Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

চারু মান্নান

১০ বছর আগে

অনুগল্প- না দেখাই ভাল ছিল

সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা, বেশ লাগে সুমন সাহেব কে। মনে হয় সেই বৃটিশ বিরোধী আন্দলোনের সময়ের বাম নেতাদের মত। যদিও সুমন সাহেবের বয়স এখন ষাট ছুঁই ছুঁই করছে। বাংলার একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধে টগবগে কলেজ ছাত্র। বাম রাজনীতিতে জুড়িয়ে পরেন। যুদ্ধের ডামাডোলে ঝাঁপিয়ে পরে যুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে যখন বাড়ী ফিরলেন, তখন স্কুল মাষ্টার বাবা,মা,এক ভাই বোন কেউ বেঁচে নাই। মুক্তিযুদ্ধে হন্তারক বাহিনী তাদেরকে হত্যা করেছিল। সেই কষ্টের আঁধার মাখা বুকে শান্তনা বাতাস বয়ে দিল খুঁজে পাওয়া ক্লাসমেট লোপা। লোপার সান্নিধ্যে বেশ কাটল কিছু সময়। কিন্তু সুমন সাহেব, লোপাকে ধরে রাখতে পারলেন না। কয়েক মাসের মধ্যে লোপার বিবাহ হল, পুরান ঢাকার এক ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে।

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে বাবা মা হারা নিঃস্ব সুমন সাহেব, অভিমানে ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একটি টিন সেটের ম্যাচে উঠলেন। সেই থেকে টিউশানি, চাকুরি করে জীবন যাচ্ছে বেশ। সেই ম্যাচেই প্রায় ত্রিশ বছর কেটে গেল। বলা যেতে পারে, অভিমানের কাছে যৌবন বির্সজন।

এখন আর বিয়ের কথা ভাবতেই পারে না। এলাকার সবাই সুমন মাষ্টার নামেই চিনে। কয়েক মাস যাবত বেশ রুটিং হয়েছে সুমন সাহেবের। অফিস শেষ করে, রামপুরা বাসস্টান্ডে এ নেমে হাতিরপুল লেকের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফার্মগেটের ম্যাচে পৌছান। বয়স হয়েছে, ডাঃ তো হাঁটতেই বলেন, তাই একেবারে অফিস শেষে, হেঁটে, আবার রাতের পড়ানো সেরে ম্যাচে ফিরেন সুমন সাহেব।
রুটিন মাফিক সুমন সাহেব সেদিনও হাঁটছিলেন লেকের ধার দিয়ে পাকা ফুটপাত ধরে। সাঁঝের সময়টা বেশ লাগে সুমন সাহেবের। মাঝে মাঝে টিউশানি না থাকলে বেশ রাত পর্যন্ত বসে বাদাম চিবয়। নিত্যদিনের মত হাঁটছিলেন নিরবে একাকি। হটাত পিচে থেকে কে যেন ডাকে, শুনতে পেয়েও পিছনে তাকায় না সুমন সাহেব। আমাকে আবার কে ডাকবে? এই জনমে যার কেই নাই। তাই বোধ হয় তার পিছুটান অনেক কম।

দৌড়ে এসে এক পিচ্চি বাদাম ওলা, আঙ্কেল আঙ্কেল আপনাকেও ঐ যে মেডাম ডাকে। থমকে দাঁড়ায় সুমন সাহেব। আমাকে আবার কে ডাকে? যাবে কি না, ভাবতে থাকে সুমন সাহেব। এই বয়সে এই ভাবে যাওয়া ঠিক হবে? দুর থেকে চেনা যাচ্ছে না, তয় শাড়ী পরা লম্বা গড়নের একহারা মহিলার মত লাগছে। দ্যাখ তো আমাকে চিনতে পারছো কি না? আমি লোপা। সম্মুখে থমকে দাঁড়ায় সুমন সাহেব। তাই বল, এভাবে আমাকে আর কে ডাকবে! তো কেমন আছো লোপা? মেয়েটি কে খুব সুন্দর তো? ও আমার নাতনি? আমার বড় মেয়ের মেয়ে সুমনা। নামটা কে রেখেছে? কেন আমি। ও তাই বল! খুব মিষ্টি তো? হ্যা ওর জন্যই তো এখানে আসা। তো ভালই হল, বল! তোমার সাথে দেখা হয়েগেল। সেই কবে থেকে তোমার সাথে দেখা নাই। তাও কত বছর হবে বলতো? বাইশ তেইশ বছর হবে বোধ হয়, দীর্ঘশ্বাস বের হল,লোপা সুমনের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল। এ ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুমনের একটু অসস্তি হচ্ছে দেখে, লোপা অভিমানে সুমনার হাটতি ধরে,দ্যাখো দ্যাখো রংধনুর মত লাইট গুলো জ্বলছে।

আমার চিঠি গুলোর উত্তর দিলে না কেন? লোপা অভিমানে প্রশ্নটি করে। তোমার সব চিঠিই পেয়েছি। কিন্তু উত্তর লেখা হয়নি, সাঁঝের লালিমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন সুমন সাহেব। অভিমান পিছনের সব স্মৃতিকে পোড়াও, তাই বোধ হয় উত্তর দেয়া অনর্থক। সুমন সাহেবের বিবেচনা। যাকে পাওয়া যাবে না। তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করা বৃথা।

একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? মাঝে মাঝে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে! স্বামী সংসার নিয়ে খুব সুখী তাই না?
এটি জানা খুব জরুরি সুমন সাহেব? যেখানে আমার চিঠির উত্তর দিতে পার না, তখন তোমার সেই প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার তোমার নেই। সুমন সাহেব বুঝতে পারে লোপা রাগে দুঃখে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না সুমন সাহেব। সুমন সাহেব বুঝতে পারে, এই প্রশ্নটা করা বোকামি। তাই, সুমন সাহেব সুমনাকে ডাকে এদিকে এস নানু, কি নিবে বল? বেলুন বাঁশি, হাওয়াই মিঠা? সুমনা কিছু বলছে না দেখে, লোপা বলে উঠে, তোমার নানু হয় বল কি নিবে? দুজনে কিছুক্ষণ আনমনে সাঁঝের লালিমায় চেয়ে থেকে, হেমন্তের সাঁঝে কুয়াশার আঁধার নেমে আসে সাঁঝ ঘনালে।

1420@ 25 কার্তিক, হেমন্তকাল

২ Likes ১৫ Comments ০ Share ৪৩৩ Views

Comments (15)

  • - ঘাস ফুল

    সমস্যাটা থেকে বের হতে পেড়েছেন বলে অভিনন্দন। ভিন দেশীদের মতো এই জবাবদিহিতা টুকুর আংশিকও যদি আমাদের দেশে থাকতো, তবে দেশের চিত্রটাই পাল্টে যেত। ধন্যবাদ সেলিম ভাই। 

    • - জামাল হোসেন সেলিম

      আমি এই জিনিসটারই স্বপ্ন দেখছি ভাই ঘাস ফুল। ভিন দেশীদের মত সব কিছুই আমাদের দেশে ওদের অনুকরণে হয়ে যাক তা আমি চাই না। তবে ভালো যেগুলো আছে তা আমাদের দেশে প্রচলন হোক। এই প্রত্যাশা।

    - নীল সাধু

    ভালো বলেছেন।

    আমাদের দেশে  দায়ীত্ত্ববোধের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। এটা সত্য।

    আসলে অভাব বোঝা এবং তার প্রতিকারের জন্যেও প্রয়োজন কিছুটা সচেতনতা। আমাদের দেশের সেটারও অভাব আছে।  

    আপনার বিপদ কি কেটেছে এখন?

    • - জামাল হোসেন সেলিম

      আমার একটা প্লাস পয়েন্ট আছে এখানে সাধু ভাই। আমার ফ্যাক্টরির অধিকাংশই বাঙালি। তাঁদের ভেতর আনুগত্য, নিয়মানুবর্তিতা আর কাজের প্রতি যে আন্তরিকতা দেখা যায়, কখনো কখনো আমি নিজেই দন্ধে পড়ে যাই, এরাই কি সেই বাঙালি যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে? আমি এদের নিয়ে গর্ববোধ করি।

      আবার রাস্তা ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় এর উল্টোটাও দেখেছি প্রচুর। যা নিয়ে বেশ ক'টা পোষ্টও লিখে ফেলেছি বিভিন্ন সময়।

      তো কী বলতে পারি আমরা? বাঙালি খারাপ? বাঙালির দায়ীত্ববোধের অভাব? উসৄঙ্খল? আমার মনে হয় তার কোনটাই না।

      আপনি ঠিক কথা বলেছেন, আসলে অভাব বোঝা এবং তার প্রতিকারের জন্যেও প্রয়োজন কিছুটা সচেতনতা। আমাদের দেশের সেটারও অভাব আছে। 

      এখন এই সচেতনতাটা যারা সৃষ্টি করবেন সেই ধরনের কিছু লিডারের অভাব রয়েছে আমাদের। 

      ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান অভিমতের জন্য।

       

         আপনার বিপদ কি কেটেছে এখন?

      হ্যাঁ, বিপদ বলতে গেলে কেটে গেছে প্রায়। আগামিকাল একটা মিটিং আছে। ওর পরে আশা করি আর কোন সমস্যা থাকবে না। অনেক ধন্যবাদ ভাই, আমার কুশল জানতে চাওয়ার জন্যে।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    আমাদের দেশে আছে তবে দেশীয় কোম্পানীতে নাই। আমি প্রায় দু বছর কাজ করেছি শেভরন বাংলাদেশের সাথে। তাদের কথা হলো সেফটি ফার্স্ট। নিরাপদ কাজ করবো নইলে করবোনা সহ দশটি নিরাপত্তা স্লোগান। এবং এর দায়িত্ব শুধু কর্মী বা সুপার ভাইজার নয়। প্রত্যেকটা সহ কর্মীর।  নিরাপত্তা ইস্যুতে যে কোন কর্মী তার উর্ধ্বতনের কাজও বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।

    প্রথম প্রথম একটু ঝামেলা মনে হলেও পরে এতটাই অভ্যস্ত হয়েছী আমি খুবই মজা পেয়েছি। এতে কাজ অনেক বেশী গতিশীল হয়।

    • - জামাল হোসেন সেলিম

      আপনার সাথে আমি একমত পাশা ভাই। প্রথম প্রথম একটু ঝামেলা মনে হতে পারে। তবে এর সুদুর প্রসারী প্রভাব প্রত্যক্ষ করে অবাক হয়ে যেতে হয়।

      আর এটা শুধু ফ্যাক্টরি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নয়, সামগ্রীক ভাবে জাতীয় পর্যায়েও এই ই হবে।

      ধন্যবাদ আপনাকে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সবার সাথে শেয়ার করার জন্য।

    Load more comments...