বিজয় দিবস। নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের আকাশে বিজয়ের রঙ ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালির হাজার বছরের গ্লানি মোচনের দিন এই ১৬ই ডিসেম্বর | জাতির মুক্তির দিন। এই দিনে বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের পতাকা,জাতীয় সংগীত ও মানচিত্র। এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় 'স্বাধীন বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও আহবানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের বিজয়। তাই তো দিনটি জাতির কাছে অবারিত রঙিন আকাশ ছোঁয়ার দিন।
কোন গোষ্ঠি পরাধীন থাকলে সে গোষ্ঠি মরিয়া হয়ে ওঠে স্বাধীনতার জন্য। কোন গোষ্ঠি বেঁচে থাকার মৌলিক শর্তই হলো স্বাধীনতা| আর এই স্বাধীনতা পেতে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে হলেও মানুষ তা পেতে চায়। পৃথিবী সৃষ্টি থেকে আজ অবধী জাতিতে-জাতিতে,গোষ্ঠিতে-গোষ্ঠিতে এ দৃশ্যই পরিলক্ষিত হয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আত্মা,দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত ও সম্ভ্রম,কোটি মানুষের করুণ কান্না,লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি, স্বপ্ন ও সম্ভবনা ধুলিসাৎ করে আবির্ভাব ঘটেছে কাঙ্খিত বিজয়ের। বাঙালি জাতি ভাষার মর্যাদার জন্য,সামপ্রদায়িক ও স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে সর্ব শক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল পাকিস্তানকে পরাস্ত করে।
বাঙালি সংস্কৃতিকে হামলা করে জাতি সত্তার পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চেয়ে ছিল। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে তারা বিকৃত করতে চেয়েছিল। বাঙালি জাতির স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে প্রস্তুরাঘাত করেছিল। এদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে এদেশকে করেছিল পরনির্ভরশীল। ফলে বাঙালি আর ঘরে বসে থাকতে পারেনি। তারা অপেক্ষা করছিলো একটি ঘোষনার। ৭ই মার্চ যখন ঘোষনা এলো তখন বাঙালি একত্রিত হলো। প্রত্যাশা ছিল সুস্থ,সুন্দর,নিরাপদ,মানসম্মত সমাজব্যবস্থা। প্রত্যাশা ছিল সুশাসন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল ভাত-কাপড়-আশ্রয়-চিকিৎসা- শিক্ষা- বিনোদন ইত্যাদির নিশ্চয়তা।
জানি না কততম বিজয় দিবসে এই বাঙালি জাতির থাকবে না নিরাপত্তার অভাব,দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি,অন্নের হাহাকার,দুর্নীতির শিখরচুম্বি অবস্থান,মানবাধিকারের লঙ্ঘন। রাষ্ট্র দিবে আদিবাসি জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক স্বীকৃতি, মৌলবাদী গোষ্ঠির প্রতিরোধে চাপা পড়বে না নারী উন্নয়ন নীতিমালা আর নির্য়াতিত হবে না ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। সংস্কৃতির ধারক কোন ভাষ্কর্য ভাঙ্গতে সাহস করবে না কোন গোষ্ঠি,অবৈধ ভাবে কেউ সম্পদের পাহাড় গড়তে পারবে না। লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই দিবে ট্যাক্স। রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা করবে যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণের কথা স্মরণ করে।
প্রত্যেক বিজয় দিবসে শুধু স্মৃতিচারণ নয়,করতে হবে নিজ অবস্থানের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য অঙ্গীকার। এই দিবসে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করতে হবে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা ও গৌরবের উপাখ্যান হিসেবে।
Comments (0)
divai
সাবলীল একটা গল্প। ভালো লাগলো।
বোকাদের প্রেম অনেকটা নিখাদ হয়।
সাবলিল প্রকাশ। চমৎকার। অনেক সুন্দর। ভাল থাকুন সবসময়।