Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

অনুরাগী

৯ বছর আগে লিখেছেন

পূরনো গীত-গণতান্ত্রিক বিলাসিতা

দেশের রাজনীতির নিষ্পেষণে ঘনিষ্ঠ দুইবন্ধুর বিতর্কে একজন পোক্ত যুক্তি দিয়ে শক্ত করে বলল-আমাদের মত গরিব দেশে গনতন্ত্র মূল্যহীন; রাজতন্ত্র-ই শ্রেয়। সাত-পাঁচ না ভেবে তর্কের ইতি টানতে তাতেই সম্মতি দিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে একটা খটকা লেগেই থাকল।ঝালকাঠি’র লিমনের ঘটনার পরে রাস্তায় একা একা চলতে বেশ ভয় লাগত যদি আমার সামনে দিয়ে কোন সন্ত্রাসী দৌড়ে পালাল আঈনের রক্ষক বাহিনী এসে আমার পায়ে গুলি করে ধরে নিয়ে গেল। হয়ে গেলাম শীর্ষ সন্ত্রাসী কত সহজে! এই গনতন্ত্রের চেয়ে তো রাজতন্ত্র-ই শ্রেয়! আজকাল এসব অশুভ ভাবনা তাড়া করে না। নতুন স্বপ্ন’রা ভিড় জমায়, রাতের চেয়ে দিনেই সেসব স্বপ্ন’দের দাপট বেশী; খুন-গুম হওয়ার স্বপ্ন। কত সূক্ষ্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়ন-অপহরণ,খুন অতপর গুম এবং খুনের দৃশ্য দেখে ফেলার কী করুন পরিণতি! “হাজারী” কিংবা “ওসমান”দের কোন শাস্তি হওয়ার নজির আমাদের গণতন্ত্রে (?)নেই। আমাদের গণতন্ত্রের মধ্যে ভর করে আছে ঘুণে ধরা জীর্ণ রাজনীতি।  রাজনীতি’র লাগাম অনেক লম্বা হয়ে গিয়েছে- সরকার, বিরোধী দল(বর্তমান বিরোধী দল নয়) ও পুলিশ বাহিনী মিলে যেভাবে লাগাম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে তাতে লাগাম নিয়ন্ত্রণের চেয়ে লাগামের দড়ি আরো বেশী ঢিলে হচ্ছে বলেই মনে হয়। ফলে সাগর-রুনি’র খুনের কুল-কিনারা হয় না,ইলিয়াস আলী’রা ঘরে ফিরে না। রাজনীতি’র নামে পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে আবার এসব পেট্রল বোমা হামলাকারী ধরার নামে অরাজনৈতিক সাধারণ মানুষকে হতে হচ্ছে নির্মম গুলির শিকার। গণতন্ত্র-গণতন্ত্র খেলা। কী নিষ্ঠুর পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে আমজনতাকে। আর প্রতিদিন টিভি চ্যানেলগুলো নিয়মমাফিক টকশো’র আয়োজন করে আলোচনার খোরাক পাচ্ছে। সবাই মিলে গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করার প্রয়াস চালাচ্ছে। গনতন্ত্র সঠিক পথ না পেয়ে দিকব্দিক ছুটছে। তৃতীয় পক্ষ এর সুফল ভোগ করছে। আমি তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্ত নই-সাধারণ জনগণের দলভুক্ত। ভোটের হাওয়া বইলে-ই আমার অনেক গুরত্ব বেড়ে যায়। আমার একটা ভোটের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের কত না আয়োজন- কয়েকশো কোটি টাকার ফিরিস্তি। ভোট শেষ তো আমিও হারিয়ে যাইকালের অতল গর্ভে। কেউ আমার খোঁজ রাখে না-আমাকে হতে হয় অধিকার বঞ্চিত এক হতভাগ্য জনগণ; গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি।

 

অবস্থাদৃষ্টে কেহ কেহ ভাবতেই পারেন যে আমি স্বাধীনতা’র বিরোধী কিনা যেহেতু সত্য বললেই তাকে হরহামেশাই দেশদ্রোহি বা স্বাধীনতাবিরোধী বলা হচ্ছেভাবতে থাকুন, আমি কারো স্বাধীন ভাবনায় চ্ছেদ ঘটাতে চাই না। আমি কবি নজরুলের মতআমিও  “আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধুপ”। তবে এদেশ স্বাধীন করায় আমার পরিবারের অবদান আছে যা ভেবে ভাল লাগে। কিন্তু আফসোস হয় আমার উত্তরসূরির রক্ত বৃথা যায়নি তো? বঙ্গবন্ধু কী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে তিরিশ লাখ মানুষ তার প্রিয় প্রাণ বিলিয়ে দিলেন দেশের তরে। সন্দেহ নেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে অনেক কিন্তু নৈতিক উন্নতিকতটুকু? বরং দিনে দিনে নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা যায় যে স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল দুই অঙ্কের কোটায় আর এখন তা পঞ্চাশ হাজারের অধিক। পক্ষান্তরে স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের খুন-গুমের সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও তার সংখ্যা আজকের সংখ্যার সাথে কোনভাবেই তুলনাযোগ্য না সে কথা অনস্বীকার্য।দেশের আজকের এই উন্নতি এদেশের মানুষের ব্যক্তি প্রচেস্টার সুফল। কোন সরকারের উল্লেখযোগ্য কোন অবদান নেই।উদাহরণস্বরূপ গার্মেন্টস ব্যবসার কথা-ই ধরা যাক,একটি সফল ব্যবসা। এ ব্যবসা আমাদের দেশে শুরু ৮০’র দশকের গোড়ার দিকে। আজ এটা অন্যতম প্রধান রপ্তানিমুখী ব্যবসা,সম্পূর্ণ ব্যক্তি প্রচেস্টায় দাঁড়িয়েছ। উল্লেখ করার মত কোন সরকার কী কিছু করেছে আজকের জায়গায় এগিয়ে নিতে? আরেক সম্ভবনাময়ী ব্যবসা-পোল্ট্রি শিল্প। কে কি  করছে কিংবা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এ ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। আসলে সরকার আর আগের মত নেই-তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় নানান বিষয় নিয়ে,কিভাবে আবার ক্ষমতায় আসা যায়। কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। এসব রাজার নীতি-জনগণের কথা বলা মানা,তারা শুধু মেয়াদশেষে ভোট দিবে। তারপর সকল রাজনীতিবিদরা জনগনের মাথায় কাঠাল ভাঙবে-আমলা আর চামচা-চামুন্ডরা সবাই মিলে তা গলদগরণ করবে। গত ৫ই জানুয়ারি থেকে দেশে গনতন্ত্রের নামে কি চলছে? একদল গনতন্ত্র হত্যা দিবস এবং আরেক দল গনতন্ত্র রক্ষা দিবস পালনের কী ঘনঘটা! দু-দলের রেষারেষি- পেষাপেষিতে জনগনের কতজন যে আহত-নিহত হল তার দায় কার? নেতাদের নির্দেশ “চালিয়ে যাও-প্রতিরোধ কর”,যাকে মেরে যে বাঁচতে পার সেই ভবিষ্যৎ নেতা! কলঙ্কিত ১৫ই আগস্ট কিংবা ৭ই নভেম্বর না হয় বাদই দিলাম। তার আরও কয়েক বছর পরের দিকে তাকালে নূর হোসেনের ছবি ভেসে ওঠে, জীবনের বিনিময়ে স্বৈরতন্ত্র হটিয়ে কী গনতন্ত্রের মুক্তি-ই না দিল! তবে জনগণও ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের দীক্ষা নেয়া শুরু করেছে। আগে কোথাও রাজনৈতিক সমাবেশ হলে কিছু জনগণ অন্তত মহান নেতাদের বদন দর্শনের জন্য হলেও সমাবেশের পথ মাড়াতেন। এখন ভুল করে অথবা জোড় করেও তাদের ঐ পথে টানা যায় না। শুধুমাত্র চুক্তিভিত্তিক ভাড়া করা লোক এবং দলীয় সমর্থিতরা যারা ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তারা ছাড়া সমাবেশস্থলে তেমন আর কাউকে পাওয়া মুশকিল। তবে না চাইলেও সাথে লেজুড়ভিত্তিক সস্তা মিডিয়া কর্মী পাওয়া যায় অবশ্য। আজকের এই লাগাতার অবরোধও গণতন্ত্রের সুবিধাভোগকারী এসকল মিডিয়াকর্মীর বিচক্ষণতার ফসল। গণতন্ত্রের কী জয়জয়কার অবস্থা-কোমলমতি শিশুরা নির্ভাবনায় তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারল না। এসব শিশুদের উত্তরসূরি হিসাবে কী শিক্ষা দিল আমাদের গণতন্ত্র? ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র পাঠে কী ভূমিকা রাখবে আগামীর এই পথপ্রদর্শকরা? অথচ গণতন্ত্রের খাতায় জানান দেয়া আছে জনগনের পাঁচটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে-খাদ্য,বস্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা। রাষ্ট্র পরিচালকরা এর কোনটা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারছে স্বাধীনতা পরবর্তী এত বছরে। জানুয়ারি মাসে বই উৎসব পালন করলে কিংবা মাঝেমাঝে শিশুদের টীকা খাওয়ালেই সব কিছু শতভাগ পূর্ণ হয় না। ভাবতে হবে খেয়া পাড় হয়ে নদীর ওপাড়ের অজ-পাড়াগাঁয়ে বসবাস করা অন্তঃসত্তা নারীর গভীর রাতে প্রসব বেদনা হলে কিভাবে নদী সাঁতরে হাসপাতালে আসবেন অথবা চিকিৎসাসেবা পাবেন। আর আজকে যে শিশুর হাতে উৎসব করে বই দেয়া হচ্ছে সে নিরাপদে স্কুলে আসতে পারবে কিনা বা স্কুল থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা যখন হবে তখনই কেবল বলা যাবে গণতান্ত্রিক অধিকার আংশিক হলেও পূর্ণতা পেয়েছে। না হয় সবই রাজনৈতিক আস্ফালন।

 

বন্ধু’র গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার অন্যতম যুক্তি ছিল-যদি আমাদের দেশে রাজতন্ত্র থাকত তবে বছর বছর মন্ত্রীপরিষদ পরিবর্তন করার প্রয়োজন হত না এবং দুর্নীতি যা করার একবার-ই করে ফুলে ফেঁপে কলা গাছ না হয়ে বহুবর্ষী বটবৃক্ষের ন্যায় উপার্জন ভোগ করত অনেক কাল যাবত। নতুন কেহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠত না কিংবা প্রতিবাদ করে নেতা হওয়ার সাহস দেখাত না। এখন গণতন্ত্রের কারণে বারবার সরকার পরিবর্তন হয় এবং মন্ত্রীপরিষদের সদস্যও পরিবর্তন হয়। বারবার নতুন নতুন মন্ত্রী’র চাহিদা ও স্বপ্ন পূরণের দুর্নীতি ঢাকতে গিয়ে দুদুককে ছাড়পত্র যোগাড় করতে কী ঘর্মাক্ত না হতে হয়। পক্ষান্তরে একজন রাজা বা রাজপরিবারের চাহিদা নিশ্চয়ই দশগণ্ডা মন্ত্রীর সমান না? আসুন আমরা গণতন্ত্র বয়কটের পক্ষে জনমত গড়ি এবং গনতন্ত্রকে মুক্তি দেই-দেশ অনেক অপচয় থেকে মুক্তি পাবে। নির্বাচন কমিশন পরিচালনার খরচ অন্যখাতে লাগানো যাবে এবং বছর বছর নির্বাচনী ব্যয়ও বেঁচে যাবে। কয়েক মেয়াদের নির্বাচনী ব্যয় দিয়ে আরেকটা পদ্মা সেতু  করা যাবে,যা একটা নির্বাচনের চেয়ে কয়েকগুন উপকারে আসবে। রাজনীতিবিদরাও তাদের গলাবাজির পরিশ্রম থেকে বেঁচে যাবেন। মিডিয়ার চাটুকারিতা দর্শকরা মুক্তি পাবে। না হয় আমাদের দেশের বাস্তবতায় শত বছরের পুরনো সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বলতে হবেগনতন্ত্র মানে- for the chair, by the chair, of the power; once upon time the people are required but today they have no validity in democracy.

 

     
Likes Comments
০ Share

Comments (0)

  • - মামুন

    সুন্দর লিখেছেন। অন্ত্যমিলগুলো শ্রবনেন্দ্রিয়তে মধুর আবেশ ছড়িয়ে দিলো।

    সেদিন বইমেলাতে পরে আর আপনাকে পেলাম না।

    শুভেচ্ছা রইলো।emoticons

    • - মো: মালেক জোমাদ্দার

      মামুন ভাই আমি একদিন প্র প্র যাই । আজকেও গিয়েছিলাম । ধন্যবাদ ভাই।

    • Load more relies...
    - সরফরাজ আহমেদ খান

    চমৎকার লিখেছেন।

    ভাললাগা রেখে যাচ্ছি।

    • - মো: মালেক জোমাদ্দার

      স্রফ্রাজ  আহমেদ ভাই ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল।

    - ফেরদৌসি কেকা

    খুব সুন্দর পংক্তিমালায় ছন্দ যেন উপচে পড়ছে ভাইয়া। ভাল লাগল।

    • - মো: মালেক জোমাদ্দার

      আপু ধন্য হলাম । শুভেচ্ছা রইল ।

    Load more comments...