Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Gazi Sazib

৯ বছর আগে লিখেছেন

রোমন্থন

বৃষ্টি ঝড়িয়েও আকাশ আসলে শান্তিতে থাকে না। খুব দম্ভের সাথে পুরো শহর ভিজিয়েও যখন সে দেখে তুচ্ছ মানুষ তার প্রতি ভ্রূকুটি না করে ঘুমিয়ে আছে পরম শান্তিতে চারকোনা বিছানায়---তখন সে তার অহমবোধ এর ঘোষনা দেয়! মেঘ বল্লরীর বজ্রনিনাদ ঝংকৃত হয়!

 

হঠাত করেই ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। মুখে পানির ছিটা এসে পড়ছে;নাহ এর জন্য ঘুম চটে যেতে পারে না... হাতের কাছে ঘড়িটাতে সময় দেখে পুরোপুরি জেগে উঠলাম! ''৭ জানুয়ারি আজ আর আমি কিনা...উজবুক একটা আমি'' অস্ফুট উচ্চারণে আমার মুখ বলে উঠে।

 

-'তোমার সময় সেন্স কি আসলেই নাই সজীব? টাইম ব্লাইন্ড নাকি তুমি? সেই কখন থেকে বসে আছি খোঁজ নাই খবর নাই... মোবাইল কি শোপিস হিসেবে রাখো নাকি?'

 

কথা গুলো কানে বেজে উঠে; কথাগুলো ফারাহর। যেখানে সে আছে ওখান থেকে এই কথাগুলো আসার কোন কারন নেই। ও আর আমার মাঝের দূরত্ব এখন কাগজে কলমে হিসাব কষে বের করা যাবে না......সময় মেপে বলা যাবে না......জাগতিক হিসেবের উর্ধ্বে আমাদের দুজনের দূরত্ব!

 

ফারাহর সাথে আমার পরিচয় ২ বছরের। ওর মাঝে সাঁতরে বেড়ানোর সময়কাল ৮ মাস! সময়টাকে আমি দু প্রস্ত সুতো দিয়ে ভাগ করে দিয়েছিলাম; এক প্রস্থ ফারাহর সাথে দেখা হবার পর......আরেক প্রস্থ ওর মাঝে ভেসে যাবার পর!

 

পুরো শরীরে পানি ঢাললাম...সফেদ তোয়ালে দিয়ে গা মুছে পরার জন্য কাপড় বের করলাম। আজকে একটা বিশেষ দিন;আমার আর ফারাহর কিউপিড আর সাইকে হয়ে উঠার অ্যানিভার্সারি! 

 

-'নীল স্ট্রাইপে তোমাকে কিন্ত মানায় ভালো'

-'কাহিনী সত্য নাকি জিম ক্যারি বানায়া ছাড়বা?' চোখ মটকে বললাম!

 

ফারাহর জোরাজুরিতেই সেই টি-শার্ট কিনতেই হয়েছিলো আমাকে! পরে প্রতিবার দেখা করার সময় নীল কিছু একটা পড়তেই হত;হয় শার্ট নয়তো নীল জীন্স নয়তো নীল রিস্ট-ব্যান্ড......

 

আজকে নীলাম্বর হব! স্কাই ব্লু শার্ট+স্কাই ব্লু কনভার্স+ব্লু জীন্স......পারলে কান ফুটো করে ব্লু স্টাড পড়তাম! আজ নীলাম্বরের মন ভালো!

 

নীলাম্বর আমি সব সময়ই ছিলাম......ওর সাথে দেখা হবার প্রথম দিন থেকেই! প্রতিটি মুহুর্ত আমার আমি নিলামে তুলে দিয়েছিলাম......ওর হাসি,খুনঁসুটি,কপট রাগ,ওর সাথে কাটানো প্রতিটি সেকেন্ড---এসবের মূল্য আমার কাছে অনেক অনেক বেশিই ছিলো!

 

এখন এই সব আমার কাছে অসম্ভব দামি মুহূর্ত! আমার প্রতিটি ক্ষণ এখন এই মুহূর্তগুলোকে আশ্রয় করে আছে;খড়কুটোর মত...

 

বের হতে হবে! সময় আর বেশি নেই হাতে আমার… ও একদম অপেক্ষা করতে পারে না...

 

-‘তোমার সাথে আমার বেশ অমিল’ আমি একদিন ওকে বলেছিলাম

-‘যেমন?’ কিংকর্তব্যবিমূঢ় উত্তর!

-‘তুমি পুরা খরগোশ টাইপ.....’

-‘হুম জানি! তাহলে তো ঠিকই আছে... হি হি হি!’

 

আমি জানতাম ঠিকই আছে। খুব করে বলতে... ওর এই স্বভাব এর জন্যই আমি পংগপালের মত ওর কাছে ছুটে এসেছিলাম! ওর মাঝের আমার অপূর্ণতা যেন পূর্ণতা পেয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়,প্রকৃতি অ্যাবসলুট বিউটি দেখাতে চায় না! ছেলে তার অংশ খুঁজে বেড়ায় তেমনি মেয়েটাও বেড়ায়। যদি কেউ একজন পেয়ে যায়;তবে প্রকৃতি তাদেরকে সরিয়ে দেয়! সে চায় না এটা; তার ধারনা মানুষ অ্যাবসলুট বিউটি দেখার মত যোগ্য নয়!

 

আমার ক্ষেত্রে প্রকৃতি সদয় ছিল! আমি দেখা পেয়েছিলাম আমার অংশকে! প্রকৃতি কি আসলেই সদয় ছিল? তাহলে এখন কেন..অতঃপর দীর্ঘশ্বাস...

 

কিছু ফুল নিলাম...অর্কিড এর সাথে সাদা গোলাপের ভালো একটা জবরজং! হাঁটতে ভালো লাগছিল...বৃষ্টিভেজা কাকভোর; কেমন জানি একটা নেশা ধরা অবস্থা! একবার আমি আর ও প্ল্যান করেছিলাম এক বর্ষা ভেজা রাতে বের হয়ে পড়ব চুপিসারে;পুরো রাত এক সাথে হাঁটব রাস্তা ধরে...ভিজতে ভিজতে! পাগলাটে তাই না?

 

আচ্ছা,ফারাহ’র কি মনে আছে আমাদের প্রথম সত্যিকার অর্থে কাছে আসার মুহুর্ত এসেছিলো এই বর্ষায়! ও আর আমি গিয়েছিলাম রাজেন্দ্রপুরে......পথিমধ্যে হঠাত বৃষ্টি নামল ঝুম করে। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মাত্র সিগারেট ধরাতে গিয়েই ও বলে উঠল

-‘তোমার ঠোঁট তো পুরা আফ্রিকান! এত কালো ঠোঁট তাও এইসব টান কেন?’

-‘তুমি বরং মুখ ঘুরিয়ে ওই দিকে দাঁড়াও! এই কালো ঠোঁট দেখার দরকার নাই। ৫ মিনিট পর তাকাইও’!

হঠাত করেই আমার হাত থেকে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল ও! হঠাত করেই আমার কাছে ঘেঁষে দাঁড়াল ও...শ্বেত শুভ্র পরী লাগছিলো ওকে...চুমুটা প্রথম ছিল!

 

ওর দিকে তাকিয়েই সিগারেট ছেড়েছিলাম।

 

এসে গেছি দেখছি! মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেল কেন জানি! আমি দাঁড়ালাম...আমি জানি অন্তত আজ ও আসবেই এখানে...জায়গাটাতে লেখা ছিলঃ

         ‘’রণ আহমেদ

জন্মঃ ২৭ জুন,১৯৮৪

মৃত্যুঃ৭ জানুয়ারি ২০১০

 

এখানে ও ঘুমিয়ে আছে...পরম শান্তিতে। ওকে ঘুমাতে দাও!’

 

********************************************************************************

সজীব ৭ জানুয়ারিতে মারা গিয়েছিল। যশোর থেকে আসার পথে রোড অ্যাক্সিডেন্টে। ঐ দিন ফারাহর সাথে দেখা করার তাড়া ছিল ওর। লোকাল বাসে করেই এসেছিলো টিকিট না পেয়ে...মাতাল ড্রাইভার ওকে আর পৌঁছুতে দেয়নি।

**********************************************************************************

ও আসেনি...আমি সারাটি দিন দাঁড়িয়ে ছিলাম! কিন্ত ও আসেনি কেন!  প্রতিটি বছর আমি কিছু সময় ধার করে আসি এখানে...... মৃত্যুর ওপার থেকে পরম প্রতিক্ষায় আমি থাকি এ দিনটির জন্য... কিন্ত কিন্ত......কথাটা শেষ হতে চায় না আর আমার......।

 

বিধধ্বস্ত অবস্থায় আমি পা বাড়ালাম.......

 

-‘ঈশ্বর তুমি কি জানো ও কোথায়?

-‘তুমিই জানো ভালো করে।‘ ভেসে এল  জবাব।

-‘জানি ওর বিয়ে হয়ে গেছে তবুও কেন এল না?’

-‘তুমিই জানো বালক’!

-‘আমি জানি! আমি জানি যে ও আর অপেক্ষা করতে পারত না...কিন্ত কিন্ত...এপিটাফ তো এইভাবে লেখার কথা ছিল না তাই না? আমার ওর মাঝে বর্ষার হবার কথা ছিল। ওর স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাবার কথা ছিল...ওর মাঝে আমার পুরো পৃথিবী গড়ার কথা ছিল! তুমি ঈশ্বর কেন...কেন এটা করলে? ওকে ছোঁবার কথা ছিল...ওর মাঝে চূর্ণ-বিচূর্ণ হবার কথা ছিল আর...তুমি কিনা আমাকেই...! কেন ঈশ্বর কেন?’

অপসৃত ভাবে ভেসে আসে

-“তবে তোমায় ঈশ্বর হতে হবে”

***************************************************************************************

বসে আছি আমি.....দিনের শেষে। কিছু ফুল এর সামনে; ঐ তো বেলি ফুলগুলো......নির্ঘাত রাহীরা এনেছে! এখনও বেলী ফুল নিয়ে আসিস তোরা......হাহাহা! ঐ তো গোলাপগুলো......ভেজা থাকে ওরা কেন জানি সবসময়ই! বাবা মাও এসেছিল দেখছি... হঠাত চোখ চিকচিক করে ওঠে আমার......

 

সাদা গোলাপগুলো আর দেখি না......।

 

দিন কেটে যায় আমার......এখনও সফেদ পোশাকে অপেক্ষা করি। জানি তুমি আসবে একদিন এই ওপারে......তোমার জন্য প্রতীক্ষা করি......সাদা গোলাপ আর অর্কিডের জবরজং নিয়েই...!

******************************************************************************************

মেঘের ওপার থেকে ঈশ্বর দেখছিলেন সবই......মেঘের আড়াল থেকেই বলে উঠলেন 

-' বড্ড ছেলেমানুষ তোমরা......'

Likes Comments
০ Share

Comments (5)

  • - নাসরিন ইসলাম

    হুম