Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নাসরিন ইসলাম

৯ বছর আগে

আউটসোর্সিংঃ দেয়ালের ওপিঠে

বাংলাদেশে এখন আউটসোর্সিং এর হাওয়া চলছে। শহরের যেকোন দিকে তাকালেই দেখা যায় আউটসোর্‌সিং এর ট্রেনিং করানোর পোস্টার। এই সুযোগটা নিয়েছে পত্রপত্রিকাওয়ালারা। নানা উদ্যোক্তার সাফল্যের কথা পড়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে সবাই । কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি এসব মানুষের যাদের বেশিরভাগই স্টুডেন্ট তারা কোনরূপ ভাল প্রস্তুতি বা ট্রেনিং না নিয়েই, ভালোমতো না জেনেই এই লাইনে আসছে। কিন্তু এক সময় হয়ত বুঝবে এত এত সময় কি হেলায় ফেলায় হারিয়েছে। সারাজীবন অন্য কাজে সময় কাটিয়ে বুড়ো বয়সে অনেকেই এটা করার কথাও ভাবেন,। এমনকি তারা অনেক ধরনের সাইবারক্রাইম বা ইন্টারনেট ভিত্তিক অপরাধচক্রের কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

বছর কয়েক আগে কম্পিউটার সিকিউরিটির এক বড় কনফারেন্সে একজনের গবেষণাপত্রে বাংলাদেশের নাম শুনে তাই চমকে গিয়েছিলাম, দুঃখও পেয়েছিলাম। Freelancer.com বা এরকম নানা আউটসোর্সিং সাইটের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই অপরাধচক্রের কাজগুলা করছেন, অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত অল্প টাকার বিনিময়ে।

উদাহরণ দেই - নানা ওয়েবসাইটে স্প্যামারদের ঠেকানোর জন্য ক্যাপচা (CAPTCHA) এর ব্যবস্থা থাকে যেখানে একটি ছবিতে কী লেখা আছে তা টাইপ করে দিতে হয়। আইডিয়াটা এমন যে, কেবল মানুষ হলেই এই লেখাটা পড়ে বুঝতে পারবে, কোনো স্প্যামিং বট সেটা পারবেনা।

স্প্যামারেরা এই ক্যাপচার কবলে পড়ে কাবু হয়ে গেছিলো, কিন্তু এখন তারা তাদের কাজ করে দিয়েছে আউটসোর্স।

নিউইয়র্ক টাইমসের এই রিপোর্ট অনুসারে ১০০০টি এরকম ক্যাপচা সমাধান করার জন্য স্প্যামারেরা ফ্রিল্যান্সার এর মতো সাইটের মাধ্যমে মাত্র ৮০ সেন্ট হতে ১ ডলার (৮০ টাকা) দিয়ে থাকে, আর বাংলাদেশের প্রচুর তরুণ এই কাজে সময় কাটাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রকম স্প্যামার ও সাইবারক্রিমিনালদের জন্য বাংলাদেশ হয়ে পড়েছে সস্তায় ক্যাপচা সমাধানের একটা হাব বা প্রাণকেন্দ্র!!

হবেই বা না কেনো? শাওন নামের এক ছাত্রের সাক্ষাতকার নেয়া হলো, যার দলে ৩০ জন ছাত্র কাজ করে, গড়ে প্রতিদিন ৩ঘণ্টা কাজ করে ১৫ দিনে মাত্র ৬ ডলার কামায় (৫০০ টাকা)। আর ফ্রিল্যান্সার ডট কমের এক ভালো রিভিউ প্রাপ্ত বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সার এর কথাও এসেছে এই রিপোর্টে, যার কোম্পানি ৩০ জনের বেশি লোক রেখে এরকম স্প্যামারদের হয়ে কাজ করছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের নানা পত্রিকায় "সাফল্য" হিসাবে যাদের কথা এসেছে, এদের কয়েকজনের প্রোফাইল দেখে মনে হলো, তারা ফেইসবুকে লাইকের বিজনেস করেন, মানে কোনো পেইজে নকল লাইক দেয়ার দরকার হলে তারা তাদের অজস্র ফেইক একাউন্ট থেকে সেই কাজটা করে দেন নগদ টাকার বিনিময়ে।

টাকা আসছে দেশে, আপত্তিটা কোথায়? আপত্তিটা হলো এই সবগুলা কাজই (স্প্যামিং, ক্লিক ফ্রড) হলো অনৈতিক এবং সাইবারক্রাইমের অংশ। সামান্য কিছু টাকার জন্য যে অঢেল সময় ক্লিক করে তরুণেরা নষ্ট করছে, তা দিয়ে আসল আউটসোর্সিং এর কাজ যেমন ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিকাল ডিজাইন, এসব শিখে এক সময় এই তরুণেরাই অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারতো। বাংলাদেশের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নিজের শ্রম, মেধা, ও পরিশ্রম দিয়ে ভালো ভালো গঠনমূলক আউটসোর্সিং এর কাজ করছেন -- ক্লিক/লাইক ব্যবসায়ী ও স্প্যামারদের হয়ে কাজ করা এসব বিভ্রান্ত তরুণদের জন্য আসল উদ্যোক্তাদেরই বদনাম হয়ে চলেছে, আর সেই সাথে ক্ষুন্ন হচ্ছে আমাদের দেশের নাম, সাইবারক্রাইম আউটসোর্সিং এর গন্তব্যস্থল হিসাবে।

তাই তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে বাংলাদেশের হিসাবেও এতো অল্প টাকার জন্য চোর বাটপারদের হয়ে কাজ করবেন না, এতে আপনাদের নিজেদের যেমন লাভ হচ্ছেনা, দেশেরও হচ্ছেনা কোনো দীর্ঘমেয়াদী উপকার। গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে তাই একটু কষ্ট করে ডিজাইন, ডেভেলপমেন্টের কাজ করুন, এক সময়ে অনেক বেশি সুফল আসবে দেশ ও জাতি, এবং অবশ্যই আপনাদের নিজেদের জন্য।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৯৭ Views

Comments (0)

  • - টোকাই

    অসাধারণ !!