Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

~ রয়াল অ্যালবার্ট হল তখন যেন এই গায়কীর আবেগে জর্জরিত ~

এডেলে লরি ব্লু অ্যাডকিনস ( ১৯৮৮ , ৫ মে ) ।

ব্রিটিশ গায়কী , লেখক এডেলে লরি ব্লু অ্যাডকিনস, এডেলে নামেই সর্বোত্ত পরিচিত । । বহু বাদ্যযন্ত্রেও তার পারদর্শিতা পরিলক্ষিত ।

২০০৬ সালে এডেলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাইস্পেসে এই ব্রিটিশ গায়কীর একটি ডেমো রেকর্ডেড গান শেয়ার করে । তার পরপরই এক্স এল রেকর্ডিং থেকে এডেলের কাছে তার প্রথম রেকর্ডিং এর অফার আসে । পরবর্তী বছরগুলোতে এই গায়কীর আর পেছনে তাকানোর প্রয়োজন পরে নি ।

এক্স এল রেকর্ডিং থেকে যাত্রা শুরু এই গায়কী পরবর্তী বছরেই " ব্রিটস অ্যাওয়ার্ড " পান এবং ২০০৮ সালে " বিবিসি সাউন্ড অফ ২০০৮ " থেকে " ক্রিটিক চয়েস অ্যাওয়ার্ড " লাভ করেন ।

 

আমি তখন ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারের পড়ি । থার্ড সেমিস্টারের শেষ দিকটায় । অক্টোবর মাস । সম্ভবত পৌষ মাস চলে । আমাদের ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে, একটা রেসিডেন্টসিয়াল সেমিস্টার করতে হয় প্রত্যেকটা স্টুডেন্টদেরই । তো আমি তখন ঐ টার্কে, মানে রেসিডেন্টসিয়াল সেমিস্টার করতেছি । শীত তখনও ঠিক মত গায়ে গতরে লাগে নাই, তাই ভোরবেলায় হাঁটতে বের হতাম প্রায়ই ।তো হাঁটার সঙ্গী ছিল আমার দুই বন্ধু । একজন মাঝে মাঝে আসত । আর একজনকে প্রায় সময়ই দেখা যেত না । তো যে প্রায় সময়ই আসত এই গল্প তাকে ঘিরে না বরং অন্যজনকে নিয়ে । সে আসত না কারণ সে ঘুম থেকে উঠতে পারতো না । আমরাও নাছোড়বান্দা কম ছিলাম না । আমার ঐ বন্ধুটি থাকত নিকুঞ্জ ডর্মে । আর আমি ধানসিঁড়ি । এইটা কিছুটা পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের হলগুলার মত । তবে পরিবেশ ভিন্ন । তো যাই হোক, ঐ বন্ধু যেই দিন আসত না, আমরা দুই বন্ধু মিলে নিকুঞ্জ ডর্মে যেতাম আমার ঐ বন্ধুটাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য যদিও প্রায় সময়ই ব্যর্থ হতাম । যাই হোক , একদিন এরকম হাঁটতে বের হইছি কিন্তু ও মানে ঐ বন্ধুটা তখনও আসে নাই । নিকুঞ্জ ডর্মে গিয়ে দেখি ও ওর বেডে নাই । কাউকে জিজ্ঞেস করেও ঐ বন্ধুর কোন হদিস পেলাম না । খুঁজতে খুঁজতে হটাত খেয়াল হল, মাঠের শেষ কিনারায় , কে জানি শুয়ে আছে । এই মাঠটা ছিল আমাদের দুই ডর্মের প্রায় মাঝখানে । তো আমাদের দুই জনের মাথায়ও আসল যে , ঐ শায়িত ব্যক্তিটি আমাদের ঐ বন্ধুটি ছাড়া আর কেউ নয় । দৌড়ে গেলাম মাঠের কিনারায় । গিয়ে দেখি আমাদের বন্ধুবর মোবাইলে গান শুনতেছেন । কান থেকে হেডফোন কেড়ে নিতেই শুনলাম এক মহিলা বেশ দরদ দিয়ে গান চাইতেছেন । এতই দরদ, মনে হল যেন তিনি আমার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে তার দুঃখের কথা বলতেছেন ।

আমিঃ কিরে , সকালে তোরে ঘুম থিকা উঠানো যায় না , আর তুই কিনা এইখানে শুইয়া গান শুনতেছিস । তাও গান না যেন মহিলা প্রায় কানতেছে, ওল ওভার দা ফোন ...।।

ঐ বন্ধুঃ দোস্ত, আমারে পেরা দিস না । গতকাল তন্বীর সাথে ঝগড়া হইছে ।

আমিঃ ও, তো রাতে ঝগড়া করছস ভালো কথা, এখন তো তোর ঘুমানোর কথা । এইখানে কি, তাও সাত সকালে কান্নার আওয়াজের সাথে ...।।

ঐ বন্ধুঃ কানতেছে না , এই মহিলা একবার ছেঁকা খাইছে বুঝছস । তো ছেঁকা খাওয়ার পর থিকা এত সুন্দর গান গাওয়া শুরু করছে যে অনেক গুলা অ্যাওয়ার্ড ও পাইয়া গেছে এতদিনে ।

আমিঃ আমার তো মনে হয় তারে করুণা কইরা অ্যাওয়ার্ড দিছে । কি করব, এত কান্নাকাটি তো থামাইতে হইবো নাকি ।

ঐ বন্ধুঃ রুমে গিয়া ইউটিউবে সার্চ দে এডেলে লেইখা । দেখবি রয়াল অ্যালবার্ট হলের একটা ভিডিও আসবে নিচে । বাইশ মিনিটের মত । গিয়া শোন , তারপর কমেন্ট করিস । যাহ !! এখন পেরা দিস না ।

 

তাই আমরা আমাদের ঐ বন্ধুর আর বিরাগভাজন হতে না চেয়ে ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা ধরলাম ।আমি, পরে সকালের নাস্তা সেরে ভাবলাম ইউটিউবে ঐ গায়িকারে একটু চেক আউট কইরা আসি । তো ঐ বন্ধুর কথা মত, রয়াল অ্যালবার্ট হলের ভিডিওটাতে ক্লিক করলাম ।আমার এখনও মনে আছে যে গান শুরু হবার এক মিনিটের মাথায় আমার একটা কল আসছিলো । যতদূর মনে পরে আমার ডর্ম টিউটরের । ফোনটা রিসিভ করলাম না । গান তখনও চলতেছে ।

দুই মিনটি তেতাল্লিশ সেকেন্ডে ঐ গায়কী রয়াল অ্যালবার্ট হলের দর্শকদের যখন তার গানটি সবাইকে তার সাথে গাইতে বলল তখন দেখলাম এবং সাথে শুনলামও । পুরা রয়াল অ্যালবার্ট হলের দর্শকরা যেন জাতীয় সঙ্গীতের মতন তাদের কণ্ঠধ্বনিতে এই ব্রিটিশ গায়কীর গানের লাইন সশব্দে গাইতেছেন । এই এক দৃশ্যকে নিয়েই হয়ত এই গায়কী সারাজীবন কাটাইয়া দিতে পারবেন । তারপর দেখলাম দর্শকদের মধ্যে এক দম্পতি আবেগে চুমু খাচ্ছেন ।

 

চার মিনিট পঞ্চাশ সেকেন্ডে এই গায়কীর গান শেষ হওয়ার পর, পুরো রয়াল অ্যালবার্ট হল তখন যেন এই গায়কীর আবেগে জর্জরিত । কেউ হাততালি দিচ্ছে , কেউবা আনন্দে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন । চার মিনিট উনষাট সেকেন্ডে আস্তে আস্তে এক এক করে সব দর্শক দাঁড়িয়ে সম্মান দিলো এই ব্রিটিশ গায়কীকে । কেউ হয়ত তখনও কাঁদছে । মজার ব্যাপার হল, তখন এই ব্রিটিশ গায়কীও তার আবেগ ধরে রাখতে পারেন নি , বিধায় তাকে দেখলাম খুব কষ্ট করে দর্শককে ধন্যবাদ দিতে । পুরো এক মিনিট এবং কয়েক সেকেন্ড, শুধু দর্শকদের হাততালি আর চিৎকারে, রয়াল অ্যালবার্ট হলের পুরোটা তখন প্রকম্পিত ।

 

আমি তারপর আরো অনেক গান শুনেছি এই গায়কীর । কিন্ত, খুব কম আর্টিস্ট হয়ত এত ভালবাসা নিয়ে বেচে আছেন এই পৃথিবীতে । পরিশেষে বলতে চাই, গান যদি কারো গাইতে ইচ্ছা হয় তাহলে দরদ দিয়ে গাওয়া উচিত । কারো গলার কণ্ঠ যতই খারাপ হোক না কেন, গান গাইলে দরদ দিয়েই গান গাওয়া উচিত । আর এইক্ষেত্রে এডেলে দুইটি গুনেরই অধিকারী । স্যালুট এডেলে ফর ইউর অল-মোস্ট ক্রাইং ভয়েস । অ্যাট লিস্ট, ইট ইজ টু মি ইন মাই ভিউ ।

 

ভিডিও লিংকঃ রয়াল অ্যালবার্ট হল ( ২০১১ ) { সাম ওয়ান লাইক ইউ }

 

০ Likes ১৩ Comments ০ Share ৪৪৫ Views

Comments (13)

  • - তাহমিদুর রহমান

    কষ্ট লাগছে রে ভাই হেরে যাওয়ায় 

    • - সাজিদুর রহমান খান

      তা তো অবশ্যই ।