Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমরা ও কিছু কম্বল!

ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে একটা কাজ শুরু করেছিলাম আমরা পাঁচ জন। কাজটা ভালোই। উত্তরবঙ্গের শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ। আমাদের এই প্রবল উৎসাহ এবং উদ্দীপনা উত্তুরে হিমেল হাওয়ার সাথে উড়ে যেতে বেশি সময় নিলো না। যার কাছেই টাকা চাইতে যাই সেই বলে দেশের অবস্থা ভালো না। আমরাও জানি পকেট থেকে পাঁচ টাকা বেরুতে দেশের অবস্থা ভালো হওয়া লাগে। তবুও দেশের এই খারাপ সময়ের মধ্যেও কেউ কেউ টাকা দিয়েছেন। ফেসবুকে বিকাশ নম্বর দিয়ে সাহায্য চাইলাম। আমার ফ্রেন্ডলিস্টের মধ্যে একজন, 'প্রিয়া গ্রিন' সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। বিকাশ করে টাকা পাঠালেন। সবশেষে গুণে দেখি সর্বসাকুল্যে এগারো হাজার টাকা। এই টাকা নিয়ে উত্তরবঙ্গে যাওয়া যাবে না। শেষমেশ ঠিক করলাম যা উঠেছে তাই দিয়েই ঢাকার শীতার্তদের কম্বল দিয়ে দেবো। 

আনুসাঙ্গিক খরচ নিয়ে মোটামুটি মানের পঞ্চাশটা কম্বল কেনা গেলো। এখন সমস্যা, কম্বল কই দেই! আজ সেই বিশেষ দিন। দোয়েল চত্বরের আশেপাশে অসংখ্য মানুষ ফুটপাতে শুয়ে বসে দিন রাত কাটিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে পাঁচজনে বেড়িয়ে গেলাম।

শুরুর অভিজ্ঞতা মন্দ না। ভালোও লাগছিলো। কাউকে কাউকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছবিও তুলে ফেললাম। আহ্‌ কি সুখ। এর মধ্যে ছোট্ট একটা ঘটনা এরকম... 

-চাচী, পরিবারে কয়জন?
-আমি আর আমার হাসব্যান্ড! 
-খাইছে! হাসব্যান্ড! কম্বল একটা দিলে হইবো?
-দুইটা দেন। 
-ধুরু! একটা দুইজনে গায়ে দিয়া শুইবেন। মহব্বত বাড়বো!
-মহব্বত বাড়লে একটাই দেন।

আমাদের আনন্দ বেশিক্ষন টিকলো না। কোত্থেকে যেন মেহজাবিনীয় ভাষায় এত্তগুলা মানুষ এসে গ্যাছে। বিলানোর পর আছেই মাত্র অল্প কয়েকটা কম্বল। সাথে যুক্ত হয়েছে রিকশাচালকেরা। ঘিরে ধরা এসব মানুষের মধ্যে যাদের অবস্থা একটু বেশি খারাপ তাদের হাতে কোনমতে একটা একটা গছিয়ে দিয়ে দৌড়ে রিকশায় উঠে গেলাম। রিকশা যাচ্ছে... পেছনে এতোগুলা মানুষ দৌড়ে আসছে। কয়েকটা পিচ্চি রিকশার পেছনে ঝুলে আছে। বেকায়দা অবস্থা! কোনমতে নিরাপদ দুরতবে আসার পর দেখি আশে পাশে আরো তিন চারটা রিকশা পাল্লা দিয়ে আসছে। তাদের দাবী তাদেরও কম্বল দিতে হবে। এদিকে ছিনিয়ে মিনিয়ে কম্বল নিয়ে যাবার পর আছেই আটটার মত কম্বল। বাসার হতদরিদ্র বুয়া এবং এলাকার কয়েকজন হতদরিদ্রের জন্যে রেখে এগুলো রেখে দেবো বলে ভাবছিলাম। রিকশাওয়ালাদের দেবার চেয়ে গরীব মহিলাদের দেয়া ভালো বলে কোনমতে ঝগড়া ঝাটি চেঁচিয়ে টেচিয়ে রিকশাওয়ালা বিদায় করা হল। 

আমাদের আর সাধ্য নেই। যতটুকু পেরেছি দিয়েছি। পঞ্চাশটা কম্বল খুব বেশি না আমরাও জানি। এই দীর্ঘ পোস্ট দিয়ে নিজেদের নাম ফলাচ্ছি না। শুধু মনের ভেতর জমে থাকা কথা কথাগুলো শেয়ার করলাম সবার সাথে। যদিও গরীব এই মানুষদের ব্যবহারে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো তারপরও সবই মেনে নিয়েছি। ওদের দোষ দিয়েও তো লাভ নেই। শিক্ষিত নেতা নেত্রীরাই ভালো ব্যবহার জানে না, ওরা আর কতটুকুই জানবে। 

যারা যারা টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, যারা যারা কথা দিয়ে সাপোর্ট দিয়েছেন, যারা যারা দোয়া করেছেন, যারা যারা আমাদের এড়িয়ে গ্যাছেন তাদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা। অন্তত কিছু মানুষ তো কম্বল পেয়ে খুশি হয়েছেন ... এটাই তো অনেক বড় পাওনা। আল্লাহ্‌র কাছে অনেক শোকরিয়া।

০ Likes ৭ Comments ০ Share ৪৭৮ Views

Comments (7)

  • - গোলাম মোস্তফা

    হাহাহা ছোট বেলা আমারও এমন ধারনা ছিল পেটে গাছ হয়ে যাবে 

    ভাল লাগা রইল 

     

    • - সুলতানা সাদিয়া

      আমি কিন্তু খুব ভয়ে ভয়ে লেখাটা পোস্ট দিয়েছি। কে কিভাবে নেয়! বলবে, বাচ্চাদের উল্টাপাল্টা শিখানো!! আমার ছেলেমেয়ের আজব কর্মকাণ্ডে আমরা সারাক্ষণই ভীত। এদের রোজ রাতে নানা গল্প শোনাতে হয়। তাই আমাদের জন্য শিশুশিক্ষার, গল্পের বই কেনা হয়েছে! আর ওরাই সারাদিন নানা গল্পের জন্ম দেয়!

    - রুদ্র আমিন

    বেশ ভাল লাগল। গ্রামের বাড়ি হাবা হাবা এক ছেলেকে বলেছিলাম কাঁচা মরিচের বিচি খেয়েছিস তোর তো মরিচ গাছ হবে....সে বাকি ভাত খাওয়া বাদ দিয়ে হায় রে কান্না দেখে কে ? তার পর ওর মা আমাকে লাঠি দিয়ে তাড়া আর বলে আমার ছেলে একটু হাবা দেখে তোরা এমন করে জ্বালাতন করিস। একদিন দেখবি এই হাবা আর হাবা থাকবে না। সত্যই তাই আজ আর সে হাবা নয়...উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট..সে এখন মনে হয় আমাকে এক হাটবাজারে বিক্রি করে অন্য হাট থেকে কিনে আনবে।

    • - সুলতানা সাদিয়া

      আপনার স্মৃতিচারণও বেশ মজার লাগল। শুভ রাত্রি।

    • Load more relies...
    - ঘাস ফুল

    আপনার আগের দুটো শিশুতোষ গল্পের চাইতে এই গল্পটা সব দিক দিয়েই বেশ ভালো হয়েছে। গল্পের সংলাপ এবং বাক্য গঠনেও বেশ একটা শিশুতোষ ভাব আছে এই গল্পে। 

    গল্পটাতে আপনি ইচ্ছে করলে আরশির সাথে মায়ের আরও কিছু সংলাপ বাড়িয়ে দিয়ে কয়েকটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিতে পারতেন। 

    ১. আরশির কাছে কিন্তু দাদী মিথ্যাবাদিনী রয়ে গেলো। দাদী যে আরশির সাথে রহস্য করে বা মজা করে কথাটা বলেছিল এটা কিন্তু আরশির মা বলে নাই। এটা বলা উচিৎ ছিল। 

    ২. আরশির রহস্যের সমাধান আরশির মা করে দিয়েছে। কিন্তু কিছুটা ঘুরিয়ে বলেছে। বাচ্চারা ততো ভাবতে পারে না। তাই আরশির মার উচিৎ ছিল, "-তবে যে বাবা সেদিন খেজুর বিচি গিলে ফেলল? এতদিনে তো আমাদের খেজুরের অভাব হতো না! বাবার মুখের সামনে যেয়ে হাত পাততাম আর টুপ করে খেজুর পেড়ে খেয়ে ফেলতাম। আমার বোকা মেয়ে!" এই সংলাপের পরেও ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেয়া এবং ইচ্ছা করলে দাদীর ব্যাপারটা এই সংলাপের সাথেই জুড়ে দেয়া যেত। 

    তবে গল্প খুব ভালো লেগেছে সাদিয়া। ধন্যবাদ। 

     

    • - সুলতানা সাদিয়া

      ধন্যবাদ সুপ্রিয় ঘাসফুল। আপনার পরামর্শমত সম্পাদনা করে নিব, তবে মুড....দরকার। আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

    Load more comments...