আট বছরের একটা বাচ্চাকে বাসায় রেখে বাবা- মা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করেন । বাচ্চাটার দেখা শোনার দায়িত্বে থাকে T - 9 নামের একটা রোবটের । এই T - 9 নামের রোবট বাচ্চার লালন পালন ছাড়াও ঘর সংসারের সব কাজ খুব সুন্দর ভাবে করতে পারে। একদিন এই রোবট ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করে খুব মন দিয়ে রবীন্দ্র সংগীত শুনছিল-আর তখন বাচ্চা টা ঘুম ভেঙ্গে ক্ষুধায় খুব কাঁদছিল। বাচ্চার ভ্যা ভ্যা কান্না শুনে রোবটের খুব রাগ হয়- রোবট রেগে গিয়ে বাচ্চাটাকে ধারালো ছুরি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে- তারপর লাইকা নামের একটা এলসেশিয়ান কুকুরকে খাওয়ায় ।
আসুন আগে জেনে নিই রোবট কি (?) রোবট সাধারণত একটি ইলেক্ট্রো-যান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার কাজকর্ম, অবয়ব ও চলাফেরা দেখে মনে হয় এটি স্বেচ্ছায় কাজ করছে। সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক গল্পকাহিনীতে রোবট বলতে কিন্তু মানুষের মত চলাফেরা করা একট যন্ত্রই বোঝায়। এই যন্ত্র মানুষের কথা শোনে, কলকরাখানায় কাজ করে । সারা বিশ্বে প্রায় লাখ খানেক রোবট কাজ করে, কিন্তু তাদের কেউ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর রোবটের মতো নয়।রোবট মানুষের চেয়ে দ্রুত নাড়াচড়া করতে পারে এবং তারা কখনই একই ধরনের কাজ করতে বিরক্ত বোধ করে না ।অনেক রোবট রোগী অপারেশন করার সময় ডাক্তারকে সাহায্য করে। তারা হাড় জোড়া লাগাতে , চোখের অপারেশন প্রভৃতি জটিল জটিল কাজে সাহায্য করে ।
যাই হোক, বাবা-মা অফিস থেকে ফিরে এসে T - 9 রোবট কে জিজ্ঞেস করে জনি কোথায় ? বাচ্চাটার নাম জনি । রোবট চুপ করে থাকে । বাবা-মা সারা ঘর তন্ন তন্ন করে জনিকে খুঁজে না পেয়ে থানায় ফোন করে। পুলিশ এসে সারা বাড়ি তালাশ করেও কোনো ক্লু সংগ্রহ করতে পারল না । বাবা-মা পাগলের মতন হয়ে যায় । মা টা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায় । মায়ের কান্না দেখে রোবটের খুব কষ্ট হয় ।T - 9 এর পক্ষে একজন মায়ের আহাজারি দেখা সম্ভব নয় ।তাই সে ব্যলকনিতে চুপ করে বসে থাকে । T - 9 সারারাত কাঁদে। কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি আসে না । কাজেই রোবটের দুঃখ কেউ বুঝতে পারে না । আকাশ ফরসা হতে শুরু করলেই T - 9 একটা কঠিন সিদ্দান্ত নেয় ।
আমাদের অনেক কিছু জানতে হবে- বুঝতে হবে। প্রত্যেক ইন্দ্রীয়ের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কাজ।যেমন ধরুন চোখের কাজ হল দেখা, নাকের কাজ গন্ধ অনুভব করা, ত্বকের কাজ স্পর্শ অনুভব করা, জিহব্বার কাজ স্বাদ অনুভব করা, কানের কাজ শোনা।সবচেয়ে গুরত্বপুর্ন অবদান যার সে হল কম্পিউটার প্রকৌশলী যন্ত্র প্রকৌশলী ও তড়িৎ প্রকৌশলী মোটামুটি একটা রোবট তৈরী ঠিকই পারবে কিন্তু সে রোবটের কোন প্রাণ থাকবে না। সে একটা মৃত মানুষ বৈকি আর কিছু নয়। তাকে প্রান দেওয়ার দায়িত্ব কম্পিউটার প্রকৌশলীর। চোখ দিয়ে সে কি দেখবে? সেটা থেকে কি বা বুঝবে? হাত দিয়ে সে কি অনুভব করবে ইত্যাদি সকল প্রকার কাজ করবে একজন দক্ষ কম্পিউটার প্রকৌশলী। রোবটের প্রোগ্রামিং এর জন্য নিউরাল নেটওয়ার্ক খুব জনপ্রিয়।
পরের দিন সকালে থানা থেকে ফোন আসার পর স্বামীটি থানায় যায় । বাচ্চাটির মা'র আধা মরা অবস্থা । T - 9 চা বানিয়ে ভদ্র মহিলাকে দেয় । জনি'র মা চায়ের মগ হাতে নিয়ে কাঁদতে থাকে । T - 9 কঠিন চোখে ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল- তাড়াতাড়ি চা খেয়ে নিন- তারপর আপনার বাচ্চার মতন আপনাকেও কেটে টুকরা টুকরা করে লাইকা কে খাওয়াবো । T - 9 এর এই কথা শুনে জনি'র মা যেন পাথর হয়ে গেল । পরবর্তী পনের মিনিট মধ্যে T - 9 তার সমস্ত কাজ সম্পাদন করে ফেলল । স্বামী ঘরে এসে দেখে তার স্ত্রী নেই । T - 9 কে জিজ্ঞেস করলে সে চুপ করে থাকল । স্বামী ব্যলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো । নিচে তাকিয়ে দেখল T - 9 লাইকা কে কোলে নিয়ে আদর করে দিচ্ছে । স্বামীটির খুব রাগ লাগল । সে অনেকবার T - 9 কে বলেছে- পাশের বাড়ির এই কুকুর যেন তাদের বাসায় না আসে।
মুভিগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় Robot গুলো পৃথিবীর কর্তৃত্ত্ব নিয়ে নিচ্ছে। তারা মানুষকে তাদের চাকরের মত খাটাচ্ছে। এ সকল রোবট গুলোকে দেখতে পুরোটাই মানুষের মত। সাইন্স ফিকশন গুলো যারা পড়েন তারা Robot সম্পর্কে প্রচুর জানার কথা। মনে রাখতে হবে রোবট একটা যন্ত, প্রয়োজন অনুযায়ী যার যে কোন রূপ হতে পারে । যা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় শিল্প কারখানায়, গবেশনায়, বিরক্তি কর আর ঝুকি পূর্ন কাজে।রোবট নিয়ে সবার একটু আগ্রহ থাকার কারনে রয়েছে অনেক সায়েন্স ফিকশন । বেশির ভাগ সায়েন্স ফিকশনেই একটি বহুল ব্যবহৃত চিত্র হচ্ছে রোবটের সাথে মানুষের যুদ্ধ। আইজাক অসিমভের লেখা ‘রান এন্ড রাউন্ড’ গল্পে সবর্প্রথম রোবটিক্স শব্দটি ব্যবহার করেন।
মধ্যরাত। T - 9 কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে বলল- স্যার চা খেয়ে নিন । তারপর আপনাকেও....রোবট কথাটা শেষ করল না । হঠাৎ জনি'র বাবার কপাল ঘামতে লাগল । যেন সে সব কিছু বুঝে ফেলেছে ।সে চিৎকার করে বলছে- T - 9 না, প্লীজ না । কিন্তু T - 9 জাতীয় রোবট গুলো বিগড়ে গেলে কারো কথা শুনে । T - 9 দশ মিনিটের মধ্যে জনি'র বাবাকে টুকরো টুকরো করে ফেলল । তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে ইশারা করতেই লাইকা ছুটে এলো- আজ লাইকা একা আসেনি- তার বন্ধু মাইকা কে সাথে করে নিয়ে এসেছে । টাটকা মানূষের মাংস একা খেয়ে আরাম নেই । কুকুরের মাংস খাওয়ার দৃশ্যটা T - 9 এর কাছে খুব আনন্দময় একটা ব্যাপার ।
রোবটিক্সের তিনটি সূত্র-১/একটি রোবট কখনও মানুষের ক্ষতি করতে আসবে না এবং মানুষকেও তার কোন রকম ক্ষতি করতে দেবে না। ২/ একটি রোবটকে অবশ্যই মানুষের নির্দেশমতো কাজ করতে হবে (যদি প্রথম সূত্রটি কোনভাবে লঙ্ঘিত না হয়।) ৩/ যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র লঙ্ঘিত না হয়, একটি রোবট অবশ্যই তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে যেখানে তার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
খালি বাড়িতে T - 9 এর একা একা ভালো লাগে না । কতক্ষণ আর রবীন্দ্র সংগীত শুনতে ভালো লাগে । T - 9 ঠিক করলো আগামীকাল সে একটা পাহাড়ের উপর উঠে নীচে লাফ দিবে অথবা অন্য কোনো সুখি বাড়িতে কাজ নিবে। সে বাড়ির মানূষ গুলোকেও অবশ্যই টুকরো টুকরো করবে।এবং তার সাথে অবশ্যই লাইকা যাবে, লাইকা মনে হয় একা যাবে না- সাথে মাইকা কে নিতে হবে ।
বাংলাদেশের সাফল্য কামনা করে শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
Comments (1)
১ম
কোন পুরস্কার দিলেন না মাসুদ ভাই
আমি ২য়
মেগা ইভেন্ট দেখি।
গ্রেট ন নাইস। ইনশাল্লাহ আমি যাচ্ছি পিকনিকে