Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুন জারিন আলম

৯ বছর আগে লিখেছেন

আতংকের এক ঝড় বৃষ্টির রাত

ভূমিকা:পুরান একটি গল্প।ব্যাকগ্রাউন্ডে ঝড়বৃষ্টি থাকায় বর্ষা লেখা হিসাবে পোষ্ট করলাম।লেখাটি পড়ার আমন্ত্রন জানান হল সবাইকে।
্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্
মূল গল্প:
খুব ঝড় বৃষ্টির রাত আজকে। ঘন ঘন বিজলীর চমকে প্রকৃতি কম্পিত।চারিদিকে প্রকৃতি বেশ নিস্তব্দ। শুধু তাদের কম্পিউটার অপারেটর এর টাইপ এর খট খট আওয়াজ ছাড়া চারিদিকে কোনো শব্দ নাই। এইরকম একটা দিনে ও কাজ শেষ করতে করতে তার দেরী হয়ে গেল। অফিসে ধরতে গেলে এখন তেমন মানুষ নাই। সে তাদের এক কম্পিউটার অপারেটর ক্লার্ক মিজানুর রহমান আর এম ডি স্যার। 

কাজী আয়েশা তার নাম। কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এ। দুই ছেলে তা-হীন মা-হীন। সাজানো সংসার তার। তার বাসা আজিমপুর গোরস্থান এর সামনে দুই ব্লক পরে।আজকে তার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল তাড়াতড়ি।তার দুই ছেলের প্রিয় কার্টুন একসঙ্গে দেখার কথা।স্বামী সেলিম আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

জানালার পর্দা লরিয়ে বারবার সে দেখছে বৃষ্টি থেমেছে কিনা।বরং বৃষ্টি বাড়ছে সময়ের সাথে সাথে।সে অপেক্ষা করছে বৃষ্টি সামান্য কমলে বেরিয়ে পড়বে।আজকে সেলিম বিকালে বাসায় চলে গিয়েছে তাহীন কে ডাক্তার দেখানোর জন্য। 

আপা আজকে ট্যাক্সি কইরা চইলা যান। বাসের জন্য অপেক্ষা করলে ভিজে যাবেন। বাহিরে অনেক বৃষ্টি। দারোয়ান শফিকুর বলল। 

একটা ট্যাক্সি ডেকে আনতে পার ভাই ? অনুরোধ আয়েশার। 

ট্যাক্সি উঠতে উঠতে সে খানিকটা ভিজে গেল। আশেপাশে অন্ধকার হয়ে আছে ট্যাক্সি ওয়ালার মুখ টা ভালো ভাবে দেখতে পারছেনা। 

কোথায় যাইবেন অতিরিক্ত গম্ভীর কর্কশ আওয়াজ। 

১৪ নম্বর কলোনী আজিমপুর। 

সে কিছু ক্ষণ চেষ্টা করলো ট্যাক্সি ড্রাইভার এর মুখটা দেখতে মিরর এ। কিন্তু মিরর টাকে প্লেস করেছে তার বিপরীত দিকে। ড্রাইভার তাকে দেখে যাচ্ছে বুঝা যাচ্ছে। 

এই যে ড্রাইভার আপনার লাইট জ্বালান।অন্ধকার তো। 
সাধারণত কবরস্থান টা কে সে প্রতিদিন অতিক্রম করে যায়। আজকে নির্জন শুনশান প্রকৃতি ড্রাইভার কে উল্টা রাস্তা দিয়ে যেতে বলল। 

এদিক দিয়া গেলে অনেক ঘুরা হইব। গম্ভীর ভাবে ড্রাইভার এর জবাব। 

আচ্ছা ঠিক আছে ভালো বুঝ সেদিক দিয়ে যাও। এখন বাজে মাত্র আটটা। দেখে মনে হচ্ছে যেন মাঝ রাত। রাস্তা ঘাট এত অন্ধকার। আসে পাশে কোনো মানুষের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছেনা। সাধারণত সে ভিতু প্রকৃতির না। কাজ করতে করতে একা পথ চলতে চলতে তার সাহস আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিত্ব হয়ে গেছে। অকারণে ভয় পায়না। অকারণে চমকায় না। 

এই মুহুর্তে সে লাফ দিয়ে চমকে বসলো। লোকটি পিছন ঘুরে বলল আপা ট্যাক্সি র তেল শেষ। যাইবনা আর। 

লোকটির চেহারা একটু বিকৃত ধরনের।সারা মুখে আগুনের পোড়া দাগ। 

আয়েশা লজ্জা পেয়ে যায় চমকে উঠার জন্য । মানুষের চেহারা উপরে তো কারো হাত নাই। 

ভাই তোমার মুখে কি হয়েছে ?আমি অন্যমনস্ক থাকার জন্য চমকে উঠেছি। তুমি কিছু মনে করনা ভাই। 

না মনে করনের কি আছে আপা। আল্লাহ পাক আমার চেহারা টা যত্ন কইরা বানায়নি। আল্লাহ পাকের মর্জি। সবাই ভয় পায় আমারে দেখলে। আমি কিছু মনে করিনা। 

থামলে কেন অস্বস্তিভরে জিজ্ঞাসা করলো আয়েশা। 

আপা শুনেন নাই এই গাড়ি যাইবনা আর। তেল শেষ। 

ওমা কি শুনালে তুমি আমি এই বৃষ্টির মধ্যে রাতে কিভাবে যাব। এখন ও আমার বাসা দূর আছে। 

তাহলে কি বলমু এই গাড়িতে কি বসে থাকবেন ? একটা কাজ করেন এখানে ঘুমায় থাকেন। পরের দিন সকালে বৃষ্টি থামলে অন্য ট্যাক্সি খুইজা বাসায় চইলা যাইয়েন।বলে মজার ভঙ্গিতে হাসতে থাকে।

এই রাস্তাটা ভাল না আপা।কবরস্থানের পাশে তো।যত চোর ডাকাত ভূত প্রেত সবকিছুর আড্ডা এখানে।লোকটি সতর্ক করে দিল আয়েশাকে।

আমি কি আপনারে একটু আগাই দিব যদি বলেন?

না না লাগবেনা নামতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে নিল একবার।

এখন সত্যি সত্যি আয়েশা বেশ ভয় পেল। মনের দিকে দমে গেল। ট্যাক্সি ওয়ালা কে ভয়ংকর লোক মনে হচ্ছে এখন। মনে মনে দোয়া ইউনুস আয়াতুল কুরছি পড়তে লাগলো। তাড়াতাড়ি মোবাইল এ সেলিম কে ফোনে করার চেষ্টা করলো। 

ওহ খোদা এই সময় ফোনে এ নেটওয়ার্ক নাই। বাধ্য হয়ে বৃষ্টির মধ্যে নেমে গেল। বোকার মত আজকে শাড়ি পরেছি খোদা। নিজেকে নিজে বকতে লাগলো। 

বৃষ্টিতে ছপ ছপ আওয়াজ হচ্ছে তার হাটার। মনে হচ্ছে কেও একজন তার পিছন পিছন আসছে। সে ভয়ে থেমে গেল। পিছনে তাকিয়ে কাওকে পেলনা। 

ড্রাইভারটা আমাকে ফলো করছেনা তো।ধেৎ ভয়ে আমার মনটা ছোট হয়ে গেছে।ক্ষতি করতে চাইলে তো আগে করতে পারত।

আবার সে একই ঘস্টানা হাটার আওয়াজ। মনে হচ্ছে কেও ঘুরু গম্ভীর চালে তার পিছনে পিছনে হেটে আসছে। 

সে এখন মরিয়া হয়ে শাড়ি একটু তুলে ধরে দৌড়াতে শুরু করলো। হে আল্লাহ।

রাস্তা বেশ অন্ধকার। মোবাইল এর আলোতে সে এখন পথ চলছে। এখন মনে হচ্ছে কেউ একজন তার সাথে পথ চলছে। 

কবরস্থানে পৌছল অবশেষে। এর পিছনে তার বাসা। পিছনের পদশব্দ আরও দ্রত আসতে লাগল কাছে।সে এখন জোরে দৌড়াতে লাগল।সামনে একটা বিশাল গাছের মত মনে হওয়াতে হাতড়ে হাতড়ে তার পিছনে লুকালো।দেখতে চাইল সত্যি তার পিছনে কেও আসছে কিনা।

এতক্ষনে দেখা গেল তার পিছনে কেও একজন আসছিল।লোকটি এদিক ওদিক তাকালো।তার পরনে কালো রেনকোট জাতীয় ড্রেস পরা এবং লোকটি বেশ দীর্ঘাকৃতির মনে হচ্ছে।লোকটি আবার আশেপাশে তাকিয়ে সামনে বাড়ীটায় ঢুকে গেল।যাক নিশ্চিত হওয়া গেল লোকটি তাকে ফলো করছিলনা।

এখান থেকে কবরস্থান দেখা যাচ্ছে ।তার পাশে দিয়ে কিভাবে যাবে সে চিন্তা করছে।

সে চমকে তাকিয়ে দেখল সামনে বাড়ীর লোকটা আবার বেরিয়ে আসছে ।টেনে হিছড়ে কিছু একটা নিয়ে আসছে।ভয়ে সে পাথরের মত গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইল।লোকটি তাকে পাশ কটিয়ে যেতে থাকল সামনে।একটা বিরাট বস্তা টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভাবছে সে লোকটাকে ফলো করতে করতে যাবে কিনা তখন ই লাফ দিয়ে দুই পা পিছনে হটে গেল যা দেখল আলোতে।

ও আল্লাহ রক্ত।লোকটার বস্তা থেকে রক্ত বেরিয়ে আসছে।খুব দ্রত লোকটি কবরস্থানে ঢুকে গেল।

আল্লাহ এইটুকু রাস্তা নিরাপদে নিয়ে চল ঢুকরে বলে উঠলো।দেখল আরও দুজন লোক সাথে তারা মাটি খুড়ে যাচ্ছে। মনে হল কেও একজন তার মুখে ট্চ ফেলল।এই ধর জাতীয় একটা শব্দ শুনল।প্রানপনে সে দৌড়াতে লাগল।জুতা খুলে ফেলল।শাড়ীটাকে পেচাতে পেচাতে দৌড়াতে লাগল সর্বশক্তিতে।

এইসময় খুব জোরে বিজলি চমকে উঠলো। বিজলীর আলোয় যা দেখল তাতে চিত্কার দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। 

আকাশ সমান উচু লম্বা মানুষ না কি সাদা কাফনের কাপড়ে আবৃত। 

হায় আল্লাহ কি দেখছি আমি চিতকার করছে আর তার সাথে দৌড়াচ্ছে। তাহলে সবাই যে বলে এই গোরস্থানে ভূত আছে সত্যি মনে হয়। 

আমার তাহীন মাহীন বাবা ভয়ে চিত্কার করতে করতে সে ছুটছে। 

বিল্ডিং এর কাছে এসে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। একটু পরে চেতনা ফিরে আসল তার। 

ওহ আল্লাহ আমি বেছে আছি এখন। আস্তে আস্তে উঠে বসলো। দরজায় নক করলো। অবশেষে আয়েশা তার বাসায় পৌছতে সক্ষম হলো। ঘরে পৌছামাত্র তার স্বামী বাচ্চা তাকে নিয়ে অস্থির হয়ে পড়ল।স্বামীর সাথে আজকে রাতের বিপদজনক অ্যডভেন্চার শেয়ার করলনা।শুধু শুধু বেচারাকে টেনশন দেওয়া হবে।

রাত দুইটায় পানি খেতে এসে দেখে ডাইনিং রুমের জানালা খোলা।জানালা লাগাতে গিয়ে ভয়ে লাফ দিয়ে পিছনে সরে যায়।রাতে দেখা সেই লোকটা এখানে তার ঘরের পাশে কি করছে? ভাগ্যিস লোকটা এখন তাকে দেখেনি।লোকটা তাকে ফলো করে এখানে আসেনি তো? না কি সে ভয়ে সবকিছুই অতিরন্জিত করে ভাবছে।সে খুব সাবধানে সবগুলি জানালা চেক করল তরপর সবগুলির ছিটকানী লাগিয়ে দিল শক্ত করে।

সারারাত আর সে ঘুমালো না।একবার ভাবল পুলিশে ফোন করবে কিনা।তাহলে স্বামীকে সব খুলে জানাতে হবে।

দরজায় টুকটুক আওয়াজ। কে একজন নক করছে ।চমকে গিয়ে দৌড়ে ভিতরের রুমে আসল।

পরিশিষ্ট :পরের দিন আয়েশা কাজে যাওয়ার পথে দেখল এখানে বিরাট বট গাছটাতে একটা সাদা শাড়ি ঝুলে আছে। সম্ভবত ঝড়ের প্রকোপে কোনো বাসার বারান্দা থেকে উড়ে এসে গাছে লটকে ছিল। যেটাকে ভয়ে অন্ধকার রাতে ভূত মনে করেছিল। সে হাসছিল আর ভাবছিল ভয় ভূত প্রেত দেখা এটা আসলে দুর্বল মনের কল্পনা। 

অফিসে বসে আছে।অপেক্ষা করছে সেলিমের জন্য একসাথে বাসায় ফিরবে।চা খাচ্ছিল আর অলসভাবে আজকের পেপারে চোখ বুলাচ্ছিল।একটা খবরের দিকে চোখ পড়তে ছলকে হাতের চা মাটিতে পড়ে গেল।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর একমাত্র মেয়ে নৃশংসভাবে তার বাসভবনে খুন হয়েছে ধারনা করছে পুলিশ ।তাকে কালকে থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সারা ঘরে রক্তের ছাপ পাওয়া গিয়েছে।বাড়ীর নম্বর মিলাতে দেখল কালকে যে বাড়ীতে এক লোককে ঢুকতে দেখেছে।পুলিশ আরও ধারনা করছে আততায়ী আশেপাশে কোথায় লুকিয়ে আছে।সবাইকে সাবধান করা হচ্ছে এই মর্মে সবাই যেন কলাপসিবল শক্ত করে লাগিয়ে রাখে কোন অপরিচিত লোককে ঘরে ঢুকতে না দেয়।লোকটি নির্ঘাত আজকে তার বাসায় হামলা করবে।

হে আল্লাহ ভয়ে সে গুঙিয়ে উঠল।আমার কি করা উচিত। তার এখন পুলিশে ইনফর্ম করা ছাড়া কোন উপায় নাই।

 

Likes ১৫ Comments
০ Share