Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মাঈনউদ্দিন মইনুল

১০ বছর আগে লিখেছেন

সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতা ২০১৪: একটি পর্যবেক্ষণ

 

নক্ষত্র ব্লগ আয়োজিত সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার সর্বশেষ পুরস্কার বিতরণীতে আমন্ত্রিত হয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো নক্ষত্র ব্লগে গেলাম এবং অনেক মজা করে আসলাম। শেষ দিনের বইমেলায় যাবো বলে আগে থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির শুক্রবারটি সকল কর্মসূচি থেকে মুক্ত রেখেছিলাম। সময়টি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এক লেখক বন্ধুকে নিয়ে রওনা হয়ে পৌঁছে গেলাম যথাসময়ে। পেয়ে গেলাম কবি চারুমান্নান, গীতিকার নাসির আহমেদ কাবুল, গুণী ব্লগার সুমন আহমেদসহ অনেক পরিচিত মুখ। তাছাড়াও ব্লগারদের অধিকাংশই পরিচিত হওয়ায় আলাপ জমাতে দেরি হয় নি। তাই ৩:৩০টার অনুষ্ঠান ৪:৩০টায় শুরু হওয়াতেও বিরক্তি লাগে নি, বরং আড্ডা দেবার জন্য অনেক সময় পেয়েছি।

 

সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার বিষয়টি শুরু থেকেই আমার কাছে ভয়ংকর লেগেছে। একটি দুঃসাহসী উদ্যোগ। এরকম যে কোন প্রতিযোগিতাই আয়োজন করা কঠিন, মূল্যায়ন করে শ্রেষ্ঠ লেখাটি বের করে আনা আরও কঠিন। সবচেয়ে কঠিন হলো সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেখান থেকে কৃতীত্ব নিয়ে বের হয়ে আসা। সাহিত্যের ছাত্র হবার সুবাদে বিষয়টিকে আরও কঠিন মনে হয় আমার কাছে। বিভিন্ন ধরণের লেখাকে একটি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি দিয়ে মাপা যেমন কঠিন, তেমনই কঠিন এই সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করা। এসব বিষয়কে বিবেচনা করে অনেক ব্লগসাইট ওদিকে পা মাড়ায় না। তবু নবীন একটি ব্লগে লেখক-পাঠকের সমাবেশ ঘটিয়ে পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের জন্য এরকম একটি প্রতিযোগিতার খুব প্রয়োজন হয়েছিলো। অংশগ্রহণের মাত্রা এবং এবং নতুন লেখার সংখ্যা দেখে আমার মতো যে কেউ বিশ্বাস করেছেন যে, আয়োজক এবং প্রতিযোগী সকলেই এবিষয়টি মেনে নিয়েই মাঠে নেমেছেন। এজন্য আমি লেখায় এবং গতকালের বক্তৃতায় একই ভাষায় উভয়কে কৃতজ্ঞতা এবং অভিনন্দন জানিয়েছি। একটি প্রতিযোগিতা কখনও উভয়পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এরকমভাবে শেষ হতে পারতো না। ফল দেখেই বুঝতে পারা যায় এখানে আন্তরিকতা ছিলো উভয় পক্ষ থেকেই। সবমিলিয়ে নক্ষত্র ব্লগ সফলভাবে শেষ করতে পেরেছে কঠিন কর্মটি।

 

পুরস্কার বিতরণীপর্বের বক্তরা:

সাধারণভাবে সকলকেই আনন্দিত এবং তৃপ্ত দেখা গেছে। অতিথিদের মধ্যে গীতিকার এবং জলছবি বাতায়নের সম্পাদক নাসির আহমেদ কাবুল ‘নক্ষত্র’ নামটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বাংলা বানান এবং বচনের পুনরাবৃত্তি নিয়ে সুন্দর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যেমন: সকল লেখকেরা। লেখার পর এর ভাষাগত শুদ্ধতার দিকটি যথাযথভাবে যাচাই করেই প্রকাশ করা উচিত। প্রথম আলো ব্লগের প্রাক্তন সঞ্চালক সালাউদ্দিন শুভ্র ব্লগ সঞ্চালনার বিভিন্ন চ্যালেন্জ নিয়ে আলোকপাত করেন। এখানে নক্ষত্র ব্লগের পাশা জানিয়ে দেন যে, নক্ষত্র একটি ‘নো-মডারেশন’ ব্লগ সাইট এবং এখানে সঞ্চালক কারও ব্যক্তিগত এলাকায় প্রবেশই করতে পারেন না। এপর্যায়ে সঞ্চালক বনাম ব্লগারদের চিরাচরিত বন্ধুত্বপূর্ণ (?) সম্পর্কটি নিয়ে সবাই একটু হাসার সুযোগ পায়।

দেশের নিবন্ধিত গণমাধ্যম বা বিশেষভাবে আনুষ্ঠানিক পরিস্থিতি ছাড়া ‘তথাকথিত’ মডারেশন কেবলই হাসির খোরক হয়। হাস্যকর এবং অপ্রয়োজনীয় প্রমাণিত হবার আগেই নক্ষত্র ব্লগ একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্লগ হলো ভাব প্রকাশের জন্য একটি খসড়া মাধ্যম। এখানে আবার যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন যাদের আছে, তাদেরকে পাবলিক ব্লগ না খুললেই চলে। ব্লগাররাই ব্লগের শৃঙ্খলা রক্ষা করবে - এটি কর্তৃপক্ষের একার কাজ নয়। ভাবপ্রকাশের ক্ষেত্রে কোন ধরণের মডারেশন এযুগের ব্লগাররা মেনে নেবে না।

যা হোক, পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে সুমন আহমেদ এবং কে এম রাকিব খুব সুন্দরভাবে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। আয়োজন প্রক্রিয়ার নানাদিক সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক মনোভাব ফুটে ওঠে। আমি ঠিক জানি না, যারা পুরস্কৃত হয় নি, তাদের কী অভিমত। তাদের কয়েকজনকে এই আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো যেতো। এটি তো সৃজনশীল মানুষদের ক্ষেত্র, মল্লযুদ্ধে হেরে যাওয়া নয়। তাদের অভিমত থেকে আরও বেশি নির্দেশনা পাওয়া যেতো। নক্ষত্রকে আমি এতোটা উদার মনে না করলে এভাবে সম্পৃক্ত হতাম না। প্রবীণ ব্লগার শাহ আজিজ তার বক্তৃতায় ব্লগারদেরকে আন্তরিকভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তার অংশটি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক ছিল।

 

আমার চোখে নক্ষত্র ব্লগের সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতা ২০১৪:

১. একটি সফল আয়োজন: বিভিন্ন দেশে অবস্থিত প্রতিযোগী এবং বিচারকদের নিয়ে এমন একটি কর্মসূচি সম্পন্ন করা সহজ কাজ নয়। আয়োজনের অভিজ্ঞতা না থাকলে, এককভাবে কোন ব্যক্তি এই কর্মযজ্ঞের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারবেন না। চারটি পর্বের সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে নক্ষত্র ব্লগ ইতোমধ্যেই অনেক এগিয়ে গেছে। 

২. অভিযোগ থাকতে পারে: তারপরও এখানে হয়ত অবিচার বা অবমূল্যায়িত হবার ‍দৃষ্টান্ত থাকতে পারে। থাকতে পারে বঞ্চিত হবার অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতা হবে, শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হবে অথচ সেখানে কোন অভিযোগ থাকবে না, তা হয় না। এখানে আয়োজকদের কী করণীয় ছিলো আশা করছি তারা সেটি বুঝতে চেষ্টা করবেন।

৩. নির্বাচন প্রক্রিয়া: ভোটাভুটি করে শ্রেষ্ঠ লেখক বের করার পক্ষে আমি কখনও ছিলাম না। সাহিত্যের মূল্যায়ন আর জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এক নয়। বিভিন্ন ধরণের (category/genre) লেখার জন্য সেবিষয়ে অভিজ্ঞ একজন বিচারক থাকা চাই। তাই অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন লেখাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে গ্রেডিং করা হবে, সে বিষয়ে বিচারক পর্যায়ে একমত হয়েই প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত।

৪. প্রক্রিয়া এবং গ্রহণযোগ্যতা: অনেক ভালো লেখক বা ব্লগার এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আগ্রহ পান নি। এর পেছনে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। তবে আয়োজকদের কোন ত্রুটি আছে কিনা, সেটি আয়োজকদেরকেই বের করতে হবে। এবিষয়ে বলে রাখি, প্রতিযোগিতার যাবতীয় কর্মসূচিটি কীভাবে শুরু এবং শেষ হবে, এবিষয়ে সুস্পষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। এটি হলো নিয়মের কথা। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া যা-ই হোক, গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে বিচারকেরা অনেক শ্রম এবং যথেষ্ট ঝগড়াঝাটি (যা দরকার আরকি!) করেছেন। আন্তরিকতায় ত্রুটি ছিলো না। আমি এর নিরব সাক্ষী।

৫. মৌলিক লেখা হলেই সেটি প্রতিযোগিতায় বিবেচনা করা উচিত: লেখা বা প্রার্থী বাছাইয়ে যথাযথ উদারতা দেখানো হয় নি। কোন প্রতিযোগীর একটি মৌলিক লেখা কোন প্রিন্ট মাধ্যমে প্রকাশ না পেলে এবং একই রকমের প্রতিযোগিতায় সেটি না দেওয়া হলে, তার সে লেখাটিকে প্রতিযোগিতায় বিবেচনা করা যায়। মৌলিক মানে হলো, বিষয়ে এবং ভাষায় লেখাটি আর কেউ লেখে নি। মৌলিক মানে ‘কখনও প্রকাশিত হয় নি’, তা কিন্তু নয়!

৬. প্রত্যাশিত/গতানুগতিক সমস্যাগুলো পরিমাপ করতে পারা: প্রথম আলো ব্লগের চিঠিলেখা প্রতিযোগিতায় সম্পৃক্ত থেকে নিজের পূর্বঅভিজ্ঞতায় অনেক আঘাত পেয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে আলাদা একটি পোস্টে আমি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছিলাম। প্রতিযোগিতা আয়োজনের চিরাচরিত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের পর যত ব্যর্থতা আসে, তা স্বাভাবিকভাবেই আয়োজকদের ওপরে পড়ে। ফলে আয়োজকদের দায়টি এখানে সর্বাধিক।

৭. পুরস্কার বিতরণের স্থান: পুরস্কার বিতরণীর কাজটি চারদেয়ালের ভেতরে একটি গোছানো অডিটোরিয়ামে আয়োজন করাতে ভালো হয়েছে। ব্লগারদের বয়স বা জেন্ডারভেদ নেই, তাদের প্রয়োজনও বৈচিত্র। ওয়াশরুম, পানীয় জল এবং জরুরি প্রয়োজনের সবকিছু সেখানে ছিলো। অতিথিদের জন্য ছিলো এক শুভেচ্ছার ফুল। শেষে ছিলো হালকা চা-নাস্তা। আন্তরিকতার কোন কমতি ছিলো না।

৮. পুরস্কার বিতরণের অতিথি: শেষ পর্বের আয়োজনে কর্তৃপক্ষের অনেকেই অনুপস্থিত। অনুষ্ঠানে যারা সময়মতো এসেছেন, তাদেরকে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে বর এবং কনে উভয়ের ‘বাপ’ হতে হয়েছে। অর্থাৎ নক্ষত্র’র একান্ত নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে মাত্র একজন ছিলেন সবকিছুর দায়িত্বে। বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আরও সুপরিসর কোন স্থানে আয়োজন করে ব্লগ- এবং সাহিত্য-সংশ্লিষ্ট আরও কিছু অতিথিকে সম্পৃক্ত দেখার আকাঙ্ক্ষা ছিলো অভ্যাগতদের মনে। নক্ষত্র’র অর্থের অভাব আছে মনে হয় নি।

৯. সাহিত্য প্রতিযোগিতার বিচারক: এখানে মাঝামাঝি কোন পথ নেই। হয় সাহিত্যপ্রেমী ব্যক্তিদেরকে সম্পৃক্ত করুন, অথবা একই বিষয়ে লেখেন এবং প্রতিযোগীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন অভিজ্ঞ ব্লগারকে আহ্বান করা উচিত। বিষয়টি আগ্রহের ভিত্তিতে হলে উত্তম। তাদের সমস্ত করণীয় পূর্বেই জানিয়ে দিতে হবে। বিচারক একই সাথে প্রতিযোগী হতে পারেন না।

১০. আত্মমূল্যায়ন: যে করে, সে-ই বেশি শেখে। আমার বিশ্বাস, পরবর্তি প্রতিযোগিতাকে কীভাবে আরও ভালো করা যায়, এবিষয়ে আয়োজকেরা আমার চেয়ে বেশি শিখেছেন। শুরু করার পূর্বে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করলে আরও ভালো একটি প্রতিযোগিতা দেখতে পাবো।

 

উপসংহার: কমিউনিটি ব্লগ নক্ষত্র’র শুরু থেকেই আলো-আধারি অবস্থায় যুক্ত ছিলাম! আলো-আধারি বলার কারণটি বলছি: ব্লগবন্ধু নীলসাধু যখন আমাকে নক্ষত্র ব্লগের শুরুর কথা জানান, তখন তার সকল উদ্যোগের মতো এতে সর্বান্তকরণে সমর্থন যুগিয়েছি। অনেক পরিচিত ব্লগারকে নিমন্ত্রণও করেছি। এর ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আন্তরিকভাবে মতামত দিয়েছি এবং প্রেরণা দেবারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার দিনটি আমার দৈনন্দিন কাজের সাথে মিলে নি। ফলে শারীরিকভাবে অংশ নিতে পারি নি। তবু শুরু থেকেই আমি এর নিবন্ধিত এবং অনিয়মিত ব্লগার! ব্লগাররা এরকম আলো-আধারিতে থাকতেই পছন্দ করেন। আমি বাধ্য হয়েই থাকি। এভাবে হয়তো থেকে যাবো। সকল সহব্লগারকে শুভেচ্ছা!

 

 

 

.

.

.

[ গ্রাফটি লেখকের। প্রতিযোগিতার আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্টে দেওয়া হয়েছিল।]

 

 

 

 

 

.

.

থিম ফটো: সহব্লগার সকাল রয়ের ফেইসবুক। 

.

.

পুনশ্চ:

ক) ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা: সুহৃদ নীলসাধু, পাশা এবং নক্ষত্র ব্লগের কর্তৃপক্ষ।

খ) সহব্লগার ঘাসফুলকে ধন্যবাদ, প্রতিযোগিতার আয়োজনে যথেষ্ট সময় দিয়ে আমার ওপর চাপ কমিয়ে রাখার জন্য। 

গ) লেখাটি ঘটনার পরদিনই প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তিতে সঞ্চালক একই বিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন দেখার পর সরিয়ে নিয়েছিলাম।

Likes ২৭ Comments
০ Share

Comments (27)

  • - কুসুম কুন্তলা

    ভালোেবাসা কি জোর করে দেয়া যায় না শেখানো যায়?? ভালবাসা বোধ করলে ভালোবাসেন, কে মানা করেছে??