Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেহজাদ আমান

১০ বছর আগে

অভিশপ্ত গলিপথে ঘুরে মরছে জামাত-শিবির

(১)

আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্র ২০১২-এর একজন সভ্য ছিলাম। ক্লাস হত প্রতি শুক্রবারে, যেখানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ সার উপস্থিত থাকতেন । ক্লাস শেষে আমরা অনেকেই মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্যারের সাথে আলোচনা করতাম। আমাদের এই পাঠচক্রে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা ছেলে-মেয়েরা থাকত। কয়েকজন জামাতে ইসলামির সমর্থক বা কর্মীও আমাদের এই পাঠচক্রের সভ্য হিসাবে ছিল। তাদের মধ্যে একটি ছেলে, যে কিনা শিবিরের রাজনিতির সাথে ভালভাবেই যুক্ত ছিল, সে একসময় স্যারকে প্রশ্ন করে বসলো যে, ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাজ ছিল কিনা ? স্যার তখন বিষয়টাকে সত্য নয় বলে মত প্রকাশ করলেন, এবং কেন সত্য নয় সেটা স্যার ছেলেটাকে বুঝিয়েও দিয়েছিলেন।

এসবই যেহেতু আমার চোখের সামনে হয়েছিল, তাই আমি তখন চুপ করে থাকতে পারিনি। আমি তাই সবার সামনে কোন কথা না বললেও , ক্লাস শেষে সেই ছেলেটিকে ডেকে কথা বললাম। বিভিন্ন কথার মাঝে তাকে এটাও বুঝিয়ে দিলাম যে, ওর এইভাবে কথাটা বলা উচিত হয়নি। কারন তার দাবি আদৌ সত্য নয়, আর এরুপ দাবি করে সবার সামনে কথা বললে মানুষই তাকে মন্দ বলবে।

এই ব্যাপারটি থেকে আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করলাম, শিবিরে অনেক ফ্রেশ ছেলেরা যোগ দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাদের নেতারা ভ্রষ্ট আর বিকৃত ইতিহাস শিখিয়ে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করিয়ে বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে তাদের মধ্যে যে চেতনা থাকা উচিত, সেটাকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। আরও ভালভাবে উপলব্ধি করলাম যে, একাত্তর ও তদপরবর্তী সময়ে জামাত-শিবির অভিশপ্ত গলিপথেই ঘুরে মরছে, যা থেকে তারা কোনদিন বের হয়ে আসতে পারে কিনা, সেটাই সন্দেহ।

এই ছেলের মত শত শত ছেলে, যারা কিনা জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিচ্ছে ও দিয়েছে, তাদেরকে এভাবে ভুল আর মিথ্যা ইতিহাস শিখিয়ে জামাত-শিবির একেতো ৭১-এ তাদের নিন্দনীয় ভুমিকাকে আড়ালে রাখতে চায়। অপরদিকে তাদেরকে এটাও বোঝান হচ্ছে ইসলাম আর জাতীয়তাবাদ এক নয়, আর সেই জন্য ৭১-এ জামায়াতে ইসলামী নাকি সঠিক পথেই ছিল। আর এটাতো প্রচার করেই যে, ৭১ এ তারা কোন হত্যা ও ধংসযজ্ঞে লিপ্ত ছিলনা।

এটা আমরা অস্বীকার করছিনা যে, জামাত-শিবিরে যারা যোগ দেয়, তাদেরকে অনেক শৃংখলাপূর্ণ আর নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দলের কাজকর্মে যুক্ত হতে হয়। এটাও সত্য যারা শিবির করে তারা সবাইই যে অমানুষ, তাও বলা যাবেনা। অনেকেই নিয়মিত নামায-কালাম পড়েন। অন্যের বিপদে এগিয়ে আসেন। তাদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যও ভালো ।

কিন্তু, তাদেরকে ভুলইতিহাস শিখিয়ে, ভুল আদর্শে পরিচালিত করে এবং সহিংসতার পথে ধাবিত করে যে পাপ করানো হচ্ছে, তা থেকে এই ছেলেদের কে বের করে আনবে ??? আমরা অনেকেই হয়তো সহিষ্ণুতার কথা বলে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা স্থায়ী কোন সমাধান নয় বলে মত দিয়ে থাকি। কিন্তু, প্রতি বছর তারা যেভাবে হাজার হাজার ছেলেকে ভুল ইতিহাস শিখিয়ে, দেশ ও জাতি সম্পরকে ভুল ধারনা দিয়ে পরিচালিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের যে ভয়াবহ ক্ষতি করছে, তার চেয়ে কি তাদের নিষিদ্ধ করাই ভাল নয় ???

(২)

জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক দিন ধরেই দেশজুড়ে আলোচিত একটি নাম। তারা তাদের নেতিবাচক কাজকর্মের কারণে বেশিরভাগ সময়ই সমালোচিত ও বটে। অনেক ক্ষেত্রেই জামা্ত-শিবির তাদের সহিংস কাজকর্ম আর একাত্তরের ঘৃণ্য ভূমিকার ক্ষেত্রে নানান ধরণের সাফাই গেয়ে থাকে। আজ তাদের সেই অসার যুক্তি আর বাজে ওজরের কিছু প্রতিবাদ ও যুক্তিখন্ডনের চেষ্টা চালিয়ে যাব।

জামাত-শিবির সবসময় তাদের ৭১-এর ভূমিকার ব্যাপারে প্রপাগান্ডা চালিয়ে যায় যে, ৭১-এ পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার চেষ্টা করে তারা ঠিকই করেছিল।

তাদের এই বাজে ওজর মানলে বলা যায় যে, বৃটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করেও ভারত-পাকিস্তান ভুল করেছিল। সেটা তো বৃটিশ সাম্রাজ্য ভেঙ্গেই হয়েছিল।

বৃটিশ শাসকেরা ১৯৪৭ সালে মুসল্মানদের জন্য এমন একটি দেশ দিয়েছিলেন, যার দুটি অংশের মাঝখানে ছিল আরেকটি দেশ—ভারত। এটা বৃটিশ সরকার কি বুঝে করেছিল, সেটা তারাই ভাল জানে। কিন্তু, দুটি অংশের দূরত্ত ছিলও ১৬০০ কিলোমিটার । আর দুটি অংশের মানুষ মুসলমান হলেও তাদের ভাষা, সংস্কৃতি আর ভূ-তাত্তিক বিশিষ্টে ছিল রাত-দিন তফাত। একটি অখন্ড দেশ হলে তাও ভারতের মত ভিন্ন ভিন্ন জাতি-সত্তার দেশ হয়েও পাকিস্তান দেশটি হয়ত টিকে যেত। যেমন, উত্তর ভিয়েতনাম আর দক্ষিণ ভিয়েতনাম বা দক্ষিণ কোরিয়া আর উত্তর কোরিয়া পাশাপাশি ভূখন্ডে অবস্থিত ছিল। তার চেয়েও বড় কথা তাদের মধ্যে জাতিগত পার্থক্য বলতে খুব বেশি কিছু ছিলও না। কিন্তু, একটি অংশ যদি আরেকটি অংশ থেকে ১৬০০ কিলোমিটার দূরত্তে অবস্থিত হয়, তাহলে সেটাকে একীভূত করা যে অসম্ভব ব্যাপার, সেটা তদকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কখনই উপলব্ধি করে নাই!

তারপরও দুটো অংশের মাঝে যাতে সুসম্পর্ক বজায় থাকে, সেই নিমিত্তে যে উদার ও বৈষম্যহীন নীতি ও কর্মপরিকল্পনা তাদের নেয়ার দরকার ছিল, সেটার ধারে কাছেও তারা ছিলেন না। পূর্ব পাকিস্তানকে তারা আসলেই একটা সামান্য প্রদেশের তুলনায় বেশি কিছু ভাবতে পারে নাই। অর্থনৈতিক, সামাজিক আর রাজনৈতিক বৈষম্যে তারা পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশকে একরকম জেবরার করে তুলেছিল।

তাই, পাকিস্তানের এই দুই অংশের একসাথে থাকা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। এতকিছুর পরেও যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে আগ্রাহ্য করে পাকিস্তানের হাস্যকর অখন্ডতা রক্ষার উপর জোর দিয়েছিল এবং ১৯৭১-এ সেই জন্য মাঠে নেমেছিল, তাদের মত অন্ধ, নির্বোধ, ভাঁড়, আর সত্যকে অস্বীকারকারী কেউ হতে পারে না। ১৯৭১-এ জামাত, ইসলামী ছাত্র সংঘ, এবং আরও কিছু ইসলামী দল আসলেই এইরকম নির্বোধ, ভাঁড় আর অন্ধই ছিল।

(৩)

জামাতী ইসলামের আরেকটি প্রপাগান্ডা হল, ১৯৭১-এ তারাই দেশপ্রেমিকের ভূমিকা পালন করেছিল। আর তারা এই কথার স্বপক্ষে ‘দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ’ এই ধরণের একটি হাদিসের উদাহরন দিয়ে থাকে। কিন্তু, তারা ভুলে যায়, সবকিছুর উপরে ন্যায় আর অন্যায় বলে কিছু কথা থাকে। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চের পর বাংলাদেশের মানুষের উপর, বিশেষ করে বেসামরিক লোকজন আর অগনিত নারীদের উপরে যে অত্যাচার, নির্যাতন, বর্বরতা আর হতাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেটা আর যাই হোক জাতিগত অখন্ডতা রক্ষার কোন চেস্টার মধ্যে পড়ে না, দেশপ্রেমের মত পবিত্র জিনিসের মধ্যে তো নয়ই। তাদের সেই নিরমম, নৃশংস বরবরতার কিছু উদাহরণ নিচে তুলে দিলামঃ

 

“ঢাকা পৌরসভার সুইপার সাহেব আলীর ভাষ্যে ২৯ মার্চ তার দল একমাত্র মিটফোর্ডহাসপাতাল থেকে কয়েক ট্রাক লাশ উদ্ধার করে।তিনি আরমানীটোলার এক বাড়িতে দশএগারো বছরের একটি মেয়ের লাশ দেখতে পান,সমস্ত শরীর ক্ষতবিক্ষত,জমাট বাঁধাছোপ ছোপ রক্ত সারা গায়ে,এবং তার দেহের বিভিন্ন স্থানের মাংস তুলে ফেলাহয়েছিল।ধর্ষণ শেষে মেয়েটির দুই পা দু’দিক থেকে টেনে ধরে নাভি পর্যন্ত ছিড়েফেলা হয়েছিল।৩০ মার্চ ঢাবির রোকেয়া হলের চারতলার ছাদের উপরে আনুমানিক ১৯ বছরের একটিমেয়ের লাশ পান সাহেব আলী,যথারীতি উলঙ্গ।পাশে দাঁড়ানো একজন পাক সেনার কাছথেকে তিনি জানতে পারেন মেয়েটিকে হত্যা করতে ধর্ষণ ছাড়া অন্য কিছু করারদরকার পড়েনি,পর্যায়ক্রমিক ধর্ষণের ফলেই তার মৃত্যু ঘটে।মেয়েটির চোখ ফোলাছিল,যৌনাঙ্গ এবং তার পার্শ্ববর্তী অংশ ফুলে পেটের অনেক উপরে চলেএসেছে,যোনিপথ রক্তাক্ত,দুই গালে এবং বুকে কামড়ের স্পষ্ট ছাপ ছিল। ’৭১ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পাকবাহিনীর একটি বিরাট ক্যাম্পে পরিণত করাহয়।এখানে বন্দী ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্রী মঞ্জিলা এবং তার দুইবোন মেহের বানু এবং দিলরুবা।।তাদেরকে আরো ৩০ জন মেয়ের সাথে একটি কক্ষেতালাবদ্ধ করে রাখা হয়,সার্বক্ষণিক প্রহরায় থাকতো দুজন সশস্ত্র গার্ড।এইমেয়েগুলোকে ওই ক্যাম্পের সামরিক অফিসারদের খোরাক হিসেবে ব্যবহার করাহত।প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হত ৫/৬ জন মেয়েকে,এবং ভোরবেলা ফিরিয়ে দেয়া হতঅর্ধমৃত অবস্থায়।প্রতিবাদ করলেই প্রহার করা হত পূর্বোক্ত কায়দায়।একবারএকটি মেয়ে একজন সৈনিকের হাতে আঁচড়ে দিলে তখনই তাকে গুলি করে হত্যা করাহয়”।

(তথ্যসুত্রঃ ১- নারী নির্যাতন ৭১, হারুনুর রশীদ সম্পাদিত, ২-.বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র,অষ্টম খন্ড,হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত)

......এরপর আমার আর কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমার অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, জাস্ট একটা লেখার তাগিদে আমার এই বিষয়গুলো তুলে আনতে হল।

২৫ শে মার্চের পর পাকিস্তানের এইসব নৃশংস আর বর্বরদের যারা নিজেদের পক্ষের লোক ভাবতে পারে, তাদের চাইতে নিরলজ্জ, নির্বোধ আর অসভ্য মানুষ কেউ হতে পারে না। অথচ, ৭১-এ জামাত-শিবির এই নৃশংস বরবরদের শুধু নিজেদের পক্ষের লোকই ভাবেনি, বরং তাদের হয়ে এরা কাজও করেছে, এদের অপকর্মের দোসর ছিল এই জামাত-শিবিবের লোকেরা।

 

৭১-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, জামাত যুদ্ধকালীন তাদের নিন্দনীয় ভূমিকা নিয়ে বিপদের মধ্যে পড়ে। তাই তারা চেষ্টা করে এসব কাজের সাথে তাদের সংলগ্নতা অস্বীকার করতে। তারা প্রচার করে যে, ৭১-এ তারা শুধু পাকিস্তানের অখন্ডতা চেয়ে আন্দোলন করেছিল। নৃশংসতা আর হত্যাযজ্ঞের সাথে নাকি জামাত ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কোন যোগাযোগ ছিলনা।

বলাই বাহূল্য, এই ধরণের প্রচার তারা করে ইতিহাসের অসংখ্য প্রমাণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দখিয়ে। ঐতিহাসিক দলিল, সংবাদপত্রের কাটিং, ফটো ও কাগজপত্র এটাই প্রমাণ করে যে আল বদরের জন্মই হয়েছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ থেকে, আর তারাই যে বুদ্ধজীবি নিধণের অন্যতম হোতা ছিল সেটাও অস্বীকারের উপায় নেই।

 

কিন্তু, জামাত-শিবির তাদের মিথ্যাচার ছাড়তে পারে নাই। তাদের নেতারা মিথ্যাচার করেন এবং যারা সদস্য হিসেবে এই সংগঠনে ঢোকেন, তাদেরও এই কথাগুলোই শেখানো হয়। এবং দুঃখের ব্যাপার হল এই যে এইসব তরুণেরাও এই মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাসেই বিশ্বাস করেন।

জামায়াতের মিথ্যাচারের ব্যাপারটি নিচের লেখা থেকে অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায়। মোহাম্মাদ আহসানুল হক আরিফ নামে এক কট্টর জামাতি সমর্থক নিচের লেখাটি লিখেছিলেন ফেসবুকে গত বছরের মার্চ মাসেঃ

“......তাছাড়া ১৯৭০ এর ইলেকশনে বাঙ্গালীরাই বিজয়ী হয়েছিল, আর সংখ্যাগরিষ্ঠতারকারনে বাঙ্গালীরাই মুলত গনতান্ত্রিক পাকিস্তানে শাসনের ক্ষেত্রে অগ্রগ্রামীছিল। সব বিবেচনায় জামায়াত ইসলামী পাকিস্তানকে ভাঙ্গার চিন্তায় একমত হতেপারেনি। এটী কেবল জামায়াত ইসলামী নয়, বরং অন্যসব ইসলামী রাজনৈতিক দল, অনেকবামপন্থী কমিউনিষ্ট দল সহ দেশের সাধারন মানুষদের একটী বড় অংশই এই বিভাজনেরবিরোধী ছিল। কারন পাকিস্তান সৃষ্টি সময়ে ভারতীয় হিন্দুদের হাতে যে রক্ত ওজীবনক্ষয় মুসলিমদের হয়েছিল তা বাঙ্গালী মুসলিমদের স্মৃতিতে তরতাজাভাবেইছিল। আর এই ব্যাপারে জামায়াত ইসলামীর অবস্থান ছিল রাজনৈতিক। কোন সামরিকঅবস্থান ছিল না। রাজাকার, আলবদর ইত্যাদি বাহিনীগুলো ছিল পাকিস্তান সরকারেরতৈরি করা বাহিনী যেগুলোতে নেতৃত্বে বেশীরভাগই ছিল আওয়ামীলীগের নির্বাচিতচেয়ারম্যান মেম্বাররা, বা অন্য উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর নেতারা।

...... এখানেআরেকটী জরুরী বিষয় হল, জামায়াত ইসলামী কিন্তু কখনো অন্যান্য চরিত্রহীনরাজনৈতিক দলগুলোর মত পল্টিবাজী করে বলেনি যে, তারা অখন্ড পাকিস্তানেরপক্ষে ছিল না। বরং তারা তা সবসময়ই স্বীকার করে, কিন্তু এটির ব্যাপারে তাদেরঅবস্থান কেন ছিল তাও পরিস্কারভাবে বলে দেয়। এটি ১৯৭১ নিয়ে জামায়াত ইসলামীন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায়”।

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/notes/mohammad-ahsanul-haque-arif/520894481304392

অনেক কিছুই এই ব্যক্তিটি তার বক্তব্যে বলেছেন। কিন্তু, এই কথাটা তিনি বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন যে, মির জাফরকে যেমন ইতিহসকে ক্ষমা করে নাই। তেমনি, বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষের সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ১৯৭১-এ তাদেরও কোন ক্ষমা নেই।

বাংলাদেশ সুদৃঢ় প্রাচীনকাল থেকেই একটা আলাদা ভূখণ্ড ছিল। সিরাজুদ্দউলা বা তিতুমিরেরা বাংলাদেশের এই ভুখন্ডটিকে রক্ষার ক্ষেত্রেই চেষ্টা করে গেছেন, এক পর্যায়ে শহীদও হয়েছেন। তারা করাচি বা লাহোরের স্বাধীনতার জন্য কখনোই চেষ্টা করেন নাই। ভারতের পূর্ব পাশে যে বাংলা ভূখন্ড ছিল, তাই তাদের ধ্যান-জ্ঞান ছিল।

তাইতো, ইতিহাস সবসময়, তিতুমির বা সিরাজুদ্দউলাকেই বীরের মর্যাদা দেয়। মীরজাফরদের ঠিকানা নির্ধারিত হয়ে গেছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে।

নিজের দেশ কোনটা হওয়া উচিত, সেই জিনিসটা যারা অতীতে বুঝতে পারে নাই, তাদের চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? ৭১-এ বেসামরিক আর বুদ্ধিজীবি হত্যার ব্যাপারটা না হয় বাদই দিলাম!

(৪)

জামায়াত-শিবির ইসলামী রাজনীতি করার কথা বললেও তাদের সহিংস কাজকর্ম আর তাদের নেতাদের ভোগবাদী জীবনে ইসলামের মূল আদর্শ সবসময়ই অনুপস্থিত। ইসলামের ত্যাগ, সংযম আর সহিষ্ণুতার আদর্শ থেকে তারা অনেক দূরে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে মক্কা ও মদিনায় হযরত মোহাম্মাদ যে ত্যাগ, সহিষ্ণুতা আর অহিংস সংগ্রামের মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই রকম আদর্শ থেকে জামাত-শিবির বহুদূরে অবস্থান করে। তাইতো, দেখা যায় রগকাটা, গলাকাটার মত সহিংস প্রতিবাদই তারা বেছে নেয়, যেটা ইসলামের মূল আদর্শের সাথে কোনদিনই যায় না।

ইসলামি দল হয়েও দেখা যায় তারা যেন অনেকটাই পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দোসর হয়েই কাজ করে। তাইতো, তেল, গ্যাস আর কয়লা যখন বিদেশীদের হাতে বলতে গেলে একরকম লুট হয়ে যায়, তখন তারা থাকে একেবারে নির্বিকার । কাজেই, বোঝা যায়, জামায়াতে ইসলামী আদতে একটি সুবিধাবাদী দল, প্রকৃতপক্ষে কোন ইসলামী দল নয়।

 

(৫)

তাইতো, এই দলটি ৭১ সাল থেকে পেয়ে এসেছে মানুষের অভিশাপ, তরুণ প্রজন্মের ঘৃণা। ৭১-সালে তারা যে পাপ করেছে, তার জন্য তাদের নেতাদের যে শাস্তি প্রাপ্য সেটা জামাত-শিবিরের বেশিরভাগ মানুষই মেনে নিতে চান না। শাহবাগ ২০১৩-এর আন্দোলনেই মানুষ দেখিয়েছে যে তারা এই দলটিকে কতটা ঘৃণা করে। যে পাপ তারা ৭১ আর ৭১ পরবর্তী সময়ে করেছে, তার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে, পুরো দেশের মানুষের কাছে ৭১-এর ভুমিকার জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদের নেতাদের যুদ্ধপরাধী হিসেবে যে শাস্তি হচ্ছে, তা মেনে নেয়া (যদিও মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অনেকেরই আপত্তি আছে এবং সেটা অন্য আরকে ব্যাপার)।

জামায়াতের ভিতরে একশ্রেণীর মানুষ আছেন, যারা কিনা পুরাতন ও বয়োবৃদ্ধ এবং ১৯৭১-এ ঘৃণ্য ভূমিকার জন্য অভিযুক্ত নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন করে দলীয় কাজ শুরু করতে চান। এই পরিবর্তন প্রত্যাশীদের সবাইই বলতে গেলে দলের সেইসব তরুণ নেতৃবৃন্দ, ৭১-এ যাদের কোন ভূমিকা নেই। সেটা যদি তারা করতে পারে, তবেই জাতি তাদেরকে ক্ষমা করলেও করতে পারে। ৭১-এর ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে, ৭১ সালে তাদের যেসব নেতা দোষী প্রমাণিত হয়েছে, তাদের শাস্তি মেনে নিয়ে তারা যদি নতুনভাবে রাজনীতি শুরু করতে পারে, তবেই এই দেশে রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার তাদের থাকবে।

অন্যথায় দেশ ও জাতি, বিশেষ করে আপামর তরুণ সমাজের কাছে, তারা হয়তো ঘৃণ্য একটি নাম হিসেবেই উচ্চারিত হবে। আর ৭১ ও তদপরবর্তী সময়ে তাদের যে ভূমিকা, তার জন্য তারা সবসময়ই অভিশপ্ত পথে আবর্তিত হতে থাকবে, যা থেকে তাদের মুক্তি নেই।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৫৯ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    চারু দা

    আগের তুলনায় বেশ ভাল লাগল

    • - চারু মান্নান

      কবি ভাইকে আমার বসন্ত ভালোবাসা

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    এমন পরিবর্তনটাই চাই। মান্না ভাই কবিতায় মনোযোগী হচ্ছেন।

    • - চারু মান্নান

      কবি ভাই দোল ভালোবাসা যেন,,,,,,,,
      নক্ষত্রে আমার সিরিজ গুলো পড়ুন,,,,,,,ব্যপক ভেরিয়েশন!!!

    - শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    শেষটা অনেক ভাল ...