Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুন জারিন আলম

৯ বছর আগে লিখেছেন

উপহার উপসংহার

মুক্ত কর ভয় আপনা মাঝে
দূরহ কাজে
নিজেরে কর জয়।

আ আ আ আ
দূর্বলেরে রক্ষা কর
দূর্জনেরে হান
নিজেরে কভু নিসঃহায়
ভেবনা কভু যেন।

মুক্ত করো ভয়,(মিজানও মনে মনে গাইতে শুরু করল)
আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়। 
দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো,
নিজেরে দীন নিঃসহায় যেন কভু না জানো।

মিজান এই প্রথম বারের মত অফিসে অনটাইম পৌছল।তার রুমে দরজা খুলে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাড়াল।

কেও একজন বেমানান সুরে ভূল শব্দে ব্যকূলভাবে রবীন্দ্রনাথের সুন্দর গানটি গেয়ে যাচ্ছে।তাকাতে রুখসানা ম্যাডামকে দেখতে পেল।তার রুমের মুখামুখি রূখসানা ম্যাডামের রূম।

হেতির আইজকে হইছে কি?(মনে মনে নোয়াখালীর অ্যাকসেন্টে মিজান নিজের সাথে কথা বলে।)একেবারে আপ মূডে আছেন মনে হচ্ছে।ভাগ্যিস রবি স্যার পৃথিবীতে বাইচা নাই।নাহলে বিশাল দুইটা ঠাল্লা এখন খাইতা বিকৃত সুরে কর্কশ গলায় এই ভূল গান গাওয়ার জন্য।

সাজ দেখ বুড়ী বেটির। মনে মনে মিজান রুখসানা ম্যাডামের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে রুমে ঢুকল। কেননা কালকেও তাদের বিশাল কথাকাটাকাটি হয়েছে।

যাক আজকে মিজানরে খেয়াল করেনি এখনও।

আহা গাইতে থাক যত পার কর্কশ রবীন্দ্রসংগীত।আমারে বদার না করলে হল।

রুমে ঢুকে ফাইল পত্র রেডী করতে করতে ডোরে নক। এই সময় কে ভাবতে ভাবতে বলল কাম ইন।

ঘরে ঢুকল অডিট অফিসার ।এই ছেলেটাকে মিজানের খুব পছন্দ।রুখসানা ম্যাডামকে যেমন সবচেয়ে অপছন্দ তেমনি এই ছেলেটাকে সবচেয়ে পছন্দ।সবসময়ে হাসিমুখে থাকে। নাম তার আহসান হাবিব ডাক নাম সুমন।মিজান তাকে আদর করে সুমন নামে ডাকে এবং সেও মিজানকে মিজান সাহেব না বলে মিজান ভাই বলে ডাকে।যদিও অফিস এর ডেকোরাম হচ্ছে জুনিয়ার রা সিনিয়ারদের স্যার বলে ডাকবে আর সিনিয়ার রা জুনিয়ারদেরকে সাহেব বলে ডাকতে হবে।কিন্তু দুজনে এই ডেকোরাম অনুসরন করছেনা।

কি মিজান ভাই কি খবর? আজকে ত ঠিক সময়ে ইন।নিশ্চয় ভাবী সব গুছায়ে এনে দিয়েছে। বলল আহসান হেসে।

হ্যা সুমন ভাবছি এখানে বাসা ভাড়া নিব।কিরকম ভাড়া হবে?ওয়াইফ সহ এফোর্ড করা যাবে ?

এটা টূরিষ্ট স্পট তো কক্সবাজার ভাল কম ভাড়ায় বাসা পাবেন না মিজান ভাই ।একটা কাজ করেন না আমার বাসায় উঠেন।আমার বাসা পরের মাস থেকে তালা মারা থাকবে। আপনার ঢাকায় বদলী না হওয়া পর্যন্ত নুতুন বাসা ভাড়া না করে আমার বাসায় থাকেন।বাসায় সবকিছুই আছে।

তুমি কোথায় থাকবে? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে মিজান।

কেন আপনাদের সঙ্গে থাকতে দিবেন না হেসে সুমন জিজ্ঞাসা করে।তোমার মত মানুষ একসঙ্গে থাকলে কেও আপত্তি করবে নাকি?কিন্তু তোমার প্রাইভেসী?

আমি এখানে একমাসের জন্য আছি।নেক্সট পোষ্টিং আমার হবে বান্দরবন এরপরে শুনছি দেশের বাহিরে যাওয়া হতে পারে।কাজে কোন হেসিটেট করবেননা।নিজের বাসা মনে করেই থাকবেন।

দুপুরে লাঞ্চে কেয়া আসল।মিজান পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বের হল একই কলেজ থেকে কেয়া সুমন গ্যাজুয়েশান করেছে।

তারা জোর করে সুমনকে বাসায় ধরে নিয়ে আসল ডিনার করার জন্য।বিশেষ করে কেয়াই বেশী জোর করল পূর্ব পরিচিত বলে।

সারা বিকাল হাসি ঠাট্রাতে কেটে গেল তাদের।তবে সময় সময় মিজানের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল এই কথা মনে করে।

কেয়ার মত এত চমৎকার মেয়ে কেন যে তাকে পছন্দ করল বা বিয়ে করল।ও চাইলে কত চমৎকার ছেলে তো বিয়ে করতে পারত। কেন যে তার মত এত সাধারন একজনকে কেয়া বিয়ে করল।

এই যে সুমনের চোখে কেয়ার প্রতি মূগ্ধতা।

ছি ছি পরক্ষনে সে লজ্জা পেয়ে গেল নিজের হীনমন্যতার পরিচয় পেয়ে।
আসলে এটা থেকে সে মনে হয় কখনও মুক্ত হতে পারবেনা। কেয়ার তুলনায় সে অত্যন্ত সাধারন একজন মানুষ।

মন একবার খারাপ হয়ে গেলে সহজে সে ভাল করতে পারেনা।কেয়া আর সুমন যদি তার মন খারাপ বুঝে ফেলে নিজেকে আড়াল করার জন্য কিছু গ্রোসারী আনার নাম করে সুমন আর কেয়াকে ঘরে রেখে বের হয়ে আসল।

কিছুক্ষন উদ্দ্যেশ্যহীনভাবে সমুদ্রের পাশে হাটল তারপর ক্লান্তদেহে আবার ঘরের দিকে রওয়ানা করল গ্রোসারীর কথা ভূলে গিয়ে।

২আমার ও পরান যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাইগো

আজ কাজ থেকে একটু তাড়াতাড়ি ই ফিরল মিজান।ঘরে এসে দেখে সাজ সাজ রব চারিদিকে। খাওয়ার গন্ধ ফুলের গন্ধ মনে হচ্ছে কিছুক্ষন আগে যেন বিশাল পার্টি হয়েছে এখানে।
ক্যসেটে জোরে গান ছেড়ে কেয়াও তার সাথে গান গাচ্ছে।খুব সুন্দর করে সেজেছে।চুলে ফুল গুজেছে।সুন্দর মিষ্টি নীল একটা কাতান পড়েছে।
মিজান কতক্ষন ধরে খেয়াল করছে হাসিমুখে।কেয়ার সেইদিকে কোন খবর ই নেই।আপন মনে গান গেয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ সামনে চোখ পড়ায় আতকে উঠে বুকে থুথু দিল তারপর হেসে ফেলল ।

দৌড়ে কাছে চলে এল মিজানের।

এত তাড়াতাড়ি ব্যাপার কি?

তার চোখে মুখে হাসির জোয়ার বইছে যেন।

আমার বউটা এত আনন্দিত কেন আজকে? মিজান হেসে জিজ্ঞাসা করল।

সারপ্রাইজ আছে হু কেয়া হেসে বলে।
হাত ধরে টেনে বেডরুমে এ নিয়ে আসল।

বিশাল পঞ্চাশ ইঞ্চি প্লাজমা টিভি ডানদিকের দেওয়ালে সেট করা হয়েছে।এর আগের সপ্তাহে তারা সুমনের বাসায় উঠেছে।

বিছানার উপরে দুনিয়ার শপিং বোঝাই করা।ব্লেজার সূট মিজানের জন্য।কিছু দামী সালোয়ার কামিজ গয়না।

ব্যাপার কি এত শপিং কিভাবে করছ?

সুমন এসেছিল ও সব নিয়ে আসছে। 

মিজান আজকে সত্যি বিরক্ত হল সুমনের প্রতি কেয়ার প্রতি।এত শপিং এত অপচয়ের কোন মানে হয়।

তোমাদের অনেক টাকা পয়সা।অনেক স্বাচ্ছন্দের সাথে চলছ এতদিন। আমি তো তোমাকে বলতে গেলে কিছু দেইনি।তোমার আমার সাথে অনেক কষ্ট হচ্ছে না কেয়া বিষন্নভাবে মিজান জিজ্ঞাসা করে।

কেয়া একেবারে অফ হয়ে গেল মিজানের কথায়।

মিজানকে যেন কথার নেশায় পেয়ে বসেছে।
তোমার আশেপাশে তো এরকম সুদর্শন টাকা পয়সা ওয়ালা ছিল। আমার মত গরীবরে দয়া করার কোন দরকার ছিল?

হতভম্বের মত তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন মিজানের দিকে কেয়া।পরে বেডরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

এবার হতভম্ব হওয়ার পালা মিজানের।

৩অনেকক্ষণ ধরে কেয়ার ঘরের দরজা বন্দ। মিজান আর থাকতে পারলনা। দরজা ধাক্কাতে হলো। দুজনে না খেয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে কেয়া দরজা খুলে দিল। সে নিজে যেন এখন কিছুটা লজ্জিত। 

দুখিত মিজান আমি ভেবে দেখলাম তুমি ঠিক আমাদের এসব দামী গিফট নেওয়া উচিত না। সুমন তো আমার আপন ভাই বা তেমন কোন নিকট আত্মীয়ের পর্যায় এ পড়েনা। তুমি মনে হয়ে আমার উপর মাইন্ড করেছ ?

বুঝা যাচ্ছে কেয়া স্বামীকে খুশি করার জন্য তাই বলছে। মিজান আবেগ এ বউকে জড়িয়ে ধরল বলল সত্যি তার ভিতরের হতাশা র কথা যা আগে কখনো বউকে বলতে পারেনি লজ্জায় সংকোচে। এত অহংকার হীন কি হওয়া যায় ?

তুমি জান আমার কিছু ই নাই। অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছি মামার বাড়িতে অনাদরে বেড়ে উঠা যাকে বলে। আমার কোনো কিছু উজ্বল না। সেই তুলনায় তুমি সুমন তোমরা অনেক উপরের। এ আমার হয়তবা ঈর্ষা। আমাকে মাপ করে দাও। এসব ফেরত দেওয়ার দরকার নাই। ও মাইন্ড করতে পারে। তবে আমি মাঝে মাঝে হীনমন্যতা প্রকাশ করি মাপ করে দিও। তোমার অশ্রদ্বা হয় সেরকম চিন্তা করতে চাইনা। 

স্বামীর যন্ত্রণা হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করলো গভীর ভাবে। সে নিজে এখন লজ্জা পাছে তুচ্ছ টিভি কাপড় চোপড় এ এত উচ্বাস দেখানোর জন্য। কথা বলল অন্য প্রসঙ্গে আগে র প্রসঙ্গে না গিয়ে। 

তোমাকে নিয়ে আমি অনেক গ্রেট ফিল করি তুমি জাননা। অনেক এর মাঝে তোমাকে আলাদা মনে করে তো ভালোবাসলাম। আমার ভুল হয়ে গেছে। এখন থেকে এই ঘরে সুধু তোমার আমার কেনা জিনিস ই থাকবে। 

উপসংহারে দুজনে খাওয়ার পর বিশাল টিভি দেখতে বসলো। কেয়া কে আবার উচ্ছাসিত দেখা যাচ্ছে।
দেখো দেখো কালার টা কি উজ্বল টিভি র। 

টিভি উজ্বল তুমি উজ্বল তোমরা উজ্বল আমি কেন যে উজ্বল হতে পারিনা। হতাশায় ভাবে মিজান বউ এর কাছে সেই ভাব প্রকাশ না করে। 

অসমাপ্ত ভাবে সমাপ্ত করা হলো জীবনের কাহিনী।
Likes ১৩ Comments
০ Share

Comments (13)

  • - তাহমিদুর রহমান

    emoticons

    - মাসুম বাদল

    emoticonsemoticons

    - মুহাম্মাদ আরিফুর রহমান

    emoticons সুধু প্প্রস্তাব করলে হবে! এটা নিয়ে ত কাজ অ করতে হবে, নাকি emoticons। ১১ তারিখ ইফতার পার্টিতে আসেন; সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

    • - মাসুম বাদল

      আসবো, ভাই!!!

    Load more comments...