Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শেফালী সোহেল

১০ বছর আগে

অবুঝ সন্তান

অবুঝ সন্তান

ব্রাদার্স জিম

অনুবাদ: শেফালী সোহেল          

 

(১)

বিশাল এক বনের ধারে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে এক গরীব কাঠুরিয়ার বাস । ছেলের নাম হ্যানসেল ও মেয়ে গ্রেটেল। সে দিনে একবার খাবার খায়। কখনো এমন হয় যে একবারের খাবারই জোগাড় করতে পারে না।

 

এক রাতে দুশ্চিন্তায় তার ঘুম এল না। গভীর হতাশায় সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলল, এখন আমাদের কী হবে? ছেলেমেয়ে দুটোকে কিভাবে পালব?

 

তার স্ত্রী বলল, এর আমি কী বলব? কাল খুব ভোরে বাচ্চা দুটোকে গভীর বনের ভেতরে নিয়ে যাব। সেখানে ওদেরকে আগুন ও একটি রুটি দেব। তারপর আমরা তাদেরকে একা রেখে কাজে চলে আসব। তারা বাড়ি খুঁজে পাবে না। এবং আমরা এ হতে নিষ্কৃতি পাব।

 

কাঠুরিয়া বলল, না এ হতে পারে না। আমি এটা করতে পারব না। আমি কিভাবে আমার সন্তানদের গহীন বনে ফেলে আসব? বন্য হিংস্র জীব জানোয়ার আমার মানিকদের ছিলে ছিলে খাবে।

 

তার স্ত্রী বলল, মূর্খ কোথাকার। আমরা তাহলে সবাই না খেয়ে মরে যাই। তুমি চারটা কফিন আন। সে রাজী না হওয়ায় তার স্ত্রী রাগে ফোস ফোস করতে করতে পাশ ফিরে শুয়ে পরল।

 

লোকটি বলল, কিন্তু এই অবুঝ দুটি শিশুর জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হয়।

 

শিশু দুটিও ক্ষুধার যন্ত্রণায় জেগে ছিল। তারা তার বাবাকে বলা সৎ মায়ের কথাগুলো শুনল। গ্রেটেল কেঁদে দিল এবং ভাইকে বলল, আমাদের সবকিছু শেষ। আমরা এখন কী করব?

 

হ্যানসেল বলল. গ্রেটেল শান্ত হও। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখ। আমি খুব দ্রুতই একটি উপায় বের করব। এবং যখন লোকটি ঘুমিয়ে নাক ডাকল তখন সে তার কোট পড়ে চুপিচুপি বেরিয়ে গেল।

 

(২)

চাঁদের আলো পরছে। বাড়ির সামনের সাদা পাথরগুলি রূপালী পেনির মতো চিকচিক করছে। হ্যানসেল যতগুলো পারে তার ছোট্ট পকেটে ঠেসে ঠেসে ভরে নিল। ফিরে এসে বোনকে বলল, চিন্তা করো না, ঘুমিয়ে পড়, আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন বলে সে শুয়ে পরল।

 

ভোর হলে সূর্য ওঠার আগেই মহিলা বাচ্চাদের ডেকে তুলে বলল, ওঠ্ আলসেরা। আমরা কাঠ কাটতে বনে যাচ্ছি। সে তাদের একটি করে রুটি দিয়ে বলল, এই নে তোদের রাতের খাবার। রাতের আগে খাবি না। কারণ আর খাবার পাবি না।

 

হ্যানসেনের পকেট নুড়িতে ভরাট থাকায় গ্রেটসেল তার ফ্রোকের নিচে রুটি নিল। তারপর তারা সবাই বনে গেল।

 

একটু হাটার পর হ্যানসেল দাঁড়িয়ে যায় আর বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। তার বাবা বলল, তুমি ওদিকে কী খুঁজছ আর তার জন্য পেছন ফিরে বারবার তাকাচ্ছ। চল হাটি।

 

হ্যানসেল বলল, ওহ বাবা, আমি আমার ছোট সাদা বিড়ালটি খুঁজছি। সে আমাকে বিদায় জানাতে ছাদে বসে ছিল।

 

স্ত্রীলোকটি বলল, বোকা কোথাকার, ওটা তোর বিড়াল না। ওটা সকালের সূর্য কাঁচের উপর আলো ফেলছে।

 

যাহোক হ্যানসেল তবুও বিড়ালকে দেখতে বার বার পেছনে তাকায় এবং এ অজুহাতে সে তার পকেটে রাখা নুড়ি পাথরগুলো একটি একটি করে রাস্তার উপর ফেলে গেল।

 

বনের মধ্যে ঢুকে তাদের বাবা বলল, শোন, তোমরা কিছু কাঠ খুঁজ আর আমি আগুন নিয়ে আসি যাতে তোমরা ঠান্ডায় কষ্ট না পাও।

 

হ্যানসেল আর গ্রেটেল কাঠ দিয়ে ছোটখাট পাহাড়ের স্তূপ করল। কাঠের স্তূপটিতে আগুন জ্বালালে তা দাও দাও করে জ্বলে উঠল । মহিলাটি বলল, তোরা আগুনের পাশে শুয়ে বিশ্রাম নে। আমরা বন থেকে কাঠ কেটে আনি। বাড়ি ফিরে যাবার সময় তোদের নিয়ে যাব।

 

(৩)

হ্যানসেল ও গ্রেটেল আগুনের পাশে বসে দুপুরে রুটি খেয়ে নিল। পাশেই কাঠ কাটার শব্দ শুনতে পেয়ে তারা নিশ্চিত হলো তাদের বাবা-মা কাছেই কোথাও কাঠ কাটছে। কিন্তু এটা কুঠারের শব্দ ছিল না। অনেক সময় বসে থাকায় ক্লান্তিতে তাদের চোখ বুজে এল এবং তারা খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ল।

 

তারা জেগে উঠে দেখল রাত হয়ে গেছে। গ্রেটেল কেঁদে বলল, আমরা কিভাবে এখন বনের বাইরে যাব?

 

হ্যানসেল বোনকে আস্বস্ত করে বলল, একটু ধৈর্য ধরো, একটু পরেই চাঁদ উঠবে। আমরা চাঁদের আলোয় বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে পাব। চাঁদ উঠলে হ্যানসেল বোনের হাত ধরে নতুন রূপালী কয়েনের মতো চকচকে নুড়ি পাথরকে অনুসরণ করে রাস্তা ধরল।

 

সারা রাত হেটে সকালে বাসায় ফিরে দরজায় নক করলে সৎ মা দরজা খুলে বলল, তোরা কেন এত ঘুমালি? আমরা ভাবলাম তোরা আর কখনো ফিরবি না।

 

এতে বাবা খুবই খুশি হলো। তাদেরকে এভাবে একা বনের ভেতর ফেলে আসায় সে মানসিক কষ্টে ছিল।

 

কিছুদিন পরে এরকমই এক ক্ষুধাভরা কষ্টের রাতে তারা শুনতে পেল, মহিলা তার বাবাকে বলছে, সবকিছু খাওয়া শেষ। মাত্র একটির অর্ধেক পাউরুটি আছে। এছাড়া আর কিছু নেই। ওদেরকে আমরা আবার বনে রেখে আসব। ওরা যাতে বাড়ি খুঁজে না পায়। এছাড়া আমাদের বাঁচার আর কোন উপায় নেই।

 

ব্যথিত বাবা বলল, এর চেয়ে তুমি বাচ্চাদেরই এক গ্রাসে খেয়ে ফেল। সেটাই বরং ভাল হয়। মহিলাটি এসবের কিছুতেই কান না দিয়ে তার স্বামীকে ভর্ৎসনা করল, বকাঝকা করল। লোকটি বলল, সে এমন কাজ একবার করেছে বলে কি আবারো করতে হবে?

 

(৪)

বাচ্চারা জেগেছিল। তারা সব শুনল। বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে হ্যানসেল উঠে আগের মত বাইরে গিয়ে নুড়ি কুঁড়াতে চাইল; কিন্তু মহিলা দরজায় তালা দেয়ায় সে বাইরে যেতে পারল না। তবুও সে তার ছোট্ট বোনকে আস্বস্ত করল কেঁদো না বোন। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। মহান আল্লাহ অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন।

 

সকালে মহিলা এসে তাদের ডেকে তুলল। বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে গেল। তাদেরকে রুটি দিল কিন্তু এটা আগের চেয়ে অনেক ছোট ছিল। বনের রাস্তায় হ্যানসেল তার পকেটের রুটি টুকরো টুকরো করে সারা রাস্তায় মাঝে মাঝে ফেলে গেল।

 

তাদের বাবা বলল, হ্যানসেল , তুমি দাঁড়িয়ে পেছনে কী দেখ? চল সামনে আগাও।

 

সে বলল, আমি আমার কবুতরকে দেখছি যে আমাকে বিদায় জানাতে ছাদে দাঁড়িয়েছিল।

 

মহিলা বলল, দূর বোকা। ওটা তোর কবুতর না। ওটা সূর্যের আলো কাঁচের উপর কিরণ দিচ্ছে।

 

মহিলা ওদেরকে গহীন বনের মধ্যে এমন জায়গায় নিয়ে গেল যেখানে ওরা জীবনে কখনো যায়নি।

 

তারা আবারো আগুন জ্বালাল। তাদের মা বলল, তোরা এখানে বস এবং খারাপ লাগলে একটু ঘুমিয়ে নিস। আমরা কাঠ কাটতে বনে যাচ্ছি। সন্ধ্যায় এসে তোদের নিয়ে যাব।

 

দুপুরে গ্রেটেলের রুটি দুজনে মিলে খেয়ে নিল। হ্যানসেলেরটা তো রাস্তায় ফেলে এসেছে। তারা ঘুমিয়ে পড়ল। এ অসহায় বাচ্চাদের নিতে কেউ এল না।

 

গভীর রাতে তাদের ঘুম ভাঙ্গল। হ্যানসেল তার বোনকে বলল, একটু অপেক্ষা কর। চাঁদ উঠলে আমরা রুটির টুকরার চিহ্ন দেখে বাড়ি ফিরব।

 

 

(৫)

চাঁদ উঠলে তারা বাইরে আসতে গিয়ে পথে কোন রুটির টুকরা পেল না। পাখিরা তাদের রুটি খেয়ে ফেলেছে। হ্যানসেল তার বোনকে বলল, ভয় পেও না বোন আমার আমরা বাড়ি ফেরার কোন না কোন উপায় পেয়ে যাব।

 

কিন্তু বাড়ির পথ খুঁজে পেল না। সারা রাত এবং পরের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটল। বাড়ি ফেরার কোন পথ খুঁজে পেল না। বন হতে বের হতেও পারল না। খুবই ক্ষুধার্ত আর খাবার জন্য কিছুই ছিল না। অনেক হাটাহাটির কারণে ক্লান্তিতে একটি গাছের নিচে দুজনে শুয়ে ঘুমিয়ে পরল।

 

বাড়ি থেকে আসার পর এটি তৃতীয় দিনের সকাল। তারা আবারো হাটতে লাগল । হেটে আরো বনের ভেতরে চলে গেল। খুব দ্রুত কোন সহযোগিতা না পেলে তারা ক্ষুধা ও ভয়ে মরেই যেত।

 

দুপুরে একটি সুন্দর সাদা পাখিকে গাছের ডালে বসে মিষ্টি সুরে গান গাইতে দেখল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাখির গান শুনল। গান গাওয়া শেষ হলে পাখিটি তাদের সামনে দিয়ে উড়ে গেল। তারা পাখিটিকে অনুসরণ করল। পাখিটি একটি ছোট্ট ঘরের ছাদে গিয়ে বসল। বাড়িটির কাছে গিয়ে তারা দেখল এটি রুটির তৈর এবং কেক দিয়ে ঢাকা আর জানালাগুলো চিনির।

 

হ্যানসেল বলল, আমরা এখানে এক কাজ করব। সুন্দর খাবার বানাব। আমি একটু ছাদ খাব আর গ্রেটেল তুমি জানালা খেতে পার। ওটার স্বাদ মধুর হবে।

 

হ্যানসেল ছাদের উপরে উঠে ওটার ছাদ আর গ্রেটেল জানালার কাছে গিয়ে একটু একটু করে তা খেতে লাগল।

 

ঘরের ভেতর থেকে মিষ্টি আওয়াজ এল-

 

ঠোকরে ঠোকরে এক নাগারে

কে আমার ছোট্ট ঘরটি খাচ্ছে?

 

বাচ্চারা জবাবে বলল-

বাতাস বাতাস

স্বর্গীয় বাতাস

 

এবং কোন দিকে না তাকিয়ে খেতে লাগল।

 

হ্যানসেল যে ছাদ খাচ্ছিল সেটা ভেঙ্গে সে পড়ে গেল আর গ্রেটেল জানালা ঠেলে ঠেলে খাচ্ছিল এবং সেও তাতে বসে পড়ে খেতে লাগল।

 

হঠাৎ দরজা খুলে পাহাড়ের মত এক বৃদ্ধ মহিলা নি:শব্দে বেরিয়ে এল।

 

ওরা ভয় পেল। তাদের হাতে তখনো খাবার ছিল।

 

বৃদ্ধা মাথায় হাত দিয়ে বলল, ওহ্ বাচ্চারা কে তোমাদের এখানে নিয়ে এল? ভেতরে এস আমার সাথে থাকবে। তোমাদের কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।

 

সে তাদের ঘরের ভেতরে নিয়ে বসিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর খাবার দিল। এরপর ঝকঝকে সাদা লাইনিনের চাদরে ঢাকা দুটি ছোট বিছানা দিলেন। ওরা তাতে শুয়ে ভাবল যে তারা স্বর্গে এসেছে।

 

বৃদ্ধ মহিলা মহান হবার ভান করছিল। মূলত সে একটা ডাইনি। সে বাচ্চাদের শোবার জন্য অপেক্ষা করছিল। সে এরকম ঘর করেছিল যাতে বাচ্চা পোলাপান এখানে আসে। বাচ্চারা তার কথা শুনে নিয়ন্ত্রনে চলে এলে সে তাদের মেরে রান্না করে খায়। আর এটাই তার খাবার। এ জাদুকরের চোখগুলো রক্তবর্ণ এবং দূরের জিনিস দেখতে পায় না। কিন্তু তার ঘ্রাণশক্তি পোকামাকড়ের মত প্রবল । মানুষ কাছাকাছি এলে তা সে টের পায়। হ্যানসেল ও গ্রেটেল এলে সে দুষ্টু হাসি হেসে ব্যঙ্গ করে মনে মনে বলে ওরা আমার। ওরা আর পাালাতে পারবে না।

 

বাচ্চারা উঠার আগেই খুব সকালে সে জেগে উঠল। বাচ্চারা অঘোরে ঘুমাচ্ছে এবং দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। তাদের সুডোল দেহ গোলাপী গাল দেখে বিড় বিড় করে বলল, খাবার বেশ সুস্বাদু হবে।

 

(৭)

হ্যানসেলকে হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে গ্রেটেলের দরজার পেছনে বেঁধে রাখল। হ্যানসেল চিৎকার করে কান্নাকাটি করলেও তাকে ছাড়ল না। তারপর সে গ্রেটেলের রুমে গিয়ে তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। ওঠ্ আলসে কোথাকার। পানি নিয়ে এসে তোর ভাইয়ের জন্য রান্না কর। সে বাইরের আস্তাবলে আছে। তাকে খাওয়াইয়ে মোটাতাজা কর। মোটা হলে আমি তাকে খাব।

 

গ্রেটেল ভয়ে কেঁদে ফেলল। তাতে ডাইনির মন গলল না। সব বৃথা। জাদুকরী যা যা বলল তা করতে সে বাধ্য হলো। হ্যানসেলের জন্য সব ভাল ভাল খাবার রান্না করা হল। কিন্তু গ্রেটেলের জন্য শুধু কাঁকড়ার খোলস। প্রতিদিন সকালে হামাগুড়ি দিয়ে আস্তাবলে গিয়ে বলে হ্যানসেল তোর আাঙ্গুল বের করে দে দেখি তুই মোটা হয়েছিস কিনা।

 

হ্যানসেল একটু করে হাড় বের করে দেয়। ডাইনিটা চোখে কম দেখাতে তা আর দেখতে পায় না। বুড়ি ভাবে এটা হ্যানসেলের আঙ্গুল ছিল। সে মোটা হয় না বলে আশ্চর্য হয়। আর ভাবে তাকে কি মোটা করার কোন উপায় নেই।

 

চার সপ্হাহ চলে গেলে হ্যানসেলের কোন পরিবর্তন না দেখে বুড়ি বিরক্ত হয়ে বলে আর দেরী করা চলবে না।

 

সে গ্রেটেলকে চিৎকার করে বলল, যা পানি নিয়ে আয়। দেখি হ্যানসেল মোটা হয়েছে নাকি শুকনোই আছে। কালকে ওকে মেরে রান্না করব।

 

হায়! পানি নিয়ে এসে অসহায় ছোট বোনটি শোকে মূহ্যমান হয়ে গেল। তার গাল বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরতে লাগল। কেঁদে কেঁদে বলল, ওহ্ আল্লাহ সাহায্য কর। যদি বনে বন্য জন্তু জানোয়াররা আমাদের একসাথে খেয়ে ফেলত। যেকোনভাবে আমাদের একসাথে মরা উচিত।

 

ডাইনি বুড়ি বলল, এই ছুকরি কান্না বন্ধ কর। তোদের কোন উপায় নেই। তোরা আমার হাত থেকে রেহাই পাবি না।

 

খুব ভোরে গ্রেটেল বাইরে বেরিয়ে গেল।

(৮)

বুড়ি বলল, প্রথমে পুড়ানো হবে। আমি ওভেন ধরিয়েছি। ময়দার ডো দিয়ে রুটি বানা। সে অসহায় গ্রেটেলকে ওভেনের দিকে ধাক্কাতে লাগল। যা হতে আগুনের লেলিহান শিখা বের হচ্ছে। জাদুকরী দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল, দেখ চুলা গরম হয়েছে কিনা। গরম হলে রুটি বানা। গ্রেটেল ভাবল ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে তো সবকিছু পুড়ে যায়। কিন্তু কিভাবে করা যায় তা ভাবতে লাগল। সে বুড়িকে বলল, আমি কিভাবে এটা করব বুঝতে পারছি না। আমি ভেতরে ঢুকবোই বা কিভাবে?

জাদুকরী বলল, এই বোকা হাঁস, দরজাটা যথেষ্ট বড়। দেখ আমিই ভেতরে যেতে পারি। বলে সে হামাগুড়ি দিয়ে ওভেনে মাথা ঢুকাল।

 

তখন গ্রেটেল দ্রুত তাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে লোহার দরজা বন্ধ করে দিল। ওহ্ বলে বুড়িটা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

 

কিন্তু গ্রেটেল দৌড়ে চলে গেল। আর ডাইনিটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। গ্রেটেল দৌড়ে হ্যানসেলের কাছে গেল। আস্তাবলের দরজা খুলে কেঁদে কেঁদে বলল, আমরা এখন বিপদ মুক্ত। ডাইনিটা মারা গেছে।

 

দরজা খুললে হ্যানসেল লাফ দিয়ে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল। তারা অনেক আনন্দ ফুর্তি করল, নাচল এবং একে অপরকে অনেক আদর করল। যেহেতু তাদের আর ভয়ের কিছু ছিল না সুতরাং তারা জাদুকরের ঘরের ভেতরে ঢুকল। ঘরের কোনায় কোনায় সিন্দুক ভর্তি মণি মুক্তা ।

 

হ্যানসেল বলল, এগুলো নুড়ির চেয়ে ভাল। যতগুলো পারে পকেটে ভরল।

 

গ্রেটেলও তার জামায় ভরে নিল।

 

হ্যানসেল বলল, আমাদের দ্রুত এ জাদুর বন থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে।

 

দুই ঘন্টা হাটার পর তারা বিশাল নদীর ধারে এল।

 

(৯)

হ্যানসেল বলল, আমরা এটা পার হতে পারব না। এখানে কোন সাঁকু বা সেতু নেই।

 

গ্রেটেল বলল, এখানে ফেরীও নেই। কিন্তু একটি সাদা হাঁস সাঁতার কাটছে। যদি আমরা তাকে ডাকি সে আমাদের সাহায্য করতে পারে। বলে সে ডাকল-

 

ছোট হাসঁ ছোট হাঁস আমাদের দেখতে পাও?

হ্যানসেল ও গ্রেটেল তোমার জন্য অপেক্ষা করছে

পাশে কোন তক্তা বা সেতু নেই

তোমার ঐ সাদা পিঠে করে আমাদের পার করে দাও।

 

হাঁস তাদের কাছে এলে হ্যানসেল তার পিঠে বসে গ্রেটেলকেও বসতে বলল।

 

গ্রেটেল বলল, না, ছোট্ট হাসের জন্য অনেক বেশি বোঝা হয়ে যাবে। সে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে পরে আমাকে নিয়ে যাবে।

 

সুন্দর হাঁসটি তাই করল। তারা পার হয়ে অল্প একটু হাটলেই বনটি তাদের কাছে অনেক পরিচিত মনে হলো। এবং দূর হতে তাদের বাড়িটি দেখতে পেল। তারা দৌড়ে বাড়ি গিয়ে তার বাবার মাথার উপর মণি মুক্তা ছুড়ে মারল।

বনে বাচ্চাদের ফেলে আসার পর থেকে একটি মুহূর্তও তার ভাল লাগেনি। তাদের সৎ মাও মারা গেছে।

 

গ্রেটেল রুমে গিয়ে তার জামার মনি মুক্তাগুলো রাখল এবং হ্যানসেলের অন্য পকেটেরগুলো রাখল।

 

তাদের সব দু:খ কষ্ট দূর হয়ে একত্রে সুখি জীবন যাপন করতে লাগল।

 

সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৩ বিকেল ৪.২৫

 

 

-০-

০ Likes ২ Comments ০ Share ৫৬৪ Views

Comments (2)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    দাদা

    কেমন আছেন--

    এখানে পেয়ে ভাল লাগল কবিতাও খুব সুন্দর লাগল

    আর একুশের শুভেচ্ছা রইল সে সাথে ভোট দানে আমন্ত্রিত

    ভাল থাকুন--------

    • - তাপস কিরণ রায়

      আপনাকে পেয়ে ভাল লাগছে বেশ। হ্যাঁ,ভোটের ব্যাপারটা বুঝে নিচ্ছি।  

    • Load more relies...