Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Always বাংলা use করুন: ভাষামিশ্রণ সম্পর্কে সহব্লগারদের সুচিন্তিত মতামত

ব্লগে প্রকাশিত একটি লেখায় সহব্লগারদের অংশগ্রহণ আমাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছিল। তাদের মন্তব্য নিয়ে আজকের মন্তব্য সংকলন। লেখার শিরোনাম ছিলো: বাংলা ভাষায় অন্য ভাষায় মিশ্রণ। প্রকাশিত হয়েছিলো যথাক্রমে প্রথম আলো ব্লগ এবং শব্দনীড় ব্লগে। লেখাটির শেষে আমি আরও কিছু দৃষ্টান্ত আহ্বান করেছিলাম, যেন ভাষামিশ্রণের বাস্তবিক কিছু নমুনা সংগ্রহ করা যায়। সহব্লগাররা আমার অনুরোধ রেখেছেন! তাদের মন্তব্যে যেমন পেয়েছি গভীর অন্তর্দৃষ্টি, তেমনই পেয়েছি নিজ ভাষার প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা। এ লেখায় তাদের মতামতগুলো তুলে না ধরলে হয়তো লেখাটি অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।  আমার লেখার প্রতি প্রশংসাসূচক মন্তব্য বা বাক্যাংশগুলো সংগত কারণেই বাদ রেখেছি।

 

ক) ফেরদৌসা: এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কথায় কথায় বলে: কুল, গাই, ওয়াটস আপা। আমি ‘চান্স’পেয়ে বলি: একটু ‘বিজি’আছি, আই এম ব্যাক ইত্যাদি। (প্রথম আলো ব্লগ)

 

খ) লুৎফুন নাহার জেসমিন: কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু-বউ আমাদের বাসায় বেড়াতে এলে দেখলাম বাচ্চাকে ইংরেজি শব্দ শেখানোর জন্য কীভাবে কথা বলছে। আমাদের কাছে তার একটি উক্তি খুব জনপ্রিয় হয়েছিলো: ‘বেবি বেবি, ডারটি!’ আমার মেয়েও মাঝে মাঝে বলে আর হাসে।

 

গ) অনিন্দ্য অন্তর অপু: আমার মনে হয় নিজে সতর্ক হলে আর মাতৃভাষার ওপর মমত্ব থাকলে শুদ্ধ বাংলা চর্চা করা যায়।

 

ঘ) শহীদুল ইসলাম প্রামাণিক: (যথারীতি ছড়ায়) বাংলা ভাষার আন্দোলনে/ ইংলিশ বলে কত, এমন নেতা বাংলাদেশে/ আছে অনেক শত। তাই তো বলি, “বাংলা ভাষায়/ শুদ্ধ বাংলা চাই, বাংলার সাথে ইংলিশ বলা/ ‘লাইক’করি না তাই”।

 

ঙ) মনিরুল ইসলাম (মনির): এটা এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে, যা থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। যেখানে বাংলিশ বলাটাকে আধুনিক-মনা বুঝানো হয়, সেখানে কি করার আছে? এ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় মনে হয় নেই। তবে সবাই যদি যার যার অবস্থান থেকে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করে, তাহলে হয়ত হলেও হতে পারে।

 

চ) মোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা: আরও কিছু উদাহরণ দিচ্ছি। জাস্টিফাই, সবচেয়ে বেটার, প্লাস এর সাথে যোগ করা যায়, আসল ফ্যাক্ট, স্বাভাবিকলি, মন্ত্রী-মিনিস্টার, আপনি তো দারুণ এক পাবলিক! ফাস্টে আমি বলি... ইত্যাদি। যিনি ভালো বাংলা বলতে পারবেন, তিনি অন্য ভাষা সহজেই রপ্ত করতে পারবেন। প্রফেসর সিরাজুল ইসলামকে বাংলার সাথে ইংরেজি বলতে শুনি নি। অথচ তিনি সারাজীবন পড়ালেন ইংরেজি! অবাক লাগে। জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে ভালো করে নিজের ভাষার উপর দখল চাই। চাই বাংলা সংস্কৃতির প্রতি মমতা। নিজের ভাষাকে এড়িয়ে কোন জাতি উন্নতি করেছে কিনা আমার জানা নেই।

 

ছ) মাটির ময়না: ডুড! জোস লিখেছেন। হায় বাঙালি!

 

জ) মুক্তমন৭৫: থ্যাংকস ব্রাদার। ইউ আর রিয়েলি জিনিয়াস। মাইরি কইলাম আপনে একটা চিজ! উই আর লুকিং ফর দ্য শত্রুজ।

 

ঝ) ঘাস ফুল: আপনার লেখাটি পড়ে জীবনের লাইফটাকে বৃথা মনে হলো! প্রতিনিয়ত আমরা নিজের অজান্তেই কতো ইংরেজি হিন্দি শব্দ বাংলা ঢুকিয়ে দিয়ে অনর্গল নির্লজ্জের মতো কথা বলে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে আবার গর্ববোধও করি, যা কি না বেশরমের চূড়ান্ত। এর জন্য শুধু সাধারণ মানুষকে দায়ি করলে ব্যাপারটি আমার কাছে একতরফা মনে হয়। এর জন্য দায়ি অনেকেই। আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের সরকার, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা - কেউ তার দায় এড়াতে পারেন না। অন্যতম উদাহরণ হলো, আমাদের বিচার ব্যবস্থা। গণমাধ্যম বাংলা ভাষার প্রয়োগের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে কোন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে নি। আরও অনেক কারণ আছে। মন্তব্যের ঘরে সব বলা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে টুকটাক হিন্দি বা ইংরেজি বললেও নিজের ভাষার প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা আজন্ম ভালোবাসার মতো অটুট থাকবে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’শুনার সাথে সাথেই এখনও মনের অজান্তে অশ্রু ঝরে।

 

ঞ) নাজমুল হুদা: গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ঢাকা কলেজে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে-নামতে পেন্সিল-দিয়ে-লেখা দেয়ালের এই কথাগুলো নিয়ে আমরা খুব মজা করতাম, "Always বাংলা use করুন"।

 

ট) মুরুব্বী:  আজকের এই অবস্থা বা ভাষার প্রেক্ষাপট অথবা প্রচলিত প্রক্ষেপণ একদিনে তৈরী হয় নি। যা আপনি পোস্টে আলোচনা করেছেন। বাইরের কথা বলবো না, চুপিচুপি বাংলিশ উচ্চারণ আমার ঘরেও বসত নিয়েছে। আজ শুদ্ধ উচ্চারণ যেন বিলাসিতা। পরিচ্ছন্ন বাংলা আজও অনেকের দুর্ভেদ্য। জানি না কবে প্রমিত ভাষা ফিরে আসবে আমাদের জনজীবনে। তবু আশায় বুক বেঁধে রই। কিছুক্ষণ আগে শহীদ বেদী থেকে আমার সন্তানদের নিয়ে রিকশায় ফিরতে গল্পচ্ছলে যখন ‘একুশ’মানে বোঝাচ্ছিলাম, আমাদের বোঝা টেনে-নিয়ে-চলা-রিকশাচালক অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন: এ আমি কী বলি! বাড়ির গেটে নেমে অমিমাংসিত ভাড়া এক কথায় মেটাতে ভদ্রলোক মুগ্ধ চোখে তাকালেন। বললেন, ‘আমি পারি না আমার সন্তানদের এভাবে বোঝাতে।’ (শব্দনীড় ব্লগ)

 

ঠ) নাজমুন নাহার: ভাষামিশ্রণের দৃষ্টান্তগুলো আসলেই মজার। কিন্তু সমস্যা হলো ভাষার এই যে মিশ্রণ - এটা হবে এবং হতে থাকবে। কতজন সতর্ক হতে পারে ভাষার এই ব্যবহারে? যেমন অফিস-আদালতে বাংলা বা ইংরেজি দু’টোই চলে। ইংরেজির ব্যবহার আভিজাত্যের প্রতীক বলে মনে করা হয় অফিসগুলোতে। তাই ইংরেজির ব্যবহার করতেই হবে, এরকম একটা অলিখিত ব্যাপার থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ চিঠিপত্র লেনদেনে বাংলা ব্যবহার করা যায়। করা হচ্ছে না! তবু ভাষায় পরিবর্তন হবেই। ১৮০০ সালের বাংলা অথবা ১৫০০ সালের দিকে বাংলা ভাষার যে অবস্থা ছিল, সে অবস্থা তো নেই এখন আর। এটা হয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সাথে আমাদের মিথষ্ক্রিয়তার ফলে। যেমন ‘টেবিল’এর শুদ্ধ বাংলা হলো ‘মেঝ’, চেয়ার হলো ‘কেদারা’।

এরকম আরও হাজার শব্দ বাংলা ভাষায় আছে, যেগুলো প্রকৃতপক্ষে বাংলা ভাষার শব্দ নয়। কিন্তু আমরা বাংলা ভাষায় ব্যবহার করছি অবলীলায়। তবে ভাষার এই যে মিশ্রণ, এটা সমাজের কিছু মানুষের - সকল মানুষের নয়। যেমন গ্রামবাংলার কোটি কোটি মানুষ এখনও ভাষার এই মেশামেশি বুঝে না বলে আমার ধারণা। কিন্তু ওখানে ভাষা পরিশুদ্ধ নয়। এক্ষেত্রে আশার কথা হলো: বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হচ্ছে, এক্ষেত্রে ব্লগগুলোও ভূমিকা রাখছে।

 

ড) সাঈদ মোহাম্মদ ভাই: লেখাটি ডেফিনিটলি চমৎকার। তবে আমড়া এখন র’এর ওপর ব্রেক মেরে কথা বলি: র হয়ে গেছে ড়। যারা বাংলিশ ভাষাকে একসেপ্ট কড়ছেন না তাড়া ভীষণ অন্যায় কড়ছেন। সবাই ড়াবিশ।

 

ঢ) জুলিয়ান সিদ্দিকী: আমরা দিনরাত নানা সংস্কৃতির চিপাগলি দিয়ে অতিক্রম করি, আমাদের প্রতিটি দিন। এক্ষেত্রে খুব সচেতন না থাকলে মিশ্রণ থেকে বাঁচার উপায় নেই। কিন্তু কথা হলো: আমরা কতক্ষণ সচেতন থাকবো বা আশপাশের লোকজনকে কতটুকু সচেতন রাখতে চেষ্টা করবো।

 

ণ) ফরিদুল আলম সুমন: আমি বিবর্তনে বিশ্বাসী। বিবর্তনের মধ্যেই পৃথিবী টিকে আছে। আমাদের সংস্কৃতি, পোশাক, ভাষা, কৃষ্টিতে মৌলিকত্ব থাকা উচিত। তবে মৌলিকত্ব সবসময় ‘অতীব জরুরি’নয়। যে ভাষায় যত বেশি বিদেশী প্রচলিত শব্দকে ধারণ বা গ্রহণ করা হয়েছে, সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী গ্রহণীয় হয়েছে। অতিমাত্রায় মৌলিকত্ব ধারণ করতে গিয়ে চাইনিজ ভাষা পৃথিবীবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্যতার বিচারে মার খাচ্ছে। এতো মৌলিকত্বে বিশ্বাসী চাইনিজরাও এখন ‘সিমপ্লিফাইড চাইনিজ’নামে আধুনিক, সংক্ষিপ্ত ও সহজ চাইনিজ ভাষার প্রবর্তন করেছে। আমরা বিশুদ্ধ বাংলার চর্চা করবো ঠিকই, তবে সেই সাথে যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিদেশী শব্দকেও ঠাঁই করে দিতে হবে। আমরা ‘কেদারায়’বসতে পারিনি বেশিদিন, ‘চেয়ারে’বসতে হচ্ছে। ‘সন্দেশ’পড়তে পড়তে আমরা কীভাবে যেন ‘পত্রিকা’বা ‘সংবাদপত্র’পড়তে শুরু করেছি বুঝতেই পারিনি। ‘পেয়ালায়’চা খেতে খেতে নিজের অজান্তেই এখন ‘কাপে’চা খাচ্ছি। ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে আমরা যে ‘আভিজাত্য’বোধ করি, সেটা খুব সহজে যাবেনা। তাই কোডমিক্সিং দূর করতে হলে এ ব্যাপারে ব্যাপক গণসচেতনতা দরকার। কোডসুইচিং খুব একটা মন্দ নয়। নিজের ভাষা ছাড়াও অন্য যে কোনো ভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারাটা আমার কাছে স্মার্টনেস-ই মনে হয়। তবে স্থান-কাল-পাত্র তো অবশ্যই বিবেচ্য। বাংলা-হিন্দী-ইংরেজি মিশিয়ে যারা কথা বলেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখা যেতে পারে: ‘আপনি কি উল্লিখিত যে কোনো একটি ভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারেন? যদি না পারেন, তাহলে তো আপনার একূল ওকূল দু’কুলই গেলো।’ 

 

[প্রথম আলো ব্লগে মূল লেখাটি]

০ Likes ৪১ Comments ০ Share ৫৭২ Views

Comments (41)

  • - তাহমিদুর রহমান

    উনি আমার অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দেন নাই। ব্যাপারটা দুঃখজনক। 

    • - রোদেলা

      সব গুলো দিতে পারিনি বলে দুঃখিত। একটা দিচ্ছি -

      আমার প্রথম প্রকাশিত বই-ফাগুনঝড়া রোদ্দুর।

      পন্বচপত্রের উপপাদ্য

      আলোর মিছিলে একটা উপন্যাস আছে-নগ্ন মৃত্তিকা।

      ধন্যবাদ।

       

    - ধ্রুব তারা

    হুম। কবি নিরব।

    • - রোদেলা

    - রুদ্র আমিন

    আগে প্রশ্ন না করে ভুল করেছি মনে হচ্ছে, যাই হোক আজ তো সুযোগ পেয়েছি এখন বলছি...আপনি এতো সুন্দর সুন্দর লিখেন কিভাবে ? আপনার লেখা-লেখির অভ্যাসটা কতদিনের....সংক্ষিপ্তাকারে আপনার স্মরণীয় ঘটনা জানতে চাই....

    • - রোদেলা

      ধন্যবাদ।

      স্মরণীয় ঘটনা আগেই বলেছি।

      লিখা সুন্দর হয় কিনা জানিনা,তবে আমি কঠিন করে কিছু লিখতে পারিনা।

      সবাই পড়ে বুঝলেই আনন্দ পাই।

    • Load more relies...
    Load more comments...