Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ইফ্ফাত রুপন

৬ বছর আগে লিখেছেন

প্রত্যুত্তর

অরণ্য,

এই লিখাটির শুরু তুমি যেভাবে দেখতে পাচ্ছো আমি ঠিক সেভাবে শুরু করতে চাচ্ছিলাম না। প্রারম্ভিকের ব্যাপারটা আমার মধ্যে নেই। কোন কিছুর সূচনা আমার দ্বারা হয়তো আজ পর্যন্ত সম্ভব হয় নি। অনেকটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখানোর জন্য আজ তোমাকে লিখতে বসেছিলাম। পারলাম না, হয়তো কখনো পারবোও না। তবে সূচনার কিছুটা অভিব্যাক্তি আজ তোমার হাতে আমি কিছুটা হলেও দিতে পারবো। তোমার কাছে আমার লিখার প্রথম সূচনা।

তোমাকে লিখার জন্য আজ কেন যেন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম তোমাকে কিছু লিখবো। পারছিলাম না। কেন পারছিলাম না তার উত্তরটা আমার জানা নেই। তবে আমি আশা করি তোমার কাছে উত্তরটা নিশ্চয়ই আছে। আর তুমি নিশ্চয়ই এটাও বুঝতে পারছো যে কেন তোমার কাছে আমি লিখতে শুরু করেছি।

আমি তোমাকে যখন এই লিখাটি লিখছিলাম তখন একটা বেশ অর্থবহ শব্দ দিয়ে লিখাটা শুরু করতে আমার ইচ্ছে করছিলো। যদিও শব্দটি তোমার কাছ থেকেই শুনা। তবে আজ তোমার নাম দিয়ে শুরু করলাম। তুমি কি জানো তোমার নামটা অনেক সুন্দর। “অরণ্য”। তোমার নামটা শুনলেই কেন যেন মনের মধ্যে এক ধরণের প্রশান্তির একটা ভাব চলে আসে। আজ তোমায় তোমার দেয়া সেই শব্দটি দিয়ে সম্বোধন না করায় রাগ করছ নাতো?

শোন অরণ্য, আমার বেশ কয়দিন ধরে মনে হচ্ছে তুমি আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছো। অবহেলার খুবই সুক্ষ তবে বেশ স্পষ্ট একটা ছাপ আমি তোমার মধ্যে এখন প্রায়ই দেখতে পাই। হয়তো তুমি এসব তোমার নিজের অজান্তে করছো। কিংবা হয়তো আমাকে তুমি আর আগের মতো করে দেখতে পারছো না। জানো তোমার দেয়া লাল জামাটা আমি সেদিনও পরেছিলাম। কপালে লাল টিপ দিয়েছিলাম। কোন একটা কারণে আমাকে লাল টিপে দেখতে পেয়ে নাম না জানা অনুভূতির তোমার সেই মুখ আমি আবারো সেদিন খুব দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে সেদিন দেখতে পাও নি। তোমার ভোরের ক্লাসটিতে শুধুমাত্র তোমার সেই অভিব্যাক্তি দেখার জন্য আমি সেদিন তোমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আসো নি। আমার ফোনও ধরো নি। একা একা আমি তোমার জন্য সকালের বেশ খানিকটা সময় সিঁড়ির পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসো নি। আর যখন এলে আমাকে দেখার সময় তোমার হয় নি।

তুমি কি একটা কথা জানো অরণ্য? মেয়েরা কখনোই তাদের সম্পূর্ণ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে না। সবাই করতে চায়ও না। তবে আমি সেটা পারবো না অরণ্য। তুমি হয়তো নিজেও জানো না যে আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। আমি তোমার কাছে সেটা হয়তো কখনোই প্রকাশ করতে পারবো না। তবে আমার লিখায় বলতে পারবো। তুমি হয়তো বুঝবে না। কিংবা চাইবে না বুঝতে। তবে আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি অরণ্য।

আমি মনের দিক থেকে বেশ শক্ত একজন মানুষ। সব ধরণের নিকৃষ্টটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার আছে। অন্তত এতোদিন ধরে আমি তাই জানতাম। কিন্তু অবহেলা আমি কেন যেন সহ্য করতে পারি না। বিশেষ করে সেটা যদি তোমার ক্ষেত্রে হয়। তোমার অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাকে সেই ক্ষমতা দেন নি।

আরো কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। তবে আজ আর লিখবো না।

সব অনুভূতির ঠাই তো আর কাগজে দেয়া সম্ভব নয়।

                                                                                                                                                                                                                                                                          ইতি,

                                                                                                                           ইতি













প্রিয়তমেষু,

এই সম্বোধনটিই তো ব্যবহার করতে চাচ্ছিলে তাই না। করলে না কেন? আমি তো এখনো হারিয়ে যাই নি।

আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমান করে আছো। থাকাটা স্বাভাবিক। সেদিন তোমাকে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম। তবে আমার মতো তুমিও হয়তো জানো আমাদের মধ্যেকার সম্পর্কটা এখন ঠিক আর মান, অভিমান কিংবা ক্ষোভের উপর ভিত্তি করে টিকে নেই। অভিমান, ক্ষোভ, রাগ, অপারগতা, উপেক্ষা এবং ভালোবাসা, এসব কিছুই একসময় আমাদের মধ্যে ছিল। এখন শুধু কয়েকটা শব্দ আমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক থেকে মুছে গেছে। কিংবা যাচ্ছে।

অনেক কঠিন কিছু কথা বলে ফেললাম তোমাকে। তোমার মতো লিখালিখিতে আমি অতোটা অভিজ্ঞ নই। তোমার এই লিখা পড়ার আগে আমি আগে কখনো জানতামই না যে তুমি এতো সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারো। অনুভূতির ঠাই কাগজে হয় না তোমার লিখা এই বাক্যটি ঠিক সঠিক নয়। হয়তো সবার ক্ষেত্রে হয় না। তোমার ক্ষেত্রে হয়েছে। কারণ তোমার এই লিখা পড়ে আমি তোমার অনুভূতির সাথে মিশে যেতে পেরেছি।

চিঠির শুরুতে আমি বেশ কিছু শব্দ লিখেছি তোমাকে। এবং আমি জানি এই মুহূর্তে তুমি এই শব্দগুলো নিয়েই ভাবছো। তবে একটি শব্দের স্থান আমি সেখানে দেই নি। আর তা হচ্ছে “অবিশ্বাস”। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে এই শব্দটি এখন খুব বেশি করে জায়গা দখল করে নিয়েছে।

আমি জানি অদ্রিতির সাথে আমার মেলামেশাটা তুমি ঠিক পছন্দ কর না। তোমার আমার সম্পর্কের মাঝে অবিশ্বাস শব্দটির বিস্তার সেদিনই শুরু হয়েছিলো যেদিন থেকে আমার আর অদ্রিতির মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। তোমাকে আমি বুঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি। তুমি বুঝতে চাও নি। তোমাকে আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম যে ভালোবাসার বিভক্তি সম্ভব নয়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে নয়।

তোমার বাসায় তোমার বিয়ে নিয়ে কথা বার্তা হচ্ছে। তোমার ধারণা হয়তো আমি এই ব্যাপারটা জানি না। কিছুদিন আগে তুমি আমার সাথে করে ভার্সিটিতে যাবে বলে বাস স্ট্যান্ডে চুপচাপ বসে ছিলে। দূর থেকে কিছুক্ষণের জন্য আমি সেদিন তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আর সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা ঠিক নেই তোমার মধ্যে। তুমি হয়তো জানো না তুমি যখন আমার জন্য অপেক্ষা কর তখন তোমার কাছে আসার আগে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও দূর থেকে আমি কিছুক্ষণ তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি।

ইতি...

আমি চাই না কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করা ছেড়ে দিক। আমি এও চাই না কেউ আমার জন্য নিজের হাতে গড়া জগতটাকে তিল তিল করে নিঃশেষ করে দিক। অবহেলা আমি তোমাকে করছি না। প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের দিককার একটা গল্প থাকে। সব সময় সেই গল্পটা বলা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠে না।

ভালো থাকো ইতি।

                                                                                                                                                                                                                                                                           ইতি,

                                                                                                                             অরণ্য

  









অরণ্য,

জানো আজ অনেকদিন পর তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম। তোমার মনে আছে আমাদের সেই দোতলা বিআরটিসি বাসের কথা? আমার অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা চলছিলো তখন। তুমি সেদিন আমাকে কেমেস্ত্রি নোটখাতা দিতে এসেছিলে। কিন্তু পরীক্ষার পর কোথা থেকে যেন হঠাৎ করে আমার আম্মু এসে হাজির হলো কলেজের গেটের সামনে। জানো তোমাকে আমি সেদিন ঠিকই দেখতে পেয়েছিলাম। তুমি আমাকে দেখে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে হাসিমুখে এগিয়ে আসছিলে। কিন্তু যেই না তুমি আম্মুকে দেখলে ওমনি তুমি যেন আমাকে চিনই না এমন একটা ভাব করে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলে। তোমার ব্যাপারটা অভিনয় জেনেও সেদিন বুকের ভেতর কেমন যেন একটা ধাক্কা লেগেছিল আমার। যদি আমার জীবনে সত্যি সত্যি কখনো এমন দিন আসে? যদি তুমি একদিন আমাকে এভাবে চিনতে না পেরে পাশ কাটিয়ে চলে যাও?

তুমি সেদিন আমাদের পিছু পিছু বাসে উঠেছিলে। আমি দোতলা বাসের মাঝখানটাতে জানালার পাশে বসেছিলাম। আম্মু বসেছিল আমার পাশে। তুমি সারাটা রাস্তা অনেক চেষ্টা করেছিলে আমাকে নোটখাতাটা দেয়ার জন্য। কিন্তু আম্মুর কারণে পারো নি। অবশেষে কি মনে করে যেন আম্মু সেদিন বাসে কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পরেছিল। আর সেই সময় তুমি আমাকে খাতাটা দিতে এসেছিলে। তোমার মনে আছে সেদিন বাসের সব যাত্রীরা কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল? আমি কিন্তু খুবই মজা পাচ্ছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তারা যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকুক। খাতাটা দেয়ার সময় তোমার হাতের স্পর্শ আমি কিছুক্ষণের জন্য পেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তোমার আমার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শটুকুও তারা যেন দেখতে পাক। তোমার হাতটা ছোঁয়ার অতৃপ্তিটুকুও তারা যেন.........

সরি, অনেক কথা বলে ফেললাম। পুরনো দিনগুলো আসলেই অনেক সুন্দর ছিল। অনেক কিছুই বুঝতাম না তখন। জীবন সহজ ছিল সে কারণে। তবে আমি জানি অতীতের প্রয়োজন প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে আছে। মানুষের অতীতই তার বর্তমানকে নির্ধারণ করে দেয়।

তোমাকে আমি অবিশ্বাস করছি না। কখনো করিও নি। অদ্রিতি তোমার বন্ধু তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। তোমাকে আমি অবিশ্বাসও যে করছি তা কিন্তু নয়। কিন্তু কেন যেন আমার কাছে গত কয়েকটা দিন ধরে মনে হচ্ছে তুমি আমাকে খুব অবহেলা করছো। আমি আগেও বলেছি অরণ্য, আমার ব্যাপারটা তুমি ঠিক বুঝতে পারছো না। আমিও হয়তো তোমাকে বুঝাতে পারছি না। আমাদের মাঝখানে কোন তৃতীয় সত্ত্বার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ো না অরণ্য। তোমাকে আমি অবিশ্বাস করি না। আর করবোও বা কেন? এতটুকু বুঝার ক্ষমতা আমার অন্তত আছে। তোমাকে আমি ভালোবাসি। ভালোবাসা আর অবিশ্বাস একসাথে কখনও বাসা বাঁধতে পারে না।

তোমার কথা সত্যি। আমার বাসায় আমার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তুমি তো জানোই আমার একটি ছোট বোনও রয়েছে। তার জন্যও বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। আমার পক্ষে আর কতদিন বাবা মাকে আটকে রাখা সম্ভব হবে তা আমি জানি না। তোমাকে কথাগুলো আমি বলতে চাই নি। আমি চেয়েছিলাম অন্তত তোমার সাথে আমি যেটুকু সময় কাটাই সেটুকু সময় অন্তত যেন আমি আমার সবকিছু ভুলে থাকতে পারি। তোমার আমার মাঝখানে কোন আক্ষেপের স্মৃতি আমি কখনো রাখতে চাই নি। রাখতে চাইও না।

আচ্ছা অরণ্য, তুমি কি কোন কারণে আমার উপর খুব বেশি বিরক্ত? আমি জানি না আমার কি হয়েছে তবে কেন যেন আমি আর আগের মতো করে তোমাকে ঠিক পাচ্ছি না। ভুল সবার জীবনে থাকতে পারে। হয়তো আমার জীবনেও আছে। আমার করা কোন অজ্ঞাত ভুলের কারণে কি তুমি আমার সাথে এখন এরকম হয়ে গেছো? কোথাও কি যেন নেই আর আমাদের মাঝে। ব্যাপারটা আমি যেমন বুঝতে পারছি আমি জানি তুমি নিজেও ঠিক সেইভাবেই বুঝতে পারছো। আমি জানি তুমি নিজে কিছুই বলবে না। আমি সরাসরি হয়তো তোমাকে কিছু বলি নি তবে অন্যান্য যতো উপায়ে সম্ভব তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তুমি বুঝতে পারো নি। শেষ পর্যন্ত যখন দেখলাম তুমি আর আগের মতো করে আমার সাথে স্বাভাবিক হচ্ছো না তখন তোমার আর আমার মাঝখানে এই চিঠিগুলোর সত্ত্বা আমি নিয়ে এসেছি। কেউ একজন একসময় আমাকে বলেছিল যে এক টুকরো সাদা কাগজ যা বলতে পারে একজন মানুষ সারাজীবন চেষ্টা করেও সে কথা বলতে পারে না।

“ভালোবাসার” মানুষকে অন্তত বলতে পারে না।

                                                                                                                                                                                                                                                                                ইতি,

                                                                                                                                  ইতি










শোন ইতি,

তুমি কি জানো যে তুমি অনেক ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারো। এইটুকু কথা বলার জন্য এতো কিছু লিখার তো কোন দরকার ছিল না। তোমার পুরো এই দুই পৃষ্ঠার চিঠির মূল সারমর্ম তো এটাই তাই না যে কেন এখন আর আমি আগের মতো তোমার সাথে স্বাভাবিক হতে পারছি না? আমার ধারণা ছিল ব্যাপারটা আমার চেয়ে বেশি তুমি ভালো করে বুঝতে পারবে। দেখ ইতি, এই লিখাটি পড়ে হয়তো আমার ব্যাপারে তোমার মনে অনেক রকম ধারণার জন্ম হতে পারে। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন তোমার এইসব নাটক আমি সহ্য করবো তা তুমি ভাবলে কি করে? হ্যাঁ, চিঠি লিখা তুমি আমার কাছে প্রথমে শুরু করেছিলে। তখন ভেবেছিলাম হয়তো তোমার আমার মাঝখানের কিছু সমস্যার সমাধান করার জন্য চিঠি লিখার ব্যাপারটি তুমি নিয়ে এসেছো। কিন্তু এখন তো দেখছি...

তোমার কি ধারণা আমি তোমার ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি এতদিন অনেক কিছু সহ্য করে চুপ করে ছিলাম। ক্লাস শেষে কার সাথে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে আড্ডা দাও তুমি? একসাথে লাইব্রেরীতে বসো এমনকি আমাকে না জানিয়ে তুমি তাদের সাথে ঘুরতে পর্যন্ত বাহিরে যাও। তুমি কি ভেবেছ আমি কিছু দেখতে পাই না? কেন সবসময় তোমার শুধু ছেলেদের সাথেই ঘুরে বেরাতে হবে? ইউনিভার্সিটিতে কি মেয়েফ্রেন্ড এর অভাব পরেছে? তুমি সন্দেহ করছো আমাকে? আমার আর অদ্রিতির বন্ধুত্ব নিয়ে তোমার যতো সমস্যা? আর তোমার গুলো কি? আমি তোমাকে লিখা আমার আগের চিঠিতে খুব ভালোভাবে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করেছি যে আমাদের মাঝখানে সমস্যাটা কোথায়। ব্যাপারটা তোমাকে বুঝানোর জন্য আমি অদ্রিতির রেফারেন্সও টেনেছি। আমি খুব ভালোভাবেই জানি যে তুমি অদ্রিতিকে পছন্দ করো না। তোমার কারণে অদ্রিতির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আমি ঠিকভাবে ডেভলাপ করি নি। আর সেই তুমি কিনা ভার্সিটিতে যার তার সাথে ঘুরে বেড়াও। আমার কেন তোমার সম্পর্কে এসব কথা শুনতে হয়? আমি তোমাকে ইউনিভার্সিটির প্রথম দিকেই বলেছিলাম যে এসব ছেলে বন্ধু আমার পছন্দ না। ছেলে বন্ধু থাকতে পারে কিন্তু তাদের সাথে এতোটা মেলামেশা কেন তোমার?

ইতি দেখ, তোমাকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। আমি পছন্দ করি তোমাকে। তবে আমার বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন তুমি আমার অপছন্দের জিনিসগুলো করে বেড়াচ্ছো? আমিই কি তোমার জন্য যথেষ্ট নই? আমি থাকতে কেন তোমার অন্য ছেলেদের সাথে ঘুরাফেরা করতে হবে?

তোমাকে অনেক কঠিন কিছু কথা বলে ফেলেছি। কথাগুলো তুমি ঠিক কিভাবে নিবে তা আমি জানি না। তবে প্রতিনিয়ত তোমার এসব উদ্ভট আচরণ আমার আর ভালো লাগছিলো না। চিঠির পর চিঠি লিখে যাচ্ছো, কাগজের পর কাগজ বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কথা দিয়ে ভরিয়ে ফেলছো, অথচ তুমি নিজেও জানো না এসব কিছুর পেছনে মূল কারণটা কোথায়? তোমার জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে আমার চিঠিটি পড়ার পর অবশ্যই বুঝতে পারতো কোথায় এবং কি কারণে আমাদের সম্পর্কের আজকে এই অবস্থা।

তোমার বাসায় তোমার বিয়ের কথা বার্তা চলছে এই ব্যাপারটা তোমার আমাকে আরো আগে বলা উচিত ছিল। আমি তোমার আচার আচরণ কিছুই বুঝতে পারছি না। বিয়ের মতো এমন স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার কেউ তার বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে? তোমার শুধু আমার সাথেই যতো সমস্যা। কই তোমার ছেলেবন্ধুদের সাথে যখন ঘুরতে যাও তখন তো তোমার এইসব কিছুই মনে থাকে না।

আজ আর কথা বাড়ালাম না। আশা করি তুমিও এসব নিয়ে আর কোন প্রকারের বাড়াবাড়ি করবে না।

                                                                                                                              অরণ্য













অরণ্য,

মানুষের খুব সাধারণ সাইকোলজির মধ্যে একটি হচ্ছে মানুষ তার সবচাইতে খারাপ ব্যাপারটি কখনো চিন্তা করতে পারে না। আমি তোমার জন্য বিষয়টা আরো সহজ করে দিচ্ছি। Worst possible Scenario. এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি। আমিও চিন্তা করি নি, আমার চেতনা আমার সেই ভয়ানক আতঙ্কগুলোকে আমার মধ্যে তুলে আনতে দেয় নি। কিন্তু তোমাকে আজ আমার ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে। আমার চেতনা যা করতে পারে নি তুমি একজন মানুষ হয়ে আমার সেই ভয়ানক আতঙ্কগুলো আমার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছো। মানুষ হিসেবে তুমি আসলেই বাহাবা পাবার যোগ্য।

তোমার ইঙ্গিত আমি বুঝতে পেরেছিলাম। মানুষ হিসেবে আমি নিচু শ্রেণীর নই অরণ্য। তুমি যদি আমাকে সেরকম ভেবে থাকো তাহলে তুমি ভুল করছো। সমসাময়িক সময়ে আমার মস্তিষ্ক অন্যান্য সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশ ভালোই কাজ করে। I am not deaf, not blind also, and I always get everything.

তুমি আমাকে সন্দেহ করো, এবং আমাকে তুমি এখন আর সহ্য করতে পারো না। তোমার এই ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারি নি তা নয়। পেরেছিলাম, কিন্তু বললাম না, হিউম্যান সাইকোলজি। আমি আমার মধ্যে জিনিসটা ধরে রাখতে পারি নি। ধরে রাখলে আমার জীবনটা আরো কঠিন হয়ে যেতো। তবে আজ তোমার এই একটি চিঠির কারণে আমার জীবন অনেকটাই স্থির হয়ে গেলো।

মানুষের সাথে চলাফেরা করার অনেক অসুবিধার মধ্যে একটি অসুবিধা কি তুমি জানো। মানুষ তার খুব কাছের মানুষটিকে নিয়ে আড়ালে সমালোচনা করতে বেশ পছন্দ করে। এই সমালোচনা মানুষ অন্য কোন অনুভূতির থেকে করে না। বরং কাছের মানুষটির স্মৃতি আরো সূক্ষ্ম করার জন্য করে থাকে। এই সূক্ষ্ম অনুভুতি কিংবা স্মৃতি, তুমি যাই বল না কেন এসব কিছুর কারনেই মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, নষ্ট হয়, ধ্বংসও হয়। আমারো হয়েছে। আজ আমি আমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন। এবং আমার সেই বন্ধু নামক কয়েকজনের কারণেই তুমি আমাকে এই চিঠি লিখতে পেরেছো। তুমি ভেবেছিলে আমি কিছু জানি না। এতোদিন তোমাকে কিছু বলি নি। তবে এখন আমি তোমাকে বলছি আমি কি কি জানি অরণ্য।

অদ্রিতির সাথে তোমার সম্পর্ক আছে। ব্যাপারটা আমি জানি এবং অনেক আগে থেকেই জানি। এতোদিন তোমাকে আমি দেখেছি। বিচক্ষণতার সাথে দেখেছি। ভেবেছিলাম হয়তো তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারবে। আর আজ তুমি, তোমার মতো একজন মানুষ আমাকে আর আমার বন্ধুদের মধ্যকার সম্পর্ককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছ।  

অদ্রিতির সাথে আমার গতকালকে কথা হয়েছে। আমি তাকে সবকিছু জানিয়েছি। তুমি কেমন ধরণের মানুষ সেটাও জানিয়েছি। আমার একটা কথা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনে রাখো অরণ্য, আমাকে তুমি যেভাবে ট্রিট করছো সে ধরণের মেয়ে কিন্তু আমি নই। আমার এই কথাটা তোমার মাথায় বেশ ভালোভাবে ঢুকিয়ে নাও। আমার আর আমার বন্ধুদের নিয়ে কথা বলার আগে তোমার একটিবারের জন্য হলেও নিজের অবস্থানের কথা চিন্তা করার দরকার ছিল। তবে এখন তোমার অবস্থান আমার কাছে বেশ ভালোভাবেই নির্ধারিত হয়ে গেছে।

আজ থেকে শুধুমাত্র তোমার কারণে আমি আর কোনোদিন কোন মানুষকে বিশ্বাস করতে পারবো না। কোন মানুষকেই না। বিশ্বাস করেছিলাম আমি। এই বিশ্বাসের উপরই তোমার আমার সম্পর্কটা এতোদিন ধরে টিকে ছিল, আমি টিকিয়ে রেখেছিলাম এই সম্পর্ক। তোমার দিক থেকে তো কবেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো সবকিছু। সবকিছু বুঝার এবং জানার পরও আমি বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম তোমাকে। তুমি আমার বিশ্বাস রাখো নি, সেই সাথে আমাকেও রাখতে পারো নি।

আমি আর তোমার দিক থেকে কোন প্রকার যোগাযোগ আশা করছি না। আমার এই চিঠির উত্তরও আমি চাই না। এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমার কাছ থেকে আর কিছুই চাই না। আমাকে কোন কিছু দেয়ার যোগ্যতাও তোমার আর নেই। মানুষের অনেক বড় একটি ক্ষমতা কি জানো? একজন মানুষ ইচ্ছা করলেই অন্য যে কোনো মানুষের অনেক পথ বন্ধ করে দিতে পারে। আজ থেকে আমিও দিচ্ছি।

আমার সাথে তোমার যোগাযোগের সমস্ত পথ।

                                                                                                                                                                                                                                                                                  ইতি,

                                                                                                                                  ইতি










ইতি,

তোমাকে লিখার মতো কিছু আমি খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার চিঠিটি পড়ার পর আমার কাছে এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছে এই ইতিকে ঠিক যেন আমি চিনি না। আমার উপর এতোটা কঠিন না হলে কি হয় না ইতি? তুমি আমার এই চিঠি পাবে কিনা আমি তাও জানি না। গত এক সপ্তাহ ধরে আমি বিভিন্ন উপায়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারি নি। তোমার কোন ফ্রেন্ডও আমাকে সাহায্য করতে রাজি হচ্ছিলো না। অবশেষে আজ ফারিনকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে তার হাতে আমার এই চিঠিটি দিয়ে যাচ্ছি। চিঠিটি তোমার কাছে পৌঁছুবে কিনা আমি জানি না। আর পৌঁছুলেও তুমি কি একটিবারের জন্য আমার এই লিখাটি পড়বে?

হ্যাঁ ইতি, আমার ভুল হয়েছে। অদ্রিতির সাথে আমার একটা সম্পর্ক শুরু হয়েছিলো। ঠিক কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি নিজেও বুঝতে পারি নি ইতি। তুমি আমার জীবনে ছিলে তখন। তোমাকে ফাঁকি দিয়েই আমি আমার আর অদ্রিতির সম্পর্কটি শুরু করেছিলাম। আমি এটাও ভেবেছিলাম তুমি হয়তো বুঝতে পারবে না। কিন্তু আমি কখনো ভাবি নি তুমি......

আমার ভুল হয়ে গেছে ইতি। আমাকে কি তুমি ক্ষমা করতে পারবে? গত এক সপ্তাহ ধরে তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। আমি যে কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তা তোমাকে আমি বুঝাতে পারবো না। আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। আমি অনুতপ্ত। তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে আমি তোমার কাছে এখন অপরাধী হয়ে গেছি। তুমি আমাকে আর কখনো আগের দৃষ্টিতে দেখতে পারবে না। আমি এটাও জানি। এতো কিছুর পরও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমি আমার নিজের কাছে সারাজীবনের জন্য ছোট হয়ে গেছি ইতি। এখন তুমি যদি আমাকে মাফ না করো তাহলে আমার এই সত্ত্বাকে নিয়ে আমি কিভাবে থাকবো?

তোমার কথা সত্যি, আমি তোমাকে সহ্য করতে পারতাম না। তোমার খুব কাছের কিছু বন্ধুদের কাছ থেকে তোমার ব্যাপারে খুবই বাজে কিছু কথা শুনেছিলাম আমি। তোমার কোন ছেলে বন্ধু থাকুক তা আমি ঠিক মেনে নিতে পারি নি কখনো। আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে আমি তো আছি তোমার জীবনে। তাহলে কেন তোমার অন্য ছেলেদের সাথে মেলামেশা করতে হবে? আমি কি তোমার জন্য যথেষ্ট নই? তুমি তোমার সবকিছু আমার সাথেই তো ভাগাভাগি করতে পারো। তোমার এই ছেলেবন্ধুদের ব্যাপারটা নিয়ে তোমার উপর প্রচণ্ড রাগ জন্মেছিলো আমার। আর সে কারণেই অনেকটা হতাশার থেকেই আমি অদ্রিতির সাথে কথা বলতে শুরু করেছিলাম। তোমাকে তোমার ছেলেবন্ধুদের সাথে মেলামেশার থেকে আমি বারণও করতে পারতাম না আবার আমি নিজে ব্যাপারটা ঠিক মেনেও নিতে পারছিলাম না। এরকম একটি পরিস্থিতিতে আমার একটি ভুল হয়ে গেছে ইতি। অদ্রিতির সাথে আমার একটি সম্পর্কের শুরু হয়েছিলো। বন্ধুত্ব দিয়েই সম্পর্কটির শুরু ছিল কিন্তু এখন সেই বন্ধুত্বটিও তার সাথে আমার আর নেই। আমার জীবনে এখন আর কেউ নেই ইতি।

তুমি কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে ইতি? আমি তোমার কাছে শুধু এতোটুকুই চাই। আমাকে তুমি মাফ করে দাও। আমি জানি আমি তোমার কাছে যা চাচ্ছি তা পাবার যোগ্য আমি নই। কিন্তু আমি আমার সবকিছু এখন তোমার কাছে প্রকাশ করেছি। নিজের মধ্যে আর কিছুই রাখি নি। এতটুকু বিবেচনা তুমি কি আমার জন্য করবে ইতি?

আমি তোমার একটি চিঠির জন্য অপেক্ষা করবো। কোনোদিন তোমার যদি মনে হয় তুমি আমাকে কিছুটা হলেও ক্ষমা করতে পেরেছ তাহলে আমাকে তোমার শেষ একটি লিখা দিও। এই লিখার প্রারম্ভিকটা তুমি নিজের হাতে শুরু করেছিলে। শেষটাও আমি তোমার হাতেই দিয়ে দিলাম।

                                                                                                                         ইতি,

                                                                                                                              অরণ্য














অরণ্য,

কেমন আছো? আমি ধরে নিচ্ছি তুমি ভালো আছো। বিক্ষিপ্ত কোন কিছু আর আমার চিন্তা করতে ইচ্ছা করছে না। অনেক করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয় নি।

গতকাল আমার জন্মদিন ছিল। তোমার মনে আছে আমি যখন কলেজে পরতাম তখন তুমি একদিন রাত বারোটার দিকে কেক আর চকলেট নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এসেছিলে। আম্মু সেদিন থেকেই আমাদের নিয়ে সন্দেহ করা শুরু করেছিলো। আমি সেই সন্দেহ স্থায়ী হতে দেই নি। আম্মুকে সবকিছু বলে দিয়েছিলাম আমি। আম্মুও এর পর তোমার আর আমার ব্যাপারটা নিয়ে আর কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করে নি। আজ পর্যন্ত কোনদিনও করে নি। আমি জানি করবেও না। আমার পরিবারের কাছ থেকে এতটুকু স্বাধীনতাটা অন্তত আমি পেয়েছি।

দেখো অরণ্য, আমি বড় হয়েছি খুবই স্বাধীনপ্রিয় একটি পরিবেশে। আমার বাবা মা আমাকে ছোটবেলা থেকেই অনেক স্বাধীনতা দিয়েছিলো। দেয়ার পেছনে অবশ্য কারণ ছিল। তারা চাইতেন আমি যেন আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারি। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিয়েছি। আমার বাবা মা কখনো আমার সিদ্ধান্তে কোন হস্তক্ষেপ করে নি। আমি মানুষের সাথে মিশে বড় হয়েছিলাম। ভুল করেছিলাম অনেক এবং সেই ভুল থেকে শিখতেও শুরু করেছিলাম অনেক কিছু। আমার পক্ষে নিজেকে সমাজের অন্যান্য আট দশটা মানুষের কাছ থেকে আড়াল করে রাখা সম্ভব ছিল না। যে কারণে কখনো কারো সাথে মেশার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন চিন্তা আমি কখনো করি নি অরণ্য। আমার জীবনে আসা অনেক মানুষের মধ্যে তুমিও একজন ছিলে। কিন্তু এতো মানুষের মাঝে একমাত্র তোমাকেই আমি অন্যভাবে গ্রহণ করেছিলাম। তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগেছিলো। সেই ভালো লাগাটা এখনো আমার মধ্যে আছে। অন্তত গত ছয় মাসে আমি তাই বুঝতে পেরেছি।

তোমার আর অদ্রিতির ব্যাপারটা নিয়ে আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। আসলে আমার কিছু বলারই নেই। আমার উপর যখন তোমার সন্দেহ হয়েছিলো তখন তুমি বিষয়টা নিয়ে আমার সাথে বসলেই পারতে। সন্দেহ চেপে রাখতে হয় না অরণ্য। রাগও চেপে রাখতে হয় না। তোমার সব রাগ, সব ক্ষোভ তুমি আমার উপর ঝেড়ে দিতে। আমি সব কিছু সহ্য করতাম। কেন করতাম তার উত্তরটা আমার কাছে নেই। তবে করতাম। অন্তত আমাদের মাঝখানে তৃতীয় কোন সত্ত্বার উপস্থিতির থেকে সেটা অনেক ভালো ছিল।

তোমাকে সেদিন আমি দেখেছি। তুমি আমাকে খেয়াল করো নি। আমি তোমার পাশের বাসে জানালার পাশে বসে ছিলাম। অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। এবং দেখার সাথে সাথে আমার কেন যেন মনে হলো তোমার সাথে কথা বলাটা আমার জন্য অনেক জরুরী হয়ে পরেছে। হ্যাঁ, তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিলো।

ক্ষমা তোমাকে আমি অনেক আগেই করেছি। তবে তোমার প্রতি ক্ষোভটা আমার অনেক বেশি ছিল। এখনো আছে। এই ক্ষোভ আমি কখনো দূর করতে পারবো কিনা তা আমি জানি না।

তবে আমার জীবনে তোমার প্রয়োজন আমার আছে।

                                                                                                                      ইতি,

                                                                                                                         তোমার ইতি













কাঠের বুকশেলফটি পরিষ্কার করতে যেয়ে আজ হঠাৎ করে দীপ্তির চোখ একটি বইয়ের উপর পরল। মার পড়া প্রত্যেকটা বইই তো তার পড়া, তাহলে এই বইটি তার চোখে পরল না কেন এতোদিন?

বইটি ধরতেই শ্যাওলা ধরা একটি খাম ঝুপ করে মাটিতে পরল। খামটি হলুদ হয়ে আছে। সেই সাথে তার কিছু কিছু জায়গা পোকাও খেয়ে ফেলেছে। ব্যাস্ত হাতে দীপ্তি খামটির একাংশ ছিঁড়ে ভেতরের কাগজটি বের করলো। একি, এতো তার মার হাতের লিখা।

রাতে ঘুমুতে যাবার আগে দীপ্তি স্তব্ধ পায়ে তার মায়ের ঘরে ঢুকলো। মা আজো জেগে আছেন। তার বুঝ হবার পর থেকে সে সব সময়ে দেখেছে তার মা রাতের নির্দিষ্ট একটা সময় চুপচাপ জেগে থাকেন। দীপ্তি এ নিয়ে তার মাকে কখনো কোন প্রশ্ন করে নি। তবে আজ করলো।

তুমি রাতে জেগে থাকো কেন মা?

বলেই দীপ্তি তার পাওয়া চিঠিটি তার মাকে দেখালো।

ইতির চোখ জোড়া আজ অনেক দিন পর আবারো ছলছল করে উঠলো। মেয়েকে আগলে ধরে সে ধরা গলায় নিজেই নিজের কাছে বলল,

“প্রত্যুত্তরের আশায়”।

 

Likes Comments
০ Share