অনেক বাবা, মা ' ই এই নতুন বছরে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাবে।
তা খুবই ভাল। তবে আমার মতামত হলোঃ-
(১) কত বৎসর বয়সে একটি বাচ্চাকে স্কুলে দেয়া উচিৎ?
(২) কোন্ স্কুলে ( বাংলা মিডিয়াম) দেয়া উচিৎ?
............. এ কথাগুলো কি আমরা বাবা মা' রা চিন্তা করেছি? আমার পরিচিত একজনের বাচ্চা সবেমাত্র ৪ বছরে পা দিল। সেই বাচ্চাটিকে এবার একটা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল!!
আমি ভর্তি করাতে নিষেধ করাতে সেই পরিচিতের বউ বলল, " অমুকের বাচ্চাতো আরো ছোট থাকতেই তার বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে"?..................
আমি যখন ঢাকা কলেজে (১৯৮৫) পড়ি, তখন একটি সেমিনারে আবদুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার ( তখন তিনি ঢাকা কলেজে পড়াতেন) বলেছিলেন,
" একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর বাচ্চাকেও যদি ইন্টারমিডিয়েটের ক্যালরিমিতি পড়ানো হয় এবং বুঝানো হয়, সে বুঝবে, কিন্তু এই যে ব্রেনের উপর একটা প্রেসার, সেই প্রেসারের ফল পরবর্তীতে নেগেটিভ হবে......"।
UNICEF এর হিসেব মতে, একটি বাচ্চাকে ছয় (৬) বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করানো উচিৎ। তখন সেই বাচ্চা পড়াটাকে খেলার একটি অংশ হিসেবেই নিবে এবং মজা করে পড়বে।
সেই বাচ্চাকে পরবর্তীতে মা বাবাকে পড়ার জন্য চাপ দিতে হবে না। নিজের ইচ্ছাতেই পড়বে, স্কুলে যাবে।
প্রত্যেক বাংলা মিডিয়ামের বাচ্চাকেই সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করানো উচিৎ। একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষককে ( যদিও সে অনার্স সহ মাস্টার্স পাস থাকে) বাধ্যতামূলকভাবে পূর্ণ এক বৎসর PTI থেকে ট্রেনিং নিতে হয়। সেই ট্রেনিংটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। সেই ট্রেনিং এ একটি বাচ্চাকে কিভাবে পড়াবে, তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশ কিভাবে গড়ে তুলবে- এসব সকল বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মাত্র ৩/৪ বইই পড়ানো হয়। আরেকটি বিষয় হলো, PEC পরীক্ষা চালুর পর থেকে প্রতি বছর কিন্তু প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই পুরো বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম হচ্ছে।
বাংলাদেশে নতুন কিন্ডারগার্টেন ব্যবসা অনেকদিন ধরেই চলছে। এখনতো বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই কিন্ডারগার্টেন স্কুল ব্যবসা জোড়ালোভাবেই চলছে।
সেইসব স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন মানদন্ডের প্রয়োজন হয় না।
কোন্ ক্লাসে ্ কোন্ বই পড়াবে তার কোন মানদন্ডের প্রয়োজন হয় না।
কোন্ বাচ্চাকে কত বছর বয়সে কোন্ ক্লাসে দিতে হবে, তাও তাদের জানার প্রয়োজন হয় না।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কোন খেলার মাঠের প্রয়োজন আছে কিনা, তাও তাদের জানার দরকার নেই।
৩ বছরের বাচ্চাকেও স্কুলে নিয়ে গেলে ভর্তি করিয়ে নেবে।
আর, আমরাও দেদারছে আমাদের বাচ্চাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার অভিপ্রায়ে সেইসব আকাইম্মা কিন্ডারগার্টেন গুলোতে ভর্তি করাচ্ছি। এতে একদিকে এই কোমলমতি বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ চরমভাবে বাধাঁগ্রস্থ হচ্ছে।
আর, আমাদের সকলেরই একটি ভ্রান্ত ধারনা মনে জন্ম নিয়েছে, আর তা হলোঃ
সরকারী প্রাইমারী স্কুল হলো গরীবদের জন্য। কিন্ডারগার্টেন হলো বড়লোকের বাচ্চাদের মানুষ করার জায়গা।
............তাই, নতুন বছরে, যে সব বাবা মা তার বাচ্চাদের স্কুলে দিতে চান্, আমার অনুরোধ, একটু ভেবেচিন্তে, বড়দের সাথে আলাপ আলোচনা করে, তারপর দিন। আমাদের পূর্বপুরুষদের বড় বড় জ্ঞানীরা এবং বর্তমানের বড় বড় জ্ঞানীরা কেহই কিন্তু কিন্ডারগার্টেনে পড়ে বড় জ্ঞানী হন নি।