Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আমির আসহাব .

১০ বছর আগে

অন্য ঘরে অন্য স্বর,

 

এ বছর সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে। দু’চোখে তার হাজার স্বপ্ন। বড় হয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফুটাবে। এছাড়াও দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কিছু করাকে নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে ফাহিদ। এদিকে আগামীকাল তার রেজাল্ট বের হবে। দু’চোখে ঘুম নেই আজ। শরৎকাল, আকাশে মেঘের ছুটা-ছুটি, তারপর আবার মিটি মিটি জ্যোৎস্না। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল ফাহিদ। এমন সময় রুমে প্রবেশ করল তার মা হাযেরা বেগম। বলতে লাগল,
ঘুমিয়ে পড় বাবা, চিন্তা করিসনে। দেখবি আল্লাহর রহমতে রেজাল্ট তোর ভালই হবে।
তোমার কথাই যেন সত্য হয় মা। আমি এখনই শুয়ে পড়ছি।
দেরি করিস না কিন'
ঠিক আছে মা।
কাঁথা বালিশ ঠিককরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করছে ফাহিদ। ততক্ষণে গগনে মেঘ ছেঁয়ে গেছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ বেগে নেমে এল বৃষ্টি। বৃষ্টির দিনে মনটা কেন যেন উদাস উদাস লাগে। এলোমেলো ভাবতে ভাল লাগে। এর ব্যতিক্রম নয় ফাহিদ। শুয়ে ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল সে।
ফাহিদের হাতে একটা চিঠি দিয়ে পড়তে বলে এক অপরিচিত বন্ধু। পড়তে থাকে ফাহিদ,
প্রিয়তম,
তোমাকে প্রিয়তম বলে সম্বোধন করেছি অবাক হয়েছ? অবশ্য হওয়ারই কথা, কারণ তুমিতো আমাকে চিন না। তাছাড়া কোন যোগাযোগও নাই। তাতে কি? আমিতো তোমাকে চিনি। আর আমি এও জানি যে, শেষ পর্যন- আমাকে না ভালো বেসে তুমি পারবে না।
এতটুকু পড়ে ফাহিদ তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে, কে এই মেয়ে? আমিতো সত্যি তাকে চিনি না।
আর চিনতে হবে না, মেয়ে যখন বুঝতে পেরেছ তাতেই চলবে।
তা না হয় দেখা যাবে, নামটা তো বলবে।
আরে বোকা বলে কি! চিঠির শেষে নাম থাকে সেকি তুই ভুলে গেছিস নাকি? আর ভুলবেনা - নতুন নতুন প্রেমে পড়লে এমন একটু আধটু হয়েই থাকে। তবে তুই চাইলে আগামীকালই তোকে দেখাতে পারি। সে কাল দেখা যাবে। আবার পড়তে লাগল ফাহিদ,
আমি জানি তুমি এখন কি চিন্তা করছ? নিশ্চয় কে আমি? আচ্ছা একটু ক্লু দিয়ে দেই। তোমার মনে আছে কিনা জানি না। কোন একদিন একপসলা বৃষ্টির পর,
ঐ যে সেই দৃশ্যটা, যে দিন তুমি আর আমি প্রাণ খুলে হেসে ছিলাম। আর সেই হাসিটা অন্যের জন্য দুঃখের কারণ হয়েছিল। কি তাও মনে পড়েনি? বর্ষার পানি তখনো নদীতে পৌঁছায়নি, তবে বৃষ্টির পানি জমার সাথে সাথে শ্যাওলা গুলো তার চার পাশে ক্ষমতাটা বুনতে দেরি করেছিল না মোটেও। সেই নদীর দ্বারেই আমি আর একটি ছেলে বসেছিলাম। তুমি দূর হতে আসতে ছিলে। তোমাকে দেখে আমার ছোট ভাই মানিক ইয়ে মানে নামটা বলেই ফেলেছি। থাকগে নাম গোপন করে আর লাভ কি? যা বলছিলাম, পানিতে হাতটা ধোয়ার জন্য যখন যাচ্ছিল। হঠাৎ ধপাস শব্দ হল। কেউ কিছু দেখেনি ভেবে মুচকি হেসে আবার যাচ্ছিল, হঠাৎ আবার। কি হাসিটাই না হেসে ছিলাম দু’জনে।
কি মনে পড়েছে? আমি জানি তোমার কিছুই মনে পড়বে না। কারণ এটা তোমার সাথে শুধু ফান করলাম। এবার বলি শোন। মানুষের একজীবনে কত কিছুইতো ঘটে, মনে করে নাও এটাও তোমার আমার জীবনে ঘটেছে। আর এরপর কি ঘটবে তা তুমি জান। আমি সে বিষয়ে আর যাচ্ছি না। শুধু বলে রাখচ্ছি- তোমাকে আমার ভাল লাগে। আমি জানি আমাকে খুঁজে নিতে তোমার কোন কষ্ট হবে না, সে আশায় থাকলাম।
ইতি.........।
নামটা পড়বে এমন সময় ফাহিদের মা কপালে একটা স্নেহের চুমু বসিয়ে দিল। ঘুম ভেঙ্গে গেল ফাহিদের। ভোর হয়েছে। সূর্যটা ততক্ষণে খানিকটা উপরে ওঠেছে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে নেয় ফাহিদ। রেজাল্ট আনতে যাবে। তাই চট-জলদি কিছু নাস্তা এনে হাজির করল হাযেরা বেগম। মা তার জন্য এত পাগল দেখে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে ফাহিদের। গৌরব করে বলতে ইচ্ছে করে এ পৃথিবীতে তার মত মা পাওয়া সহজ ব্যাপার না।
মায়ের সাথে মুগ্ধ মনে সকালের নাস্তা সেরে নেয় ফাহিদ। ফাহিদ তার একমাত্র ছেলে। তাছাড়াও ফাহিদের প্রতি সে অন্য সব মায়ের চেয়েও একটু বেশি সতর্ক থাকে।
নাস্তা শেষে হাযেরা বেগম বলল,
যা বাবা, আমাকে শুভ সংবাদটা শুনাতে আর দেরি করিসনে।
তোমার বিশ্বাস দেখে আমি সত্যি গর্বিত মা। তুমি আমার লক্ষ্মী মা! মাকে জড়িয়ে ধরে ফাহিদ।
দেখ ছেলের কান্ড। আমি জানি গ্রামের আট-দশটা ছেলের মত তুই ফাহিদ না। তাইতো তোকে নিয়ে আমার অনেক আশা।
তুমি দেখ মা, আমি তোমার আশাকে কখনও মিথ্যে হতে দেব না। আমি একদিন প্রতিষ্ঠিত হব।
তাই যেন হয় বাবা, এবার যা-
উঠে দাঁড়াল ফাহিদ। মাকে সালাম করে বের হয়ে যায় রেজাল্ট আনতে।।


 

 


(পূর্ব নামঃ এ ড্রাই ট্রি , প্রকাশকালঃ২১শে বইমেলা-২০১০ইং )

০ Likes ১ Comments ০ Share ৭২১ Views