Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমির আসহাব .

৯ বছর আগে

অন্য ঘরে অন্য স্বর



আজ শুক্রবার। ঘুম থেকে ওঠে পড়তে বসেছে অমিত। একদিকে পড়ে যায়, অপর দিকে কি পড়েছে কিছুই মনে থাকে না। ভাল ছাত্র হিসেবে কেউ তার কাছে তেমনটি আশা করে না। তাই মনের বিরুদ্ধে আজ কিছুটা পড়া কমপ্লিট করে। শীতশেষ, গরম পড়েছে প্রচন্ড গরমের সময় মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে ঝাপটা শীতল বাতাস শরীরকে ঠান্ডা করে দিয়ে যায়। পরক্ষণে খুব ভাল লাগতে থাকে অমিতের। এমন সময় বাগানের দিকে নজর করতেই দেখা যায়, অপরা আর তার বান্ধবী নেন্সি এদিকে আসছে। জানালার দ্বারে এসে গোয়েন্দার মত জেরা করতে থাকে অপরা,
চিঠিটা কি আপনি লিখেছেন? আমার মনে হয় না। অমিত কিছুটা হতবাক। আজ এতদিন পর তার মনে সেই চিঠিটার কথা ক্রিয়া করেছে। কৌশল অবলম্বন করল অমিত। চুপ-চাপ থাকতে দেখে অপরা আবার জিজ্ঞাসা করে,
কি কথা বলছেন না যে?
যে অপরা তাকে তুই-মুই করে কথা বলে, আজ হঠাৎ ‘আপনি করে বলাতে অমিত ঠিক করে বলতে পারছে না সে কি তাকে আরও পর করে দিতে যাচ্ছে? নাকি আপন করার আভাস এটি। তবুও কিছুতো তাকে বলতে হবে। হঠাৎ অমিত তার বান্ধবী নেন্সির দিকে নজর করে। অপরা চোখ দ্বারা নির্দেশ করলে চলে যায় নেন্সি। উত্তর না নিয়ে এবার আর যাচ্ছে না সে। তাই আবারও প্রশ্নটা উত্থাপন করল সে। পরক্ষণে অমিত বুদ্ধি করে উত্তর দিল।
না, আমি তোমাকে কোন চিঠি লিখিনি।
তাহলে কে লিখেছে? আর আপনি বা কেন দিলেন?
চিঠি লিখেছে সেই ছেলে, যার একটি বিশেষ কথা শুনতে তুমি সুযোগ খুঁজতেছিলে। চিঠি লিখেছে সেই ছেলে, যাকে তুমি খেজুরের রস খাইয়িয়ে তোমার প্রেমে মাতাল করে দিয়েছ। চিঠি লিখেছে সেই ছেলে, যে টিভি দেখা বাদ দিয়ে রবীন্দ্রনাথের “সঞ্চয়িতা” নামক কাব্য পড়ার ভান করে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ছিল। যাকে তুমি বলেছিলে এত পড়লে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। তুমি মিথ্যে বলোনি। মাথা তার সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গিয়েছে, তবে পড়ার জন্য নয়, তোমার জন্য।
এত কিছু বলার পর অপরার আর বুঝতে বাকী থাকল না যে, অমিত সত্যিই তাকে ভালোবাসে এবং চিঠিটা তারই নিজের হাতের লেখা। তবুও পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে অমিতকে ঠকানোর জন্য কিছু অভিনয় তাকে করতে হল। সেও রেগে গিয়ে বলল,
আমি আপনার চিঠি ছিড়ে প্যাকেট করে রেখেছি। সময় মত পেয়ে যাবেন। আর শুনে রাখুন-আমি সবে মাত্র ৯ম শ্রেণীতে আর আপনি একাদশ, সেদিকে থেকে হিসাব করলে আপনি আমাদের বড় ভাই। তাই বড় ভাইয়ের মত থাকতে চেষ্টা করবেন।
ছোট্ট একটা বর্ণনা দিয়ে চলে যায় অপরা। ‘থ’ খেয়ে যায় অমিত। এতদিনের, এত কিছু, সব কি মিথ্যে? না মিথ্যে নয় মেয়েরা হল ছলনাময়ী। আমার সাথেও ছলনা করেছে। মনকে সান্ত্বনা দেয় অমিত। নিরাশের ছাপ একে যায় তার মুখে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় তার। তবুও নিজকে কন্ট্রোলে রাখতে ‘যতীন্দ্র মোহন সিংহের -‘ধ্রুবতারা’ নামক উপন্যাসটি পড়তে বসে সে। কাহিনীটা তার মর্ম স্পর্শ করে। বাঁচার প্রেরণা যোগায়। উপন্যাসটি শেষ হতে না হতে হৃদয়, সুমন, ইমন ও পাশের বাড়ির নাথান এসেছে। মনোপীরের মেলায় যেতে হবে। অমিতের মনের অবস্থা তেমন ভালো না। কিন' যুক্তিবাদী নাথান বলে,
তোর জন্য ওরা সবাই এসেছে আর তুই কিনা, কথাটা নাথানের মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে হৃদয় বলে দ্যাখ তুই এমন করে আমাদের প্রোগ্রাম নষ্ট করে দিস না।
কিছু দূরে ইমন আর সুমন দাঁড়িয়ে আছে। নিকটে এসে ‘চল’ বলে তৈরি হতে বলল সুমন। হৃদয় অমিতকে ডেকে দূরে নিয়ে আসে- আসে- বলতে লাগল, তুই বুঝতে পারিস না কেন? আজ ইমনকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি শানবির জন্য মার্কেট করতে হবে। এতগুলো বন্ধুর অনুরোধ রক্ষার্থে রাজি হয় অমিত।
নদীর পাড় ঘেষে যাওয়া রাস্তার পাশেই বসেছে মেলাটি। ছোট্ট একটা মাঠ। মাঠের উত্তর পাশে রাস্তা ,দক্ষিণে ছোট্ট একটি নালা। পূর্বে কয়েকটি বাড়ি এবং পশ্চিমে মনো নামক পীরের বাড়ি। যার নামে বসেছে মেলাটা। গান হচ্ছে, বিচার গানের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ ও পাগলা রশিদ। নারী-পুরুষ পালা। উপস্থাপনায় পঞ্চমুখ উপসি'ত জনতা। নিমিষেই সব কিছু ঘুরে দেখে নেয় সবাই। গান শ্রবনের পর যাত্রা শিল্পীদের মেকাপ হচ্ছে। সেখানে চলে যায় হৃদয়। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়ে সবাই ॥
এবার বাড়ি ফেরার পালা। পথিমধ্যে বিদায় নেয়- হৃদয়, সুমন, এবং নাথান। ইমন অমিতের বাসায় থাকার জন্য অমিতের সাথে চলে আসে। কিন' দুঃভাগ্যিস বাড়িতে মেহমান এসে সিটপূর্ণ করেছে। তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্র অর্থাৎ অপরাদের নৌকায় থাকার জন্য যেতে হল। কথায় কথায় রাত প্রায় দুইটা বাজে। রাতে মনের আবেগ বৃদ্ধি পায়। ইমন শানবির সব কথা বলতে শুরু করে। বলতে বলতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে ইমন। শানবির কথা ভাবতে গিয়ে অপরার কথা মনে পড়ে যায় অমিতের। অপরার কথা মনে করতেই বাইরে চলে আসে অপরা। গভীর রাতে অপরা একাকী বাইরে এসেছে। মৃদু স্বরে গাইতে লাগল অমিত,
শাওনও রাতে যদি
স্মরনে আসে মোরে
বাহিরে ঝড়ও বহে
নয়নে বারি ঝরে ॥
অপরা অমিতের কণ্ঠ চিনতে পেরে একটু আগ্রহ সহকারে এগিয়ে আসে এদিকে। ভাই আপনি এখানে কেন?
বাড়িতে মেহমান এসেছে। তাছাড়াও মেলা থেকে একটার দিকে ফিরেছিতো তাই।
সেকি, আপনি সেই কখন থেকে বালিশ ছাড়া ঘুমাচ্ছেন।
ঘুমাচ্ছি কই? ঘুমালে কি আর তোমার সাথে কথা বলতে পারতাম।
ঠিক আছে, আমি না হয় ভুল বলেছি কিন' আপনিতো ভুল করে বসে আছেন।
ভুল করছি! আমি!
কি ভুল করেছে ভেবে পাচ্ছে না অমিত। চার পাশটায় একবার তাকিয়ে আবার অপরার দিকে তাকাতেই মিষ্টি করে একটু হেসে দেয় অপরা। তারপর অমিতকে ঠেস দিয়ে মন্তব্য করে সে।
হ্যাঁ, ভুল নয়তো কি? আপনার না হয় কাঁথা বালিশ ছাড়া ঘুমালে কিছু হবে না। কিন্তু আপনার বন্ধুর জন্য যে কেউ একজন আছে।
তা ঠিক। তবে কি করার। ‘ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন’।
কেন মিছে মিছে ভাগ্যের দোষ দিচ্ছেন?
আমাকে বললেই ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
কীভাবে বলব? তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে। তাছাড়া তুমি কেন আমাদের জন্য কষ্ট করতে যাবে।
কিসে যে আমার কষ্ট, তা কি আপনি বুঝেন?
একথা বলার পর লজ্জিত হয় অপরা। আজ এত সুন্দর পরিবেশ পেয়েও মন থেকে তেমন কিছু বলতে পারল না। অবশেষে নিজের কক্ষ থেকে দু’টি বালিশ একটি কাঁথা ও একটি পাখা নিয়ে হাজির হল।
দেখলেন তো। কিভাবে আপনার ভাগ্যের খন্ডন ঘটালাম।
মানলাম তুমি অনেক পার। কিন' যার যা অভাব তা দিতে পারনা।
যেমন?
যেমন প্রেম।
ওটা ভিন্ন। ওটাকি চাইলেই পাওয়া যায়? স্বর্গীয় ওটা।
অমিত বলল ঠিক আছে, এবার ঘুমাতে যাও। রাত বেশি নেই। আমারও যে ঘুমানো দরকার।
কেন দু-একরাত না ঘুমালে কি অসুবিধা আছে নাকি? বাসর রাতে কিন' ঘুমানো যায় না। সে রাতে কি করবেন?
সে তোমার কাছ থেকে শিখে নেব।
আমাকে পাবেন কোথায়। আমিতো আর আপনার তেমন কেউ নই যে পাশে থাকব।
নও ত হতে কতক্ষণ।
বাপরে, সখ কত! বাসর রাতে বউ ছাড়া কি আর কেউ পাশে থাকে!
কেন বউ হতে কি তোমার আপত্তি আছে?
আপনি স্বপ্ন দেখতে থাকেন, আমি চললাম। অপরা তার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। একসময় রুমের দরজা বন্ধ করে নিজেকে অমিতের চোখের আড়াল করে ফেলে।



০ Likes ১ Comments ০ Share ৪৪২ Views

Comments (1)

  • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

    শুভ কামনা নিরন্তর

    • - ব্লগ সঞ্চালক

      শুভ কামনা নিরন্তর

    - মোকসেদুল ইসলাম

    শুভ কামনা রইল নক্ষত্রের জন্য। কিন্তু প্রোফাইল পিকচার হারিয়ে গেল কেন?

    • - ব্লগ সঞ্চালক

      আপনার আগের প্রোফাইল পিকচার বর্তমান রেজুলেশন এর সাথে মিলেনা। আপনি নতুন করে প্রোফাইল পিকচার নতুন করে দিয়ে নিবেন।

    - মুন জারিন আলম

    চমৎকার।এখন আরও গ্ল্যামারাস লুকের হয়েছে নক্ষত্র।ধন্যবাদ সঞ্চালক ভাই।অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।ভাল থাকবেন কেমন।

    Load more comments...