Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

" হযরত ফাতেমা যাহ্‌রা (সঃ আঃ) "

গভীর রাতে তাঁকে দাফন করা হয় । বনী হাশেম ব্যতীত রসুল (সাঃ) পাকের সাহাবীগণের মধ্যে শুধু এই ক'জন জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিলেন আবু জর, আম্মার, সালমান এবং মিকদাদ । মৃত্যুর পূর্বে তিনি একটি কবিতায় দুঃখ করে বলেছিলেন-" আমার উপর এত দুঃখ নেমে এসেছে যে সেগুলো যদি উজ্জ্বল দিনের উপর পতিত হতো তাহলে দিনগুলো রাত্রিতে পরিনত হয়ে যেত ।" নবী পাকের (সাঃ) এই কন্যাটি যে কেমন একজন মহিলা ছিলেন জীবনের শেষ দিনের বিবরণে তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়ে গেলেন । তিনি বাড়ির লোকদের ডেকে বললেন যে তিনি অপেক্ষাকৃত সুস্থ অনুভব করছেন । তাঁর পাঁজর এবং হাড়ের ব্যথাও আগের মতো তীব্র নয় এবং তাঁর জ্বরও নেমে এসেছে । তারপর তিনি তাঁর সন্তান্দে গোসল করাতে আরম্ভ করলেন । তৎক্ষণাৎ মাওলা আলী (আঃ) এবং ফিজ্জা তাঁর সাহায্যার্থে ছুটে এলেন । তিনি তাঁর সন্তানদের ওছল করালেন, পোশাক পরালেন, খাওয়ালেন অতঃপর তাঁর চাচাত বোনের নিকট পাঠালেন । তারপর আলীকে (আঃ) তাঁর পাশে ডেকে বললেন, " আমা প্রিয় স্বামী তুমি অবশ্যই বুঝতে পেরেছ আই কেন এরূপ করলাম। ( এসব) সাধারন বিষয়ে বাড়াবাড়ি দয়া করে ক্ষমা করো । আমার জীবনের শেষ দিনে আমি ওদেরকে সুখী দেখতে চাই । কারন তাঁরা আমার সঙ্গে এবং আমার অসুস্থ থাকাকালে অনেক দুঃখ ভোগ করেছে । হ্যাঁ আলী, তুমি এটা জানো যে, আজ আমার জীবনের শেষ দিন । আমি আজ সুখী এবং দুঃখীও । আমি সুখী এজন্য যে শীঘ্রই আমার দুঃখের অবসান হবে এবং আমার পিতার সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করব । এবগ আমি দুঃখিত যে তোমাকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে । আলী অনুগ্রহ করে আমি যা বলি তা লক্ষ্য করো এবং তোমাকে যা করতে বলি তা করো । আমার পরে তুমি যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করতে পারো তবে অবশ্য আমার চাচাতো বোন ইয়ামামাকে বিয়ে করো এবং হোসাইন তাঁর প্রতি খুব আকৃষ্ট । ফিজ্জা যদি চায় তাকে তোমার সঙ্গে রেখো, সে আমার কাছে একজন সাধারন চাকরানী নয়, আমি তাকে আমার মেয়ের মতো দেখি । আলী রাত্রিতেই আমার দাফন করো এবং আমার প্রতি এত নিষ্ঠুর যারা তারা যেন আমার দাফনে শরীক না হয় । আমার মৃত্যু যেন তোমাকে নিরুৎসাহিত করে না তোলে, তোমার দীর্ঘকাল ধরে ইসলাম এবং মানবতার খেদমত করতে হবে, আমার দুঃখ যেন তোমাকে ব্যথিত না করে । আলী এই প্রতিশ্রুতি আমাকে দাও । হযরত আলী (আঃ) বললেন- হ্যাঁ ফাতেমা, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি । তিনি আবারও বললেন- আলী, আমি জানি তুমি আমার সন্তানদেরকে কত যে স্নেহ করো কিন্তু হোসাইনের প্রতি যত্ন নিও । সে যে আমাকে কত
ভালোবাসে, কত দুঃখের সঙ্গে আমাকে হারাবে তাঁর প্রতি মায়ের মমতা রেখো । আমার অসুস্থ অবস্থায়ও সে আমার বুকের উপর ঘুমাত । সে তা হতে এখনই বঞ্চিত হলো । আলী তাঁর ভাঙ্গা হাত মালিশ করছিলেন । তাঁর তপ্ত অশ্রু ফোঁটায় ফোঁটায় তাঁর হাতের উপর পড়ছিল । তিনি লক্ষ করেলেন ও চোখ তুলে চাইলেন এবং বললেন, ' আলী তুমি কেঁদো না, বাইরের রুক্ষ চেহারার অন্তরালে তুমি যে কতখানি কোমল হৃদয়ের অধিকারী তা আমি জানি । তুমি অত্যাধিক সহ্য করেছ, আরো সহ্য করতে হবে । বিদায় আমার প্রভু, আমার প্রিয় স্বামী বিদায় আলী । আমাকে বিদায় সম্ভাষণ দাও । দুঃখে আলীর (আঃ) কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এসেছে । অশ্রুমিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, বিদায় ফাতেমা । এই শুনে তিনি বললেন, এ সকল দুঃখ-কষ্ট ধৈর্যের সাথে সহ্য করার শক্তি দয়াল রব তোমায় দান করুন । এখন আমার রবের সাথে আমায় একা থাকতে দাও । এই বলে তিনি তাঁর প্রার্থনার কার্পেটের উপর উপস্থিত হলেন এবং আল্লাহ্‌র নিকট সেজদায় পড়ে রইলেন । এর একটু পরেই হযরত আলী (আঃ) যখন ঘরে প্রবেশ করলেন তখন তাকে সেজদায় দেখতে পেলেন । কিন্তু নফস তার পাক পিতার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আল্লাহ্‌র রহমত এবং শান্তির দেশে চলে গেছেন । তিনি যৌবনের প্রারম্ভেই পরলোক গমন করেন ।
যেমন হযরত আলী (আঃ) বলেন, " একটি ফুল কলি অবস্থায় ছিঁড়ে ফেলা হলো । এটি জান্নাত হতে এসেছিল এবং জান্নাতেই চলে গেল । কিন্তু সুবাস রেখে গেল আমার মধ্যে ।" মাওলা আলী (আঃ) নাহাজুল বালাঘার ২০৭ নং খুতবায় স্পষ্ট করে বলেছেন- " হে আল্লাহ্‌র রাসুল, দয়া করে আমার এবং আপনার কন্যার ছালাম গ্রহন করুন । যাকে আপনার সান্নিধ্য থেকে অনতি দূরে দাফন করা হচ্ছে এবং অতি শীঘ্র তিনি আপনার সাথে ইলিত হচ্ছেন । হে নবী মোস্তফা, আপনার প্রিয় কন্যার মৃত্যু আমাকে ধৈর্য এবং সান্ত্বনাহারা করেছে । আমি আমার সমস্ত সংযম হারিয়ে ফেলেছি । হে আলাহর রাসুল, আপনার বিচ্ছেদ ভোগ করার পর আমাকে আবার ধৈর্যের সাথে আকস্মিক এই মহা দুর্ঘটনা সহ্য করতে হবে । আমি আপনাকে আমার নিজ হাতে কবরে স্থাপন করেছিলাম । আমার বুকের উপর বিশ্রাম অবস্থায় আমার গ্রীবা এবং বুকের মধ্যখানে আপনার মস্তক অবস্থিত থাকা অবস্থায় আপনার দেহ হতে নফস বিদায় গ্রহন করেছিল । নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌র জন্য এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী । আপনার কন্যা যাকে আমার কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছিল তা আমার কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হলো । এখন দুঃখ আমার সাথী হয়েছে এবং সুখ আমা হতে বিদায় নিয়েছে । এই দুঃখ এত তীব্র যে, অন্য সকল
দুঃখকে এটি অভিভূত ও গ্রাস করে ফেলে এবং এটি আমাকে বিনিদ্র রজনী এবং নিরানন্দ দিনের মধ্যে ফেলে গেল । যতকাল আল্লাহ আমাকে তাঁর রহমত এবং শান্তির রাজ্যে আমার উভয়ের সঙ্গে মিলিত না করেন এখন হতে ততকাল আমার জীবন বিরামহীন একটি হৃদয়- বেদনায় পরিনত হলো । হে আল্লাহ্‌র রাসুল, আপনার সাহাবীগণ আপনার কন্যার প্রতি কি আচরন করেছে এবং কিরূপ দুর্ব্যবহার করেছে তা তিনিই বলবেন । আপনার পরলোক গমনের পর অল্পকালের মধ্যেই তাঁর উপর যা কিছু ঘটেছে তার বিস্তারিত বিষয়াদি তাকেই জিজ্ঞেস করবেন । আপনার নিকট হতে এই ব্যবধান এত অল্পকালের যে লোকেরা এখনো আপনাকে স্বরন করে এবং আপনার বিষয় বলাবলি করে । দয়া করে আমার বিদায় সম্ভাষণ ও ছালাম আপনারা উভয়ে গ্রহন করুন । এই বিদায় সম্ভাষণ ও ছালাম একটি সরল হৃদয়ের ইচ্ছা বা উৎসর্গ । সে হৃদয় আপনাদের কোমল স্নেহের স্মৃতি তার কবরের দিকে সানন্দে বহন করবে । হে আল্লাহ্‌র মনোনীত নবী কন্যার বিদায় । তুমি শান্তিতে বিশ্রাম করো । যে শান্তি হতে লোকেরা ইহজগতে তোমাকে বঞ্চিত করেছে । তোমার কবর ছেড়ে আমার স্বস্থানে যাওয়া দারা এটা বুঝায় না এ আমি তোমার সঙ্গলাভের দ্বারা শ্রান্ত হয়েছি । আহা যদি
আমি আজীবন তোমার সঙ্গলাভ করতাম এই আমার আশা । যারা দুঃখের সাথে ধৈর্য ধারন করে তাদের জন্য আল্লাহ পুরষ্কার সংরক্ষিত রেখেছেন । এই বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই যার কারণে আমি তোমার কবরের উপর স্থায়ী একটি বাসস্থান তৈরী করে থাকব । বিদায় ! তোমার থাকুক আল্লাহ্‌র শান্তি ও আশীর্বাদ । রাসুল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর আহলে বায়াতে রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর রাজশক্তি কর্তৃক এত অত্যাচারের পাহাড় নেমে আসে এবং তা সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা যাহারা সর্বক্ষণ ক্রন্দন ও পিতার উদ্দেশ্যে ফরিয়াদ করতেন । লোকেরা মাওলা আলীর (আঃ) কাছে অভিযোগ করে এবং হযরত আলী (আঃ) জান্নাতুল বাক্বীতে একটি ছোট ঘর তৈরী করে দেন, যেখানে গিয়ে মা ফাতেমা রোজ বসে তাঁর বাবাকে স্বরন করে কাঁদতেন ( রাসুল (সাঃ) এর ঐ সময়কার উম্মতেরা হযরত ফাতেমা যাহারা (সাঃ আঃ) কে পিতার শোকে কান্না করার শব্দ কেও সহ্য করতে পারতেন না এখানেও উনাদের আপত্তি অভিযোগ ছিলো, রাসুল (সঃ) কন্যা কে আরো অনেক ভাবে কষ্ট দিতো ঐ সময়ের মুসলমানেরা, মন খুলে পিতা জন্য কাঁদবে কিন্তু সেটাও করতে দিতো না বরং অভিযোগ করতো তাদের ডিস্টার্ব হয় বলে ) ।
এতাই ইতিহাসে 'বাইতুল হুজন' বলে প্রসিদ্ধ, অর্থাৎ শোক এবং ক্রন্দন করার ঘর বা শোকের ঘর নামে পরিচিত । চলবে... পোস্টঃ ফিদা, সুত্রঃ রেজা মাহ্‌বুব চিশতী সাহেব এর বই থেকে ।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৫৩৮ Views

Comments (2)

  • - আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

    দীর্ঘ নিবন্ধটি যথাসম্ভব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। আপনার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করার অবকাশ নাই। আমাদের দেশ ও সমাজব্যবস্থায় ঘুন ধরে এখন ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয়েছে। জানি না ভবিষ্যতে আমাদের কপালে কী আছে?

    ধন্যবাদ, ভাই রাজু আহমেদ।

    • - রাজু আহমেদ

      কালকে আপনার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম । কিন্তু সাইটের সমস্যার কারনে দিতে পারি নি । আমাদের ভবিষ্যত হয়ত খুব ভাল না ।

    - মো: মালেক জোমাদ্দার

    আপনি নিয়মিত লেখেন এবং খুবই ভাল লেখেন।শুভ কামনা রইল। 

    ভাই, কবিতার লিংক গুলো ক্লিক করলে খুশি হব। ধন্যবাদ।

    http://www.nokkhotro.com/post/139374-449753-12da71-545186-.10258-276

    http://www.nokkhotro.com/post/139420-434653-19deba-943113-.82304-698http://www.nokkhotro.com/post/139489-659453-246ed2-6c8416-.16480-541