Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

৯ বছর আগে

অন্য ভুবন

স্টল বন্ধ করে বইমেলা থেকে বের হওয়ার সময় একটা বুড়ো লোক আমাকে বলল- একটা বই নেবেন? একেবারে নতুন, ম্যাজিকের মতো। আমি বুড়োটার দিকে তাকালাম। কালো জামা পরা, মাথার চুল মেয়েদের মতন লম্বা। খোচা খোচা দাড়ি। গায়ের রঙ ময়লা। ভাঙ্গা গাল। কপালে রঙ দিয়ে কি যেন আঁকা। আর চোখ দু'টো পাথরের মতো। বুড়ো লোকটা তার জামার ভেতর থেকে একটা কালো মলাটের মোটা বাঁধানো বই আমার হাতে দিলেন। বুড়ো লোকটা কিছু বলছিল- কিন্তু মানূষের ভিড়ের শব্দের কারণে আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমার বন্ধু'রা টিএসসি'তে অপেক্ষা করছে, চা খাবো, আড্ডা দিবো- আমার মন পড়ে আছে সেখানে।

আমি বই পাগল মানুষ। নতুন বই হাতে নিয়ে দেখতেও অনেক আনন্দ হয়। আমি বুড়োকে বললাম দাম কত? বুড়োটা অবাক হয়ে কিছুক্ষন হেসে বলল- দাম? এর কোনো দাম নেই। আরে খোকা, তুমি কি টাকা দিয়ে এক আকাশ জোছনা কিনতে পারবে? অথবা এক আকাশ মেঘ? এই নাও, বলে বুড়োটা আমার হাতে বইটা দিলো এবং বলল মধ্যরাতের পর বইটা পড়বে। বুড়োর হাত থেকে বই টা নেওয়ার সময় হাতে হাত ঠেকে গেল, অনুভব করলাম বুড়োর হাত বরফের মতন ঠান্ডা। আমি অবাক হয়ে বুড়োটার দিকে তাকাতেই দেখি- বুড়ো হাসছে রবং তার দাঁত গুলো ঝকমক করছে। বুড়ো বিদায় নেওয়ার সময় বলল- তুমি ঠিক আমার মনের মতন কিন্তু মনে থাকে যেন, ঠিক মধ্য রাত্রের পর... এই বলে বুড়োটা ভিড়ের মধ্যে কোথায় যেন মিশে গেলো।

বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মন দিতে পারলাম না, সারাক্ষন মাথায় বাজছে বুড়োটার কথা- ঠিক মধ্য রাত্রের পর ...। খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম। খুব অস্থির লাগছিল। মা বলল- কি হয়েছে? আমি একটু হেসে বললাম, কই কি হয়েছে? ভাত দাও, খুব ক্ষুধা লাগছে। তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে নিলাম। মা বলল- এই গপ গপ করে খাবি না, প্লেন ছেড়ে দিবে না। আমি অপেক্ষা করছি কখন মধ্যরাত শেষ হবে। আমি বিছানায় শুয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। কিন্তু হঠাৎ কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। ঘড়ির ঢ়ং ঢ়ং শব্দে ঘুম ভাঙ্গল। চেয়ে দেখি দু'টা বাজে। বইটা হাতে নিলাম। মোটা একটি বই। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা- ' চোখ নেই বলে দেখতে পাইনা শুভঙ্করের ফাঁকি, চোখের মধ্যে গোপন কথা গোপন করেই রাখি।' আমি পাগলের মতন একের পর এক পৃষ্ঠা উ্লটাতে থাকি। কোনো কিছু একবার শুরু করলে শেষ না দেখে স্বস্তি হয় না। আমার মনে হচ্ছে বুড়ো লোকটা আমার পাশেই বসে আছে। বইটার দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা-' পৃথিবীতে দুইটি জগৎ আছে। একটা বইয়ের জগৎ এবং একটা বইয়ের বাইরের জগৎ। লেখগুলো পড়েতে পড়তে আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। দেরী না করে পরের পাতায় গেলাম। তৃতীয় পৃষ্ঠায় একটা ছবি-' ঘরবাড়ি, বাগান, বাড়ির পেছনে উঁচু পাহাড়, বাগানের পেছনে সমুদ্র, সমুদ্র থেকে একটা মেয়ে উঠে আসছে। নিখুঁত ছবি। এমন সুন্দর ছবি আমি খুব কমই দেখেছি।

আমি অনুভব করছি কে যেনো আমার মাথার ভেতর বলছে- 'আশে পাশে কেউ নেই তো! তোমাকে যেন কেউ না দেখতে পায়। এই বই দিয়ে তুমি তোমার ইচ্ছে মতো যা খুশি তাই করতে পারবে। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, মানুষ্‌ সমাজ- ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নিতে পারবে তোমার মনের মতন করে।'

আমি বইটা বন্ধ করে রেখে বেলকনি এসে দাঁড়াই। একটা সিগারেট জ্বালাই। নিজের অজান্তেই আমি একটা- সমুদ্র বানাতে থাকি। বিশাল সমুদ্রের পাশে একটা পাহাড় জুড়ে দিলাম। পাহাড়ের গায়ে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। আমি সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎ আবার মাথার ভেতর কে যেনো বলল- তুমি ইচ্ছে করলেই এই সমুদ্রে নেমে যেতে পারো। আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা মেয়ে মুখ ভার করে সমুদ্রের পাড়ে বসে আছে। যেনো সে কারো অপেক্ষায় আছে! বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আমি সমুদ্রের বাতাস গায়ে মেখে নিচ্ছি। কি আশ্চর্য বাতাসে আমার চুল এবং মেয়েটির শাড়ির আঁচল উড়ছে। সত্যিই, বইয়ের বাইরের জগৎ অনেক অদ্ভুত। আমার শীত শীত লাগতে শুরু করলো। এমন সময় আমি সেই বুড়োটাকে দেখতে পেলাম পাহাড়ের চূড়ায় বসে আছে। যেনো আমাকে বলছে- এসো চলে এসো। এটাই তোমার নতুন পৃথিবী। আমার ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরি। কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটির হাত বরফের মতন ঠান্ডা হবে।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৫০ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বাহ সুন্দর

    শুভ কামনা রইল

    • - আবু খায়ের আনিছ

      ধন্যবাদ