Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নাসরিন ইসলাম

৯ বছর আগে

আউটসোর্সিং এর নামে বদনাম করছেন যারা

আউটসোর্সিং কি? যারা এটা নিয়ে কাজ করে তাদের অনেকেই এবং সাধারণ মানুষকেও জিজ্ঞেস করা হলে সে সোজা বাংলায় উত্তর দিবে ‘ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনা পরিশ্রমে টাকা উপার্জনের একটি উপায়’, এ উত্তরটি আসলে কত বড় একটি ভ্রান্ত ধারণা তা বলে বোঝানো যাবে না। আবার অনেকে এই ‘আউটসোর্সিং’ শব্দটির সম্পর্কে ঠিকভাবে জানেই না। কিন্তু আইটি ফার্ম খুলে বসে গেছে। আসলে এই আউটসোর্সিং টা কি সে সম্পর্কে তাদের কোন ধারণাই নেই। একটা উদাহরনের সাহায্যে বোঝানোর চেষ্টা করা যাক।

বাংলাদেশে প্রচুর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর অধিকাংশ ফ্যাক্টরিরই কাজ হচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির জন্য চাহিদা অনুযায়ী পোশাক তৈরি করা এবং রপ্তানি করা। আর বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কারখানাকে কাজ দিচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিকের নিম্ন মজুরির জন্য যা তাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক কমিয়ে দিচ্ছে। আবার বিগত দশকে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে আর ইন্টারনেটের প্রসার ঘটেছে। যোগাযোগের মাধ্যম সহজ হয়েছে এবং খরচ হাতের নাগালে পৌঁছেছে। গার্মেন্টসে শিল্পের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায় যে বিদেশের বিভিন্ন আইটি ফার্ম তাদের কাজের একটি অংশ চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশের কোন আইটি ফার্মকে করতে দেয় যাকে আউটসোর্সিং বলা হয়। এই কাজের আদান-প্রদান আর যোগাযোগ ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে নিম্ন মজুরির মত বাংলাদেশের আইটি ফার্মগুলোর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কম হওয়ার জন্য বিদেশি আইটি ফার্মগুলো আকৃষ্ট হয়। আর এভাবেই বাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ের বিস্তার ঘটেছে।

বিগত বছরগুলোতে বিদেশের আইটি ফার্মগুলো বাংলাদেশের আইটি ফার্মগুলোকে কাজ দেওয়ার পাশাপাশি অনেক কম্পিউটার জ্ঞানসম্পন্ন স্বতন্ত্র ব্যক্তিকেও কাজ দিয়েছে। এই স্বতন্ত্র ব্যক্তি যারা বাসায় বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করেন তাদের বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইটি ফার্ম এবং ফ্রিল্যান্সারদের পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে আউটসোর্সিং-এ বাংলাদেশের সম্মানজনক অবস্থান। কচ্ছপ গতির ইন্টারনেট কানেকশন আর লোডশেডিং এর মত বড় বাধার সাথে পাল্লা দিয়ে আজ এ অবস্থায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ।

কিন্তু বাংলাদেশে এখনো আউটসোর্সিংকে পেশা হিসাবে নিতে সবাইকে দশবার ভাবতে হয়। কারণ পেশা হিসাবে বাংলাদেশে এখনো তেমন সম্মান দেয়া হয় না ফ্রিল্যান্সারদেরকে। একজন ইঞ্জিনিয়ার কোনো একটি প্রাইভেট ফার্মে ছোটখাট একটা চাকরি করলেও তিনি গর্ব করে তা বলতে পারেন, কিন্তু যখন তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করেন, সেটা বলতে তার ইতস্তত বোধ হয়।

আসল কারণ হলো তার কাজ বা কাজের প্রক্রিয়া অধিকাংশ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না। ঘরে বসে থাকা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্বের শামিল। একজন ফ্রিল্যান্সার যত টাকাই উপার্জন করুন না কেন তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হন। শারীরিক শ্রমের চেয়ে মেধার শ্রম আউটসোর্সিংয়ে ব্যবহার হওয়ার কারণে সাধারন মানুষ ফ্রিল্যান্সারদের গুরুত্ব খুবই কমই বুঝে থাকেন।

এই নাজুক অবস্থায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত হয়ে উঠেছে নাম সর্বস্ব কিছু প্রতিষ্ঠান যারা আউটসোর্সিং এর ট্রেনিংয়ের নাম করে আগ্রহীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। ‘ঘরে বসেই বিনা পরিশ্রমে আয় করুন ৫০ হাজার টাকা’ – এই ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন দেয়াল। এমনকি আজ শিখে কাল ট্রেনিং দিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

আউটসোর্সিং সম্পর্কে ধারণা নেই এরকম অনেক মানুষের মনে এই বিজ্ঞাপণগুলোর কারণে বিরূপ ধারণা জায়গা করে নিয়েছে। বিনা পরিশ্রমে টাকা উপার্জন করা সম্ভব নয় এবং মানসিক শ্রমকে যারা পাশ কাটিয়ে ‘বিনা পরিশ্রম’ কিছু করা সম্ভব বলে প্রচার করে তারা প্রতারক ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু এ কথা কয়জনকে বোঝানো যায়। এক সময় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আউটসোর্সিং এর ট্রেনিং নামে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। যা ক্ষতি করছে সম্ভাবনাময় ফ্রিল্যান্সারদের এবং সামাজিকভাবে ফ্রিল্যান্সার আর আউটসোর্সিংয়ের প্রতি একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে।

সামাজিক স্বীকৃতি নেই, নেই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ কোনও ব্যাংকিং ব্যবস্থা। উপার্জিত অর্থ ফ্রিল্যান্সারদের বাংলাদেশে আনতে হয় বিভিন্ন অনুমোদনহীন মাধ্যমে। অনুমোদনহীন মাধ্যম ব্যবহার করার ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়, আরেকদিকে একজন ফ্রিল্যান্সার বঞ্চিত হয় তার প্রাপ্য উপার্জিত অর্থ থেকে। বাংলাদেশের সরকারও এ ক্ষেত্রে বেশ উদাসীন।

বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আউটসোর্সিং করা ফ্রিল্যান্সারদের অবস্থান স্রোতের প্রতিকূলে। বিভিন্ন প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি আর সরকারের উদাসীনতা সম্ভাবনাময় এ খাতকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। এবং বাংলাদেশই এমন একটা দেশ যে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ায় আমাদের কাজ।


০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৭২ Views