সেই যে গম চোর ছেনু মিয়া আজো নিজের চরিত্রের পরিবর্তন করতে পারেনি, বরং তার চুরির মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এখন যেকোনো কাজেই তার ভাগ চাই। আর চাওয়াটাও অভিনব, কাছে না আসলে কেউ বুঝবেনা আসলে সে চাঁদা চাইছে না সমাজ সেবার জন্য টাকা তুলছে। নানা উপায়ে উপার্জন করা টাকাগুলোর একটা বড় অংশই সে ভোট রাজনীতির জন্য রেখে দিত, আর বাকিটা দিয়ে এলাকায় বখাটেদের নিয়ে নষ্টামি করত। স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের থেকে শুরু করে একেবারে চল্লিশঊর্দ্ধো মহিলা পর্যন্ত কেউই ছার পেতনা। যদিও সে ছিল বিবাহিত। একটা পাকা বদের হাড় ছেলেও জম্ম দিয়েছে। যাকে সে কোন শাসন করেনা, সাত বছর বয়সেই সে নিজের চাইতে বড় ছেলেদের প্যাঁদানি দিয়ে বেড়ায়।
ছেনু মিয়ার অর্জিত সম্পদের একটা বড় অংশই ব্যবহৃত হয়েছে একটি ছোট গার্মেন্টস নির্মাণে। দেশের আইনে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও তার ফ্যাক্টরি তে শিশুর অভাব নেই। এদেরকে কাজে টানতে সে ভয় ভীতি, খারাপ ছবি দেখানোর প্রলোভন, বেশী মাইনে দেবার লোভ, অল্প বয়সে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ ইত্যাদি কে কাজে লাগাত। এতে সে লাভবান হত অনেক বেশী, এক বছরে টাকার গাছ হয়ে গেল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। ঘটনা ক্রমে ছেনু মিয়া দলগত কোন বড় ভাইয়ের কাছ থেকে সাব কন্ট্রাক্ট এ কিছু কাজ পেল, এমন সুযোগ হাত ছারা করবার নয়। সে খুব দ্রুত কাজ শেষ করতে তার গার্মেন্টসের শিশুদের উপরে চাপ দিতে থাকে।
এক মাসে কাজ শেষ করতে হবে, কিন্তু শ্রমিকেরা বেতন ও ছুটি চায়। আর ছেনু মিয়া বেতন আটকে শ্রমিকদের কাছ থেকে ফ্রি কাজ আদায় করতে চায়। এক দিন দুই দিন করতে করতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াতে থাকে। কিন্তু কেউ চলে যেতে পারেনা, টাকার মায়া ছাড়তে পারেনা। তখন বৈশাখ মাস ছিল, নদী পার করে মাল পৈছে দিত হত ছেনুকে। এক দিন গভীর রাতে ড্রাগস সহ মাল পৈছে দিতে তার মালবাহী ট্রলার ছুটল নদী পথে। কিন্তু বিধি বাম, রাতে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হল। আর তাতে সে ট্রলার নদীর মাঝে হাড়িয়ে গেল, কিন্তু সে খবর ছেনু র কানে গেলনা, কারণ নদী থেকে কেউই বেঁচে ফেরেনি। খবর দেবে কে?
এদিকে সাত সকালে ছেনু মিয়ার অভ্যাস পুকুর পারে যাওয়া। তার বাড়ির পাশেই ঘাট,বড়ই গাছটাতে একটু উঠে দেয়ালের পাশ থেকে নানা রকমের গোসল চিত্র দেখা যায়।ছেনু মিয়া নিশ্চিন্তে চোখের ব্যায়াম করছিল। এদিকে তার গার্মেন্টসের কর্মীরা জেনে গেছে ট্রলার ডুবির ঘটনা। এত দিনের টাকা তাদের কিভাবে দিবে ছেনু মিয়া, তা নিয়েই তাদের মাঝে ক্ষোভ বাড়তে থাকল। কয়েক জনের উস্কানি পেয়ে তারা ছেনুর ঠ্যাঙ ভাঙ্গতে তার বাড়ির দিকে ছুটল। ছেনুর কানে তখনো খবর আসেনি, সে ব্যায়ামে ব্যস্ত, তার ভয় নেই, এই এলাকায় তার উপরে কেউ নাই। কিন্তু ছেনুর বিটকেল ছেলেটি ঠিকই টের পেয়ে বাবার কাছে ছুটে এলো খবর দিতে। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, "বাবা ওরা আইতাছে "। কে আসছে তা ছেনুর চিন্তা করার সময় সে তখন প্রস্তুত ছিলনা, তার নিজের ছেলের কাছে এহেন অপকর্ম ধরা পরে যাবার ভয়েই সে তাড়াহুড়ো করে গাছ থেকে লাফ দিল। কিন্তু তাড়াহুড়ো কাজে একটা ভুল করেই ফেলল,সে নিজে মাটিতে পরে গেলেও তার সাধের লুঙ্গিখানা দেয়ালের শিক আর বড়ই গাছের ডালের সাথে ঝুলে রইল।ততোক্ষণে শ্রমিকদের সাথে সাথে গ্রাম সুদ্ধ লোকজন সেখানে হাজির। আর ছেনু মিয়া খোদা প্রদত্ত হাত দুটো দিয়ে নিজের দিগম্বর শরীরটা ঢাকার চেষ্টা করছে। এরই মাঝে তার বিটকেল ছেলেটা বলে উঠল, "বাবা তুমি মাইনষ্যেরটা দেখতে গিয়া নিজেরটাই দেখায় দিলা "।
পূর্বে অন্য ব্লগে প্রকাশিত।
Comments (19)
সত্য ঘটনাকে বেশ সুন্দর করেই গল্পে রূপান্তর করেছেন। সমাজের এই ব্যভিচার অনেক ভাবেই আমাদের সমাজে ছড়িয়ে আছে। কিছু চোখে পরে আবার কিছু পরে না। ধর্মের লেবাসে এই ধরণের হীন এবং জঘন্য কাজের ঘটনা অনেক সময় পত্রিকার পাতায়ও চোখে পড়ে। অন্ধ ধর্ম ভিরুতা আর অশিক্ষাই এর জন্য মূলত দায়ী। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে হাসনা বেগমের মতো মহিলারা বা মেয়েরাও দায়ী, যারা দৈহিক সম্পর্কটাকেই আসল মনে করে কিংবা বিলাসিতাকে। তবে শেষ পর্যন্ত এই ব্যভিচার বন্ধ হয়েছে জেনে খু হলাম। খুব ভালো একটা প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন রাজীব। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ গৃহীত ঘাস ফুল ভাই। :) আপনার দৃষ্টীভঙ্গীর সাথে একমত। :)
মোটামুটি ভাল লেগেছে ভাই।
আমি আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েই লিখেছি। তবুও ধন্য :)
শুভ কামনা আপানার জন্য
শুভ কামনা গৃহীত হইল ভাই :)