Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কিভাবে বাঁচানো যায়??? (প্রতিযোগিতা ৪র্থ পর্ব, ক্যাটেগরি-৩)

এখন ফাল্গুন মাস। দেখতে দেখতে এই বাংলা বছরটিও ঘুরে নতুন বছর চলে আসছে। নতুন বছরে আমরা পেতে যাচ্ছি জ্যৈষ্ঠ মাস।

জ্যৈষ্ঠ যাকে মধু মাস বলা হয়, এ মাস এলেই জামাইদের কদর বাড়েআসলে এই সময়ে আম, জাম আর লিচুর মধুর রসে জামাইদের মনকে রঙিন করে দিতেই জামাই ষষ্ঠীর প্রচলনতবে যে হারে বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে এই মধু মাসকে বিষাক্ত করা হচ্ছে, তাতে অচিরেই নির্দিষ্ট এই মাসটিকে ঘিরে জামাইদের উচ্ছ্বাস বন্ধ হয়ে যাবেআর যারা জামাইদেরকে মধুমাসে হৃদয়ের অনুপম মাধুরী দিয়ে স্নেহের নির্যাস স্বরূপ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে চাইছেন- ফরমালিন আর কার্বাইড নামের কিছু ভয়ংকর দানব তাদের সেই আশার গুড়ে পানি ঢেলে দিতে সর্বদা যেন প্রস্তুত রয়েছে

 প্রতি বছরই ফল পাকানোর জন্য বিষাক্ত কার্বাইডের ব্যবহারের কথা শুনে আসছিএকই সাথে খেয়েও চলেছি বিষাক্ত রাসায়নিক দেয়া সেই ফলমূলআর দৈনন্দিন কাঁচা বাজারের সব্জীর কোনটিতে যে বিষাক্ত রাসায়নিক নেই তার উপর এক নাতিদীর্ঘ গবেষণা করা যেতে পারেগার্মেন্টস শ্রমিক ভাই-বোনদের প্রতিদিনের নাস্তার আইটেম কলা-রুটিদেশের ৪০ লক্ষ গার্মেন্ট শ্রমিক প্রতিদিন কার্বাইড দিয়ে পাকানো কলা খেয়ে খেয়ে নিজের অজান্তেই শরীরে ঢুকাচ্ছেন বিষএমনিতেই এদের জীবনে সমস্যার অভাব নেইতাই বিষাক্ত খাবার গ্রহনের দ্বারা জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলছে মুষ্টিমেয় কিছু লোভী দানব মানবের লোভের যাতাকলে পড়ে

 এক ছোট ভাইয়ের ফেসবুক এর একটি পোষ্টে খাবারে বিষ মেশানোর উপরে লেখা পড়লামসেখানে মুড়ির ব্যাপারে জেনে বিষ্মিত হলামমুড়িকে নরম,সুস্বাদু আর সাদা করার জন্য মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া, সোডিয়াম কার্বনেট ও সালফারকি আশ্চর্য , পবিত্র রমজানে রোজাদারদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা না করে বরং ব্যবসায়িক ফায়দা বাড়ানোর জন্য এসব কেমিক্যাল মেশানো হয়রাস্তার পাশে যে পপকর্ণ ভাজা হচ্ছে তাতেও বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছেআর এই বিষ মেশানো পপকর্ণ অহরহ সাধারণ পাবলিক বাসে চলাফেরার সময় গ্রহন করছে এবং নিজেদেরকে বিরাট স্বাস্থ্য ঝুঁকির ভিতরে ফেলছে

 এই বিষয়টি নিয়ে পত্রিকা ও মিডিয়াগুলোতে এতো বেশী আলোচনা হয়েছে যে, বাধ্য হয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর গত বছর এক যুগান্তকারি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলফলবাহি পরিবহনগুলোকে শহরে প্রবেশের মুখে আটকে দিয়ে নির্বিচারে সেগুলোকে ধ্বংস করা হলতবে পরীক্ষার নামে যে ' টেস্টিং কিটগুলো' ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আর এরই প্রভাব পড়ে খোলা বাজারেখুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে কিংবা সরাসরি বাগান থেকে ফল কিনে এনে এভাবে ধ্বংসের নামে তাদের মুনাফা খুইয়ে সর্বশান্ত হয়একপর্যায়ে তারা ধর্মঘটের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেও বাধ্য হয়েছিল

 এখন আমাদের সামনে এই যে সর্বগ্রাসী স্বাস্থ্য ঝুঁকির সমস্যা উদ্ভুত হয়েছে, এর থেকে পরিত্রানের পথ কি? আছে কোনো কার্যকরি দিকনির্দেশনামাথা ব্যথা হলে মাথাকে কেটে ফেলাতেই সমাধান খুঁজলে তো সেটা বোকামির একশেষ হবেফলে বিষের জন্য ফল খাওয়াই বাদ দিলে কিংবা সব্জীতে ফরমালিনের বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে আমরা যদি সেগুলোকে খাওয়াই বাদ দেই, তবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ আসবে কোথা থেকে?

 এই ব্যাপারটি নিয়ে কিছু আলোচনা না করলেই নয় বিধায় এই পোষ্টের অবতারণা। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কিছু চিন্তা-ভাবনা এসেছে। সেগুলোই পাঠকের সামনে তুলে ধরছিঃ-

>> UNDP রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশের ৬৩% যুবক যাদের বয়স ২২-৪১ এর ভিতরএদেরকে আমরা মোটিভেট করে স্থানীয়ভাবে কাজে লাগাতে পারিএজন্য  রাজধানীকে কেন্দ্র করে ঢাকায় একটি সেন্ট্রাল কমিটি করতে হবেআর ফলমূল যে জেলাগুলো থেকে আসে সেখানে লোকাল কমিটি করা যেতে পারেএদের সবাইকে প্রথমে তিন দিনের এক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে

 >> উদাহরণস্বরূপ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কথা বলা যেতে পারেসাব-কমিটি প্রতিটি বাগান ভিত্তিক কার্যক্রম পরিদর্শন করবেএরা বাগান মালিক এবং স্থানীয় মানুষদেরকে সচেতন করবেতবে সর্বাগ্রে বাগান মালিকদেরকে সচেতন হতে হবে এবং কার্বাইড মেশাবে না সে ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবেআর লোকাল প্রশাসন এই সাব-কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেনা হলে অসাধু ব্যবসায়ি চক্রের 'মাইর' খেতে খেতে এই সাব-কমিটি অচিরেই বিলুপ্ত হবে

 >> এই সাব-কমিটির নির্দিষ্ট পোষাক বা ব্যান্ড দেয়া যেতে পারে, যাতে করে তাদেরকে সহজে চেনা যায়একটি ভিজিল্যান্স টীম থাকতে পারে, যারা র‍্যাণ্ডম সাব-কিমিটির কার্যক্রম পরিদর্শনে যাবে এবং এর উপর ঢাকার সেন্ট্রাল কমিটিকে সময়ে সময়ে অগ্রগতির রিপোর্ট প্রদান করবে

>> অরিজিন্যাল ফরমালিন কিট থাকতে হবে সাব-কমিটিসহ প্রতিটি ভিজিল্যান্স টীমের কাছেএই জিনিসটি-ই খুব গুরুত্বপুর্ণফরমালিন বা কার্বাইড টেস্টিং কিট আসল না নকল সেটা বোঝার যথাযথ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা যাচাই-বাছাই হয়ে একটি আদর্শ কিট বাজারে আসতে হবে

 >> অবৈধ ফরমালিন বা কার্বাইড এর মূল উৎস বন্ধ করতে হবেআর বৈধ ভাবে এই কেমিক্যাল যাদের মাধ্যমে ইম্পোর্ট হয়ে দেশে প্রবেশ করে, তাদের নির্দিষ্ট তালিকা সেন্ট্রাল কমিটির কাছে থাকবে এবং ইম্পোর্টাররা সেগুলো কোথায় কোথায় সরবরাহ করে থাকেন তার যথাযথ তালিকা ও ডকুমেন্ট সেন্ট্রাল কমিটিকে দেখাতে বাধ্য থাকবেন

 >>  আমবাগানগুলোতে কাজ করা সাব-কমিটি সেন্ট্রাল কমিটির কাছে সেই সব ট্রাকের নাম্বার প্রদান করবে যাতে কার্বাইড মিশানো ফল রয়েছেকারণ তাদের চোখের সামনে দিয়েই তো চালানগুলো বাক্সবন্দী হয়ে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে সরবরাহ হবেআর সেন্ট্রাল ভলান্টিয়াররা সেই নির্দিষ্ট পরিবহনকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদেরকে সাথে নিয়েই তা করা হবেআর আসল বিষাক্ত উপাদান পরীক্ষা করার কিট দ্বারা যদি আইটেমটি মানদণ্ডে ফেল করে তবে সেন্ট্রাল কমিটির যে কেউ ওই বিষাক্ত ফলের মালিকের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে মামলা করবে

 >>অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট জিয়া আহসান তার কোনো এক লেখায় কাঁচা বাজারগুলোতে কমপক্ষে দুইটি 'ফ্রিজার' রাখার কথা উল্লেখ করেছেনউন্নত রাষ্ট্রে এর বহু নজীর রয়েছেএজন্য আমাদের দেশের কাঁচা বাজারগুলো এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবেআর বাজারের সকল দোকান মালিকেরা নিজেরা মিলে এই ফ্রিজারের ব্যবস্থা করবেতাহলে সব্জীতে ফরমালিন মেশানোর আর প্রয়োজন হবে নাআড়তগুলোতেও অপেক্ষাকৃত বড় ফ্রিজারের ব্যবস্থা করতে পারলে ফরমালিন প্রয়োগের ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবেআর আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দ্বারাও পণ্য পরিবহনে সময় সাশ্রয় করাটাও একটা বড় ফ্যাক্টরপথে ঘন্টার পর ঘন্টা হিউজ ট্রাফিক জ্যামের কারনে সব্জী নষ্ট হবার ভয়েও সরবরাহকারীরা ফরমালিন মেশাতে বাধ্য হয়

 উপরের যে সমস্ত পয়েন্টে আলোচনা করলাম, সেখানে আসল হলো আমাদের মানষিকতার পরিবর্তনআর একে অন্যকে  নিঃসার্থ সহায়তা করাবাগান মালিক সাব-কমিটিকে সাহায্য না করলে, প্রশাসন এদের পক্ষে না থাকলে কিংবা সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যরা নৈতিকতার মানদণ্ডে উৎরাতে না পারলে সব কিছু ' এ বিগ জিরো'  ছাড়া আর কিছুই হবে নাদ্যুর্নীতি আমাদের সমাজ জীবনে এতোটা প্রভাব বিস্তার করেছে যে, শংকিত হতেই হয়কারণ আমরা অনেক দেখেছি, " যে যায় লংকায়, সেই হয় রাবণ"

আর একটি বড় ব্যাপার হল, বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি বাঁধবে কে? উপরের নির্দেশিত প্রতিটি পয়েন্টে প্রথম কে বা কারা উদ্যোগী হবে?

এই বিষয়টি নিয়ে এই পোষ্টের মন্তব্যে আলোচনা হতে পারে... কি বলেন পাঠক?

১৩ Likes ২৫ Comments ০ Share ৬১৮ Views