Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমির আসহাব .

৯ বছর আগে

অন্য ঘরে অন্য স্বর,

 অপরা হাঁটছে, পিছনেই ফাহিদ। অপরা একটু জোরে হাঁটলে ফাহিদও জোরে হাঁটে। গতকাল ফাহিদের বন্ধুদের সাথে ফাহিদের একটা পিকনিক ছিল। রাতভর চলেছে নানা আয়োজন। সকাল বেলা ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বাসায় ফিরছিল ফাহিদ। হঠাৎ অপরা সম্পর্কে কয়েকটা শব্দ তার কর্ণ- গোচর হয়। থমকে দাঁড়ায় ফাহিদ। একজন লোক বলছে, কাল স্কুল ছুটির আগেই ঐ কালভার্টের নিকট থাকিস কিন্তু। সম্ভবত এক সহযোগী বলল, তপন তুই এটা নিয়ে আসিস। আমি রাখতে পারব না, আবার কি থেকে কি হয়ে যায়। অপরজন বলল, অপরাতো! আচ্ছা ঠিক আছে। এতটুকু শুনেই কেটে পড়েছিল ফাহিদ।
সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে অপরার পিছু নিয়েছে ফাহিদ। ঐতো কিছু দূরেই কালভার্ট। বুকটা ধরপর ধরপর করছে ফাহিদের। কী ঘটতে যাচ্ছে? নাকি ভুল শুনলাম। হতে পারে। তবে তো বাঁচা গেল কিন' যদি সত্য হয়! এসব ভাবনার মাঝে ফাহিদ এগোচ্ছে। রাস্তার পাশের লোকজন হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
অপরা ভাবছে, মানুষ কেন এমন হয়! কিছু কিছু মানুষ তার অবস্থান ঠিক রাখতে পারে না। ভাল ব্যবহার করলে দুর্বলতা ভেবে নেয়। এই একটা দোষ ছেলেদের। মানিককে বাঁচানোর সুযোগে সে আমার পিছু নিয়েছে। কাজটা নিঃসন্দেহে ভালছিল। ভাল ব্যবহার প্রাপ্য। তাই বলে এভাবে একটা মেয়ের পিছু ছুঁটলে সে কি ধরনের ব্যবহার পেতে পারে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ এর একটা কথাও এ দুঃখের সময় মনে পড়ে গেল তার। কোন একদিন কবিগুরু তাঁর পরশী বাড়ির আত্মীয় চলে যাচ্ছে দেখে বলেছিল। আজ থেকে গেলে হতো না! কাজ হলো।
পরদিন আবার দেখা গেল সেই আত্মীয়কে। রবীন্দ্রনাথ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, কি যাওয়া হয়নি বুঝি? লোকটা বলেছিল আপনি বললেন দেখেতো যাইনি। কবিগুরু যে কথাটা গোপনে বলেছিল, সেকথাটা আজ কিন্তু আর গোপন নেই। কথাটা হল ‘কলির কালে দেখি ভদ্রতাটাও করা যাবে না’। অমিতের কাছ হতে জানা একথাগুলো আজ যেন সত্য করতে চলল ফাহিদ।
দু’জনের মনে দু’রকম ভাবনা। সহসা ধাক্কা লাগল দু’জনে। হাত থেকে বইগুলো পরে গেল। অপরার মেজাজটা বিগরে গেল। বলতে লাগল,
আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন? আবার বইগুলো এভাবে ধাক্কা মেরে ফেলেদিলেন। কি মনে করেন নিজেকে?
ফাহিদ বলল, সরি!
এই একটা কথাই শিখেছেন। এইচএসসি পাশ করেছেন তো জজ-ব্যারিস্টার হয়ে গেছেন নাকি? রাস্তা ঘাটে কিভাবে চলতে হয় তাও শিখেননি!
ঐতো অমিত এদিকে আসছে। কাছে আসতে না আসতেই বইগুলো নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গেছে অপরা। অমিত জিজ্ঞাসা করল
কি হয়েছে?
না মানে, একটা ঘটনা?
হ্যাঁ ঘটনাটাই জানতে চাচ্ছি।
তপন নামের এক ছেলে...। সব খুলে বলল ফাহিদ।
তপন সম্পর্কে যে ধারণা ফাহিদ দিল, তা তার চরিত্রের সাথে মিলে যাচ্ছে। কথাটা বিশ্বাস হলো অমিতের। কারণ তপনকে ভালোবাসতো তমা নামের এক মেয়ে। সেও বছর দু’এক আগের কথা। মনপ্রাণ উজার করে ভালোবেসেছিল মেয়েটি। নীরবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল তমা। তপনের বাড়ির অবস্থা ভালো। তাছাড়া দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর চেহারা। এটাই কাল সাজলো তমার জীবনে। হঠাৎ বেঁকে বসল তপন, যখন বেঁকে বসল তখন এ পৃথিবীর আলো বাতাস দেখার প্রস'তি নিচ্ছে এক মানব সন্তান। এ নিয়ে একটা গ্রাম্য সালিশও হয়েছিল বটে, তবে তা কাজে আসেনি। তমার বাবা গ্রামের চেয়ারম্যান। তাঁর সম্মানের কথা চিন্তা করে কোন প্রসঙ্গই তুলেনি তমা। কিন্তু সত্য যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তখন বিপদে পড়ল তমা। কিছু কাগজপত্র সহ বিয়ের সাক্ষী দাঁড় করিয়ে সুই-সাইট করেছে তমা। এ তথ্যগুলো তমার এক সময়ের বান্ধবী অপরাই ফাঁস করে। এছাড়া অপরাকে বার বার বাটে পেয়ে নিজের প্রস্তাব উস্থাপন করেছে, কিন্তু কাজ হয়নি। আজ একটা সুযোগ এসেছে বলে মনে করছে তপন। বছর দুই জেল খেটেছে ইতোমধ্যে তমা ব্যাপারে। এসব ঘটনা অমিতের ভাল করে জানা।
ততক্ষণে অপরা কালভার্টে পৌঁছে গেছে। সে কি! এখানে এতো মানুষ কেন? দু’একজন পুলিশ এসে গেছে। লোকমুখে অপরা শুনতে পেল সেই পুরনো ইতিহাস। তপন, ভুল করে অন্য একমেয়েকে এসিডে ঝলসে দেওয়ার রাগে, নিজেরাই হাতাহাতি করেছে। এতে ঝলসে গেছে তপনের দুই সহকর্মী এবং তপনের এক হাত। অমিত আর ফাহিদ দৌঁড়ে এসে যা দেখতে পেল তা হল একটি বাংলা ছবির শেষ দৃশ্য।
০ Likes ০ Comments ০ Share ৩৭৩ Views

Comments (0)

  • - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    দারুণ লিখেছেন ভাই