Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা দিবস




উৎসর্গঃ প্রিয় সহ-ব্লগার ঘাস ফুল ভাইকে।



আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, আগামী চল্লিশ দিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করব। কিন্তু করলেই তো আর হবে না, যা করার তা সব দিক ভেবে-চিন্তেই করতে হবে। যেমন- কখন করব? কিভাবে করব? কোথায় করব?  করার পরে কী হবে? যে জন্য বা যার জন্য করব, সে আত্মহত্যা করেছি শুনলে কি করবে? আর এসব না ভেবে আত্মহত্যা করলে শুধু শুধু একটা জীবন বিনষ্ট করা হবে। এত বছরের কষ্টে লালিত একটা জীবন কারো কোন কাজেই আসবে না তা হয় না। আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে ভালোবাসার জন্য এবং যুব সম্প্রদায়ের আত্মমুক্তির জন্য। যাতে বিশ্বে একটা বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস ঘোষিত হয় । তাহলে ? তাহলেতো চিন্তা-ভাবনা করেই যা করার তা করতে হবে। কিন্তু এ জন্য আমি আর বেশি কালক্ষেপণ করতে চাই না্। আমার ধার্যকৃত চল্লিশ দিনের মধ্যেই আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। তা না হলে আমার ইজ্জত বলতে আর কিছুই থাকবে না । তাতে আমি বেঁচে থেকেও নীরার কাছে ছোট হয়ে যাব। তা নিশ্চয় হতে পারে না। আহা! আমি একটা  মেয়ের কাছে হেরে যাব তা কক্ষণো হবে না। আমি যে ওর জন্য জীবন বিসর্জন করতে পারি তা ওকে বুঝাতেই হবে। আর আমি যদি একবার প্রেমের কারণে জীবন বিসর্জন করতে পারি তবে আমার প্রেম নিশ্চিত ইতিহাস হয়ে থাকবে।  একসময় বিশ্ব আমার আত্মহত্যার দিবসটাকে অনুসরণীয় করার জন্য বিশ্ব-আত্মহত্যা-দিবস হিসেবে ঘোষণা করবে। আর তখন ঐ দিবসে হাজার হাজার প্রেমিক–প্রেমিকা প্রেম যাতনা থেকে মুক্তির জন্য আত্মহত্যা করবে। বাহ! কি মজা হবে। ভাবতেই আমার আর দেরি সহ্য হচ্ছে না। পরপারে আমরা সবাই মিলে তখন একটা ‘‘আত্মহন্তক গ্রুপ” করতে পারব। এসব ভাবতেই এ পর্যন্ত ছত্রিশ দিন গত হয়ে গেছে। মৃত্যুর একটা নতুন পদ্ধতি চালু  করতে হলে তো কষ্ট করতেই হবে। কষ্ট হোক । এখনো তো চারদিন সময় হাতে আছে। সামান্য আত্মহত্যার জন্য খুব বেশি একটা সময় লাগবে না। সর্বোচ্চ ঘন্টাখানেক সময় হাতে পেলেই হবে।

আমার মনে হচ্ছে কাঁঠাল গাছে উঠে আত্মহত্যা করা যেতে । এর একটা রুমান্টিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যেতে পারে। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। আর আমি জাতীয় স্বার্থে আন্তর্জাতিক ইতিহাস গড়ার জন্য জাতীয় ফলের গাছে উঠে প্রেমের জন্য আত্মহূতি দিতে যাচ্ছি। এ ছাড়া এ পর্যন্ত কেউ কাঁঠাল গাছে উঠে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমার জানা নেই। যত দূর জানি তা হলো আমিই প্রথম এ কাজটি করতে যাচ্ছি। ওহ! কী দারুণ ঘটনা! এ নিয়ে ফেইসবুকে কি সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস ও মন্তব্য হবে। ভাবতেই আমার শরীর শিহরে উঠছে! এ ভাবনাটাকেই আমি আত্মহত্যার জন্য চূড়ান্ত করব। আর কোন বিকল্প চিন্তা আমার মাথায় আসছে না। এ জন্য আমি আগামী কালই একটা মোটাতাজা কাঁঠালগাছ ঠিক করে তাতে উঠে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করব। আগামী কাল যেহেতু পবিত্র শুক্রবার এবং একই সাথে ছুটির দিন সেহেতু এই দিনটাকেই বেছে নিতে চাচ্ছি। শুক্রবারে আত্মহত্যা করলে হয়তো স্রষ্টার দয়াও হতে পারে। আত্মহত্যাজনিত পাপের কারণে অন্তত নরকবাস থেকে অব্যাহতি পাওয়াও সহজ হতে পারে।

আজ সেই ঐতিহাসিক শুক্রবার। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে আমার মৃত্যূর জন্য “একমাত্র ভালাবাসা দায়ী” লিখা একটা স্লিপ বালিশের নীচে  রেখে একগাছি রশি নিয়ে কাঁঠাল বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। বাগানের শেষ মাথায় বহু পুরাতন আর মোটা একটা কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এদিকটা আবার বেশ নিরিবিলি। সচরাচর কেউ বিনা প্রয়োজনে আসে না। আত্মহত্যা করার জন্যও ইতোপূর্বে কেউ এদিকে আসে নি। এদিক থেকেও আমিই প্রথম হব। এত সুন্দর একটা নির্জন স্থানে বেশ আরাম করে ঝুলে থেকে শান্তিতে মরতে পারব। আর শতবর্ষী এই কাঁঠাল গাছটাও আমার আত্মহত্যার সাক্ষি হয়ে থাকতে পারবে।
নির্বাচিত কাঁঠাল গাছে উঠতেও তেমন কোন কষ্ট হলো না। সহজেই গাছে উঠে পড়লাম। বেশ শক্ত একটা ডাল দেখে তার সাথে রশিটা মজবুত করে পেঁচিয়ে বাঁধলাম। টেনেটুনে পরীক্ষা করে নিলাম। সব ঠিক আছে। সারাদিন ঝুলে থাকলেও রশি খুলে যাওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। এরপর গলায় ফাঁসটা ঢুকিয়ে গিট্টুটাও ভাল করে দেখে নিলাম। হঠাৎ মনে হল, সব প্রস্তুতি যখন শেষ তখন এবার একটা ফোন করে নীরাকে বলি, ‘নীরা, দেখ, আজ আমি সত্যিই তোমার জন্য আত্মহত্যা করছি। এই জীবনে তুমি আমার ভালবাসার কোন দামই দিলে না। না দাও, আমি আজ প্রমাণ করে দেব, আমি তোমার জন্যই আমার এত সুন্দর মানব জীবনটা উৎসর্গ করতে যাচ্ছি। এত ঠান্ডা মাথায় আমার আগে কেউ তার প্রেমের জন্য এভাবে কাঁঠালগাছে উঠে জীবন বিসর্জন দেয় নি। তোমার মনে পড়ে ? আমি যখন বললাম তোমার জন্য আমি আমার জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারি। তুমি শুনে হেসেছিলে। বলেছিলে, ‘আগে বিসজর্ন দিয়ে দেখাও। পরে আমি তোমাকে ভালোবাসব।’ আজ আমি তাই করছি। আমি তোমাকে জীবন বিসর্জন দিয়ে দেখাচ্ছি। তুমি যখন জানতে পারবে আমি সত্যিই তোমার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়েছি তখন তুমি নিশ্চয় কাঁদবে। আমি মৃত্যুর পর পরপারে গিয়ে তোমার চোখে একটু অশ্রু দেখতে পারলেই খুশি হব। তাতেই্ আমার জীবন ধন্য হবে। আর যদি আত্মহত্যার দায়ে আমার নরকবাস হয় তখন তোমার চোখের পানি দিয়েই আমি সেই নরকের আগুন নিভিয়ে ফেলব। তিুমি মনে করেছিলে আমি এ কাজ কক্ষণও করতে পারব না। আমি আজ সত্যি সত্যিই তা জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিচ্ছি। তবে আমার শেষ অনুরোধ, তুমি আমার মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরপরই ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেবে। সবাইকে বলবে, যে আর কোন মেয়ে যেন তোমার মতো কখনো কোন প্রেমিককে অবিশ্বাস না করে। তুমি যদি আমার প্রেমের গুরুত্ব অনুভব করতে পারতে তা হলে আমাকে আজ অকালে আত্মবিসর্জন দিতে হতো না। তুমি এখন নিষেধ করলেও আমি আর শুনব না। আমি আামার সিদ্ধান্তে অটল। তুমি ভালো থেক। আমি চললাম। খোদা হাফেজ।’ কিন্তু ফোন করাতো সম্ভব হচ্ছে না। রাতেই তো ব্যালেন্স শেষ। মনের কথাগুলো তাহলে জানান হলো না। না হোক। তার আর কোন দরকার নেই। আর কেনই বা তাকে বলে আমাকে মরতে হবে। আমার কোন সুহৃদ বন্ধু যদি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তখন না হয় সে জানবে। তাতে কী প্রতিক্রিয়া হয় তা তো আমি উর্দ্ধোলোক থেকেই দেখতে পারব। তা হলে আর ভাবনা কী। অযথা ভেবে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। আমাকে এবার ঝাঁপ দিতেই হবে্। বেশি বিলম্ব করলে ক্ষিদে লাগতে পারে। আজ সকালে তো নাস্তাই করা হয় নি। হে নিষ্ঠুর পৃথিবী, তুমি দেখ, আমি না খেয়ে ক্ষুধার্থ অবস্থায় তোমার বুক থেকে শুধু প্রেমের কারণে বিদায় নিচ্ছি। এবার সবাই দেখুক একজন প্রেমিকের কী করুণ হাল।
 
কিন্তু গাছের নিচে মানুষের কথা শুনা যাচ্ছে। এখানে  এমন সময় কে আসতে পারে? ব্যাপার কি ? কেউ জেনে গেল না কি ? আরে গাছের নিচে দেখা যাচ্ছে এক সাধুবাবা বসে আছে। আমি আগে তো খেয়াল করি নি। এখন দেখছি আবার গান গাইতে শুরু করল,  “গোলে মালে গোলেমালে পিরিত কর না, পিরিত হলো কাঁঠালের আঁঠা, লাগলে জোড়া ছাড়বে না….”।  আরে কয় কি? প্রীতি বলে কাঁঠালের আঁঠা? তাহলে আমি কাঁঠাল গাছে আত্মহত্যা করতে উঠলাম কেন? আমি যে প্রীতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেই প্রীতের জন্য যদি কাঁঠালের আঁঠাই দায়ী হয়ে থাকে তবে আমি কাঁঠাল গাছে উঠে আত্মহত্যা করতে যাব কেন ? তা তে আমার জাতীয় বোধ বিনষ্ট হলে হোক। নিশ্চয় এই ভাবনার মধ্যেও ভেজাল আছে- যা পুনরায় ভেবে দেখা দরকার। প্রীতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সহজ উপায়- “একমাত্র আত্মহত্যা” এ ভাবনার মধ্যে এখন পর্যন্ত আমি কোন ভেজাল খুঁজে পাই নি। এ ছাড়া এ দেশে সবকিছুর মধ্যেই ভেজাল আছে। এই নির্ভেজাল ভাবনার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি ভেঁজাল করে ফেলি তবে তো ইতিহাস আমাকে ক্ষমা করবে না। আর আমি ক্ষমাহীন আত্মহত্যাতেও বিশ্বাসী না। শেষমেষ গাছ থেকে নেমে ঐ বেটা গায়ককে একটা ধন্যবাদ দিলাম। বললাম, সাধুবাবা, আপনার গানের গলাতো খুব ভালো। সাধুবাবা আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। কোন কিছুই যেন শুনতে পায় নি এমন একটা ভাব করল। আবারও বললাম, আপনার কণ্ঠ খুব ভাল। আপনি খুব ভাল গান গাইতে পারেন।  
এবার সাধুবাবা বলল, ‘মরতে চাস ?’
বললাম , ‘জ্বি।’
‘প্রেমে পড়েছিস ? ’
‘তা আপনি জানলেন কেমন করে ?’
‘হ, আমি সব জানি। এবার যা- ডুবে মরগে।’
‘ডুবে মরব মানে ? কোথায় ডুবে মরব ? এ দেশে এখন ডুবে মরার মত কোন নদী-নালা-খাল-বিল আছে নাকি। নদ-নদী, খাল-বিল সবতো শুকনো । আমি কোথায় ডুবে মরব? ডুবে মরার জায়গা কোথায়? দেশের সব নদীর উৎসমুখে ভারত বাধ দেয়াতে নদীর বুকে শুধু ধুধু বালি আর বালি। দেশটা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে কেউ শান্তিতে ডুবে মরবে তারও তো কোন উপায় দেখছি না। সাধুবাবাকে বলতে হবে এ ছাড়া অন্যকোন রাস্তা দেখিয়ে দেয়ার জন্য। আমার হাতে সময় খুব কম। আর মাত্র তিনটা দিন।
সাধুবাবা এবার গম্ভির হয়ে বলল, ‘দেখ আমার দিকে তাকিয়ে দেখ। আমিও জলে ডুবে আত্মা হত্যা করেছি। আমি একটা মৃত দেহের মধ্যে বাস করছি। যা তুইও ডুবে মর। তারপর আমার মত মৃত দেহের মধ্যে বাস করবি। অনেক শান্তি পাবিরে বাছা, অনেক শান্তি পাবি।’
এবার আমি আর চুপ করে না থেকে বললাম, সাধুবাবা, সমস্যাতো ঐ একটাই। ডুবে মরার মত নদ-নদীতো দেখছি না। সব নদ-নদী এখন ভারত নিয়ন্ত্রিত। তারফলে সেখানে পানির পরিবর্তে শুধু বালি আর বালি।  
হঠাৎ সাধুবাবা চিৎকার করে বলল, ‘ওরে বাছা, আর দেরি করিস না। যা। দিল দরিয়ায় ডুবে মর।’
দিল দরিয়া? এটা আবার কী ? দিল দরিয়াটা কোথায় ? কোন দিকে ?কেমন করে সেখানে যাব? এই দরিয়াটাও কী ভারতের নিয়ন্ত্রণে? না কি বাংলাদেশের? এটা নিয়ে আবার কারো সাথে সরকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয় নি তো ? যদি ভারতের দখলে থাকে আর কোন চুক্তি সম্পাদন হয়ে থাকে তবে তো আমার আত্মহত্যা করার কম্ম সারা। আমি নিজেও অন্যদেশের নিয়ন্ত্রিত দরিয়ায় ডুবে মরতে ইচ্ছুক না। কারণ বিষয়টি বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস ঘোষণার ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাহলে এখন কী করি ? হায়! হায়!! সাধুবাবা গেল কোথায় ? তাকেও তো কোথাও দেখছি না। তাহলে কাকে জিজ্ঞাসা করি ? হায় আমার আত্মহত্যা করার উপায় কী হবে!!

২ Likes ১১ Comments ০ Share ৫৯৯ Views

Comments (11)

  • - লুব্ধক রয়

    ধন্যবাদ।

    • - সনাতন পাঠক

      ধন্যবাদ।

    - ঘাস ফুল

    চলচ্চিত্র উৎসবের সার্বিক সফলতা কামনা করছি। দর্শকদের জন্য বেশ আনন্দের সংবাদ। বিশ্ব চলচ্চিত্রকে দেখার সৌভাগ্য হবে। ধন্যবাদ সনাতন পাঠক। 

    - মিশু মিলন

    ধন্যবাদ সংবাদটি শেয়ার করার জন্য।

    ভাল থাকুন।

    Load more comments...