেদের কাজ এগিয়ে নেওয়ার চিন্তা অবশ্যই আমার আছে। এ জন্য আমার আরও কিছুটা সময় লাগবে। তিনি যখন ছিলেন তখন তার অনেক নাটকই আমি পরিচালনা করেছি। তিনি চাইতেন বলেই এটা সম্ভব ছিল। শুধু চাইতেন না, আমার কাজ পছন্দ করতেন তিনি। সে কারণে তার কাজ আমাকে এগিয়ে নিতে হবে। এটা আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তারা সবাই জানেন। আপনি নিজেও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র নিউজ সংগ্রহ করতে হাওরে আমাদের ইউনিটে গিয়েছিলেন। আপনি তা নিজেও দেখে এসেছেন।

গ্লিটজ: একটা পুরোদিন ছিলাম আপনাদের শুটিং স্পটে। হাওরের ভিতরে গিয়ে আপনারা শুটিং করেছিলেন সিনেমাটির। আপনি তো ওই সিনেমার কোরিওগ্রাফি করেছেন।

শাওন: আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেন তারা দেখেছেন, আমরা সবাই মিলে কীভাবে একেকটি প্রডাকশনে জন্য শ্রম দিয়েছি। সেই জায়গা থেকে তিনি আমার কাজ খুব পছন্দ করতেন। সেদিক থেকে হলেও আমার অবশ্যই তার অসমাপ্ত কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়া উচিত। তিনি নিজে আমাকে তার লেখা ধারাবাহিক ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ পরিচালনা করতে বলেছিলেন। এই নাটকটির প্রথম পাঁচ পর্ব তার করা। তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে ‘লালন ভাস্কর্য’ নির্মাণে বাঁধা দেওয়ার প্রতিবাদে তিনি কাজটি বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে আবার যখন তা নির্মাণের প্রসঙ্গ আসে, তিনি আমাকে কাজটি করতে বললেন। সে সময় ঘোষণা দেন, তিনি শুধু লেখালেখিই করতে চান। তখন প্রশ্ন ওঠে নাটক কে বানাবে। তিনি বলেন, কুসুম বানাবে। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’-এর ২৬ পর্ব পর্যন্ত স্ক্রিপ্ট তার করা। এটা নাটকের অর্ধেকও না। কখনও কখনও মনে হয় বাকি কাজটুকু আমি শেষ করি। শুরু করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, তার মতো করে লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। চেষ্টা করব কাজ নিজে করার জন্য। শিবব্রত বর্মণ নামের একজনকে দিয়ে তিনি একটি স্ক্রিপ্ট করিয়েছিলেন, ‘গৌরীপুর জংশন’ সিনেমার জন্য। আমার প্রথম ডেব্যু ফিল্ম হওয়ার কথা ছিল সেটা। এর স্ক্রিপ্ট আমরা ২০০৮ সালে জমা দিয়েছিলাম সরকারি অনুদানের জন্য। তখন সেটা অনুদান পায়নি। যেহেতু স্ক্রিপ্টটি হুমায়ূন আহমেদ নিজে দেখে ঠিকঠাক করেছিলেন, সেহেতু এই সিনেমা হবে। জানি না এটি কবে থেকে করব। তবে সিনেমাটা বানানোর অর্থ হচ্ছে, নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করা।

গ্লিটজ: তাহলে কবে নাগাদ কাজটি করার পরিকল্পনা আছে?

শাওন: এই মুহূর্তে আমার ছেলেদের অবহেলা করে কোনো কাজ করতে চাই না। আমার ছোটছেলে নিনিত আরও কিছুটা বড় হওয়ার পর আমি কাজটি করতে চাই। গত কয়েকমাসে যে কাজগুলো করেছি, তখন বাচ্চা দুটোকে বাসায় রেখেই শুটিং করেছি। কয়েকটি নাটকের কাজ। কিন্তু সিনেমা মানে অনেক বড় বিষয়। সে জন্য আরও কিছু সময় নিতে চাই। এর মধ্যে বাচ্চারাও বড় হয়ে উঠবে। আর আমিও মানসিকভাবে তৈরি হতে পারব। 

গ্লিটজ: নেত্রকোনার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এখন কীভাবে চলছে?

 

শাওন: হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষীদের সহযোগিতায় এগিয়ে চলছে স্কুলটি। আমি ও বাবা মিলে ব্যয়ভার বহন করছি। স্কুলটির এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছি। তা হয়ে গেলে স্কুল পরিচালনার জন্য আমাকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।

গ্লিটজ : হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো নিয়ে কী ভাবছেন?

শাওন: হুমায়ূন আহমেদের লেখা প্রকাশিত বইগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে তার পাঠকরা। যতদিন পাঠকের আগ্রহ থাকবে, ততদিন এটা চলতে থাকবে। আমি নিশ্চিত, পাঠকের আগ্রহ থাকবে। নতুন প্রজন্ম দশটি বাংলা গল্পের বই পড়লে একটি অবশ্যই হুমায়ূন আহমেদের বই থাকবে। তিনি নিজেই সে জায়গাটুকু তৈরি করেছেন। তিনিই তার বইকে টিকিয়ে রাখবেন।

গ্লিটজ:  নুহাশ পল্লী এখন কীভাবে চলছে ?

শাওন: নুহাশ পল্লীর সঙ্গে পুরো পরিবার জড়িত। একে এগিয়ে নেওয়া আমাদের পরিবারের সবার দায়িত্ব। কিন্তু ঠিক কীভাবে এগিয়ে যাবে সেই রূপরেখা এখনও ঠিক হয়নি।

গ্লিটজ: নুহাশ চলচ্চিত্র এখন কী অবস্থায় আছে? সেখান থেকে কোনো কাজ কি হবে?

শাওন: ‘আগুনের পরশমণি’ বানানোর সময় তিনি এ প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এটা যেহেতু হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠান, তাই ওভাবেই আছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি। পাশাপাশি ২০০৮ সালে হুমায়ূন আহমেদের পরামর্শে আমি একটি প্রতিষ্ঠান করলাম। এর নাম লীলাচিত্র। এটা প্রথম কারিগরি দিক নিয়ে কাজ করত। এই প্রতিষ্ঠান হয়েছিল নুহাশ চলচ্চিত্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। আমি এটার দেখাশোনা করতাম। এটা সম্পূর্ণই আমার ছিল। আমি প্রথম একটি ধারাবাহিক নাটক বানালাম ‘লীলাচিত্র’ থেকে। এর নাম ‘একলা পাখি’। এরপর লীলাচিত্রের পক্ষ থেকে প্রোগ্রাম বানালাম। কিছু মিউজিক ভিডিও তৈরি করি। তার প্রস্থানের পরে আমি যে কটি নাটক বানিয়েছি তা লীলাচিত্র থেকে।

আর নুহাশ চলচ্চিত্র আসলে পরিবারের সবার। আমি একা ওখান থেকে নাটক বানানোর চিন্তা করিনি। আমি আমার প্রতিষ্ঠান থেকেই নাটক বানিয়েছি। পরিবার যেভাবে চাইবে নুহাশ চলচ্চিত্র সেভাবে চলবে।

গ্লিটজ: আপনি এ পর্যন্ত যে কয়টি নাটক তৈরি করেছেন সেগুলো সবই হুমায়ূন আহমেদের মৌলিক গল্প থেকে অন্যদের চিত্রনাট্যে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

শাওন: আমি ঘুরেফিরে এক ধরনের নিরীক্ষা করছি। হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে এর আগেও অনেকে স্ক্রিন প্লে করেছেন। তিনি নিজেই সে চিত্রনাট্যগুলো ঠিক করে দিয়েছেন। তখন তার সঙ্গে আলাপের সুযোগ ছিল। অন্য পরিচালকের জন্য লিখলেও সেটা দেখিয়ে নিয়ে গেছেন। এখন সেই আলোচনার সুযোগ নাই।

গ্লিটজ: আপনি হুমায়ূন আহমেদের গল্প থেকে চিত্রনাট্য লিখছেন না কেন?

শাওন: আমি সে চেষ্টা এখন পর্যন্ত করিনি। তার কোনো গল্প নিয়ে বসিনি। তিনি জীবিত থাকতে আমাকে অনেকবার বলেছেন, যে সিকোয়েন্স যখন মাথায় আসে তা কেন লিখি না? তিনি বলতেন, “মাথায় যে সিকোয়েন্স আসে তা আলাদা আলাদা কাগজে লিখে ফেল। পরে আমি ঠিক করে দেব।”

আট বছর একসঙ্গে থেকেও আমি তার কাছ থেকে এ বিষয়টা শিখতে পারিনি। আবার যখন পরিবারের একজন হিসেবে চিন্তা করি, তখন মনে হয় আমার তো এ বিষয় শেখার দরকার ছিল না। লেখক হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে আমি পারিবারিক সময়টুকু নিয়েছি। আমার কাছে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং ছিল তার সঙ্গে সিনেমা দেখা, গল্প করা, ছবি তোলা। আমি যখন মানুষ শাওন হিসেবে চিন্তা করেছি, তখন আমি মনে করি-- আমি যা করেছি তা ঠিক করেছি।

গ্লিটজ: নির্মাতার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে আপনি কি তাকেই অনুসরণ করছেন?

শাওন: মেকিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি সহজসরলভাবে গল্প বলে যাওয়াকে প্রাধান্য দিতেন। কঠিন কিছু করতেন না। সহজভাবে কথা বলার ভঙ্গিটা আমি ওনার কাছ থেকে নিয়েছি। আমরা দুজনে একসঙ্গে বসে অনেক সিনেমা দেখেছি। তিনি কোনো একটা দৃশ্য পছন্দ হলে সে দৃশ্যটা নিয়ে ভাবতেন, এ রকম একটা দৃশ্য তো আমাদের সিনেমাতেও থাকতে পারে। নতুন কিছু কী হচ্ছে, উনি মাথায় নিতেন। যদি ওটা খুব সিরিয়াস হয়। ক্যামেরার খুব জটিলতা পছন্দ করতেন। তিনি ভাবতেন, ক্যামেরা আসলে মানুষের চোখ। মানুষ কীভাবে দেখে। এই সাধারণ ব্যাপারটি আমি তার কাছ থেকে শিখেছি। ক্যামেরার পিছনে দাঁড়ালে এই বিষয়টি আমার মাথায় থাকে।

গ্লিটজ: আপনি বলছেন, যে আট বছর ধরে হুমায়ূন আহমেদ আপনার সঙ্গে ছিলেন। তাহলে তার এই অভাব আপনি কীভাবে সামলে নিচ্ছেন?

শাওন: পুরো বিষয়টি আসলে মনস্তাত্ত্বিক। প্রতিমুহূর্তে তিনি আমার সঙ্গে আছেন। যখন আমি একটা সিনেমা বানাচ্ছি। আমি স্থপতি হয়েছি, থিসিস সম্পন্ন করেছি তার পুরো কৃতিত্ব হুমায়ূন আহমেদের। সেসময় তিনি সাংসারিক নানা কাজে সহযোগিতা করতেন। নিষাদকে দেখাশোনা করতেন। যখন ঠিক হল-- গৌরিপুর জংশন সিনেমা হবে। নুহাশ চলচ্চিত্রের ব্যানারে এই সিনেমার পরিচালকের নামে আমার নাম বসানো হল। অনুদানের জন্য জমা দিয়েছিলাম। তিনি বলতেন, “তুমি শুধু ছক কর। সিনেমায় মনোযোগ দাও। বাকি সব দায়িত্ব আমার।”

যখন আমি শুটিং স্পটে যাই, তখন তাকে মিস করি। আমার বাচ্চাদের ব্যাপারে টেনশনে থাকি। যদি জানতাম, বাচ্চাগুলো তার কাছে আছে, তাহলে অনেক নির্ভার হতাম। তিনি আমারও খুব যত্ন করতেন। একদিন টানা শুটিং করে যাচ্ছি। সন্ধ্যা নেমে গেছে। তিনি আমাকে এক গ্লাস জুসের সঙ্গে একটা চিরকুট পাঠালেন। সে চিরকুটে লেখা-- “ডিরেক্টর সাহেব আর কত কাজ করবেন। এক গ্লাস জুস খান।”

আসলে তিনি সব জায়গায় আছেন। তবে এই থাকাটা কি আসলেই থাকা!

গ্লিটজ: আপনার কাজগুলোকে হুমায়ূন আহমেদ কীভাবে মূল্যায়ন করতেন?

শাওন: নিজের কাছে আমার অনেক কাজ ফালতু লাগে। প্রথমদিকে অনেক সরল ছিলাম। নির্ভার হয়ে কাজ করতে পারতাম। এখন ভালো করার একটা বাড়তি চাপ আসে। প্রথমদিকে বাজেট ব্যাপারটা বুঝতাম না। সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করেছি। একটা সিকোয়েন্স দশবার করিয়েছি তাদের দিয়ে। পাঁচদিন ধরে শুটিং করেছি। এখন তো পেমেন্ট বেড়েছে। বাজেট কমেছে। এখন অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়।

আমার গানে, অভিনয়ে মুগ্ধ হতেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার পরিচালনারও তিনি একজন মুগ্ধ দর্শক ছিলেন। যেদিন আমি হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হলাম, সেদিন তিনি বুঝলেন যে আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। কখনও ক্লান্ত লাগলে আমাকে বলতেন, “তুমি দুটো সিকোয়েন্স করে ফেল।”

এ ফাঁকে তিনি অন্যান্য কাজ করতেন। আমার কাজ পছন্দ করতেন বলেই এটা করতেন।

গ্লিটজ: অভিনয় করেছেন, গান গেয়েছেন, নাচও করেছেন একসময়। এখন এই বিষয়গুলো কি চালিয়ে যাচ্ছেন?

শাওন: আমি সর্বশেষ ২০১১ সালে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘নিশিকাব্য’ নাটকে অভিনয় করেছি। ঈদের দিন প্রচারিত হয়। এটি তার পরিচালনায় শেষ নাটক। অনেকদিন ধরে অভিনয় উপভোগ করছিলাম না। তার অনেক নাটক আমি ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে বছরে দু-তিনটি নাটক করতাম। সে জায়গা থেকে আগ্রহটা আর পাই না। নিজেদের প্রডাকশনের বাইরে কাজ করার আগ্রহ নাই। নিজেদের প্রডাকশনে কাজ করা ভিন্ন ব্যাপার। তবে নিজের পরিচালনায় কোনো নাটক বা সিনেমায় অভিনয় করা সত্যি কঠিন। আমার দ্বারা এটি হবে না।

নাচ আমার ভালো লাগার জায়গা। এখনও ভালো লাগে। ছোটবেলার নাচের সময়গুলো মনে করলে আনন্দ হয়। নাচে অ্যাওয়ার্ড পেতাম, আনন্দ হত। নাচ একসময় নিজের হয়ে গেল। পারফর্ম করতে ইচ্ছা হল না। নাটক, সিনেমায় নেচেছি। কোরিওগ্রাফিও করেছি। মাঝখানে গান করতে ইচ্ছা করত না। তিনি আমার গান পছন্দ করতেন। গানের জন্য বড় কোনো অপরাধও ক্ষমা করে দিতেন। আমার গান শুনে এমনও তিনি লিখেছেন-- “আগাম দশটা অপরাধ আগাম মাফ করে দিলাম।”

গানকে অবহেলা করলে তাকে অবহেলা করা হবে। আমার প্রিয় মানুষটা গানে উৎসাহ দিতেন। তাই তার কথা ভেবে গাইব। আমার ফিল্মের জন্য গান গাইতে হবে, তখন হয়তো গাইব। গানের চর্চা আমি চালিয়ে যাব।

গ্লিটজ: হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন আপনার স্বামী, অভিভাবক ও বন্ধু। এখন?

শাওন: হুমায়ূন আহমেদকে আমি শিক্ষক ভাবতাম। কিন্তু তিনি নিজেকে আমার শিক্ষক ভাবতেন না। আমি তার কাছ থেকে সুন্দর করে কথা বলা শিখেছি। মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়ার শিক্ষা পেয়েছি। আগে কেউ আমার সঙ্গে অন্যায় করলে, মনে রাখতাম। অনেকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে, তাদেরও তিনি ক্ষমা করে দিতেন। জীবনের অনেক পর্যায়ে আমি তাকে শিক্ষক হিসেবে মানি।

বন্ধু হিসেবে বলব, হুমায়ূন আহমেদ আমার বন্ধু ছিলেন। আমি তার কত প্রিয় বন্ধু ছিলাম তা জানি না।

অভিভাবক হিসেবে, মা আমার জন্য যেমন করে চিন্তা করেন, তিনি সেভাবেই আমাকে নিয়ে ভাবতেন। এখন আমি দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে থাকি। আজও সারাদিন আমি না খাওয়া। কেউ জিজ্ঞেস করে না। কিন্তু তিনি আমার যত্ন নিতেন। আমার ভালোমন্দের খোঁজখবর রাখতেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমার গলা ব্যথা। অনিয়মের কারণে ভালো হচ্ছে না। তিনি থাকলে এটা হত না। ওষুধ খাবার কথা মনে করিয়ে দিতেন।

 

 

মুল রচনা :

রাশেদ শাওন ও জয়ন্ত সাহা

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

০ Likes ৬ Comments ০ Share ৭৮৯ Views

Comments (6)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    সুচনা কবিতা ভালো হয়েছে

    - আলভিনা চৌধুরী

    অর্ক ভাই, আপ্নেরে এইখানে দেইখা ভালো লাগলো 

    কবিতায় বিরাম চিহ্নের ব্যবহার কি ইচ্ছা কইরা করেন নাই ?? 

    • - জাওয়াদ আহমেদ অর্ক

      হ্যাঁ ।

    • Load more relies...
    - সনাতন পাঠক

    শুভেচ্ছা।

    ভালো লেগেছে লেখাটি

    Load more comments...