Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মনির হোসেন মমি

১০ বছর আগে

অতৃপ্ত জীবন....প্রবাসী

বেকারত্বের অভিশাপে  যখন দিক-বেদিক দিশেহারা তখনও সরকারী চাকুরী অবসরপ্রাপ্ত বাবা আমাদের সংসারটাকে বিভিন্ন কায়দায় টিকে রেখেছিল,বুঝতে দেয়নি সংসারের অভাবটাকে।রিটার্ড হওয়া প্রাপ্ত সামান্য ক’টা টাকা তাও বেকারত্ব ঘুচানোর দায়ে আদম বেপারীর কাছে বিদেশ যাবার জন্য দিয়ে রেখেছিলাম- প্রায় দূ’বছর হলো।আজ হলো কাল হলো বলতে বলতে কোন নরমাল চাকরীও করতে পারছিনা তাছাড়া মূলধনও শূণ্যের কোঠায়।রিটার্ড বাবা আমার অন্নের খুজে সামান্য পূজিতে লুঙ্গি-কাপড়ের গাট্টি মাথায় নিয়ে এ হাট থেকে ঐ হাটে ছুটে যেত। আমার ভিষন কষ্ট লাগত যখন দেখতাম ষাট বছরে বাবা আমার গাওয়াল করে রাতে ঘেমে বাসায় ফিরত ক্লান্ত দেহে।তখন মনে হত যদি কোথাও অজানা দেশে চলে যেতে পারতাম যেখানে বাবারা নিদিষ্ট একটি বয়সে কেবলই আরামে নিশ্চন্তের আশ্রয়ে থাকতে পারবে।এমন কেনো আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্হা।শিক্ষাজীবন শেষ হলেও অভিজ্ঞতা লাগে ,লাগে মামা/টাকা।

বাবা আমার পাক আমলে পুলিশে চাকরী করত।দেশ স্বাধীনের কিছু দিন আগে পুলিশের চাকুরীতে ঘোষ খেতে হত বলে চাকরীটাই ছেড়ে দিয়ে চলে এলো পরিবার নিয়ে নারায়নগঞ্জে -সিদ্ধিরগঞ্জ “আদমজী জুট মিলে”একজন লাইন সরদার হিসাবে।

শুরু হলো স্বাধীনতার সংগ্রাম।আমি তখন মায়ের কোলে।বাবা আমাদের নিয়ে পৈত্বি বাড়ী কুমিল্লায় চলে আসে। সেখানে আমাদের গ্রামটাকে রক্ষা করার কাজে বাবা যোগদেন স্হানীয়  অন্যান্য লোকদের সাথে।যদিও বাবা আমার বড় কোন মুক্তিবাহীনির সাথে ছিলেননা কিন্তু শহরের ঘটে যাওয়া অনেক খবরা খবরই গ্রামের মানুষের সাথে আদান প্রদান করে গ্রামকে রক্ষার কাজে সহযোগিতা করতেন।অবশেষে দেশ হলো স্বাধীন আমরা পরিবার সহ চলে এলাম শহরে- সেই আমার জন্মভুমি সিদ্ধিরগঞ্জ।বাবা মাঝে মাঝে কেদেঁ কেদেঁ বলত”বাবারে যুদ্ধে পাক-দের সাথে সঙ্গে নিয়ে আমাদের দেশের মীরজাফররা কি যে অত্যাচার করত তা মনে এলে আমার চোখে পানি এসে যায় ।মনে হত এ দেশটা ওদের আমরা এখানে পরাধীন।এই বলতে বলতে বাবার চোখের এক কোনে কখন যে কষ্টের অশ্রু জমেছিল চোখ তা আর সামলাতে পারেনি হঠাৎ গড়িয়ে পড়ল বাবার গাল বেয়ে।

জীবনে এত ইতিহাস জমেছে যে শুরু করলে কোথায় এর ইতি হবে তা আমি নিজেও জানিনা।অবশেষে ২/৩ বছর পর আমার বিদেশে যাবার সকল প্রস্তুতি শেষ হলো।বাবাকে সাথে নিয়ে চলে এলাম জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়াপোর্টে।রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর ফ্লাইট।ভিতরের ঢুকার আগে বাবার সাথে কিছুক্ষন কথা হলো ।বাবার চোখের এক কোনে জমেছিল আমার বিদায়ের অশ্রু শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখতে পারেনি গড়িয়ে পড়ল আমার কাধে।কে জানতো ঐ দেখাই হয়তোবা আমার শেষ দেখা-শেষ কথা ।নিজেকে সামলিয়ে ঢুকে গেলাম ইমিগ্রেশন রুমে।যেতে যেতে দেখি বাবা চেয়ে আছেন পলকহীন দৃষ্টিতে।

সিঙ্গাপূর এয়ার লাইনসের সাধারন টিকেট ভাগ্যক্রমে লটাড়ীতে মিলল রাফেলস ক্লাশএকে বারে পাইলটদের সথে সিঙ্গেল সিঙ্গেল সিট ।প্রতিটা সিট জানালার সাথে ইচ্ছে করলেই আকাশের মেঘের খেলার প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টিকে উপভোগ করা যায়,যখন মেঘের উপর দিয়ে বিমানের গতিপথ তখন পূরো আকাশটাকে মনে হয় মেঘের আর এক গুচ্ছ গ্রাম।অনেক টাকা রোজগাড় করব বলে বাবা,মা ভাই বোনকে ছেড়ে প্রবাসে দিন কাটাতে থাকলাম।রেখে এলাম নব বধুকে অশ্রুশিক্ত নয়নে কিন্তু যেই টাকার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার সেই টাকা কিংবা ডলারের নাগাল দুই মাস হয়ে গেলো পাচ্ছিনা।দুই মাস যাবৎ কোন্পানী আমাদের স্কিল ওযার্কারের জন্য ট্রেনিং দিচ্ছে।তিন মাসের মাথায় কিছু টাকা পেলাম।বাবাকে ফোনে বলে দিলাম।বাবা যেন খুসিতে আত্বহারা।সবাইকে বলছে -ছেলে টাকা পাঠিয়েছে আমাদের আর কোন দূঃখ থাকবেনা।কিন্তু বিধি বাম যার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছি সে বাবাকে আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে ঘূরাচ্ছে।এভাবে আরো এক মাস চলে যাচ্ছে, ছেলের হাতের প্রথম রোজগারের টাকা পিতার হাতে পৌছতে।

একদিন এলো কাল বৈশাখী ঝড়……. ফোনে জানতে পরলাম আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবা আর নেই। চলে গেছেন কোন এক অজানা দেশে যেখান থেকে সে এসেছিলেন। ই্ন্নানিল্লাহে অ………

আমার মনে একটা কষ্টের দাগ কেটে গেলো যে

“আমি এমন একজন হতভাগা ছেলে যে কিনা তার প্রথম রোজগাড়ের টাকা বাবার হাতে পৌছাতে পারল না”

 

To be continue….

০ Likes ৩ Comments ০ Share ৭৫৫ Views

Comments (3)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    • - মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

      অনেক ধন্যবাদ।

    - লুৎফুর রহমান পাশা

    স্মৃতি কথা গুলো  একদিন আপনার জীবনে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

    - ফেরদৌসী বেগম ( শিল্পী )

    আপনার জীবনী স্মৃতিচারণে অনেক কিছুই জানা হলো।  ভালো-মন্দ, দুঃখ-আনন্দ, এই সব মিলেই চলে যেতে থাকে মানুষের জীবন। এই ছোট্র জীবনে কত কিছুইনা ঘটে যায়।  বেশ ভালো লাগলো আপনার জীবনী। এমনি করেই চলতে থাকুক, অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

    • - মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)

      শুভেচ্ছা রইল এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

    Load more comments...