➳ আসছে তীরন্দাজের "অশ্লীল সংখ্যা"।
লেখা আহব্বান করার পূর্বে মনে হল, অশ্লীল বলতে আমরা কি বোঝাতে চাইছি তা সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করে দেওয়া জরুরী। অবশ্য মুক্তচিন্তা ও সমৃদ্ধ ভাবধারার কবি সাহিত্যিকগনের জন্য এই ব্যাখার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই বলে আমার বিশ্বাস।
সাহিত্যে মানুষের শরীরবৃত্তীয় চাহিদা, নারী-পুরুষের মাঝে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা স্বর্গীয় বন্ধন, নারীর শরীরের বিভঙ্গ থেকে শুরু করে সোজা কথায় যৌনতার শৈল্পিক রুপায়ন ঘটেছে। অশ্লীলতা মানুষের শরীরের কোনো জিনিসই না। ওটা কীভাবে ব্যবহৃতহবে সেটা হলো মুখ্য বিষয়। যদি একটা মানুষের সাথে আর একটা মানুষের সঙ্গম খুব সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয় তবে তা নোংরা হবে কেন? এবং একটি ভালো জিনিসকে খারাপভাবে প্রকাশ করলে সেটিও নোংরা হতে পারে। সাহিত্যে অশ্লীলতা যে সৌন্দর্য মন্ডিত স্বর্গীয় রূপ পেয়েছে তা আর অন্য কোন মাধ্যমে পায়নি। উপন্যাস, গল্প, কবিতা সহ সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় কবি সাহিত্যিকগন অশ্লীলতাকে শৈল্পিক আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন আপন দৃষ্টিকোণ থেকে এবং এরই মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি, অনাচার, অন্যায় ও অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে।
তাই তীরন্দাজ বর্তমান সময়ের উদীয়মান তথা আগামীর বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের জন্য এই বিরল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে হাজির হয়েছে।
সাহিত্যে অশ্লীলতা নিয়ে কথা হচ্ছিলো কিছু নবীন কবি ও সাহিত্য বিশারদদের সাথে।
কথা প্রসঙ্গে আমাকেও কিছু বলতে হয়েছিলো। এক পর্যায়ে আমি শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদ স্যারের একটা কবিতার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম তাদের। কিন্তু কেউ কবিতাটি কে সাহিত্য বিচারে উচ্চাসন দিতে রাজি হননি। কবিতার অংশ বিশেষ এমনঃ
" আমার মুঠোতে দাও রাজদণ্ড! দাও! ধরি! বন্য দেবতা,
এতো দৃড়! পেশল! শক্তিমান! উচ্চশির! দাও তারে মুখগহবরে!
কী প্রচন্ড! আ-হ! কন্ঠের ভেতরে শুনি পৌরাণিক অপরুপ কথা,
দমম বন্ধ হয়ে আসে! ভেঙে পড়ছি আশ্বিনের ঝড়ে! "
এইখানে, শিউলি বোঁটায় রাখো ব্যাঘ্রজিভ, কমলোষ্ঠে, চোষো, ভাঙো!
ঘন মধু ঝরে, আহ, মধু খাও, প্রিয়! ম'-রে যা-চ্ছি !
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝ'-রে যাচ্ছি, ঢোকা, মধুময় চাকের ভেতরে।"
অনেকেই না বুঝে সাহিত্যের অশ্লীলতা নিয়ে মুখে ফেনা তুলছে। আসলে সাহিত্যে নগ্নতা বলে সত্যিকার অর্থে কিছু নেই। সাহিত্যের সবই সুন্দর, অশ্লীল কবিতা বা গল্প-উপন্যাস আরো সুন্দর। (তবে অবশ্যই চটি বই নয়,কারন ওগুলিই রাস্তার বই)
লালনের জাত গেলো গানটায় কি বললো -
গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কী ক্ষতি হয়।
লালন বলে জাত কারে কয়
এই ভ্রম তো গেল না।
জাত গেল জাত গেল বলে
একি আজব কারখানা।
সত্য কাজে কেউ নয় রাজি
সবই দেখি তা না না না...
সমকালীন বাংলা সাহিত্যে আমরা যদি কবি আল-মাহমুদের কবিতা গুলো পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাব, তাঁর অনেক কবিতাই অনুপম অশ্লীলতায় সরব।
তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী
খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ
শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি
তারো বেশী ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ ।
(সোনালী কাবিন- সনেট ১০ )
চরের মাটির মতো খুলে দাও শরীরের ভাজ
উগোল মাছের মতো খুলে দাও শরীরের ভাজ ।
(আষাড়ের রাত : আরব্যরজনীর রাজহাস )
আল-মাহমুদের কবিতা বা সাহিত্য পর্যবেক্ষণ করলে আরো অনেক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যাবে। শুধু আল-মাহমুদ নয় আধুনিক বাংলা সাহিত্যে কবি বা সাহিত্যিকদের হাতে যৌনতার শৈল্পিক রুপায়ন ঘটেছে। যেমন আল মাহমুদের মত তাসলিমা নাসরিনের লেখা কবিতায়ও:
শরীরের এই হাল, শরীরে গ্রীষ্মকাল,
স্নানের জল আছে? ও যুবক স্নানের জল আছে তো?
তোর একার জলে না হলে যুবকের দল কাছে তো?
(কাঁপন ১৭ তাসলিমা নাসরিন)
এছাড়া তাসলিমা তাসরিনের কবিতা, উপন্যাস, হুমায়ুন আজাদের নারী উপন্যাস সহ আরো অনেক কবি সাহিত্যিক রয়েছেন, যাদের কবিতা, উপন্যাস সাহিত্যে অশ্লীলতাকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে । সাহিত্যে যৌনতার উপস্থিতি সমাজের বিদ্যমান দ্বন্দ্বকে রুপায়ন করার জন্য প্রয়োজন হয়। তবে এই রুপায়ন যেন যৌন সাহিত্য বা পর্ণো সাহিত্যের রুপান্তরিত না হয় সে দিকেও আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
প্রকৃত মানুষের / অতিমানবের কোন জাত / সংকীর্ণতা থাকেনা...
আমরা সবাই সাধারণ মানুষ, ঘোমটার তলে খেমটা নাচি আমরা সবাই, ওনারা অসাধারণ ছিলেন তাই কোন রাখঢাক ছিলোনা।
আর কথা নয়,এবার আমরা তীরন্দাজের অশ্লীল সংখ্যায় চলে যাই............
লেখক এবং পাঠকদের আন্তরিক মূল্যায়ন এবং ভালোবাসায় তীরন্দাজ তৃতীয় সংখ্যায় পদার্পন করতে যাচ্ছে। বিগত মার্কেজ সংখ্যার মত এবারও আমরা বিষয় ভিত্তিক একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে যাচ্ছি। মানুষের সর্বাঙ্গিন অশ্লীল ক্রিয়াকলাপকে বিষয়বস্তু করে এবার প্রকাশিত হবে তীরন্দাজের “অশ্লীল সংখ্যা।”
➳ আমরা আনন্দিত যে, এবারের সংখ্যা(তৃতীয় সংখ্যা) থেকে লেখকদেরকে তার লেখার জন্য সম্মানি প্রদান করা হবে।
যেসব বিষয়বস্তুকে ভিত্তি করে লেখা পাঠাতে হবে-
➳ আমাদের দেশ ও সমাজে প্রচলিত অশ্লীলতাঃ
১। বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, বিজ্ঞাপন চিত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর জৈবিক ব্যবহার।
২। ভারতীয় সিরিয়াল তথা সংস্কৃতির প্রভাব বিশ্লেষণ।
৩। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, কোটা প্রথার প্রভাব, রাজনৈতিক দমন নিপীড়ন ইত্যাদি।
৪। প্রশ্নপত্র ফাঁস, ভর্তি অনিয়ম, ভিক্ষাবৃত্তি, ফতোয়া ইত্যাদির প্রভাব ও বিশ্লেষণ।
৫। পাঠ্য বইয়ে যৌন শিক্ষা; পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা (বিশেষত সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর) ।
৬। সংবিধানের আইন পর্যালোচনা, স্বাধীন মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা, মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা।
এছাড়া লেখকের কাছে বিবেচ্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়বস্তু...
➳ মানসিক অশ্লীলতাঃ
১। মননশীলতার অবক্ষয়ে গালির প্রভাব, ধর্মশিক্ষার রোডম্যাপ উপস্থাপন,
২। পর্নোগ্রাফি, চটি ইত্যাদির ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর সম্পর্কের উপস্থাপন পর্যালোচনা।
৩। মানসিক যৌনতা ( Pervertness ), পতিতা ও পতিতাবৃত্তির ক্ষেত্রে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা।
৪।ইভটিজিং, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি।
➳ জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক বিষয়ঃ
১। বিশ্বে সরকার ও বিভিন্ন গোষ্ঠি কর্তৃক নিষিদ্ধ বইসমূহ যা মানব কল্যাণকর বিবেচিত হয়েছে; পর্যালোচনা।
২। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, জিঞ্জিয়ান ইত্যাদি প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা।
৩। দেশান্তরিত হতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিরা যাদের কর্মকান্ড কল্যাণকর ছিল।
➳ সাহিত্য ও অশ্লীলতাঃ
১। আঙ্গিক বিচার, পর্যালোচনা।
➳ যেসব বিভাগে লেখা পাঠাতে পারবেনঃ
#কবিতা
#প্রবন্ধ
#অনুবাদ সাহিত্য
#গল্প
#সাক্ষাৎকার
#আলোকচিত্র
#সাহিত্য ও অশ্লীলতা
#চিত্র শিল্প
#একাত্তর
#ভ্রমণ
#বই আলোচনা
#লিটল ম্যাগ আলোচনা
#শ্রদ্ধাঞ্জলি
➳ পরিশিষ্টঃ
➳ বিজয় ফন্টে লেখা পাঠাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
➳ লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।
➳ লেখা পাঠাতে মেইল করুনঃ tirondaz2013@gmail.com
➳ আরো জানতে- 01670837418, 01744927044
Comments (0)
খুব লাগলো তথ্যপূর্ণ লেখাটা।
ধন্যবাদ
অসাধারন ।
ধন্যবাদ