মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ছোট্ট একটা দেশ কাতার। এর রাজধানী দোহা। কাতার সরকার ছোট দেশটিকে বিশ্বের দরবারে অনন্য দেশ হিসেবে তুলে ধরার জন্য সামগ্রীক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে পর্যটন শিল্প অন্যতম।
কাতারের অধিবাসিদের বলা হয় কাতারী। তাদের শিল্প ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য নির্মান করা হয়েছে কাতারা গ্রাম (Katara Cultural Village)। দোহা শহরের পশ্চিমাংশে, west bay ও Pearl Qatar- এর মাঝামাঝি অংশে গড়ে উঠেছে এই কাতারা সাংস্কৃতিক গ্রাম। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে জনসাধারনের দেখার জন্য খুলে দেওয়া হয় এই গ্রামটি। কাতারা সাংস্কৃতিক গ্রামটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক অঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র, ফাইন আর্ট, ফটোগ্রাফী এবং নানা সোসাইটির অফিস আছে।
গাল্ফ উপসাগরের ২.৫ কিলোমিটার সৈকত জুরে গড়ে উঠেছে কাতারা। সৈকতের এই অংশকে কাতারা সৈকতও বলা হয়। এই সৈকত ঘিরে গড়ে উঠেছে কাতারা সাংস্কৃতিক গ্রাম। এখানে কৃত্রিম পাহাড় তৈরী করা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ নরম ঘাস। সারাক্ষণই ঘাসগুলোতে পানি দেয়া হয় ঝর্ণার মাধ্যমে। পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট বাল্ব দিয়ে চাঁদ-তারা বানানো হয়েছে, রাতে বাল্বগুলো জ্বলে উঠলে খুব সুন্দর লাগে। মনে হয় না এটা কোন মরুভুমীর দেশ। এ ছাড়াও অনেক ফুলের গাছও লাগানো হয়েছে, তাতে ফুটে আছে নানান রঙের ফুল। চারিদিকে সবুজ নরম ঘাস, রাস্তার পাশ দিয়ে। আমি ইচ্ছে করেই রাস্তা ছেড়ে নরম ঘাসে একটু হাঁটলাম। মনে হলো যেন মখমলের চেয়েও নরম।
কৃত্রিম সবুজ পাহাড়
রাতের পাহাড়
এখানে আরো আছে অনন্য সুন্দর কারুকাজ করা কাতারা মসজিদ, রোমান স্থাপত্য-এর আদলে এম্পি থিয়েটার, তাতে খোলা মঞ্চ, খোলা গ্যালারী। আরো দেখলাম বিভিন্ন দেশের বাহারী রেস্তোরা। সেই সব দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যাচ্ছে। আরো আছে ফটো গ্যালারী, নানারকম ভাস্কর্য, বিশাল খোলা চত্বর, সাগর পাড়ে মার্বেল পাথরে বেঞ্চ, সুন্দর পরিবেশে সময় কাটানোর অনেক কিছুই আছে সেখানে।
এম্পি থিয়েটার
এম্পি থিয়েটার-এর উন্মুক্ত গ্যালারী
কাতারা মসজিদ
মসজিদ-এর কারুকার্যখচিত মিনার
মসজিদ-এর মিম্বার (বাইরে থেকে)
কাতারার খোলা চত্বরকে এভাবে অনেক কিছু দিয়েই সাজানো হয়েছে। রাতে এখানে আলো জ্বলবে।
একটি ভাস্কর্য
আরেকটি ভাস্কর্য
পশ্চিমা রেস্তোরা
বিভিন্ন দেশের রেস্তোরা
কাতারা সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ
কাতারের বর্তমান তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী থেকে ৪৫ডিগ্রীর মধ্যে ওঠানামা করে, তাই বেড়াতে বারোলে বিকেলকেই বেছে নিতে হয়। গাড়ীতে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে প্রায় সন্ধ্যের আগে আগে গাড়ী থেকে বেরুতে হয়। আমরাও তাই করেছি। দুপুরের পরে যখন বেরোলাম, দূরের সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হচ্ছিল। সাথের বাঙালিদের কাছে জানতে পারলাম, ঋতু পরিবর্তনের সময় এমনটা হয়ে থাকে। বাতাসের আর্দ্রতা এখন প্রায় ৮০ থেকে ৮৫% থাকে। কিন্তু মেঘও জমে না তাই বৃষ্টির প্রশ্নই আসে না।
কার্লটন রিচ হোটেল (ওয়েস্ট বে) ও আবাসিক ভবন
কার্লটন রিচ হোটেল (ওয়েস্ট বে) ও আবাসিক ভবন
(রাতের বেলা)
মুসলিম ঐতিহ্য - মসজিদ চত্বরে পাখিদের বাসা বানানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে (অনেক পাখির বাসা আছে এখানে)
কিছুক্ষণ ঘুরতেই মাগরিবের আযান হলো। কাতারা মসজিদেই নামাজ পড়লাম। মেয়েদের জন্য নামাজের পৃথক ঘর আছে, এক জামাতেই নামাজ পড়লাম সবাই। হজ্জ করে আসবার পর আর আমার জামাতে নামাজ পড়বার সৌভাগ্য হয়নি। বাংলাদেশে সব মসজিদে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা থাকে না। জামাত পড়তে গেলে অনেক দূরের মসজিদে যেতে হয়। কাতারে এসে আমি সেই সুযোগটা পাচ্ছি। তাই শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ্র দরবারে। রাতের খাবার সেরে নিলাম একটা ইয়েমেনী রেস্তোরায়। এখানে কোন হারাম খাবারের ভয় নেই।
কাতারা মসজিদে মাগরিব-এর নামাজ পড়লাম
ইয়েমেনী এই রেস্তোরায় রাতের খাবার খেলাম। এখানে বসার জন্য এমনই শাহী ব্যবস্থা।
ইয়েমেনী খাবার। আমরা ছয় জনের দল ছিলাম।
সৈকতে ঘুরলাম ঠিকই, কিন্তু সে আনন্দ আর পেলাম কই। সমুদ্রের সেই সুন্দর শব্দ নেই, ঝাউ বনের ঝিরিঝিরি গান নেই, নেই বড় বড় ঢেউ-এর ছলাৎ ছলাৎ মধুর শব্দ। এখানে শুধু লোনা পানি আর পানিতে স্পীড বোটে কেউ কেউ বেড়াচ্ছে। বীচ-এও নামতে দেয়া হলো না।
আমি জন্মেছি বাংলাদেশ-এ। বঙ্গপোসাগরের শোঁ শোঁ শব্দ, ঝাউবনের ঝিরিঝিরি গান আর সুন্দর সুন্দর বড় বড় ঢেউয়ের সাথে আমার মিতালি। সত্যি কথা বলতে কি, এই সাগর কোন অনুভূতিই জাগায় না। এই সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো বাদ দিলে, আমার বাংলাদেশটা অনেক অনেক সুন্দর!!!
Comments (14)
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নির্মম হত্যাকাণ্ড আর পাশবিক ধর্ষণের করুন কাহিনী গল্পে উঠে এসেছে। সেগুলোর বর্ণনাও বেশ চমৎকার করে দিয়েছেন। দেশ যে এখনো পুরনো শকুনমুক্ত না তাও গল্পে ঠাই পেয়েছে। বালকের কঠিন প্রতিজ্ঞা দেশকে সম্পূর্ণ রূপে ঘাতক দালাল রাজাকার মুক্ত করেই ঘরে ফিরবে, অনেকের মাঝে হয়তো দেশ প্রেমের সৃষ্টি করবে। ভালো লাগলো গল্পটা। ধন্যবাদ জান্নাতুল নাঈম পিয়াল।
ধন্যবাদ ঘাস ফুল আপনাকে গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য। সত্যিই যদি এই গল্প কারো মনে কোন শুভবুদ্ধির জন্ম দিতে পারে, তবে আমার এই লেখা সার্থক হবে।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
গল্পটি পোস্টের কিছুক্ষণের মধ্যেই এক ভাই কমেন্ট করেছিলেন। তার নাম খুব সম্ভব রাজিব খান। কোন কারণে হয়ত তার কমেন্টটি মুছে গেছে। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তারপরও গল্পটি পড়ে মতামত জানানোয় ঐ ভাইয়ের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা থাকল।
লেখাটায় প্রতিটা প্যারার পর বড় বড় গ্যাপ দেখা যাচ্ছে। এডিট করে দিলে ভালো হত। আপনি লেখাটা সিয়াম রুপালী ফন্টে কনভার্ট করে নিলে হয়তো এরকক গ্যাপ নাও থাকতে পারে। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আমি তো সিয়াম রুপালি ফন্টেই লিখেছিলাম। তারপরেও কেন এমন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। বোধ হয় আমার ব্রাউজারে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। একটা কমেন্ট করলেও অনেকগুলা পোস্ট হচ্ছে। :-(
যাইহোক, এখন আবার চেষ্টা করে দেখি ঠিক করা যায় কিনা। প্রতি প্যারার পর এত বড় ফাক থাকলে আসলেই লেখাটা খুব খারাপ দেখায়।