অবশেষে স্বৈরশাসনের রাহুগ্রাস মুক্ত হচ্ছে মায়ানমার
অং সাং সুচির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। তবে ক্ষমতার পালাবদল ২০১৬ সালের মার্চের আগে হচ্ছে না কারণ তার আগে নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। অবশ্য তখনও সুচি মায়ানমারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না; তার দল থেকে অন্য কেউ রাষ্ট্রপতি হবেন। এর কারণ, মায়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কেউ দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের পদে অসীন হতে পারবেন না। সুচির দুই ছেলে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। তবে এই বাধা তাকে মায়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না। সম্ভবত তিনি এমন একটি পদে অসীন হবেন যেটা রাষ্ট্রপতির চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী হবে। তবে সেটা কেবল তখনই সম্ভব হবে যদি মায়ানমারের সেনাবাহিনী ঠিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ১৯৯০ সালেও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নির্বাচনে জয় লাভ করেছিল। কিন্তু সেনাশাসকরা সেই ফল উপেক্ষা করে নিজেরা দেশ পরিচালনা করতে থাকে এবং সুচিকে দুই দশক গৃহবন্দি করে রাখে।
পরিবর্তন এসেছে!
পরিবর্তন এসেছে; মায়ানমার গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। (এনএলডি) সরকার গঠনের পর ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে; তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে নয়। অবশ্য সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী দেশটির সংসদের ২৫ শতাংশ আসন দখলে রাখবে। এ জন্য মায়ানমারের নতুন এই প্রশাসনটি কার্যত হবে জাতীয় ঐক্য ও সমন্বিত সরকারের। মায়ানমারের এক তৃতীয়াংশ লোক জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তারা গেল কয়েক দশক ধরে জাতিগতভাবে সংখ্যাগুরুদের দ্বারা নানাভাবে শসিত ও শোষিত হয়ে আসছে। জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তারা এখনো মনে করেন একমাত্র অং সাং সুচিই সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করার সামর্থ রাখেন। তার নেতৃত্বেই দেশটি অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে ধাবিত হতে পারে। তারা এও বিশ্বাস করেন সুচির মাধ্যমেই তাদের ভাগ্য বদল হতে পারে। মুক্তি আসতে পারে দীর্ঘ কয়েক দশকের শোষন ও নিষ্পেষণ থেকে। যদিও তা কঠিন মায়ানমারের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সংখ্যাগুরুদের (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের) প্রভাবের কারনে।
কেমন ছিল সুচির অতীত?
অং সাং সুচির বাবা, অং সাং আধুনিক মায়ানমার সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন এবং ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্তি পেতে সমঝোতা করেছিলেন। সেটা ১৯৪৭ সালে। সুচি তার জীবনের অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে কাটিয়েছেন। সেখানেই তিনি পড়াশুনা করেছেন। পরবর্তীকালে তিনি একজন ব্রিটিশকে বিয়ে করেন। ১৯৬৯ সালে সুচি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে স্বামী ও দুই ছেলেকে ছেড়ে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে আসেন অসুস্থ মাকে দেখাশুনা করতে। ভেবেছিলেন হয়তো আবার স্বামী-ছেলেদের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে ছাত্র বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে ধাবিত করে। সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহ দমনে দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান চালায়। এমন সময়ে সুচি সেনাবাহিনী বিরোধী আন্দোলনের প্রধান হয়ে দাঁড়ান এবং বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়লাভও করেন। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনের ফলকে অস্বীকার করে এবং সুচিকে গ্রেফতার করে গৃহবন্দি করে রাখে। ২০১০ সালের শেষ দিকে তাকে গৃহবন্দি দশা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১২ সালের বাই ইলেকশনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুচি।
সামনে কঠিন পথ
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এর প্রধান কাজ হবে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা। কয়েক দশকের সেনাশাসনের কারণে নানাভাবে নানাদিক থেকে পিছিয়ে পরেছে দেশটি। সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সংঘর্ষের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে তাকে। তবে দলটির নিকট ইতিহাস ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়। যেমন দেশটির ৫ শতাংশ লোক মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে এনএলডির কোনো মুসলিম প্রার্থী ছিল না। এমন কী নির্বাচনে মুসলিমদের ভোটাধিকারও দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অভিযোগ মুসলিমদের প্রতি অং সাং সুচির সহমর্মিতা রয়েছে। এই বিষয়টি সিদ্ধহস্তে মীমাংসা করতে হবে তার দলকে।
কয়েকটি বিবরণ:
-আয় বৈষম্য হিসাবে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ মায়ানমার।
-দেশটি তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ।
-প্রভাবশালীদের দ্বারা ভূমি দখল মায়ানমারে নিত্য ঘটনা।
-১৯৮৯ সালে সেনাবাহিনী শাসিত সরকার দেশটির নাম বার্মা থেকে পরিবর্তন করে মায়ানমার রাখে।
-ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল। তখন অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর জেনারেলদের নেতৃত্বে গঠিত দল ক্ষমতায় আসে
Comments (0)
দারুণ একটা পোষ্ট।