তখন ২০০২ সাল। সেলফোন সবে এদেশে উঁকি দিচ্ছে। দরখাস্ত লিখে, লটারীতে ভাগ্যের জোরে আবার কখনও কোম্পানীগুলোর প্যাকেজের আমন্ত্রণে কিছু কিছু সেলফোন, মানুষের মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়াতে শুরু করল; সেই সাথে কিছুটা অহংকারও।আবার ফোনে মিথ্যে বলাও শুরু হলো। আগে যেখানে শুধু ল্যান্ডফোনেই কথা হতো, পরিষ্কার বোঝা যেত ওপাশের তিনি বাসা থেকেই কথা বলছেন। আর সেলফোনে পাওনাদারকে বলা শুরু হলো,” আমি একটু ঢাকার বাইরে আছি“- অথচ তিনি বহাল তবিয়তে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। গিন্নীর ছোট বোনের ম্যারেজ ডে-তে একটুও কি দেরী করবার উপায় আছে!!! কিন্তু কর্তা ফোনের জবাবে বললেন,” এইতো এসে পড়েছি। জ্যামে আটকে আছি”—কিন্তু আসলে তিনি আটকে ছিলেন অফিসের কাজেই।
এমনই সময়ে আমিও একটা সেলফোন পেলাম। একটু একটু করে এর ব্যবহারও শিখলাম। সেদিন ছিল কোরবানীর ঈদ। মা-এর সাথে কাজে কিছুটা ব্যস্তও ছিলাম, আবার বন্ধুদের মেসেজও পাঠাচ্ছিলাম, ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে। এরই মাঝে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এলো,” Eid Mubarak. Enjoy Eid with happiness. God bless you.” পড়ে, আমার কাছাকাছি বয়সের ছোট ভাইটাকে দেখালাম। ও জানালো, ওর কোন পরিচিত নয়। বুঝলাম আমকেই লেখা, যেহেতু ফোনটা আমারই। দু’দিন পরে জবাব দিলাম,” Thanks for your message. But I don’t know who you are.”
সেই থেকেই শুরু আমাদের মেসেজ বিনিময়। কখোনো নাম-পরিচয় জানতে চাইলে জানাতো না। আমিও জানাইনি। আমরা একে অপরকে কখোনো রিং করিনি। শর্ত ছিল রিং করবো না। সকাল থেকে রাতে ঘুমুতে না যাওয়া অবধি পনের-বিশটা মেসেজ আসতো। বাবা-মার ভয়ে মেসেজ-টোন সাইলেন্ট করে রাখতাম। আমিও জবাব লিখতাম, হয়তো কোন গানের কলি অথবা কবিতার দু’টো চরণ। প্রাণ খুলে আমরা শেয়ার করতাম মাথায় যখন যা আসে। সম্পর্কটা গড়ে ওঠে দু’টো মনের মাঝে। এক সময় এক মেসেজের প্রেক্ষিতে একদিন তার নাম দিলাম “আকাশ”। সেইসেই সাথে সেই সাথে মিলিয়ে, সে আমায় লিখতো “নীল” নামে। আমাদের মেসেজ দেয়া-নেয়া হতো বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সব ভাষাতেই। অবশ্যই সেটা ইংরেজি অক্ষরে।
আমাদের মেসেজ লেখালেখি এখোনো চলছে। আমি আজও জানি না, আমার আকাশ ছেলে না বুড়ো, মেয়ে না পুরুষ। আমি শুধু জানি, সে আমার আকাশ, আমি তার নীল। একদিন গর্বভরে তাকে লিখেছিলাম, “নীল মাঝে মধ্যেই মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। কিন্তু আকাশ কখোনোই হারায় না, হারাবে না; যা আমি পেয়েছি।“
আকাশ, আমি আজও বলছি,” আমি তোমাকে কখোনোই হারাবো না।“