বৃষ্টিটা আসলো জোরে সোরে। ধরন দেখে মনে হচ্ছে সে পণ করেই এসেছে থামবেনা।কৈশোরর একটা সময় বৃষ্টি ভীতি ছিল খুব। আমরা থাকতাম চুয়েট গেইট এলাকায় একটা টিন শেড ভাড়া বাসায়। বৃষ্টি ভীতি কিভাবে ধরা পড়লো সে ঘটনাটা বলি। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি। থেমে থেমে বিকট শব্দেবজ্রপাত। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম বিচিত্র কারণে আমার সারা শরীর কাঁপছে । বৃষ্টিরবেগ যত বাড়ছে আমার ভয় বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে। আমার শুধু মনে হচ্ছিল মুহূর্তে বাজ পড়ে বাড়ি ঘর পুড়ে যাবে। গল গল করে বানের পানি ঢুকবে ঘরে।ভয়ে আমি কাঁথামুড়ি দিয়ে গুটিশুটি মেরে খাটে শুয়ে পড়ি। অপেক্ষায় থাকি বৃষ্টি থামার। সেই থেকে ভীতিটা শুরু । ঠিক কতদিন ছিল মনে নেই।সাইকোলোজিকাল দিকদিয়ে এটা কে কী বিলতে পারি? বৃষ্টি ভীতি?!! কেজানে।তবে এখন সেই সমস্যা নেই।এস এস সি পরীক্ষার পর পুরো পরিবার সহ চিটাগং টাউনে চলে আসি। এর পর বৃষ্টি আমাকে ভয় দেখায় নি। আমি এখনো আগের সেই ভীতির কারণ খুঁজে পাইনি।
অদ্ভুত হলেও সত্যি, আমার জীবনে অনেক স্মরনীয় মুহূর্তের সাথে বৃষ্টি জড়িত। ঠিক এইরকম ভর বাদলের রাতে আমি রাহার লেখা চিঠিটা খুঁজে পাই আমার কলেজ ব্যাগে।কলেজ থেকে ফিরে ব্যাগটা ফেলে রেখেছিলাম একপাশে।কলেজে খুব একটা যেতাম না । প্র্যাক্টিকাল ক্লাস ছিল। নাগেলে সমস্যা। সেদিন আর ব্যাগ খুলিনি। পরদিন কী মনে করে খুলে দেখলাম একটা গোলাপি খাম। তার উপরে লেখা ছিল
প্রাপক
"পিয়াস"
বাইরে তখন অঝোর ধারার বৃষ্টি। চিঠির শেষের দিকের লাইন গুলো ছিল এরকম। "তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।অনেক দিন বলব বলব করে বলা হয়নি...... ......... .........." চিঠিটা পুরো পড়তে মন চাইছিল না ,যদি শেষ হয়ে যায়! এধরণের চিঠি সেই বারই প্রথম। হয়তো সেবারই শেষ।পরদিন কলেজে গেলাম। সেদিন রাহা কলেজে আসেনি। ছুটির পর বাসায় চলে আসছি।এমন সময় পেছন থেকে নীলার কন্ঠ শুনি, "পিয়াস,শুনে যা"
-"হ্যা বল"
-"এইনে ,রাহার চিঠি", বলেই চলে গেল। আমাকে কিছু বলার সু্যোগ নাদিয়েই। সেদিনের চিঠিটাও গোলাপি খামে ছিল। সেদিন ও উপরে লেখাছিল ,প্রাপক "পিয়াস"। কিন্তু ভেতরের লেখাগুলো শুধু সেদিনের মতো ছিলনা। শুধু একটাই ছত্র,"ভালথেকো,পিয়াস" ।না,এর পর রাহা আর কোনোদিন কলেজে আসেনি। কোনো খোঁজ ই পাইনি তার। আমি রাহার প্রথম চিঠির বাকিটা আর পড়িনি। থাকনা, কিছু কথা নিভৃতে অন্তরালে।ক্ষতি তো নেই।
না, ধারণা ভুল। বৃষ্টিটা থেমে এসেছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মনে হচ্ছে রাতের আঁধারে এক মুহূর্ত দিন। রবি ঠাকুর তো আর সাধে বলেননি,"এমন দিনে তারে বলা যায়,এমন ঘনঘোর বরষায়"। বাইরে বৃষ্টি স্নিগ্ধ বিভাবরী । বিজলির ঝলকানিতে বাসার সামনের জারুল গাছটা অদ্ভুত লাগছে। নিজেও রবি ঠাকুর হয়ে যাব নাকি একবার।
"এমন বরষার নিশায়,মেঘবালিকা !
দেখা দাওনিকো তুমি,দেখে যাওনিকো মোরে
অন্তিম বারের মতো
এমন বরষার নিশায়"
(পরিশিষ্টঃ উপরের লেখাটি একটা পুরোনো ডায়রির অংশ। পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল,ভাঙ্গা জিনিশপত্র, পুরোনো খাতা কিনে (যাদের চট্টগ্রামের ভাষায় বলে কটকটি ওয়ালা) সেরকম একজনের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলাম কেজি দরে। পিয়াসের নিজের সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে ১৬-১৭ বছর বয়সি এক অসম্ভব সুন্দর যুবতীর ছবি পাওয়া গেছে। তবে সেটা "রাহা"র কিনা
নিশ্চিত নই)