Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অনন্য প্রতিভাধর কথাশিল্পী ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর দ্বাদশ মৃত্যুদিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবী এবং ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের একজন ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শাহেদ আলী। তিনি ইসলামী চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, অনুবাদক, গবেষক হিসাবেও পরিচিত। বাংলাদেশের পটভূমিকায় গল্প সৃষ্টিতে তিনি অসাধারণ পান্ডিত্যের পরিচয় দেন। তাঁর গল্পের মূল উপজীব্য বিষয় মানবতা, মনুষ্যত্ববোধ, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ। গ্রামীণ চালচিত্র, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এবং আম জনতার জীবনচিত্রের সার্থক রূপায়ণে হৃদ্ধ শাহেদ আলীর সাহিত্যকর্ম। স্কুলজীবনে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালেই তার নিজের লেখা গল্প ‘অশ্রু’ প্রকাশিত হয় মাসিক ‘সাওগাতে’। ১৯৪৯ সালে ছাত্রজীবনে তার সর্বাধিক আলোড়িত ও সমাদৃত ‘জিবরাইলের ডানা’ প্রকাশিত হয় তারই সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’-এ। ‘জিবরাইলের ডানা’ নিয়ে চলচ্চিত্র করতে চেয়েছিলেন অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। যদিও শেষ পর্যন্ত কাজটি সম্পন্ন হয়নি। এর নেপথ্য কারণ ছিল উভয়পক্ষের মধ্যে সময়মতো যোগাযোগ না হওয়া। নন্দিত এই কথাশিল্পী ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার দ্বাদশ মৃত্যুদিবস। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

শাহেদ আলী ১৯২৫ সালের ২৬ মে সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৯৪৫ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে ১৯৪৫ সালে আইএ এবং ১৯৪৭ সালে ডিস্টিংশনসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ পাস করেন। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি মাসিক প্রভাতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক' সম্পাদক ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি অধ্যাপনা, খেলাফতে রাব্বানী পার্টির রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, তমদ্দুন মজলিস ও আবুজর গিফারি (রা.) সোসাইটি আন্দোলন, সাংবাদিকতা, ইসলামিক একাডেমি/ফাউন্ডেশনের সম্পাদনা, গবেষণা, অনুবাদ, সঙ্কলন, ভাসানীর শিক্ষা আন্দোলন প্রভৃতিতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৫১ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে রংপুর কারামাইকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ও প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রতিষ্ঠিত মিরপুর বাংলা কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে খেলাফতে রববানী পার্টির ব্যানারে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ পর্যন্ত তিনি আইনসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক বুনিয়াদ এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালে ইসলামিক একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের অনুবাদ ও সঙ্কলন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন। একই সাথে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা ও মাসিক সবুজ পাতা সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৮০ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত সাহিত্য উৎসবে বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত একমাত্র সাহিত্যিক হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করেন।

অধ্যাপক শাহেদ আলীর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছেঃ একমাত্র পথ (১৯৪৬), তরুণ মুসলিমের ভূমিকা (১৯৪৬), ফিলিস্তিনে রুশ ভূমিকা (১৯৪৮), সাম্রাজ্যবাদ ও রাশিয়া (১৯৫০), তরুণের সমস্যা (১৯৬০), বাংলা সাহিত্যে চট্টগ্রামের অবদান (১৯৬৫), তওহীদ (১৯৬৫), বুদ্ধির ফসল আত্মার আশিষ (১৯৭০), ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা (১৯৭০), Economics Order of Islam (১৯৭৮), জীবন নিরবচ্ছিন্ন (১৯৮০), রুহীর প্রথম পাঠ (১৯৮০), ছোটদের ইমাম আবু হানিফা (১৯৮০), Islam in Bangladesh (১৯৮১), সোনারগাঁয়ের সোনার মানুষ (১৯৯২) ইত্যাদি। ছোটদের জন্যও তাঁর রয়েছে তিনটি গ্রন্থ। ‘সোনার গাঁয়ের সোনার মানুষ’, ‘ছোটদের ইমাম আবু হানিফা’ এবং ‘রুহির প্রথম পাঠ’। তার অনুবাদকর্মের মধ্যে রয়েছে মুহাম্মদ আসাদ রচিত ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারি পরিচালনার মূলনীতি (১৯৬৬) ও মক্কার পথ (১৯৯৩), কে বি এইচ কোনা রচিত আধুনিক বিজ্ঞান ও আধুনিক মানুষ, হিরোডাটাস রচিত ইতিবৃত্ত (১৯৯৪) ইত্যাদি যা অসাধারণ অনুবাদ গ্রন্থ হিসেবে নন্দিত।

`The Road to Macca' গ্রন্থের রচয়িতা আল্লামা মুহাম্মদ আসাদ। গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক শাহেদ আলী। ‘মক্কার পথ’ লেখকের নাটকীয় জীবনের বহু কথা তিনি অবলিলা্ক্রমে ব্যক্ত করেছেন। তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর বর্তমান প্রাশ্চাত্য সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন- এর বাহ্য জাকজমকের অন্তরালে লুকায়িত অতল-গর্ভ শূন্যতাকে দুনিয়ার সামনে উদ্‌ঘাটিত করে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, তিনি সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে জেরুযালেম আসেন এবং আরবদের জীবন পদ্ধতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তাঁদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার পর তিনি আবিষ্কার করেন ট্রেডিশনাল মুসলিম সমাজের মধ্যে রয়েছে মন ও ইন্দ্রিয়ের এক সহজাত সঙ্গতি, -যা ইউরোপ হারিয়েছে। তিনি তাঁদের মধ্যে আবিষ্কার করেন হৃদয়ের নিশ্চয়তা এবং আত্ন-অবিশ্বাস থেকে মুক্তি, যে মুক্তি ইউরোপীয়দের স্বপ্নের অগোচর। এ বিশ্বাসের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি ১৯২৬ সনে ইউরোপে ফিরে সস্ত্রীক ইসলমা ধর্ম কবুল করেন। তার একমাত্র উপন্যাস হৃদয় নদী ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নাটিকা ‘বিচার', ধর্ম সমাজ সংস্কৃতি বিষয়ক গ্রন্থ জীবন দৃষ্টি সাম্প্রদায়িকতা, ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ বিপর্যয়ের হেতু প্রভৃতি।

শাহেদ আলীর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ছয়টি। তার প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। ‘জিবরাইলের ডানা' শীর্ষক গল্পগ্রন্থে সাতটি গল্প সঙ্কলিত হয়। গল্পগুলো হলো ঐ যে নীল আকাশ, ফসল তোলার কাহিনী, নানীর ইন্তেকাল, এলোমেলো, পোড়ামাটির গন্ধ, আতসী এবং জিবরাইলের ডানা। ‘জিররাইলের ডানা' লেখকের সর্বশ্রেষ্ঠ গল্প। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক' পত্রিকায়। প্রকাশের সাথে সাথেই আলোড়ন সৃষ্টি করে বিদগ্ধ মহলে। গল্পের নায়ক বালক নবী অত্যন্ত গরিব পরিবারে ছেলে। সংসারে আছেন তার শুধু মা। মা হালিমা মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। তাতে যা পান তাতে মা-ছেলের আধপেটা খেয়ে দিন কাটে। নবীর বয়স আট। তেমন কাজ করার মত সময় হয়নি তার। তাই, মা বিনে বেতনে বিড়ির কারখানায় দিয়ে রেখেছেন এই আশায় কাজ শিখে একটু বড় হলে রোজগারে হবে ছেলে তার। তখন মায়ের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু নবীর মন কাজে বসতে চায় না। তার মন পড়ে থাকে খেলার মাঠে। যেখানে ওর মত সমবয়সী অনেক ছেলে ঘুড়ি উড়ায়, খেলে। তারও ইচ্ছে হয় ঘুড়ি উড়াতে। কিন্তু ঘুড়ি উড়াতে হলে চাই সুতো, নাটাই এবং ঘুড়ি। নবীর আরো ইচ্ছে, ঘুড়ি উড়িয়ে উড়িয়ে আসমানের আল্লাহর কাছে সে তার দুঃখের কথা জানাবে, যাতে আল্লাহ তাদের দুঃখের কথা জেনে একটা ব্যবস্থা করে দেন। নবী সত্যি সত্যি সুতো, নাটাই এবং ঘুড়ি জোগাড় করে আকাশে ঘুড়ি উড়ালো। প্রথম দিন তার জোগাড় করা সুতো দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে সে আল্লাহর নাগাল পেলো না। কারণ তার সুতো বেশি ছিল না। নবী স্টেশনে কুলির কাজ করে আরো কিছু পয়সা আয় করে সুতো কেনে। যথারীতি সে ঘুড়ি উড়ায়। সুতো বেশি হওয়ায় তার ঘুড়ি এক সময় অনেক উঁচুতে যেতে যেতে দৃষ্টিসীমার প্রায় বাইরে চলে যায়।
গল্পের ভাষায় – ‘রশি বেয়ে নবীর বিস্মিত দৃষ্টিও হারিয়ে যায় আসমানে। আজকে আর সে ঘুড়ির রশি গুটাবে না, লোকচক্ষুর ওপারে ঘুড়ি উড়ে বেড়াক আপন ইচ্ছায় – আপন খুশিতে। এক সময় হয়তো আটকে যাবে আরশের পায়ায়, আরো শক্ত টান পড়বে হাতে। তখন রশিতে টান দিয়ে সে টলিয়ে দেবে আল্লাহর আরশ। চকিত আঁখি মেলে আজ আল্লাহ মাটির মানুষের দিকে তাকাবেন – অনিচ্ছায়ও শুনতে হবে তার দুঃখী বান্দার কাহিনী – তাদের বঞ্চনা, লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণার কথা।’ শাহেদ আলী বালক নবীর মনের আকুতি ও আবেগকে গোটা গরিব মানুষের আবেগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এই গল্পে। গরিব মানুষের ধারণা থাকে আল্লাহ বুঝি তাদের কথা শুনতে পান না, দেখতে পান না। আল্লাহ বুঝি ধনী লোকদের শুধু ভালবাসেন, তাদের দেখতে পান। যেটাকে আমরা বলতে পারি ‘স্যাডিস্ট থট’ দুঃখভারাক্রান্ত ভাবনা। আর এর সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে হাদিস শরীফে, ‘দারিদ্র্য কুফরির দিকে ধাবিত করে’। স্বপ্ন ও বাস্তবতার দুই জগৎ নিয়ে মানুষের জীবনের যে প্রতিদিনের টানাপড়েন এবং গতিমান জীবনের সঙ্গে যে দ্বন্দ্ব এসব অত্যন্ত সুন্দরভাবে শাহেদ আলী তাঁর এ গল্পে তুলে ধরেছেন। জিবরাইলের ডানা হিন্দী, উর্দু, ইংরেজি ও রাশিয়ান ভাষায় অনুদিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিব্যপ্ত এই গল্পটি নিয়ে ভারতের পাঁচ জন চলচ্চিত্রকর ফিল্ম নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন ভূবনবিজয়ী ফিল্ম নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। এছাড়া ছিলেন ঋত্মিক ঘোটক, মৃণাল সেন, জ্যোতির্ময় রায় এবং নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষবাদী ও বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের চক্রান্তে তাঁদের পরিকল্পনা প্রচেষ্টা সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশের চিত্র পরিচালক ইবনে মিজানও জিব্রাইলের ডানা নিয়ে ছবি তৈরিতে এগিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তিনিও পিছু হটেন অদৃশ্য কারণে। দেশের শেকড়শূণ্য ও বিদেশভক্ত কবি সাহিত্যিকরা শাহেদ আলী কিংবা তার গল্পের প্রচার প্রসারে এভাবেই বার বার বিঘ্ন ঘটায়। তারা নিজেরা দেশ জাতি সমাজের জন্য কিছু করতে নারাজ। অন্য কেউ করবে সেটাও তাদের অসহ্য। শাহেদ আলীর খ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ বিভুঁয়ে ছড়িয়ে পড়ুক তা ওরা কখনও চায়নি। এজন্যই শাহেদ আলীর গল্প নিয়ে সিনেমা তৈরিতে ওরা বাঁধার প্রাচীর সৃষ্টি করে।

লেখকের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ একই সমতলে ১০টি গল্পের সমবয়ে প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। গল্পগুলো হলো- সিতারা, দ্বীন ব্রাদার্স, মহাকালের পাখনায়, বন্যান, অহেতুক, কান্না, বমি, মা, পুতুল ও একই সমতলে। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয় শা'নযর গল্পগ্রন্থ। এর আটটি গল্প হলো নোঙর, মন ও ময়দান, নেপথ্যে, ছবি, নীল ময়না, জননী, কবি ও শা'নযর। ছয়টি গল্প নিয়ে অতীত রাতের কাহিনী ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। গল্পগুলো হলো পৃথিবী, ইটের পর ইট, রাত অন্ধকার, সোনাখালী, মানুষের মানচিত্র ও অতীত রাতের কাহিনী। ১৭টি গল্পের সঙ্কলন অমর কাহিনী প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালে। গল্পগুলোর শিরোনাম-ইঙ্গিত, একটি আধুনিক অমর কাহিনী, সায়েরা বানুর চিকিৎসা, আড়াল, মনসব মিঞার স্বস্তি, কপাল, পাগল, শয়তান, রুমের সুলতান, অভিমান, বোবা যন্ত্রণা, দাবী, লুকাস, বরকতুল্লাহ আলায়হে, নতুন চর, ভয়ঙ্কর এবং সর্বনাশ। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ গল্পের বই। একটি রিপোর্ট, নতুন জমিনদার, আরো একটি রিপোর্ট, অস্তরাগ, নতুন কমিশন, শহীদে কারবালা, ঘাতক, নিরুত্তর ও সোনার খনি শীর্ষক নয়টি গল্প নিয়ে আলোচ্য বইটি প্রকাশিত হয়। অধ্যাপক শাহেদ আলীর অগ্রন্থিত গল্পের মধ্যে রয়েছে অশ্রু, রিসার্চ স্কলার, ক্রমশ, এই আকাশের হাওয়া, ছিন্নপত্র, পরিচয়, হাসি-কান্না, পিটিশন, সোনার চেয়েও দামী, তুচ্ছ, আপন বিদায়, মানহানি, ময়নাতদন্ত প্রভৃতি।

(কিশোরকণ্ঠের নতুন অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে (ডান থেকে) কথাশিল্পী শাহেদ আলী
কবি আল মাহমুদ, নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ ও শিশু সংগঠক সানাউল্লাহ নূরী)

নানা কারণে ছোট গল্পের জনক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে (১৮৬১-১৯৪১) অভিহিত করা হয়। এছাড়াও বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক কালজয়ী রচনা আমাদের উপহার দিয়েছেন। শুধু তাদের সম্প্রদায়ের জীবনালেখ্য নিয়েই তাদের গল্প উপন্যাস। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির জীবনাচার সেখানে অনুপস্থিত। ইচ্ছা করেই তারা এড়িয়ে গেছেন এদেশের মূলধারার মানুষকে। বাংলা ছোট গল্পকে পরবর্তীকালে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তাদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। কিন্তু সেগুলো সবই একপেশে। এই একরোখা সাহিত্যকে ডিঙিয়ে মৌলিক মানবীয় ধারাকে সমৃদ্ধ করা বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যে কয়জন ক্ষণজন্মা ছোট গল্পকার আমরা পেয়েছি তার মধ্যে চল্লিশ দশকের শাহেদ আলী নানা দিক বিবেচনায় উল্লেখযোগ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য তিনি তাঁর যোগ্য আসন আজ অবধি পাননি। আর সবচাইতে যে বিষয়টির জন্য শাহেদ আলীকে আমাদের পাঠ করা এবং মূল্যায়ন করা উচিত তা হলো, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে পূর্ব বাংলার বাঙালি মুসলিম জীবনের সার্থক রূপকার। তাঁর গল্পের ভেতর দিয়ে ভাটি বাংলার সাধারণ মুসলিম জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, জীবন যাপনের নানা প্রতিকূলতা, সংগ্রাম ইত্যাদি খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর গল্পে কোনো দ্বন্ধ, সংঘাত, হিংসা, বিদ্বেষ, অত্যাচার, নিপীড়ন, অরাজকতা, পৈশাচিকতা নেই। নেই ভিলেনের রাজত্ব কিংবা সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য। শুধুই মানবিক গুণাবলীতে সজীব হয়ে ফুটেছে তাঁর গল্পসমগ্র। তাঁর প্রতিটি গ্রন্থ, প্রতিটি গল্প সাহিত্য মূল্য বিচারে কুলীন গোত্রের।

বরেণ্য চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলী সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৬৪ খ্রীস্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও ১৯৮১ সালে ভাষা আন্দোলন পদক , ১৯৮৯ সালে একুশে পদক , ১৯৮৬ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার , ১৯৯৭ সালে ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, ২০০ সালে জাসাস স্বর্ণপদক (মরণোত্তর), তমুদ্দন মজলিস, মাতৃভাষা পদক, ২০০৩ সালে কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর) এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন। নন্দিত কথাশিল্পী শাহেদ আলী ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার দ্বাদশ মৃত্যুদিবস। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৬৮৬ Views

Comments (1)

  • - নীল সাধু

    ভালো লাগছে সকল জেনে।

    এগিয়ে যাও কালপুরুষ। আমরা সবাই পাশে আছি। 

    প্রথাবিরোধী ভাব ভাবনা নিয়ে তীরন্দাজ এগিয়ে চলুক - সঙ্গে আছি

    • - কালপুরুষ পোয়েট্রি

      শুনে ভালো লাগলো। লেখা কই?

    - লুব্ধক রয়

    dhonybad. ami lekha dite chai.

    • - কালপুরুষ পোয়েট্রি

      মেইল করে দিন আজই।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    আপনাদের এই সফল হোক। আসলে লিটল ম্যগ একটি আন্দোলনের নাম। যা একদিনে হয়না। এর পিছনে প্রচুর অর্থও সময় ব্যয় করতে হয়। মেধা আর মনন এর মিশেলতো থাকতেই হবে।

    • - নীল সাধু

      সহমত ওইদ কবি পাশা 

    • Load more relies...