Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

sokal roy

১০ বছর আগে

আমাদের তো কিছুই নেই

সে রাতে মেঝেতে ক’ফোটা রক্ত দেখে
আঁতকে উঠেছিলাম! তখনও ভাবিনি দেখতে হবে রক্তবন্যা। আমার হাত ধরে তুই
আর আমাদের ছোট বোন অলকা ঠিক যেন একসাথে কেঁদে উঠেছিলাম। সে চিৎকারে তুই মুখ চাপা দিয়েছিলি।

আঙ্গিনায় পড়ে থাকা বাবার পাঞ্জাবী ভেজা ছিল রক্তে। দেখি মা ঠিক পুতুলের মতো মেঝেতে পড়ে রয়েছে। ঘরদোর এলোমেলো। যেন কোন ঝড় এসে খেলে গেছে তান্ডবলীলা।
বারান্দা পেরিয়ে কলতলায় এসে দেখি পড়ে আছে বড়’দি’র এক পাটি চটি, গতকাল বাবা যেটা খুজে খুজে কিনে এনে দিয়েছিল বড় বাজার থেকে। আমি শখের সে চটির পানে তাকিয়ে ভাবছি আর এক পাটি কোথায়? আর কোথায় আমাদের বড়’দি।
কিছুটা বিস্ময়ে আমি যখন গেছি তলিয়ে, তুই বললি চল নিষাদ দৌড়ে পালাই! আর এক মুহূর্তও নয়। আমি বলি বড়’দিকে নিয়ে গেছে যে; তাকে কি ফেলে যাব? তুই কিছু বলিসনি শুধু চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছিলি কখনো কখনো এমন হয়। হয়তো সে একদিন ফিরে আসবে! সেদিন বিশ্বাস গেঁথেছিলাম তাবিজ করে গলায়।


 সারারাত হাটা পথে চলেছি তিনজন। আমাদের চারপাশে কত রকমের মানুষ তখন দৌড়াচ্ছে। কত মানুষের ভীড়! একসাথে এত মানুষকে কখনো মরতে দেখিনি। পিকুদের ময়নার খাঁচা উল্টে গেছে কেথায় যেন উড়ে গেছে স্বাদের সে পাখি। আমরা তিনটে প্রাণী হেটে চলেছি কত চেনা-অচেনা পথ পেরিয়ে।
 আমাদের হাটা পথ থেমেছিল গাঁয়ের এক বাজারের কাছে যেখানে ছাই পোড়া নগরী দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। আরও কত কি যে চোখ পড়লো তার নেই ইয়াত্তা! তারপর বাসে করে ভোর রাতের শেষে গ্রামের পথে পা রাখলাম।

 আজ যেন গ্রাম আর সে রুপে নেই। আগুনের ছ্যাঁকা ছ্যাঁকা দাগে ভরা কৃষকের ঘর গুলো। দেখি লাউয়ের মাচায় ফুলগুলো কেমন চুপসে গেছে। কারা যেন একদল ছেলে বুড়োকে শুয়েই রেখেছে উঠোনের পাশে। কত রকম বীভৎস সে দৃশ্য। কারো কারো আর্তনাদ মাখা মুখ তখনও আগুন রেখেছে চোখেমুখে ধরে।

 হরিদাস গেটে নেই। আমাদের সে বাংলো ঘর। সব কিছুতেই কেমন যেন শূন্যতা।
 তবে কি লাগলো পাকিদের আঁচড় এখানেও! আমার হৃৎকম্পন ছড়িয়ে যায় সবখানে। একমুহূর্ত থেমে আবার মিশে গেলাম ভীড়ে। আমরা তিনটে প্রাণী উঠে বসে বসে থেমে থাকা ভীড়ে চিরে চ্যাপ্টা হবার জোগাড়!।
 ভিড়ের মাঝে ঠিক মনে নেই ক্যামন করে হাত ফস্কে দেখি অলকা নেই পাশে। আমি খুব করে খুজে নিই চারপাশ। কোথায় অলকা বোন আমার! নোনা ধরা চোখে তখন নামছে ঝড়। অলকা হারিয়ে গেছে কি,যে ব্যথা আহ! তুই আমাকে শক্ত করে ধরে বললি কোথায় হারালি বোন কে?
 অলকা! অলকা কোথাও নেই শুধু অপরিচিত মুখ গুলো আমাদের ফেলে ফেলে যাচ্ছে।

 আমাদের কেঁদে ফেলা দুপুরের পর তুই আমায় টেনে হিচরে নিয়ে গেলি নদীর ধারে। আমাদের সেই নদী যেখানে সাতরে দুজন করেছি কত এপার-ওপার । আজ নদী সে, তো নদী নেই এক ভাসমান কবরখানা। লাশগুলো ভেসে ভেসে কোথায় যেন ভেসে যাচ্ছে চলে। আমরা দুটো প্রাণী পুরোনো বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে গেলাম মিশে শরণার্থীদের দলে।
 অনেকদিন যেন ঘর বন্দী ছিলাম। জানিনা কবে যেন কে বলে গিয়েছিল দেশটা স্বাধীন হবেই, আমরা ফের উড়াতে পারবো আমাদের প্রিয় লাল-হলুদ ঘুড়ি গুলো। আমাদের কে অপরিচিতজনেরা কত না ছুড়ে ফেলে ফেলে নয়টি মাস বারান্দায় বারান্দায় ঘুমোতে দিয়েছিলো। তবুও মঙ্গল হোক ওদের। পাকিদের মতো জানে তো মারেনি আর!

 শেষে ন’টি মাস পার হলে একদিন তুই আমায় বললি চল নিষাদ ঘরে ফিরি। আমাদের বাড়ি ফেরা। কত কিছু দেখতে দেখতে বাড়ি ফেরা। লাল সবুজ একটা পতাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা। চারপাশে হাহাকার নিয়ে বাড়ি ফেরা।

 এক সকালে বাড়ি এসে গেট পেরিয়ে দেখি; আমাদের সে ঘর পাড়ার খারাপ লোকটা দখল করে বসে আছে। পাড়ার লোকেরা ওকে রাজাকার বলে আর আমি বলি কুত্তা তব্ওু কম বলা হয়ে যায়। আমাদের কিছুই নেই। শুধু ভাঙাচোরা এই স্মৃতি ছাড়া। আমার বড়’দি কে তো ওই তুলে নিয়ে গিয়েছিল সে রাতে। আজও পেলাম না বড়’ দি কে।
 আর অলকা বোন আমার না জানি কোথায় আছিস? কখনো দেখা হবে কি তোর সাথে?
 নাকি তুই কোন ফটোগ্রাফারের ফটোতে হয়ে গেছিস অসহায় মৃত কোন শিশু। অলকা, বড়দি যেখানেই থাকিস তোরা ভালো থাকিস।

২ Likes ১৪ Comments ০ Share ৪৬৬ Views

Comments (14)

  • - ধ্রুব তারা

    ব্লগে ধারাবাহিক গল্প ছিল না। আপনি সেটার অভাব পূরণ করলেন। যাই পইড়া আসি।

    - ঘাস ফুল

    অনেক গ্রামেই রইচ কেরানির মতো ধনাঢ্য লোক থাকে, যারা আশে পাশের মানুষকে নানা ভাবে শোষণ করে। জব্বার মিয়ার মেয়ের সাথে হয়েছে তার জন্য রইচ কেরানি দায়ী না তার ছেলে সেটা গল্পের এই পর্বে উঠে আসে নাই। তবে ধারণা করছি হয়তো বা রইচ কেরানির ছেলে হবে। গ্রামের অসচ্ছল পরিবারগুলো অনেক সময় গ্রামের রইচ কেরানিদের মতো মানুষের অত্যাচার নীরবে সহ্য করে যায়। আর মেয়ে ঘটিত ব্যাপার হলে তারা আরও বেশী নীরবতা পালন করে। আপনি অবশ্য এর কারণগুলো যথার্থই তুলে ধরেছেন। কিন্তু তার মধ্যেও কিছু সাত্তারের মতো কিছু সাহসী লোক থাকে। যারা অন্যায়ের প্রতীবাদ করতে পিছ পা হয় না। কিন্তু গ্রামের গরীবলোকগুলো বড়ই ভীতু। চোখে দেখা জিনিসও অনেক সময় নির্যাতনের ভয়ে অস্বীকার করে বসে থাকে। জব্বার মিয়ার ব্যাপারে সেরকমই হয়েছে। তাইতো সাত্তার মিয়াঁ মামলা করার জন্য কোন সাক্ষী খুঁজে পেলো না। বেশ গুছিয়ে লিখেছেন এই পর্বে। মাঝে মাঝে বেশ কিছু দামী কথাও বলেছেন। দেখা যাক আগামী পর্বে ঘটনা কীভাবে মোড় নেয়।

    ব্লগে আসলেই বড় গল্প কেউ পড়তে চায় না। কারণ গল্প পড়তে অনেক সময় চলে যায়। আর ইদানীং সবারই সময়ের খুব অভাব। তাই চেষ্টা করবেন গল্পের পর্বগুলোকে আরও ছোট করে পোষ্ট দিতে। তাতে করে পাঠকের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। যেহেতু এটা ধারাবাহিক, তাই ছোট করার অপশন কিন্তু আপনার হাতে আছে। ধন্যবাদ জিয়াউল। 

    • - জিয়াউল হক

      প্রিয় ঘাসফুল সাথে থাকবেন আশা করছি।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    কেন যেন মনে হচ্ছে বেশ লম্বা গল্প টানবেন। গল্পের বিষয়টা ভালো লেগেছে। আপনার কাছ থেকে আরো সাবলীল লেখা আশা করি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

    • - হাছান উদ্দিন রোকন

      ধন্যবাদ । তবে আমার চেহারাটা অপেনলি না বললেও পারতেন  এই  কথাটি বুঝলাম না । 

    • Load more relies...
    Load more comments...