হঠাৎ সেজো আম্মার ডাকে চমক ভাঙ্গে অমিতের। অমিতের আম্মা তাকে নাড়ার পালা তৈরি করার জন্য ডাকছে। সে বাড়িতে তেমন কোন কাজ করে না, তবুও সেজো আম্মার ডাকে সাড়া না দিয়ে পারল না। পালা তৈরি করতে গিয়ে অমিত দেখতে পেল অপরাও তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। খড় আনতে আনতে অপরা বলল,
ভাই তুই যদি এই পালাটা একা সম্পূর্ণ করতে পারিস, তবে তোকে টাটকা খেজুরের রস খাওয়াব।
কথা যেন ঠিক থাকে।
ঠিক থাকবে না মানে। আমি কি তোকে কখনো মিথ্যে কথা বলি নাকি?
না তেমনটি নয়। তবে কথায় আছে না- ‘কাজের বেলায় কাজী, আর কাজ ফুরালে পাজী’।
আমি তাদের দলে নই, বলে এক বোঝা ছুড়ে দিল পালার উপর। অমিত সহসা সেগুলো চারপাশে সুন্দর করে মেলে দিয়ে উত্তর করল, কথায়তো আর বিশ্বাস করা যায় না।
ঠিক আছে-সত্যি বলছি আজ সন্ধ্যায় তোকে খাওয়াব। এতক্ষণ নীরব ছিল অমিতের আম্মায়।
এবার মুখ খুলল।
আমরা যেন বাদ না যাই! এই শীতে খেজুরের রস খুব ভাল আপ্যায়ন।
না-আম্মা, আপনাকে বাদ দিলে হবে নাকি!
আপনিইতো প্রধান। আশ্বাস দেয় অপরা। কাজ শেষ হয়ে এল প্রায়, অপরার সাথে যাবে অমিত ভাবতেই কার যেন একটা ডাকের শব্দ শুনে যাই আম্মা, বলে দৌঁড়ে চলে যায় সে। অমিত কিছুটা নিরাশ।
প্রচন্ড শীত। সন্ধ্যা হতেই চারদিকে কুয়াশা পড়তে আরম্ভ করল। বাড়িতে এসে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছে অমিত। কিন' তা আর হল না। অপরার কথা মনে হল, সে বার বার প্রেমের সুন্দর অভিনয় করে চলছে, অথচ চিঠির উত্তর দিচ্ছে না। ভাবতে না ভাবতেই অপরা এসে হাজির। এইমাত্র লেখা তার হাতের কবিতাটা দেখতে চায় সে। দ্বিধা, সংকোচ না করে তার হাতে তুলে দেয় অমিত।
পড়তে থাকে অপরা,
অন-রে সুখের স্পন্দন মুখে তার হাসি,
দর্শনে মনে চায় তাকে ভালো-বাসি।
আকাশের চাঁদের মত মুখখানি তার,
থাকিতে নাহি পারি, না দেখে আবার।
দিনে দিনে দিন যায়, মাসের পর মাস
বলিতে নাই দ্বিধা বাংলাদেশে সেই রূপসীর বাস।
শুধু রূপসী নয়, কর্মে আদি প্রাণ-
দেখে শুনে অবশেষে মন করেছি দান।
আমিতো জানি না সে কাকে চায়?
বলিতে পারি না কিছু হেন লজ্জায়।
বলে নাতো কোন কথা, শুধু গান গায়,
গানের মাঝে মনের কথা যেন প্রকাশ পায়॥
কবিতাটা পড়ে মনে মনে খুব খুশি হয় অপরা। তবুও সে না বুঝার অভিনয় করে,
মেয়েটি কি সত্যি চাঁদের মত?
না ঠিক তা নয়, সে আসলে তোমার মত। মিথ্যে কথা বললি অমিত ভাই, আমিতো ওই মেয়ের মত গান করি না।
তা সত্য, কিন্তু এক সময় অবশ্য করতে। অপরা ভাবল সব কথায় সে হেরে যাচ্ছে। সে অন্য দিকে কথায় মোড় দিল,
আমি আসলে তোকে খেজুরের রস খাওয়ানোর জন্য নিতে এসেছি। চল।
কিছুটা দ্বিমত প্রকাশ করল অমিত। এ কথাটা অমিতের নিতান-ই বাহানাছিল মাত্র। মনের কথা ভিন্ন। এবার অপরা আসে- করে অমিতের ডান হাতটা ধরে বলল,
এই তোর হাত ধরে বলছি, তুই যদি না যাস তবে তোর প্রেম কখনো সত্য হবে না। মানা করতে পারল না অমিত। চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ালো সে। তারপর আসে- করে বলল,
তুমি যাও আমি আসছি।
মনে থাকে যেন! হাত ছেড়ে চলে যায় অপরা। হাতটা ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে অমিত অনুতপ্ত হল। কি হত এক সাথে গেলে? কি হত হাতটা ছেড়ে না দিলে। তবে এটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ কথায় আছে- ‘চোর চলে গেলে বুদ্ধি বাড়ে’। পর মূর্হুতে মনকে সান্তনা দেয় অমিত। এবার শীতের ভেতর জড়ো সড়ো হয়ে না থেকে, ঝট-পট চলে যায় অপরাদের বাড়ি।
রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ, সবাই ঘুমানোর বন্দোবস- করছে। কিন' অপরা একটি বাতি হাতে তাদের বাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে নদীর পাড়ে একটি খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। অমিতকে দেখে বাতিটা নিভিয়ে দিল সে। অমিত অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
বাতিটা নিভালে যে?
চুপ কথা বলবিনা, কেউ যদি দেখে ফেলে। গাছে চড়ার জন্য ইঙ্গিত দিল অপরা। কোন অযুহাত না দেখিয়ে গাছ থেকে অর্ধেক হাড়ি রস পেরে আনলো অমিত। এবার অপরা কোমর থেকে দু’টি নল বের করে একটা অমিতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
এবার শুরু করা যাক।
দু’জনই নলদ্বারা রস টানতে লাগলো। মাত্র আধহাড়ি রস। কিন্তু এ শীতে তা যে সাবাড় হচ্ছে না। শরীরটা কাঁপতে শুরু করল। মাথা তুলতেই অপরা দেখল কে যেন নদীর পাড়ে আসছে। অমিত তড়িঘড়ি করে হাঁড়িটা লুকিয়ে ফেলল। তারপর নদীর পাড় ঘেষে সামান্য এগিয়ে সরাসরি চলে গেল তাদের বাড়ি।।
(পূর্ব নামঃ এ ড্রাই ট্রি , প্রকাশকালঃ২১শে বইমেলা-২০১০ইং )
Comments (0)
ধন্যবাদ
সুন্দর
ধন্যবাদ কবি
আপনার লেখা দিন দিন সমৃদদ হচছে
আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম। ধন্যবাদ