রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অন্যায়-অবিচার বিরুদ্ধে এবং জন মানুষের সমতার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত মানুষের এই সংগ্রামী আন্দোলনকে আজ বিশ্ব-জনতা অভিবাদন জানায়।
মঙ্গলবার সকালে পুলিশ যুকোটি পার্ক নিস্তব্ধ করে দিলেও সংগ্রামী মানুষ আজকে আবার দলে দলে ছুটে আসছে।একটা ব্যাপার পুলিশের জানা দরকার এই আন্দোলন , শাসন ব্যবস্থা দখল করার জন্য নয়। আমরা আমাদের অধিকার ও ন্যায়বিচার এর জন্য সংগ্রাম করছি।আমাদের এই ন্যায়বিচারের দাবি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয় বরঞ্চ সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য ।
১৭ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই বিপ্লবী আন্দোলনে আপনারা একটি নতুন কল্পনা ও একটি নব্য রাজনৈতিক ভাষা অর্জন করেছেন ।আপনারাপ্রচলিত গঠনতন্ত্রের ভেতরে থেকেও এক নতুন অধিকার আদায়ের স্বপ্ন দেখিয়েছেন , যেই গঠনতন্ত্র আপনাদেরকে খেলার পুতুল বানিয়ে নির্বোধ ভোগবাদীর সমীকরণ দেখিয়েছিল শুধু আনন্দ ও ভোগের স্বপ্নবিলাস দ্বারা।
একজন লেখক হিসাবে, এই অপরিমেয় অর্জনের জন্য আপনাদেরকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব তার কোন ভাষা নেই।
আমারা এখানে ন্যায়বিচারের কথা বলতে এসেছি।আজকে আমরা যখন বলছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইরাক, এবং আফগানিস্তানে যুদ্ধের রত চালাচ্ছে, আমেরিকার ড্রোন দ্বারা পাকিস্তানের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে,দশ হাজারেরও অধিক সৈন্যদল আফ্রিকার ভিতর প্রবেশ করছে,যখন আমাদের কোটি কোটি টাকা ঢেলেও ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রশাসনিক অধিকার-ভোগে ব্যয় করা হচ্ছে,তখনও এই সাম্রাজ্যবাদ কিনা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থনীতির ব্যাপক মন্দার পর থেকেই অস্ত্রের উৎপাদন এবং যুদ্ধের বাণিজ্যিকীকরণ প্রথা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে এক নতুন রূপ দিয়েছে।এই কিছুদিন আগেই রাষ্ট্রপতি ওবামার অধীনে সৌদি আরবের সাথে অস্ত্র বিষয়ক ৬০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই আশায় যাতে যুক্ত আরব-আমিরাতে হাজার-খানেক দুর্ভেদ্য বোমা বিক্রি করা যায়। তাঁরা পূর্বেই আমার দেশ ভারতে ৫ বিলিয়ন ডলারে কয়েকটি জঙ্গি-বিমান বিক্রি করেছে, যেই দেশের গরীব মানুষের সংখ্যা সমগ্র আফ্রিকার গরীব দেশগুলার চেয়েও বেশী।হিরোশিমা-নাগাসাকি থেকে শুরু করে ভিয়েতনামের ধ্বংসযজ্ঞ,কোরিয়া কিংবা লাতিন আমেরিকা, এই সকল যুদ্ধেই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে শুধুমাত্র “ আমেরিকান জীবন ধারা ” নিশ্চিতকরণের জন্য।
“আমেরিকান জীবন ধারা”, যেই আদর্শ সৃষ্টি করা হয়েছিল বিশ্বকে উচ্চাশা দেখানোর জন্য, আজ সেই আদর্শে-ই ৪০০ জন মানুষের সম্পদের পরিমাণ সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের সমপরিমাণ করেছে । আজ এই আদর্শ-ই অনেক নাগরিকের ঘর ও জীবিকা কেঁড়ে নিয়েছে , যেখানে সরকার বিভিন্ন ব্যাংক ও American International Group(AIG) এর মতন কর্পোরেট সংস্থাগুলোর দুর্নীতি ঢাকবার জন্য ১৮২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ।
ভারত সরকার তো পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক-অর্থনৈতিক পন্থার পূজা করে।তারই রেশ ধরে আজ বিশ বছর যাবত মুক্ত-অর্থনীতির বাজারে ভারতের ১০০ জনের সম্পত্তির পরিমাণ সম্পূর্ণ ভারতের মাথাপিছু আয়ের এক-চতুর্থাংশ, যেখানে ভারতের ৮০% জনগোষ্ঠীর নিত্য দিনের উপার্জন ৫০ পয়সার ও কম । যেখানে ২৫০,০০০ কৃষক ক্ষুদ্র-ঋণের মরণ-ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যা করেছে।আমরা কিনা এই অবস্থাকেই উন্নতি বলে মনে করছি এবং বিশ্বের নিকট নিজেদেরকে শক্তিশালী দেশ হিসাবে দাবি করছি। আর উচ্চকণ্ঠে বলছি দেখ , আমরাও আপনাদের মত পারদর্শী ।আমাদেরও পারমাণবিক বোমা আছে এবং আমরাও অনৈতিক অসাম্য রক্ষা করি।
সু-সংবাদের বিষয় হচ্ছে জনগণ এইসব ব্যাপারকে আর মেনে নিতে পারছে না এবং তারা এইসব আর সহ্য করবেনা । এই সংগ্রামী আন্দোলনের সাথে নানা ধরণের আন্দোলনও যুক্ত হয়েছে যেখানে সবচেয়ে গরীব দেশের মানুষগুলোও এইসব ধনী কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সস্তা চালের বিরুদ্ধে সোচ্চারিত কণ্ঠে আন্দোলনকে সম্মুখে ধাবিত করেছে । আমাদের মত কিছু মানুষ একদা স্বপ্ন দেখেছিল যে , একদিন হয়ত আমেরিকান নাগরিকরাও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে । আজ যখন সেই স্বপ্নের আন্দোলন বাস্তবায়িত হয়েছে , তখন এই আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট বিশালতার বহিঃপ্রকাশ কিভাবে করব তা আমার জানা নেই ।
তারা(ধনি ১% জনগোষ্ঠী) বলে তাদের কোন চাহিদা নেই। তারা হয়ত জানে না এই সংগ্রামী জনগণের ক্রোধ-ই তাদের নিঃশেষ করার জন্য যথেষ্ট । যুদ্ধ-পূর্ববর্তী কিছু দাবি আমি আপনাদের নিকট পেশ করলাম যা আমাদের সকলেরই আলোচ্যের বিষয় –
প্রথমত আমরা এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ সিস্টেম যেখানে কেবল অসমতা সৃষ্টি হয় তার সম্পূর্ণ ইতি টানব । আমরা কুইক রেন্টাল-কুইক মানি মেকার ও তাদের পরিচালিত সংস্থাগুলার দুর্নীতি বন্ধ করে দিব ।
তাই আমাদের দাবি:
১) ব্যবসার মধ্যে ক্রস-মালিকানা প্রথা বন্ধ করতে হবে। যেমন, ধরেন অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলা টিভি ষ্টেশন চালাতে পারবেনা ; মাইনিং সংস্থা কোন প্রকার সংবাদ সংস্থা চালাতে পারবেনা ; ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা জন-স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোন প্রকার তহবিল গঠন করতে পারবেনা ।
২)প্রাকৃতিক সম্পদের এবং অবকাঠামোগত ব্যবস্থাযেমন: পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং শিক্ষা ইত্যাদিতে ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ/মালিকানাধীন এর আওতায় আনা যাবে না ।
৩) প্রত্যেকটি মানুষের বাসস্থান , শিক্ষা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।
এই লড়াই আমাদের চেতনাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলেছে । পুঁজিবাদ তার অগ্রযাত্রার পথে, ন্যায়বিচার এর ধারণাকে খাটো করে শুধু “ মানবাধিকার ” পর্যন্তই সীমাবদ্ধ করেছে । আর মানব জাতির সমতার স্বপ্নকে “ স্যাক্রিলিজিয়াসে (যা আল্লাহ্ কিংবা কোন পবিত্র বস্তু বিরোধী ) ” মতবাদে পরিণত করেছে ।আমরা রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র মেরামত করার উদ্দেশ্যে আন্দোলন করছি যা পূর্বেরটার সাথে প্রতিস্থাপিত হওয়া দরকার ।
সালাম এবং জিন্দাবাদ।
বক্তব্যঃ অরুন্ধতী রয়
স্থান ও বিষয়ঃ ওয়াশিংটনের পিপলস ইউনিভার্সিটিতে অরুন্ধতী রয় এর ওকুপাই ওয়াল ষ্ট্রীট আন্দোলন সম্পর্কিত বক্তব্য ।
অনুবাদঃ জাওয়াদ আহমেদ অর্ক
Comments (14)
কেউ না বুঝুক তুই তো বুঝিস
আমি কি আর ভিন্ন
এই চেয়ে দ্যাখ অশ্রু আমার
তোর চেতনার চিহ্ন।
শুভেচ্ছা শাহিদুল ভাই! সুন্দর প্রেমময় ছড়া লিখেছেন। ভালো লেগেছে।
আশা করছি ভালো আছেন। শুভেচ্ছা নিরন্তর জানবেন
নির্বাচনের দায়িত্বে বেশ হিমশিম খাচ্ছি। তাই বেশি সময় দিতে পারছি না। আশা করি দ্রুতই মুক্ত হতে পারব। আপনার জন্যও শুভকামনা রইল। মূলত তেমন বিষয় না থাকায় একটা কিছু লিখে পোস্ট দেওয়া আর কি।
খুব খুব ভালো লাগলো লেখাটি...
সালাম ও শুভকামনা জানবেন, শাহিদুল ভাই!!!
মাসুম ভাই, ওয়াআলাইকুম আসসালাম। ভালো থাকবেন। শুভকামনা সতত।
সা্লাম
শ্রদ্ধা জানবেন।
এ তো দেখছি প্রেম করে শহিদ হওয়ার অবস্থা!
শব্দটা ব্যবহার করলাম যাতে মনে থাকে উস্তাদ।