Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আখতারুজ্জামান সোহাগ

১০ বছর আগে লিখেছেন

সমাপ্তি

বিজনেস ক্লাস
-------------
সকাল সাড়ে ছ’টায় রানওয়ে ছোঁবে বিমান, এগারোটায় মিটিং আছে সাপ্লায়ারদের সাথে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে খুব একটা সময় থাকবে না হাতে, হোটেলে চেক ইন করে বড় জোর ফ্রেশ হওয়ার সময়টুকুই পাওয়া যেতে পারে। লিকার একটু বেশিই পড়েছে আজ পেটে। বিজনেস ক্লাসের আরামদায়ক আসনে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ মুদলেন ভদ্রলোক। একটু তন্দ্রা এসেছিল বোধ হয়, পাশের সিটের যাত্রীর নড়াচড়ায় সে তন্দ্রার জাল ছিঁড়ল। অল্প বয়সী ছেলেটা একটু বেশিই নড়ছে। চেহারা দেখে মনে হয় ইন্দোনেশিয়ান। তার সাজ-পোষাক বলে দেয় বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হওয়ার যোগ্য সে নয়।

অল্পবয়সী এই যাত্রীটির ঠিক তিন সারি পিছনে বসে আছেন একজন চীনা নাগরিক। মালয়েশিয়াতে একটা কনস্ট্রাকশন ফার্মে তিনি চাকরি করেন। মৃত্যুশয্যায় তার মা, তাকে দেখতেই তিনি বেইজিং যাচ্ছেন। এয়ার হোস্টেস তার সামনে এসে দাঁড়ালেন, ট্রে’তে নানা রকম পানীয়। চীনা ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন বিনয়ের সাথে, কোন কিছুতেই তার আজ রুচি নেই। তার দু’চোখ সামনে ছোট মনিটরে, দেখছেন সম্ভাব্য বিমান-অবতরণ সময়।

চীনা যাত্রীর পিছনের সারিতে ডান পাশের সীটটাতে বসে আছেন একজন মালয়েশিয়ান নাগরিক। চীনের একটি বড় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানীতে তিনি চাকরি করেন। ক’দিনের ছুটি নিয়ে কুয়ালালামপুর এসেছিলেন, আজকের ফ্লাইটে ফিরছেন বেইজিং, সোমবার সকাল থেকে আবার অফিস। তার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে রেখে আসা স্ত্রী আর সাত বছরের ছেলের বিরহে কাতর মুখচ্ছবি। আইপ্যাডের ফটো গ্যালারিতে গিয়ে বার বার দেখছেন তাদের ছবি, আর চোখ মুছছেন।

ইকোনমি ক্লাস
--------------
টেকনিক্যাল কনফারেন্সে যোগ দিতে যাচ্ছে এই যাত্রীটি। তার সাথে রয়েছে অফিসের দু’জন সহকর্মী। এই প্রথম সে বিমানে উঠেছে, দেশের বাইরে যাচ্ছেও এই প্রথম। রানওয়ের কপালে চুমু খেয়ে বিমান উঠেছে প্রায় ঘণ্টাখানেক। হালকা স্ন্যাকস এর পরে সবাই একটু চোখ জিরিয়ে নিচ্ছে। এই যাত্রীটি চোখ খোলা রেখেছে, প্রথম থেকেই। বিমানটি যখন একটু একটু করে উপরে উঠছিল তখন সে জানালা গ’লে বাইরে নিচে তাকিয়ে দেখেছে রাতের কুয়ালালামপুর। তার কাছে অভিজ্ঞতাটা একদম নতুন। মনে হচ্ছিল নিচের পৃথিবীটাই হলো আকাশ, আর দূরে মিটমিটিয়ে জ্বলে থাকা আলোগুলো গ্রহ-নক্ষত্র। এখন বাইরে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তাই চোখ ঘুরিয়ে তাকাল সে ভিতরে। একজন বিমানবালা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। বুকের ভিতর কাচ ভাঙল ঝনঝন। কি অপরূপ! কি মনোহর!

ইকোনমি ক্লাসের একবারে পিছনের সারির একজন যাত্রী দেশে ফিরছে পাকা সাত বছর পর। সে চীনা বংশোদ্ভুত, মালয়েশিয়া প্রবাসী, পেশায় নির্মাণ-শ্রমিক। অনেক অনুনয় বিনয় করে ‘বস’ এর কাছ থেকে তিন মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরছে। যখন সে দেশ ছেড়েছিল তখন তার ছেলেটার বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। ছেলেটার তখনকার একটা ছবি রয়েছে তার বুক পকেটে। সেই জলের-ফোঁটায় জায়গায় জায়গায় রং হারানো ছবিটা আবার মেলে ধরল সে চোখের সামনে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছোট করে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা! ছেলেটার জন্য কিছু খেলনা কিনে নিয়ে যাচ্ছে সে। সেগুলো রয়েছে একটা ব্যাগে, মাথার উপরে লাগেজ কম্পার্টমেন্টে। ঘাড় উঁচু করে তাকাল একবার সেদিকে। কম্পার্টমেন্টের ঢাকনা আটকানো, দেখা গেল না কিছুই।

এই বিমানটি কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট ছাড়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়ান কর্ত্তৃপক্ষ একজন যুবককে জোর করে উঠিয়ে দিয়েছিলেন বিমানে। নিজ দেশে যা কিছু সহায়-সম্বল ছিল তার, সব কিছু বিক্রি করে টাকা যোগাড় করে জীবিকার তাগিদে দিন পনের আগে এই যুবক মালয়েশিয়াতে ঢুকেছিল বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। তিনদিন আগে সে ধরা পড়ে যায় স্থানীয় পুলিশের হাতে। তারাই তাকে তুলে দিয়েছেন বিমানে। এখন সে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। দেশে ফিরে তার কোন লাভ নেই, নেই পরিবার-পরিজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর কোন উপায়। প্রাণপণে তাই চাইছিল সে বিমানটা সারা জীবন ভেসে বেড়াক নীল মেঘগুলোর অনেক উপর দিয়ে, মেঘ নেই, বৃষ্টিও নেই যেখানে।

সমাপ্তি
--------
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস এর বোয়িং বি ৭৭৭-২০০ বিমানটিতে অবস্থানকারী সকল যাত্রী এবং ক্রু’র জীবনেই অস্তিত্ব রয়েছে এক একটা কথাসাহিত্যের। মহান গল্পকার চেয়েছেন তাদের প্রত্যেকের জীবনের সেই কথাসাহিত্য হবে সার্থক ছোটগল্প, ‘অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। আমরা শুধু তাদের জীবন-গল্পের পরিণতিটা আমাদের মতো করে ভেবে নিতে পারি।

------------------

অন্য একটি অনলাইন মিডিয়াতে সম্প্রতি প্রকাশিত

Likes ১০ Comments
০ Share

Comments (10)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    দাদা

    কবিতার একধরনের আকুতি আছে

    অভিনন্দন--------জানাই

    - আলমগীর সরকার লিটন

    দাদা

    কবিতার একধরনের আকুতি আছে

    অভিনন্দন--------জানাই

    • - কবিরুল ইসলাম কঙ্ক

      ধন্যবাদ কবি ।